৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি আন্তর্জাতিকে, পার্ট – ৩৮

বাংলাদেশ- মিয়ানমার সম্পর্কের গতিবিধি জানতে পড়ুন।

——-
মিজিমা :বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কের ক্ষেত্রে এনএলডি সরকারের কাছে আপনার কী প্রত্যাশা?
,
মোহাম্মদ সুফিউর রহমান :এনএলডির বিপুল বিজয় হচ্ছে মিয়ানমারের জনসাধারণের মুক্তি, অন্তর্ভুক্তি, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের দীর্ঘ প্রত্যাশার ফল। আমরা প্রত্যাশা করি এই বিপুল সমর্থনের ভিত্তিতে নতুন প্রশাসনের কার্যক্রম হবে তথ্য-উপাত্তভিত্তিক, কোনো ধারণার বশবর্তী হয়ে নয়। বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের মতো অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে এনএলডির উচ্চতর আত্মবিশ্বাস থাকা উচিত, কারণ তাদের পেছনে রয়েছে বিপুল নির্বাচনী রায়। আবেগের কাছে নত হওয়ার প্রয়োজন নেই তাদের। মিয়ানমারের জন্য এই পরিস্থিতি খুবই ইতিবাচক। আমি নিশ্চিত যে বিভেদ মেটানোর প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক সংলাপের চলমান প্রক্রিয়া এখন নতুন মাত্রা পাবে। অভ্যন্তরীণ এই নতুন মাত্রা বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে; কারণ একটি আত্মবিশ্বাসী প্রশাসন পররাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এই প্রেক্ষাপটেই আমরা মনে করি যে এনএলডি সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে সঠিক প্রেক্ষিতে দেখতে সক্ষম হবে এবং একটি টেকসই বন্ধুত্ব স্থাপিত হবে। আগামী দিন ও বছরগুলোতে এই সম্পর্ক হবে সততা, স্বচ্ছতা ও আস্থাভিত্তিক, যেটি চূড়ান্ত অর্থে দুই দেশের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক হবে আস্থা ও শ্রদ্ধার। আমরা একটি উন্নতিশীল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য অপেক্ষা করে আছি।
,
মিজিমা :বিগত কয়েক বছরের, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের পাঁচ বছরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ককে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
,
সুফিউর রহমান :আমি আরও একটু পেছন থেকে দেখতে চাই। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রশ্নে আমাদের অভ্যন্তরীণ সংকট ছিল। আরও নানা কারণে আমাদের দৃষ্টি অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিবদ্ধ ছিল। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সঙ্গত কারণেই পশ্চিমের দিকে সম্পর্কে গড়তে আমরা বেশি মনোযোগ দিয়েছি। সততার সঙ্গে স্বীকার করছি যে বাংলাদেশ তার পূর্বদিকের প্রতিবেশীদের প্রতি ন্যায্য মনোযোগ দিতে পারেনি। একই সঙ্গে তখন মিয়ানমারও অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছে, বিশেষ করে ১৯৬২ সালের পর। যখন প্রতিবেশী মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পূর্বদিকে দৃষ্টি রাখতে চেয়েছে, তখন আমার ধারণা, মিয়ানমার প্রত্যাশামতো ঝুঁকে পড়তে পারেনি আমাদের দিকে। স্বাধীনতার পর তিন-চার দশক ধরে এই সংকট ছিল। যোগাযোগ ঘাটতি, ভ্রান্ত ধারণার কারণে দুর্ভাগ্যবশত আমরা সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারিনি। আমাদের অমিলই বেশি প্রচার পেয়েছে এবং ঐক্যের ক্ষেত্রগুলো অনৈক্যের প্রচারণায় চাপা পড়েছে। দুই দেশের জন্যই সেটা ছিল সংকট।
,
থেইন সেইন প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর আমার ধারণা, বাংলাদেশের দিক থেকে প্রত্যাশা ছিল যে নেতিবাচক পরিস্থিতি থেকে আমরা বের হয়ে আসতে পারব এবং স্বাভাবিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারব। সেই পথে আমরা অগ্রসর হতে পেরেছি, কিন্তু অর্জনকে খুবই ইতিবাচক বলতে পারছি না আমি। গত পাঁচ বছর আমরা আরও ভালো করতে পারতাম। গত পাঁচ বছরে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দু’বার মিয়ানমার সফর করেছেন, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কয়েকবার সফর করেছেন, আমাদের সেনা, নৌ, বিমান, সীমান্ত বাহিনীর প্রধান মিয়ানমার সফর করেছেন। আমরা এসবের ফিরতি সফর আশা করেছিলাম; কারণ উচ্চ পর্যায়ে সফর বিনিময় পরস্পরকে বুঝতে ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সঠিকভাবে উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। আমাদের প্রত্যাশামতো সেটা ঘটেনি। ফলে দুই দেশের সম্পর্ককে আমি ঠিক গতিশীল-সক্রিয় সম্পর্ক বলতে পারি না। যদিও গত পাঁচ বছর আমাদের সম্পর্কে খানিকটা শৈথিল্য ছিল, আমি মনে করি নতুন প্রশাসনের আমলে এখন আমাদের সামনে তাকানো ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন মাত্রা দেওয়ার সময় এসেছে।
,
মিজিমা :দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ কোনটি বলে আপনি মনে করেন? বিশেষত সীমান্ত নিরাপত্তা, সীমান্ত অপরাধ ও অবৈধ অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে?
,
সুফিউর রহমান :এসবই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুতর প্রেক্ষিত। বিশেষত সীমান্ত যদি শান্তিপূর্ণ না হয়, তাহলে দুই দেশের মধ্যে অন্যান্য খাতেও সহযোগিতা সম্প্রসারিত হওয়া আশা করা যায় না। বস্তুত এ কারণেই নিরাপত্তা ইস্যুতে আমরা আরও ঘনিষ্ঠ সংযুক্তির দিকে আলোকপাত করে আসছি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আমরা কিছু ব্যবহারিক বিষয়েও ঐকমত্যে উপনীত হয়েছি। এর একটি হচ্ছে দৈনন্দিন যোগাযোগ। এর নাম দিয়েছি আমরা বিএলও (বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস)। আমরা নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও একসঙ্গে কাজ করছি। আনন্দের সঙ্গে বলতে পারি আমরা নিরাপত্তা বাহিনী ও সংগঠন পর্যায়ে নির্ধারিত সংলাপের জন্য একটি কর্মকাঠামোর ব্যাপারে একমত হয়েছি। আমরা আশা করি, এই দুটি উদ্যোগ দৈনন্দিন ও নীতিগত পর্যায়ে আমাদের মধ্যে যোগাযোগ আরও সক্রিয় করে তুলবে। আজকের সীমান্ত পরিস্থিতির কথা যদি বলি, বলতে হবে যে আমাদের সীমান্ত সাধারণভাবে শান্তিপূর্ণ এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে সীমান্ত উত্তেজনার ঘটনা খুব বেশি নেই। বলা চলে, আমাদের সীমান্ত পরিস্থিতি খারাপ নয়, বরং অনেক সীমান্তের চেয়ে ভালো। তবে অনেক সময় ধারণা ও বাস্তবতার মধ্যে মিল থাকে না। আমি যে দুই পর্যায়ে সহযোগিতার কথা বললাম, তা বাস্তবায়িত হতে থাকলে ধারণার বদলে বাস্তবতা প্রাধান্য পেতে থাকবে এবং আমরা আরও উন্নতি করতে পারব।
,
দ্বিতীয়ত, অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম দুইভাবে ঘটে থাকে। একটি হচ্ছে না জেনে। যেমন নাফ নদী ও সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় জেলেরা না জেনেই সীমান্ত অতিক্রম করে থাকে এবং তারা আটক হয় ও কখনও কখনও কারাগারে স্থান পায়। এই নিরীহ সীমান্ত অতিক্রমকারীদের জন্য আমাদের ১৯৮০ সালের একটি সমঝোতা রয়েছে। আমরা যদি সেটা সক্রিয় করতে পারি, তাহলে এ ধরনের সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনা ব্যবস্থাপনা সহজ হবে। আর কিছু সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনা ঘটে থাকে জেনেশুনে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। আমি যে দুটি সমঝোতার কথা আগে বলেছি, সেগুলো এ ধরনের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনতে সহায়ক হবে। তবে মনে রাখতে হবে, দুই দেশের সীমান্তের বেশিরভাগ এলাকা দুর্গম, বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর স্থায়ী কাঠামো ও উপস্থিতি নেই অনেক জায়গায়। মিয়ানমারের পক্ষেও পুরো সীমান্ত নজরদারিতে আনা সম্ভব হয়নি। এই সুযোগই নিয়ে থাকে অপরাধীরা। এ বিষয়ে আমরা সতর্ক। গত দুই বছরে অন্তত দুইবার অস্ত্রধারী গোষ্ঠীকে সীমান্তের ওপাশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত সীমান্তের ত্রিমুখী সংযোগ এলাকার সুযোগও অনেক সময গ্রহণ করে তারা। সেখানে নজরদারি মোটেও সহজ নয়। দুই দেশের সহযোগিতা বেড়ে গেলে অস্ত্র চোরাচালান ও অস্ত্রধারীদের সীমান্ত অতিক্রম কমে আসবে।
,
তৃতীয়ত, আমরা আনন্দিত যে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, বিশেষত বোট পিপল ক্রাইসিসের পর, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে। সীমান্তের দুই পাশের জন্যই এটা ইতিবাচক হয়েছে। আর উদ্বাস্তু সমস্যা খুবই বড় ও জটিল ইস্যু। আমি যেসব বিষয়ে এর আগে বলেছি, এ ক্ষেত্রে সেগুলো থেকে ভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। উদ্বাস্তু ইস্যুতে দুই দেশকে সততা, স্বচ্ছতার সঙ্গে ও নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে। আমি আশাবাদী, আগামী দিনগুলোতে এ ব্যাপারে ইতিবাচক উদ্যোগ গৃহীত হবে।
.
মিজিমা :মিয়ানমারে নতুন সরকারের আমলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে?
,
সুফিউর রহমান :গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ পরস্পরের মধ্যে খুব একটা যোগাযোগ ও আলাপ-আলোচনা করেনি। যদিও দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী ঐতিহাসিক যোগাযোগ ছিল। গত কয়েক দশকে আমরা পরস্পরকে পরস্পরের কাছে ভালোভাবে তুলে ধরিনি। এই বাধা দূর করতে হবে। জনসাধারণের মধ্যে পরস্পরকে জানার সুযোগ করে দিতে হবে। দুই দেশের মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মের মাধ্যমে ঐক্য রয়েছে। বাংলা ও বার্মায় একই সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মের সম্প্রসারণ হয়েছিল। দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় হতে পারে। আমরা ইতিমধ্যে মিয়ানমারে বন্ধুদের সহযোগিতায় বাংলাদেশি চিত্রশিল্পীদের প্রদর্শনী করেছি। বাংলাদেশি ফুড ফেস্টিভাল করেছি। এখন মিডিয়ারও একটি বড় ভূমিকা রয়েছে দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরিতে।
.
মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কূটনীতিক মোহাম্মদ সুফিউর রহমান ২০১৪ সালে নিযুক্ত হন – .
সূত্র >>> সমকাল , ৩ এপ্রিল।

মন্তব্য করুন

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline