ব্যাংক জব নিয়োগ পরীক্ষা বাংলা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস
বাংলা সাহিত্যের যুগ বিভাগ মোট তিনটি ভাগে বিভক্ত
১. আদিযুগ (৬৫০-১২০০ খ্রী:)
২. মধ্যযুগ (১২০১-১৮০০ খ্রী:)
৩. আধুনিক যুগ (১৮০১ খ্রী: -বর্তমান)
বাংলা ভাষা হিন্দ-ইউরোপী গোষ্ঠীর বংশধর
আধুনিক বাংলা ভাষার পরিধি শুরু হয়েছে—–১৮০১ সাল থেকে।
প্রস্তুতিপর্বঃ ১৮০০-১৮৬০,
বিকাশপর্বঃ ১৮৬০-১৯০০,
রবীন্দ্রপর্বঃ ১৯০০-১৯৩০,
রবীন্দ্রোত্তরঃ ১৯৩০-১৯৪৭
বাংলাদেশঃ ১৯৪৭-বর্তমান
প্রাচীন যুগ
প্রাচীন যুগের শুরু নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ আছে। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ-র মতে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের ব্যপ্তিকাল ছিল ৬৫০খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২০০খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।
ডক্টর সুনীতিকুমারের মতে এর সময়কাল ৯৫০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ।
সাহিত্যকর্মঃ
প্রাচীন যুগে বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যের একমাত্র ও আদিতম নিদর্শন হল চর্যাপদ। খ্রিষ্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত চর্যা পদাবলি ছিল সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের সাধনসংগীত বা গানের সংকলন।এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল বৌদ্ধ ধর্মের সাধন প্রণালী ও দর্শন তত্ত্ব।আধুনিক ভাষাতাত্ত্বিকগণ বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণের সাহায্যে প্রমাণ করেছেন যে চর্যার ভাষা প্রকৃতপক্ষে হাজার বছর আগের বাংলা ভাষা। সমকালীন বাংলার সামাজিক ও প্রাকৃতিক চিত্র এই পদগুলিতে প্রতিফলিত হয়েছে। সাহিত্যমূল্যের বিচারে কয়েকটি পদ কালজয়ী।এটি আদি যুগের একমাত্র লিখিত নিদর্শন।
আবিষ্কারঃ
চর্যাপদ
অনেক প্রাচীন সাহিত্যকর্ম হলেও এটির আবিষ্কার খুব বেশিদিন আগের কথা না। ১৯০৭ খ্রীস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা “রয়েল লাইব্রেরি” থেকে চর্যার একটি খণ্ডিত পুঁথি উদ্ধার করেন। মূলত ১৮৮২ সালে রাজা রাজেদ্র লাল মিত্র “Sanskrit Buddhist Literature in Nepal” গ্রন্থে চর্যাপদের অস্তিত্বের কথা বলেছিলেন। আর সেই সূত্র ধরে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদ আবিষ্কারে উদ্দীপ্ত হন। চর্যাপদের সাথে ‘ডাকার্ণব’ এবং ‘দোহাকোষ’ নামে আরো দুটি বই নেপালের রাজ দরবারের গ্রন্থাগার হতে আবিষ্কৃত হয়। ১৯১৬ সালে সবগুলো বই একসাথে ‘হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান এবং দোহা’ নামে প্রকাশ করেন..পরবর্তীতে ১৯২৩ সালে বাংলা ১৩২৩ বঙ্গাব্দ কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে এটি প্রকাশিত হয়। বাংলা ভাষার প্রথম কাব্য/কাবিতা সংকলন চর্যাপদ। এটি বাংলা সাহিত্যের আদিযুগের একমাত্র লিখিত নিদর্শন..ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজ দরবারের গ্রন্থাগার হতে ১৯০৭ সালে ‘চর্যাচর্য বিনিশ্চয়’ নামক পুথিটি আবিষ্কার করেন।এটি প্রকাশিত হবার পর পালি সংস্কৃত সহ বিভিন্ন ভাষাবিদ রা চর্যাপদকে স্ব স্ব ভাষার আদি নিদর্শন বলে দাবী করেন।
এসব দাবী মিথ্যা প্রমাণ করেন ড. সুনীতি কুমার চট্রোপাধ্যায় ১৯২৬ সালে The Origin and Development of Bengali Language গ্রন্থে চর্যাপদ এর ভাষা বিষয়ক গবেষণা করেন এবং প্রমাণ করেন চর্যাপদ বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন।
১৯২৭ সালে শ্রেষ্ঠ ভাষা বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চর্যাপদের ধর্মতত্ব বিষয়ক গবেষণা করেন এবং প্রমাণ করেন যে চর্যাপদ বাংলাসাহিত্যের আদি নিদর্শন।
অনেকের মতে, চর্যাপদের আদিকবি লুইপা।
বর্ণনাঃ
চর্যাপদের মোট পদসংখ্যা ছিল ৫১ টি। ডঃ শহীদুল্লাহ বলেছেন ৫০টি। তবে ৫১টি সর্বজন স্বীকৃত।এক একটি পদ সাধারণত সাধারণত ১০টি লাইন সহযোগে গঠিত।শুধুমাত্র ২১নং পদে লাইনসংখ্যা ৮টিএবং ৪৩ নং পদে লাইন সংখ্যা ১২টি।
চর্যাপদের ৫১টি পদের মধ্যে সাড়ে ছেচল্লিশটি পদ পাওয়া গিয়েছে,বাকি সাড়ে চারটি পদপাওয়া যায় নি।অনাবিষ্কৃত পদগুলি হল ১১,২৩,২৪,২৫,৪৮।এদের মধ্যে ২৩ তম পদের প্রথম ৬টি লাইন পাওয়া গিয়েছে বাকি ৪টি পাওয়া যায় নি।
সাহিত্যমানঃ
চর্যাপদের প্রথম পদ __” কা আ তরুবর পঞ্চ বি ডাল”
শবরপার একটি পদে দেখা যায় নরনারীর প্রেমের এক অপূর্ব চিত্রণ-
উঁচা উঁচা পাবত তঁহি বসই সবরী বালী।
মোরঙ্গি পীচ্ছ পরহিণ সবরী গীবত গুঞ্জরী মালী।।
উমত সবরো পাগল শবরো মা কর গুলী গুহাডা তোহৌরি।
ণিঅ ঘরণী ণামে সহজ সুন্দারী।।
ণাণা তরুবর মৌলিল রে গঅণত লাগেলি ডালী।
একেলী সবরী এ বণ হিণ্ডই কর্ণ কুণ্ডলবজ্রধারী।।
(পদ ২৮, অর্থাৎ- উঁচু পর্বতে শবরী বালিকা বাস করে। তার মাথায় ময়ূরপুচ্ছ, গলায় গুঞ্জামালিকা। নানা তরু মুকুলিত হলো। তাদের শাখা-প্রশাখা আকাশে বিস্তৃত হলো। শবর-শবরীর প্রেমে পাগল হলো। কামনার রঙে তাদের হৃদয় রঙিন ও উদ্দাম। শয্যা পাতা হলো। শবর-শবরী প্রেমাবেশে রাত্রিযাপন করলো।)
আবার সমাজ ও মানুষের প্রতি অকৃত্রিম দরদও আধুনিক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ঢেণ্ঢণের পদে দেখা যায়– “টালত মোর ঘর নাহি পরবেষী। / হাড়ীত ভাত নাঁহি নিতি আবেশী।” (পদ ৩৩, অর্থাৎ- টিলার উপর আমার ঘর, কোনও প্রতিবেশী নেই। হাঁড়িতেও ভাত নেই, তবু নিত্য অতিথি আসে।)
কোনও কোনও পদে নিছক দর্শনকথা অসামান্য চিত্ররূপের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে।
চাটিল লিখছেন– “ভবণই গহণগম্ভীরা বেগেঁ বাহী। দুআন্তে চিখিল মাঝেঁ ন ঠাহী।” (পদ ৫, অর্থাৎ- ভবনদী গহন ও গম্ভীর অর্থাৎ প্রবল বেগে প্রবহমান। তার দুইতীর কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল।)
আবার কখনও বা তত্ত্বের ব্যাখ্যায় যে প্রহেলিকার অবতারণা করা হয়েছে, সেগুলিও অসামান্য সাহিত্যগুণমণ্ডিত হয়ে উঠেছে। যেমন: কুক্কুরীপাদ লিখেছেন– “দুলি দুহি পিটা ধরণ ন জাই। / রুখের তেন্তুলি কুম্ভীরে খাঅ।।” (পদ ২, অর্থাৎ- মাদী কাছিম দোহন করে দুধ পাত্রে রাখা যাচ্ছে
না। গাছের তেঁতুল কুমিরে খাচ্ছে।)
আবার চর্যায় মোট ৬টি প্রবাদ বাক্য পাওয়া যায়। যেমন___ “ আপনা মাংসে হরিণা বৈরি”
এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।