শব্দ দূষণ
Noise pollution
পারস্পরিক যোগাযোগ ও ভাব আদান-প্রদানের জন্য শব্দ প্রয়োজন। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় শব্দ ও কোলাহলো অসহ্য লাগে। বিভিন্ন উৎস থেকে উৎপন্ন জোরালো এবং অপ্রয়োজনীয় শব্দ যখন মানুষের সহনশীলতার মাত্রা ছাড়িয়ে বিরক্তি ঘটায় এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধন করে তখন তাকে শব্দ দূষণ বলে। মাইকের অবাধ ব্যবহার, ঢোলের শব্দ, বোমাবাজি, পটকা ফোটানোর আওয়াজ, কল কারখানার শব্দ, গাড়ির হর্নের আওয়াজ, উচ্চ ভলুমে চালিত টেপ রেকর্ডার ও টেলিভিশনের শব্দ, পুরনো গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ, উড়োজাহাজ ও জঙ্গী বিমানের তীব্র শব্দ প্রভৃতি শব্দ দূষণের প্রধান কারণ। অবিরাম তীব্র শব্দ মানসিক উত্তেজনা বাড়ায় ও মেজাজ খিটখিটে করে। শব্দ দূষণ বমি বমি ভাব, ক্ষুধা মন্দা, রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্কের জটিল রোগ,অনিদ্রাজনিত অসুস্থতা, ক্লান্তি ও অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়া, কর্মক্ষমতা হ্রাস, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মাথা ঘোরা প্রভৃতি ক্ষতিকারক প্রভাব সৃষ্টি করে। হঠাৎ তীব্র শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তি নষ্ট করতে পারে। বর্তমানে শব্দ দূষণ মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করছে। এর কবলে পড়ে প্রায়ই অসুস্থ রোগী এবং পরীক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। শব্দ দূষণের হাত থেকে বাচাঁর উপায় হলো শব্দ কমানো। এপ্রসঙ্গে আমরা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। যে কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানে উচ্চস্বরে মাইক বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে। উৎসবে পটকা, বাজি ফাটানো প্রভৃতি নিষিদ্ধ করতে হবে। গাড়ির হর্ন অযথা বাজানো বা জোরে বাজানো পরিহার করা উচিত। কম শব্দ উৎপাদনকারী ইঞ্জিন বা যন্ত্রপাতি তৈরি এবং লোকালয় থেকে দূরে কলকারখানা ও বিমান বন্দর স্থাপন করেও আমরা শব্দদূষণের হাত থেকে রেহাই পেতে পারি। শহরের মাঝে মাঝে উন্মুক্ত জায়গা রাখা এবং রাস্তার ধারে শব্দ শোষণকারী গাছপালা লাগানো উচিত। কলকারখানায় শব্দ শোষণ যন্ত্রের ব্যবহার চালু করে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
শ্রাব্যতার সীমা ও এদের ব্যবহার
Audibility range and their uses
আমরা জানি, বস্তুর কম্পন ছাড়া শব্দ উৎপনড়ব হয় না। যদি কোনো বস্তু প্রতি সেকেন্ডে কমপক্ষে 20 বার কাঁপে তবে সেই বস্তু থেকে উৎপনড়ব শব্দ শোনা যাবে। এভাবে আবার কম্পন যদি প্রতি সেকেন্ডে 20,000 বার এর বেশি হয় তাহলেও শব্দ শোনা যাবে না। সুতরাং আমাদের কানে যে শব্দ শোনা যায় তার কম্পাঙ্কের সীমা হলো 20 Hz থেকে 20,000 Hz। কম্পাঙ্কের এই পাল্লাকে শ্রাব্যতার পাল্লা (audible range) বলে। যদি কম্পাঙ্ক 20 ঐু এর কম হয় তবে তাকে শব্দেতর (Infrasonic) কম্পন বলে। যদি কম্পাঙ্ক 20,000 Hz এর বেশি হয় তবে তাকে শব্দোত্তর (Ultrasonic) কম্পন বলে। শব্দোত্তর কম্পাঙ্কের শব্দ মানুষে শুনতে না পেলেও বাদুর, কুকুর, মৌমাছির ন্যায় কিছু কিছু প্রাণী উৎপন্ন করতে পারে আবার শুনতেও পারে।
শব্দোত্তর শব্দের প্রয়োগ ও ব্যবহার :
সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয়: সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয়ের জন্য SONAR নামক যন্ত্র ব্যবহৃত হয়। SONAR এর পূরো নাম Sound Navigation And Ranging. এই যন্ত্রে শব্দোত্তর কম্পাঙ্কের শব্দ প্রেরণ ও গ্রহণের ব্যবস্থা আছে।পানির মধ্যে এই যন্ত্রের সাহায্যে শব্দোত্তর কম্পাঙ্কের শব্দ উৎপন্ন করে প্রেরণ করা হয় এবং এই শব্দ সমুদ্রের তলদেশে বাঁধা পেয়ে আবার উপরে উঠে আসলে গ্রাহক যন্ত্রের সাহায্যে গ্রহণ করা হয়। শব্দ প্রেরণ ও গ্রহণের সময় রেকর্ড করে বিয়োগ করলে শব্দের ভ্রমণকাল বের করা হয়। ধরা যাক এই সময় t এবং সমুদ্রের গভীরতা d যদি পানিতে শব্দের বেগ v হয় তবে,শব্দ যাওয়া ও আসা মিলে d + d = 2d পথ অতিক্রম করে। এখন শব্দের বেগ জেনে উপরের সমীকরণের সহায্যে সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয় করা যায়।
কাপড়ের ময়লা পরিস্কার করা: আজকাল আধুনিক ওয়াশিং মেশিন বের হয়েছে যার দ্বারা সহজে কাপড় পরিস্কার করা যায়। পানির মধ্যে সাবান বা গুড়ো সাবান মিশ্রিত করে কাপড় ভিজিয়ে রেখে সেই পানির মধ্যে শব্দোত্তর কম্পনের শব্দ প্রেরণ করা হয়। এই শব্দ কাপড়ের ময়লাকে বাইরে বের করে আনে এবং কাপড় পরিস্কার হয়ে যায়।
রোগ নির্ণয়ে : মানুষের দেহের অভ্যন্তরীণ ছবি এক্স-রে দ্বারা যেমন তোলা যায় তেমন শব্দোত্তর কম্পনের শব্দের সাহায্যে ছবি তুলে রোগ নির্ণয় করা যায়। এই প্রক্রিয়ার নাম আল্ট্রাসনোগ্রফি (Ultrasonography)। এই শব্দ দেহের অভ্যন্তরে প্রেরণ করা হয় এবং প্রতিফলিত শব্দকে আলোক শক্তিতে রূপান্তর করে টেলিভিশনের পর্দায় ফেলা হয়। ফলে কোনো রোগ থাকলে ধরা পড়ে।
চিকিৎসাক্ষেত্রে: দাঁতের স্কেলিং বা পাথর তোলার জন্য শব্দোত্তর কম্পনের শব্দ ব্যবহৃত হয়। কিডনির ছোট পাথর ভেঙে গুড়া করে তা অপসারণের কাজেও এই শব্দ ব্যবহৃত হয়।
অন্যান্য কাজে: ধাতব পিণ্ড বা পাতে সূক্ষ্মতম ফাটল অনুসন্ধানে,সূক্ষ্ম ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করার কাজে, ক্ষতিকর রোগজীবাণু ধ্বংসের কাজেও শব্দোত্তর কম্পনের শব্দ ব্যবহৃত হয়।
শব্দেতর কম্পাঙ্কের শব্দের ব্যবহার :
শব্দেতর কম্পনের সীমা হচ্ছে 1 Hz থেকে 20 Hz। এই কম্পনের শব্দ মানুষ শুনতে পায়না তবে কোনো কোনো জীব-জন্তু শুনতে পায়। হাতি এই কম্পনের শব্দ দ্বারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। কোনোরূপ বিকৃতি ছাড়া এই শব্দ বহুদূর পর্যন্ত যেতে পারে। ভূমিকম্প এবং পারমাণবিক বিস্ফোরণের সময় এই শব্দেতর কম্পনের সৃষ্টি হয় এবং প্রবল ঝাকুনির মাধ্যমে ধ্বংস যজ্ঞ চালায়।
এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।