রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপের রূপান্তর
সাধারণ তথ্য :
- রাসায়নিক পরিবর্তনে পদার্থের অণুসমূহের উপাদান ও অণুর গঠন প্রকৃতির স্থায়ী পরিবর্তন ঘটে।
- প্রকৃতপক্ষে সব রাসায়নিক পরিবর্তনে তাপ শক্তির পরিবর্তন ঘটে।
- ভৌত পরিবর্তনের ফলে পদার্থের বাহ্যিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে, এর ফলে নতুন কোন অণুর সৃষ্টি হয় না।
- তাপোৎপাদী বিক্রিয়া :
যে রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে তাপ শক্তি উৎপন্ন হয় এবং বিক্রিয়া অঞ্চলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় তাকে তাপোৎপাদী বিক্রিয়া বলে। যেমন-
N2 + 3H2 = 2NH3 + তাপ (92.38 কিলোজুল মোল-1)
2SO2 + O2 = 2SO3 + তাপ (189.12 কিলোজুল মোল-1)
C + O2 = CO2 + তাপ (393.5 কিলোজুল মোল-1)
- তাপহারী বিক্রিয়া :
যে রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে তাপ শক্তি শোষিত হয় এবং বিক্রিয়া অঞ্চলের তাপমাত্রা হ্রাস পায় তাকে তাপহারী বিক্রিয়া বলে। যেমন-
N2 + O2 ⇌ 2NO – তাপ (180.75 কিলোজুল মোল-1)
3O2 ⇌ 2O3 – তাপ (284.51 কিলোজুল মোল-1)
C + 2S ⇌ CS2 – তাপ (92.05 কিলোজুল মোল-1)
- সকল দহন বিক্রিয়া তাপোৎপাদী বিক্রিয়া।
ব্যতিক্রম- N2 + O2 ⇌ 2NO – তাপ (180.75 কিলোজুল মোল-1)
- সকল প্রশমন বিক্রিয়া তাপোৎপাদী।
- বিক্রিয়কের অভ্যন্তরীণ শক্তি > উৎপাদের আভ্যন্তরীণ শক্তি → তাপোৎপাদী বিক্রিয়া
- বিক্রিয়কের অভ্যন্তরীণ শক্তি < উৎপাদের আভ্যন্তরীণ শক্তি → তাপহারী বিক্রিয়া
- বিক্রিয়কের শক্তি = উৎপাদের শক্তি + নির্গত শক্তি; তাপোৎপাদী বিক্রিয়া
- বিক্রিয়কের শক্তি + শোষিত শক্তি = উৎপাদের শক্তি; তাপহারী বিক্রিয়া
- বন্ধন ভাঙনে শোষিত শক্তি > বন্ধন সৃষ্টির সময় বিমুক্ত শক্তি : তাপহারী বিক্রিয়া
- বন্ধন সৃষ্টির সময় বিমুক্ত শক্তি > বন্ধন ভাঙনে শোষিত শক্তি : তাপোৎপাদী বিক্রিয়া
- তাপোৎপাদী বিক্রিয়ায়, ∆H = -ve
- তাপহারী বিক্রিয়ায়, ∆H = +ve
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :
- কোন বস্তুতে সঞ্চিত স্থিতিশক্তি ও গতিশক্তির মোট সমষ্টিকে ঐ বস্তুর অভ্যন্তরীণ শক্তি বলে। একে দ্বারা E প্রকাশ করা হয়।
- এনথালপিকে H দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
H = E + PV (এখানে, P= চাপ, V= আয়তন)
- জুল ও ক্যালরির পারস্পরিক সম্পর্ক হচ্ছে- 1 Cal = 4.184 Joule
- নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন হতে অ্যামোনিয়া উৎপাদনের ক্ষেত্রে 400°-500°C তাপমাত্রা ব্যবহৃত হয়।
- প্রমাণ অবস্থায় যে কোন মৌলের সংগঠন তাপ শূণ্য।
- প্রমাণ অবস্থায় সকল মৌল ও মৌলিক গ্যাসের অভ্যন্তরীণ শক্তি শূণ্য।
- প্রমাণ বিক্রিয়া তাপের ক্ষেত্রে প্রমাণ অবস্থা বলা হয় 25°C তাপমাত্রা এবং বায়মণ্ডলীয় চাপকে।
- স্থির আয়তনে বিক্রিয়া তাপ, Qv= ∆H
- স্থির চাপে বিক্রিয়া তাপ, Qp= Qv+∆nRT
- হেসের তাপ সমষ্টিকরণ সূত্রের গাণিতিক রূপ :
∆H1= ∆H2+∆H3
এখানে ∆H= শক্তির পরিবর্তন
- ∆H<0, বিক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটবে।
- ∆G<0, বিক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটবে।
- ∆H>0, বিক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটবে। তবে ব্যতিক্রম আছে।
- ∆G >0বিক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটবে না।
- দ্রবণ তাপে দ্রবের পরিমাণ ১ মোল এবং দ্রাবকের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি হতে হয়।
- কার্বনের প্রমাণ দহন তাপ = 787 কিলোজুল
- তীব্র এসিড ও তীব্র ক্ষারের প্রশমন তারে মান 57.32 কিলোজুল
- স্পর্শ প্রণালীতে H2SO4 প্রস্তুতির সময় 175.7 কিলোজুল তাপ উৎপন্ন হয়।
25°C তাপমাত্রায় তীব্র এসিড ও তীব্র ক্ষারকের প্রশমন তাপ, ∆H | ||
এসিড | ক্ষারক | প্রশমন তাপ, ∆H (kj) |
HCl | NaOH | -57.34 |
H2SO4 | NaOH | -57.44 |
HNO3 | NaOH | -57.35 |
HCl | KOH | -57.43 |
গড় বন্ধন এনথালপি |
|
বন্ধন | kj/mol |
H-H | 435.5 |
H-Cl | 432 |
C-H | 415 |
Cl-Cl | 243 |
C-C | 344 |
H-F | 563 |
H-Br | 366 |
H-I | 299 |
O-H | 463 |
C-Cl | 328 |
কতিপয় সংজ্ঞা:
- গঠন তাপ : প্রমাণ অবস্থায় কোন যৌগের উপাদান মৌলসমূহ থেকে এর এক মোল উৎপাদনকালে এনথালপি এর যে পরিবর্তন ঘটে তাকে যৌগটির গঠন তাপ বা গঠন এনথালপি বলে। 25°C তাপমাত্রায় ও 1 atm চাপে গঠন এনথালপিকে ∆H°f দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
- দহন তাপ : নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও 1 atm চাপে 1 মোল কোন মৌলিক বা যৌগিক পদার্থকে অক্সিজেনে সম্পূর্ণরূপে দহন করলে এনথালপির যে পরিবর্তন ঘটে, তাকে দহন তাপ বা দহন এনথালপি বলে। প্রমাণ অবস্থায় কোন পদার্থের এক মোলকে অক্সিজেনে সম্পূর্ণরূপে দহন করলে এনথালপির যে পরিবর্তন ঘটে তাকেই ঐ পদার্থের দহন তাপ বা প্রমাণ দহন এনথালপি বলে। একে ∆H°C দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
- দ্রবণ তাপ : একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় যথেষ্ট পরিমাণ দ্রাবকে এক মোল দ্রবকে দ্রবীভূত করে যদি দ্রবণ প্রস্তুত করা হয় এবং তাতে যদি আরো দ্রাবক যোগ করেও তাপীয় অবস্থায় কোন পরিবর্তন ঘটানো না যায় তবে ঐ দ্রবণ প্রস্তুত করতে তাপের যে পরিবর্তন ঘটে তাকে ঐ দ্রবের দ্রবণ তাপ বলে।
- প্রশমন তাপ : 25°C তাপমাত্রায় এসিড প্রদত্ত 1 mol H+ কে ক্ষারকের লঘু দ্রবণ দ্বারা প্রশমিত করে 1 mol পানির উৎপন্ন হওয়ার কালে যে পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয় তাকে প্রশমন তাপ বা প্রশমন এনথালপি বলে। সকল তীব্র এসিড ও তীব্র ক্ষারকের প্রমশন তাপের মান সমান এবং তা -57.34 kj।
- দ্বি-বিযোজন বিক্রিয়া :
নোট : এই অধ্যায়ের তাপোৎপাদী ও তাপাহারী বিক্রিয়ার উদাহরণ এবং উৎপন্ন তাপ বা শোষিত তাপের মানগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ । অনেক সময় উত্তর যাচাই করার জন্য সংজ্ঞাগুলোর সাহায্যের দরকার হয় ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন :
২০০৮-০৯
একটি দানাদার যৌগ। এর পানিতে দ্রবীভূত হবার পর্যায় ∆H = -50kj ও সংশ্লিষ্ট এনথালপি ∆H2= +10kj । তাহলে, যৌগটির পানি যোজন এনথালপি,
∆H = ∆H1 + ∆H2
∆H1= ∆H – ∆H2
= -50 – 10
= -60 kj
- 10 g পানি 4°C থেকে 14°C তাপমাত্রায় উন্নীত করতে প্রয়োজন- 100 Cal তাপ
২০০৩-০৪
- বায়ুর অনুপস্থিতিতে উচ্চমাত্রায় (600°C) কাঠকে দহন করলে পাওয়া যাবে- কোক
১৯৯৯-২০০০
- দ্বি-বিযোজন বিক্রিয়া- AgNO3 + NaCl ⇒ AgCl + NaNO3
- দ্রবণ তাপ- দ্রবণ প্রস্তুতকালে উৎপন্ন বা শোষিত তাপ
১৯৯৮-১৯৯৯
- তাপহারী বিক্রিয়া- N2 + O2 ⇒ 2NO
১৯৯৭-১৯৯৮
- দ্বি-বিযোজন বিক্রিয়া- AgNO3 + NaCl ⇒ NaNO3 + AgCl
- অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন :
- কোন বন্ধনটি সবচেয়ে শক্তিশালী- N≡N (N-H, C≡C, C═O)
- প্রমাণ অবস্থায় সকল মৌলের সংগঠন তাপ- 0
রসায়ন ১ম পত্রের সকল অধ্যায় দেখতে এখানে যান
0 responses on "উচ্চ মাধ্যমিক এইচএসসি রসায়ন ১মপত্র : রাসানিক বিক্রিয়ায় শক্তির রূপান্তর"