
সরকারের নিয়মকানুন না মেনে পরিচালিত ৫১টি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করেছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া আরও ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের কারণ দর্শানোর জবাব পর্যালোচনা করছে। জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জবাবদিহি, স্বচ্ছতা ও শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমতি দেওয়ার সময় নিজস্ব জমিতে ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান তা শর্ত ভঙ্গ করেছে। একাধিকবার তাদের নোটিস দিলেও নিজস্ব ক্যাম্পাসে যায়নি। সর্বশেষ তাদের শোকজ করা হয়েছে। তাও অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান শোকজের জবাব পর্যন্ত দেয়নি। যারা জবাব দিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যারা জবাব দেয়নি তাদের একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিল করার প্রত্রিæয়া শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছি।
বোর্ড সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে ৪৬১টি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট রয়েছে। ৩০-৩৫টি বাদে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। শিক্ষার মান নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। বোর্ড ও বেসরকারি মালিকদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে এ খাত। এরপরও থেমে নেই নতুন প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের। কারিগরি শিক্ষা বিস্তারের জন্য বরাদ্দকৃত বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বোর্ড ও বেসরকারি পলিটেকনিকের একটি সিন্ডিকেট। অনৈতিক সুবিধার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কঠোর অবস্থানের কারণে সম্প্রতি নিজস্ব ক্যাম্পাসে না যাওয়া ৮৭টি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানো হয়। প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি বা পাঠদান কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে এক মাসের মধ্যে জবাব চায় বোর্ড। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পরেও মাত্র ৩৬টি প্রতিষ্ঠান জবাব দিয়েছে। এর আগে ২০১৩ সালে এক মাস সময় বেঁধে দিয়ে শোকজ করলেও জবাব পায়নি বোর্ড।
বোর্ডের পরিদর্শন শাখার কর্মকর্তারা জানান, যারা জবাব দিয়েছে তা সন্তোষজনক না। নিজস্ব জমিতে না যাওয়ার কারণ হিসেবে আর্থিক সমস্যা, নিজস্ব জমিতে গেলে শিক্ষার্থী না পাওয়া, যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপের কথা বলা হয়েছে মালিকদের পক্ষ থেকে। এই অবস্থায় বেসরকারি কারিগরি শিক্ষালয়ের শৃঙ্খলা আনতে প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি সাময়িক স্থগিত করতে পারে বোর্ড।
বোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী, বেসরকারি পলিটেকনিকের জন্য একশ পঞ্চাশ থেকে দুইশত বর্গফুট বিশিষ্ট নয়টি সাধারণ কক্ষ, প্রতিটি টেকনোলজির জন্য চারটি শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষকদের বসার জন্য দুটি পৃথক কক্ষ, পদার্থ ও রসায়নের জন্য দুইশ বর্গফুটের জন্য দুটি পৃথক কক্ষ থাকতে হবে। তাছাড়া সিভিল/আর্কিটেকচার কোর্সের জন্য চারশ থেকে ছয়শ বর্গফুটের ১০টি ল্যাবরেটরি, ওয়ার্কশপ, মেকানিক্যাল টেকনোলজির জন্য চারশ থেকে ছয়শ বর্গফুটের আটটি, ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজির জন্য ছয়টি, ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজির জন্য পাঁচটি, কম্পিউটার টেকনোলজির জন্য ছয়টি, পাওয়ার টেকনোলজির জন্য পাঁচটি পৃথক ল্যাবরেটরি ও ওয়ার্কশপ থাকতে হবে। কিন্তু ৯০ ভাগ প্রতিষ্ঠানে এসব নেই।
কারিগরি বোর্ডের উপ-পরিদর্শক বিজয় কুমার নাথ বলেন, কারিগরি শিক্ষাকে সরকার সর্ব্বোচ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে কারিগরিতে ভর্তির হার ২০ ভাগের বেশি করার জন্য কাজ চলছে। আমরা চাই ভর্তির হার বাড়ার পাশাপাশি শিক্ষার মান ঠিক রাখতে। কিন্তু এখানে কিছুটা বিশৃঙ্খলা রয়েছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতেই কারণ দর্শানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নিজস্ব ক্যাম্পাসে না যাওয়া প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমিসংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে। সেখানে জমির মৌজা, খতিয়ান, জমির পরিমাণ, দলিল নাম্বার, রেজিস্ট্রার অফিসের নাম ঠিকানা, নামজারির তারিখ এবং সর্বশেষ খাজনা দেওয়ার কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। যারা এসব জমা দিয়েছে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন: