
শিশু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মুগ্ধ হয়েছেন দিনাজপুরের ছয় বৃদ্ধ শিক্ষার্থী। সোমবার (১ জানুয়রি)বই উৎসবে নতুন বই নিয়েছেন ছয় বৃদ্ধ।
নবাবগঞ্জের উপজেলার মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির এ ছয় শিক্ষার্থী হলেন সিদ্দিক মিয়া, বজলুর রশিদ, শাহিনুর আলম, আব্দুল লতিফ, বাদশা মিয়া ও বদিয়াজ্জামান প্রথম শ্রেণি পাস করে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠেছেন।
গতকাল সোমবার (১ জানুয়ারি সকাল ১০টায় এই ছয়জন নতুন বই নেয়ার জন্য স্কুলে আসেন। শিক্ষকরা তাদের হাতে নতুন বই তুলে দেন।
ওই ছয় বৃদ্ধ শিক্ষার্থী বলেন, পাস করা এবং নতুন বই পাওয়ার আনন্দটাই আলাদা। আমাদের মনে হচ্ছে, আমরা যেন শিশু বয়সে ফিরে গেছি। শিক্ষকরাও আমাদেরকে অনেক সম্মান দিয়ে পড়া লেখা করিয়ে থাকেন। আমরা এই স্কুলের শিশু শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞ যে তারা আমাদেরকে সহজভাবে নিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছেন। আমরা পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই।
৬৩ বছর বয়সী বদিয়াজ্জামান জানান, তার স্ত্রী খুব সকালে উঠে খাবার তৈরি করেন আর নাতি তাকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য ডেকে তোলে। তার নাতিও ওই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। ভাত খেয়েই নাতিকে নিয়ে চলে যান বিদ্যালয়ে। তারপর দুপুরে ছুটি শেষে আবার বাড়ি ফেরেন।
তিনি জানান, এই বয়সে বিদ্যালয়ে যেতে পেরে তিনি খুব খুশি। তেমনি তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েও খুশি।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের পাশাপাশি ১১ জন বৃদ্ধ শিক্ষা গ্রহণ করছেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন তারা। এক বছর থেকে স্কুলের নিয়ম কানুন মেনে নিয়মিত নাতি-নাতনির বয়সী ছোট শিশুদের সঙ্গে ক্লাস করছেন তারা। অংশ নিচ্ছেন শরীর চর্চাসহ বিভিন শিক্ষা কার্যক্রমে। শিশুদের সঙ্গে গলা ছেড়ে জাতীয় সঙ্গীতও পরিবেশন করছেন। তারা খুব আগ্রহের সঙ্গেই ক্লাসে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহিদুল ইসলাম জানান, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথমে দুইজন বৃদ্ধ তার সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কথা জানান। এ সময় তিনি জানুয়ারি মাসে তাদের ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। পরে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনেই একসঙ্গে সাতজন ভর্তি হন। এর তিনদিন পরে ভর্তি হন আরও চারজন। এখানে মোট ১১ জন বৃদ্ধ শিক্ষা গ্রহণ করছেন। নিয়মিত তারা বিদ্যালয়ে আসছেন এবং তাদের শেখার আগ্রহও অনেক। কিছু না পারলে বা না জানলে শিক্ষকদের কাছে বুঝে নেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেনাজুল হায়দার জানান, বয়স বেশি হওয়ায় ভর্তি নেয়া যাবে কি না এ বিষয়ে প্রথমে সমস্যা হয়। পরে শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করলে শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, ছয় বছরের বেশি বয়সী শিশুকে ভর্তি করার নিয়ম আছে। বয়স বেশি হলে ভর্তিতে কোনো বাধা নেই। তখন ওই বৃদ্ধদেরকে ভর্তি করে নেয়া হয়। এদের মধ্যে ছয়জন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উর্ত্তীণ হয়েছেন। বাকী পাঁচজন ঠিকমত শিখতে না পারায় আবারও প্রথম শ্রেণিতে থাকতে চান। তাই তারা পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেননি। তবে তারা নিয়মিত স্কুলে আসবেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, এরা সবাই গরীব। তাই সাধারণ শিশুদের মত তাদেরও উপবৃত্তি দেয়ার ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনের কাছে জানানো হয়েছে।
আরো পড়ুন: