
দেশজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হচ্ছে। রাজধানীতে কেন্দ্রীয়ভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে রঙিন বেলুন উড়িয়ে পাঠ্যপুস্তক উৎসবের উদ্বোধন করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
সোমবার (০১ জানুয়ারি) সকাল সোয়া ১০টায় রাজধানীর আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে পাঠপুস্তক উৎসব উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী।
স্কুল মাঠে এ উৎসব আয়োজনে নতুন বই ও রঙিন সাজে সজ্জিত হয়ে যোগ দেয় রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।উৎসবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোথাও কোনো ব্যত্যয় হয়নি, ছোটখাট ত্রুটি থাকতে পারে।নতুন ১২টি বই তৈরি করা হয়েছে। এসব বই ছোট করে সুখপাঠ্য করা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা কম পড়ে বেশি শিখতে পারে। শিক্ষাবিদদের পরামর্শে এবার অন্যান্য শ্রেণির বইয়ে কিছু পরিবর্তন আানা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রী জানান, এবার ৯৬৩ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর হাতে ৮ হাজার ৫০৫টি ব্রেইল বই তুলে দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে মোবাইলের মতো যন্ত্র দিচ্ছি, যাতে তারা কানে লাগিয়ে পড়তে পারে।
নাহিদ আরও বলেন, ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৬০ কোটি ৮৫ লাখ ৯১ হাজার ২৯০টি বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গেলে অনেকে জানতে চায়, জেনে অবাকও হয়। আমরা বিভিন্ন দিক দিয়ে পিছিয়ে গেলেও পাঠ্যপুস্তকে পিছিয়ে নেই বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
নতুন বছরের প্রথম দিনই সোমবার দেশের প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সাড়ে চার কোটি স্কুল শিক্ষার্থীর হাতে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ নতুন ঝকঝকে টেক্সটবুক তুলে দিয়ে ইংরেজী নববর্ষ শুরু করেছে বাংলাদেশ। আয়োজন ঘিরে রাজধানীসহ দেশজুড়ে স্কুলে স্কুলে উদযাপিত হচ্ছে ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব’। উৎসবের আবহে বছরের প্রথম দিন খালি হাতে স্কুলে এসে হাতে নিচ্ছে বিনামূল্যের ঝকঝকে নতুন বই। রাজধানী থেকে শুরু করে উৎসব চলছে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামের স্কুলে স্কুলে।
এদিকে সরকারের যুগান্তকারী এ কর্মযজ্ঞের হিসাব বলছে, গত বছরের চেয়ে এবার ১০ লাখ ৭০ হাজার ৯৬৬ শিক্ষার্থী বেড়েছে। ফলে এবার ৭১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬৯ বই বেশি ছাপা হয়েছে। গেল আট বছরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ২২৫ কোটি ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৭৫০ বই ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। আজ নতুন বছরের প্রথম দিন ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২ বই মিলিয়ে মোট ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ এক হাজার ৯১২ বই বিতরণ করতে যাচ্ছে সরকার।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলছিলেন, শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো বই তুলে দেয়াটা ছিল চ্যালেঞ্জ। এ জন্য শুরু থেকেই এনসিটিবি, বইয়ের মনিটরিংয়ে থাকা দুটি পরিদর্শন টিম, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর ছিল। শুরুতে নানা জটিলতা দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ের আগেই ছাপানোর কাজ শেষ হয়।
এদিকে সরকারের এ বিশাল কর্মযজ্ঞের তথ্য দেখলেই স্পষ্ট হয় প্রায় প্রতিবছরই বেড়েছে বিনামূল্যের বইয়ের সংখ্যা। দু‘একবার সামান্য কমলেও তার পরিমাণও ছিল বিশাল। ২০১০ সালে ১৯ কোটি ৯০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৬১ কপি, ২০১১ সালে ২৩ কোটি ২২ লাখ ২১ হাজার ২৩৪ কপি, ২০১২ সালে ২২ কোটি ১৩ লাখ ৬৬ হাজার ৩৮৩ কপি, ২০১৩ সালে ২৬ কোটি ১৮ লাখ ৯ হাজার ১০৬ কপি, ২০১৪ সালে ৩১ কোটি ৭৭ লাখ ২৫ হাজার ৫২৬ কপি, ২০১৫ সালে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩ কপি, ২০১৬ সালে ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৭২ কপি, গেল বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে বই ছিল ৩৬ কোটি ২১, লাখ ৮২ হাজার ২৪৫ কপি। আর এবার নতুন বছরে বইয়ের সংখ্যা ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২ কপি।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনোই ছাত্রছাত্রী যেমন পায়নি বিনামূল্যের বই তেমনি বছরের প্রথম দিনও টেক্সটবুক হাতে পায়নি। বরং তা পেতে পেতে মার্চ/ এপ্রিল পার হয়ে যেতো প্রতিবছর। আর এই সুযোগে টেক্সটবুক নিয়ে অসাধু সিন্ডিকেট অস্থির করে তুলত বইয়ের বাজার। মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই প্রথমবারের মতো ২০১০ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের দুই কোটি ৭৬ লাখ ৬২ হাজার ৫২৯ শিক্ষার্থীকে ১৯ কোটির অধিক বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল। পরে একটি বিশেষ মহল এনসিটিবির গুদামে আগুন লাগিয়ে দেয়। শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ২০১১ ও ২০১২ সালে বইয়ের সংখ্যা ২৩ কোটিতে উন্নীত করতে হয়। পরের বছর প্রায় ২৭ কোটি। এরপর পর্যাক্রমে বইয়ের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৬ কোটি।
আরো পড়ুন: