জঙ্গীবাদে উৎসাহিতকরণ এবং নারী নেতৃত্ববিরোধী তথ্য সম্বলিত মাদ্রাসার ৮টি বই বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনস্ত ইবতেদায়ি (প্রথম শ্রেণি) থেকে দশম শ্রেণির ইসলামিক ও আরবি বিষয়সমূহের পরিমার্জিত টেক্সটবুক পর্যালোচনা করে জঙ্গীবাদ ও নারীবিরোধী উপাদানের অস্তিত্বের তথ্য উদঘাটন করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিভাগ। এসব বই পরিমার্জন করে আপত্তিকর অংশগুলো বাদ দিয়ে প্রকাশ ও বিতরণ করার কথা ছিলো। কিন্তু মাদ্রাসা বোর্ডে ঘাপটি মেরে থাকা জামাতপন্থী শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা এসব বই ছেপে মাদ্রাসায় পাঠিয়েছে। নতুন করে এই আটটি বই ছেপে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের পহেলা জানুয়ারির আগে মাদ্রাসায় পৌঁছাতে সরকারের গচ্চা যাবে ৩৪ কোটি টাকা।
জানা যায়, ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে অনুষ্ঠিত এক সভায় আলোচনা হয় যে, মাদ্রাসা শিক্ষা কারিকুলামে কুরআন-হাদিসের ব্যানারে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষার পরিবর্তে সন্ত্রাস, জঙ্গী ও মওদুদী দর্শণের শিক্ষাদান করে যাচ্ছে।
সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড যেভাবে প্রাইমারি ও হাইস্কুলের পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন ও বই পুস্তক প্রস্তুত করার দায়িত্বে রয়েছে, সেভাবে মাদ্রাসার পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন এবং বইপুস্তক প্রস্তুত করার জন্য এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পূর্ব পরীক্ষা করা যেতে পারে।’ কিন্তু পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে এই বইগুলো ছাপা হয়ে মাদ্রাসায় পৌছে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
বইয়ের আপত্তিকর অংশগুলো:
আটটি বইয়ের মধ্যে নবম-দশম শ্রেণির কুরআন মজীদ ও তাজভিদ, ৭ম শ্রেণির আল লুগাতুল আরাবিয়াতুল ইত্তেসালিয়াহ, অষ্টম শ্রেণির আল লুগাতুল আরাবিয়াতুল ইত্তেসালিয়াহ ও কুরআন মজিদ এবং আকাইদ ও ফিকহ, নবম-দশম শ্রেণির হাদিস শরীফ, ৭ম শ্রেণির হাদীস শরীফ এবং কুরআন মজিদ।
নবম -দশম শ্রেণির কুরআন মজীদ ও তাজভিদ বইয়ের ৪২৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘একজন নেতা হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো পুরুষ হওয়া। কোন মহিলা ইসলামী সমাজ বা রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিতে পারবে না।
এদিকে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো: শাহজাহান আলম সাজু আজ ২৬ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে পাঠ্যবইয়ে বিতর্কিত বিষয় সংযোজনের সঙ্গে যুক্ত ৩২ জন লেখক, সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে শাস্তির আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন।
স্বাশিপের মতে, এইসব লেখকরা জামাতপন্থী এবং একটি বিশেষ শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এই আটটি বই কেন পুণরায় ছাপা হলো এবং মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেয়া হলো তা খুঁজে বের করতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের আহ্বান জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে মাদরাসা বোর্ড এবং ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ও তাদের সিন্ডিকেট এবং গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে প্রত্যাহারের দাবী জানানো হয়।
অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেন, ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক একটি চক্র অত্যন্ত সুকৌশলে মাদরাসার পাঠ্য পুস্তকে অপ্রাসঙ্গিক বিভিন্ন অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করে আগামী নির্বাচনে বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এই ষড়যন্ত্র করেছিল। পাশাপাশি কোমলমতি শিশুদের জঙ্গীবাদের আকৃষ্ট করার জন্য এই সব অপ্রাসঙ্গিক বিষয় পাঠ্য পুস্তকে সন্নিবেশন করেছিল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, স্বাশিপ মাদ্রাসা ইউনিটের আহবায়ক আবু নাঈম মো: মোস্তাফিজুর রহমান, সদস্য-সচিব মাওলানা কাজী জহিরুল ইসলাম, যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক জেহাদী ও অধ্যক্ষ মাওলানা শাহাদৎ হোসেন।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন স্বাশিপ সহ-সভাপতি প্রফেসর মোঃ সাজিদুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান পান্না, হরিচাঁদ মন্ডল সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মোনতাজ উদ্দিন মর্তুজা, অধ্যক্ষ মোকসেদুর রহমান, অধ্যক্ষ তেলোয়াত হোসেন খান, মাদরাসা ইউনিটের যুগ্ম-আহবায়ক মাওলানা আঃ রাজ্জাক জেহাদী, মাওলানা শাহাদাৎ হোসাইন, অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
ঢাকার বাংলাবাজার ও যশোরের একাধিক সূত্রে জানা যায়, আটটি বই বাতিল হওয়ায় বিপাকে পড়েছে নোট-গাইড কোম্পানীগুলো। যশোরের শিক্ষক নেতা আবদুল মজিদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী নোট-গাইড চক্র। যশোরের মাওলানা নুরুল ইসলামের মালিকানাধীন হেলাল বুক ডিপোর এজেন্টরা প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের নানারকম উপঢৌকন দিয়ে থাকেন।
আরো পড়ুন:
0 responses on "মাদ্রাসার বিতর্কিত ৮ বই বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার"