ভুল সিদ্ধান্তের কারণে স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না সারাদেশের লক্ষাধিক শিক্ষার্থী

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও এবার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না সারাদেশের লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। এছাড়াও অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা বেশি ভর্তির সুযোগ পেতে পারে। কর্মকর্তারা ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে এসব বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য বয়সসীমা নির্ধারণ করেছেন ১১ বছর প্লাস। অথচ চলতি বছর সমাপনীতে অংশ নেওয়া শিশুদের বয়স ১০ প্লাস। এ কারণে তারা বর্তমানে অনলাইনে ভর্তির আবেদন করতে পারছে না। ১৪ ডিসেম্বর এ আবেদন করার সময়সীমা শেষ হচ্ছে।

গত বছর মাউশি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির বয়সসীমা নির্ধারণ করেছিল ১০ বছর প্লাস। এ বছর হঠাৎ করেই এ শ্রেণিতে ভর্তির বয়সসীমা এক বছর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় সন্তানের ভর্তি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন  অভিভাবকরা।

তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব দৈনিকশিক্ষাডটকমকে জানান, ভর্তি নীতিমালায় কেবল প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির বয়সসীমা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এর সঙ্গে হিসাব করে অন্যান্য শ্রেণিতে ভর্তির বয়স জেলা প্রশাসন নির্ধারণ করতে পারে না। কারণ যে শিক্ষার্থী এ বছর প্রাথমিক সমাপনী উত্তীর্ণ হবে, সে কি ষষ্ঠ শ্রেণিতে তাহলে ভর্তি হবে না?’ খুব শিগগিরই একটি সভা আহ্বান করে একট কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

অপরদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদু্জ্জামান দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, রাজধানীর  সরকারি স্কুলগুলোর অভিজ্ঞ প্রধান শিক্ষক এবং অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: মোস্তফা কামালের পরামর্শেই এমনটা করা হয়েছে।

যশোর জিলা স্কুলে ভর্তিচ্ছু সন্তানের অভিভাবক হাসান শাহরিয়ার বলেন, ‘বয়স জটিলতায় এবার লক্ষাধিক মেধাবী শিশু শিক্ষার্থী সরকারি হাইস্কুলে ভর্তি হতে পারছে না। এতে মন ভেঙে যাচ্ছে মেধাবীদের। বয়সজনিত এ জটিলতায় এবার ভর্তির সুযোগ পাবে  অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা।’

বরিশাল জিলা স্কুলে ভর্তিচ্ছু সন্তানের অভিভাবক মজিদা খানাম বলেন, ‘বয়সজনিত জটিলতায় এবার সারাদেশের লক্ষাধিক শিক্ষার্থী সরকারি হাইস্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারছে না। অথচ জেলা প্রশাসন বা স্কুল কর্তৃপক্ষ কেউই গুরুত্বপূর্ণ এ এটি আমলে নিচ্ছেন না। সবার  দায়সারা জবাব।

সব জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ১ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য বয়স কমপক্ষে ৬ বছর (লটারি), তৃতীয় শ্রেণির জন্য ৮ বছর এবং ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ১১ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। বাস্তবে তৃতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থীর বয়স যথাক্রমে ৭ এবং ১০ বছরের বেশি, কিন্তু ৮ ও ১১ বছরের কম। অন্যান্য বছর ৭+ এবং ১০+ বছরের শিক্ষার্থীরাই এ দুটি শ্রেণিতে ভর্তি হতো। কয়েক বছর আগে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের নূ্যনতম বয়স হতে হবে ৬+। যদিও এ আদেশ কার্যকর হয়নি। গত বছর পর্যন্ত আগের নিয়মেই ভর্তি চলেছে।

হঠাৎ বয়স বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তে বেশি অসুবিধায় পড়েছে পঞ্চম শ্রেণিতে সমাপনী দেওয়া শিক্ষার্থীরা। কষ্ট করে ভর্তির প্রস্তুতি নেওয়ার পরও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের। ফলে পরীক্ষা দেওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি থাকার পরও ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারছে না।

সমস্যাটি নিয়ে জামালপুরের জেলা প্রশাসক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠিও দেন।

তবে, অভিভাবকদের হতাশ না হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে রেখেছেন প্রধান শিক্ষকরা। অনলাইনে আবেদন করে রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত যেটি হবে তাই মেনে নিতে হবে। মন্ত্রণালয় নতুন কোনো সংশোধনী দেয় কি-না সেদিকে তাকিয়ে থাকার অনুরাধ করছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার একজন প্রধান শিক্ষক বলেন,  বয়সের এই বাধ্যবাধকতা প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির সময় করা প্রয়োজন ছিল। এই শিক্ষার্থীরা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারলে ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা কেন দিতে পারবে না?

আরো পড়ুন:

৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব মাধ্যমিক সরকারি স্কুলে ভর্তি শেষ করার সিদ্ধান্ত

৪০ শতাংশ এলাকা কোটার সংরক্ষণ করার নির্দেশনা দিয়ে স্কুলে ভর্তির নীতিমালা প্রণয়ন

আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে ভর্তি আবেদন শুরু ১ নভেম্বর

২০১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি  চলছে বিসিএসআইআর উচ্চ বিদ্যালয়ে

সরকারি মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে ভর্তি আবেদন শুরু হবে আগামী ১ ডিসেম্বর

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline