১৬. বিদেশি শব্দে ই-কার ব্যবহার হবে। যেমন— আইসক্রিম, স্টিমার, জানুয়ারি, ফ্রেরুয়ারি, ডিগ্রি, চিফ, শিট, শিপ, নমিনি, কিডনি, ফ্রি, ফি, ফিস, স্কিন, স্ক্রিন, স্কলারশিপ, পার্টনারশিপ, ফ্রেন্ডশিপ, স্টেশনারি, নোটারি, লটারি, সেক্রেটারি, টেরিটরি, ক্যাটাগরি, ট্রেজারি, ব্রিজ, প্রাইমারি, মার্কশিট, গ্রেডশিট ইত্যাদি।
১৭. উঁয়ো (ঙ) ব্যবহার যোগে কিছু শব্দ। এক্ষেত্রে অনুস্বার (ং) ব্যবহার করা যাবে না। যেমন— অঙ্ক, অঙ্কন, অঙ্কিত, অঙ্কুর, অঙ্গ, অঙ্গন, আকাঙ্ক্ষা, আঙ্গুল/আঙুল, আশঙ্কা, ইঙ্গিত, উলঙ্গ, কঙ্কন, কঙ্কর, কঙ্কাল, কুঙ্কুম, গঙ্গা, চোঙ্গা/চোঙা, টাঙ্গা, ঠোঙ্গা/ঠোঙা, দাঙ্গা, পঙ্ক্তি, পঙ্কজ, পঙ্ক, পতঙ্গ, প্রাঙ্গণ, প্রসঙ্গ, বঙ্গ, বাঙালি/বাঙ্গালি, ভঙ্গ, ভঙ্গুর, ভাঙ্গা/ভাঙা, মঙ্গল, রঙ্গিন/রঙিন, লঙ্কা, লঙ্গরখানা, লঙ্ঘন, লিঙ্গ, শঙ্কা, শঙ্ক, শঙ্খ, শশঙ্ক, শৃঙ্খল, শৃঙ্গ, সঙ্গ, সঙ্গী, সঙ্ঘাত, সঙ্গে, হাঙ্গামা, হুঙ্কার।
১৮. অনুস্বার (ং) ব্যবহার যোগে কিছু শব্দ। এক্ষেত্রে উঁয়ো (ঙ) ব্যবহার করা যাবে না। যেমন— কিংবদন্তী, কিংশুক, পাংশু, সংজ্ঞা, সংক্রামণ, সংক্রান্ত, সংক্ষিপ্ত, সংখ্যা, সংগঠন, সংগ্রাম, সংগ্রহ, সংগৃহীত।
[দ্রষ্টব্য: বাংলা ও বাংলাদেশ শব্দ দুটি অনুস্বার (ং) দিয়ে লিখতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধানে তাই করা হয়েছে।]
১৯. ‘কোণ, কোন ও কোনো’-এর ব্যবহার:
কোণ : ইংরেজীতে Angle/Corner (∠) অর্থে।
কোন : উচ্চারণ হবে কোন্। বিশেষত প্রশ্নবোধক অর্থে ব্যবহার করা হয়। যেমন— তুমি কোন দিকে যাবে?
কোনো : ও-কার যোগে উচ্চারণ হবে। যেমন— যেকোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও।
২০. বাংলা ভাষায় চন্দ্রবিন্দু একটি গুরুত্বপূর্ণ বর্ণ। চন্দ্রবিন্দু যোগে শব্দগুলোতে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করতে হবে; না করলে ভুল হবে। অনেক ক্ষেত্রে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার না করলে শব্দে অর্থের পরিবর্তন ঘটে। এ ছাড়া চন্দ্রবিন্দু সম্মানসূচক বর্ণ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। যেমন— তাহাকে>তাঁহাকে, তাকে>তাঁকে ইত্যাদি।
২১. ও-কার: অনুজ্ঞাবাচক ক্রিয়া পদ এবং বিশেষণ ও অব্যয় পদ বা অন্য শব্দ যার শেষে ও-কার যুক্ত না করলে অর্থ অনুধাবনে ভ্রান্তি বা বিলম্ব সৃষ্টি হতে পারে এমন শব্দে ও-কার ব্যবহার হবে। যেমন— মতো, হতো, হলো, কেনো (ক্রয় করো), ভালো, কালো, আলো ইত্যাদি। বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া ও-কার ব্যবহার করা যাবে না। যেমন— ছিল, করল, যেন, কেন (কী জন্য), আছ, হইল, রইল, গেল, শত, যত, তত, কত, এত ইত্যাদি।
২২. বিশেষণবাচক আলি প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই-কার হবে। যেমন— সোনালি, রুপালি, বর্ণালি, হেঁয়ালি, খেয়ালি, মিতালি ইত্যাদি।
২৩. জীব, -জীবী, জীবিত, জীবিকা ব্যবহার। যেমন— সজীব, রাজীব, নির্জীব, চাকরিজীবী, পেশাজীবী, জীবিত, জীবিকা।
২৪. অদ্ভুত, ভুতুড়ে বানানে উ-কার হবে। এ ছাড়া সকল ভূতে ঊ-কার হবে। যেমন— ভূত, ভস্মীভূত, বহির্ভূত, ভূতপূর্ব ইত্যাদি।
২৫. হীরা ও নীল অর্থে সকল বানানে ঈ-কার হবে। যেমন— হীরা, হীরক, নীল, সুনীল, নীলক, নীলিমা ইত্যাদি।
২৬. নঞর্থক পদগুলো (নাই, নেই, না, নি) আলাদা করে লিখতে হবে। যেমন— বলে নাই, বলে নি, আমার ভয় নাই, আমার ভয় নেই, হবে না, যাবে না।
২৭. অ-তৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে ই-কার ব্যবহার হবে। যেমন— সরকারি, তরকারি, গাড়ি, বাড়ি, দাড়ি, শাড়ি, চুরি, চাকরি, মাস্টারি, মালি, পাগলামি, পাগলি, বোমাবাজি, দাবি, হাতি, বেশি, খুশি, হিজরি, আরবি, ফারসি, ফরাসি, ইংরেজী, জাপানি, জার্মানি, ইরানি, হিন্দি, সিন্ধি, ফিরিঙ্গি, সিঙ্গি, ছুরি, টুপি, দিঘি, কেরামতি, রেশমি, পশমি, পাখি, ফরিয়াদি, আসামি, বেআইনি, কুমির, নানি, দাদি, বিবি, চাচি, মাসি, পিসি, দিদি, বুড়ি, নিচু।
২৮. ত্ব, তা, নী, ণী, সভা, পরিষদ, জগৎ, বিদ্যা, তত্ত্ব শব্দের শেষে যোগ হলে ই-কার হবে। যেমন— দায়িত্ব (দায়ী), প্রতিদ্বন্দ্বিতা (প্রতিদ্বন্দ্বী), প্রার্থিতা (প্রার্থী), দুঃখিনী (দুঃখী), অধিকারিণী (অধিকারী), সহযোগিতা (সহযোগী), মন্ত্রিত্ব, মন্ত্রিসভা, মন্ত্রিপরিষদ (মন্ত্রী), প্রাণিবিদ্যা, প্রাণিতত্ত্ব, প্রাণিজগৎ, প্রাণিসম্পদ (প্রাণী) ইত্যাদি।
২৯. ঈ, ঈয়, অনীয় প্রত্যয় যোগ ঈ-কার হবে। যেমন— জাতীয় (জাতি), দেশীয় (দেশি ), পানীয় (পানি), জলীয়, স্থানীয়, স্মরণীয়, বরণীয়, গোপনীয়, ভারতীয়, মাননীয়, বায়বীয়, প্রয়োজনীয়, পালনীয়, তুলনীয়, শোচনীয়, রাজকীয়, লক্ষণীয়, করণীয়।
৩০. রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না৷ যেমন— অর্চনা, অর্জন, অর্থ, অর্ধ, কর্দম, কর্তন, কর্ম, কার্য, গর্জন, মূর্ছা, কার্তিক, বার্ধক্য, বার্তা, সূর্য৷
৩১. ভাষা ও জাতিতে ই-কার হবে। যেমন— বাঙালি/বাঙ্গালি, জাপানি, ইংরেজী, জার্মানি, ইরানি, হিন্দি, আরবি, ফারসি ইত্যাদি।
৩২. ব্যক্তির ‘-কারী’-তে (আরী) ঈ-কার হবে। যেমন— সহকারী, আবেদনকারী, ছিনতাইকারী, পথচারী, কর্মচারী ইত্যাদি। ব্যক্তির ‘-কারী’ নয়, এমন শব্দে ই-কার হবে। যেমন— সরকারি, দরকারি ইত্যাদি।
৩৩. প্রমিত বানানে শব্দের শেষে ঈ-কার থাকলে –গণ যোগে ই-কার হয়। যেমন— সহকারী>সহকারিগণ, কর্মচারী>কর্মচারিগণ, কর্মী>কর্মিগণ, আবেদনকারী>আবেদনকারিগণ ইত্যাদি।
৩৪. ‘বেশি’ এবং ‘-বেশী’ ব্যবহার: ‘বহু’, ‘অনেক’ অর্থে ব্যবহার হবে ‘বেশি’।শব্দের শেষে যেমন— ছদ্মবেশী, প্রতিবেশী অর্থে ‘-বেশী’ ব্যবহার হবে।
এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।