বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়াতি ধরা দুই শিক্ষককে ভর্তি কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়াতি ধরা দুই শিক্ষককে ভর্তি কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তির ঘটনা উন্মোচনকারী দুই শিক্ষককে ভর্তি কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আর জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত বলে অভিযুক্ত শিক্ষক যথারীতি ভর্তি কার্যক্রমে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

এই জালিয়াতির ঘটনায় নাম এসেছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নজরুল ইসলামের। যোগাযোগ করা হলে গতকাল মঙ্গলবার মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে জড়ানো হচ্ছে। পরবর্তী সাক্ষাৎকার বোর্ডে ওই দুই শিক্ষক উপস্থিত থাকলে অস্বস্তিতে পড়তে হবে। তাই উপাচার্য স্যারকে অবহিত করে আমি তাঁদের বোর্ড থেকে বাদ দিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে গত ২৬ থেকে ২৯ নভেম্বর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার ও ভর্তির জন্য ১৭ ডিসেম্বর নির্ধারিত দিন ছিল। ওই দিন মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে ছয় শিক্ষার্থীর আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির কথা স্বীকার করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর তাঁদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এই ছয়জন হলেন ‘বি’ ইউনিটের শামস বিন শাহরিয়ার, রিফাত সরকার ও সাদ আহমেদ, ‘সি’ ইউনিটের আহসান হাবীব ও শাহরিয়ার আল সানি এবং ‘এফ’ ইউনিটের রোকসান উজ্জামান। একই দিন ক্যাম্পাসে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরার সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকেও আটক করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আবু কালাম মো. ফরিদ উল ইসলাম কোতোয়ালি থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আটক শিক্ষার্থীদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী রাহেল চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

‘বি’ ইউনিটের সাক্ষাৎকার বোর্ড থেকে অব্যাহতি পাওয়া দুই শিক্ষকের একজন লোকপ্রশাসন বিভাগের আসাদুজ্জামান মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে ওএমআর শিট পরিবর্তন করে “বি” ইউনিটের শামস বিন শাহরিয়ার। সে জালিয়াতির কথাও অকপটে স্বীকার করল। অথচ উল্টো আমাদেরই পরবর্তী সাক্ষাৎকার বোর্ড থেকে বাদ দেওয়া হলো।’ এটি অবগত করে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ বিভাগের ডিন ও উপাচার্য বরাবর আবেদন করেছেন এই শিক্ষক।

অব্যাহতি পাওয়া অন্য শিক্ষক হলেন একই বিভাগের প্রভাষক সামান্থা তামরিন। ‘বি’ ইউনিটের সাক্ষাৎকার বোর্ডে থাকা এই দুই শিক্ষকই ভুয়া পরীক্ষার্থী ও ভর্তি পরীক্ষার ওএমআর শিট পরিবর্তনের ঘটনাটি উন্মোচন করেন।

ওই ছয় শিক্ষার্থীর মধ্যে শামস বিন শাহরিয়ারের স্বীকারোক্তি ধারণ করা হয়। শাহরিয়ার পরীক্ষায় অংশ না নিলেও ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে তাঁকে মেধাক্রমে প্রথম দেখানো হয়েছে। শাহরিয়ার জিজ্ঞাসাবাদের সময় শিক্ষক নজরুল ইসলামের জড়িত থাকার কথা বলেন। এই শিক্ষক ‘বি’ ইউনিটের প্রশ্ন প্রণয়ন, মডারেশন ও ফলাফল প্রস্তুতের কাজে সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন।

গতকাল মঙ্গলবার ‘বি’ ইউনিটের দ্বিতীয় পর্বের মেধাতালিকায় থাকা ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এতে অভিযুক্ত শিক্ষক নজরুল ইসলামের নেতৃত্বেবোর্ডের বাকি পাঁচজন শিক্ষক ছিলেন। আজ বুধবার বেলা দুইটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে বলা হয়েছে। তা না হলে তালিকায় থাকা পরবর্তী শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে।

তড়িঘড়ি শিক্ষার্থী ভর্তি প্রসঙ্গে শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুহিন ওয়াদুদ বলেন, রাত ১০টায় ফলাফল জেনে দূরের জেলা থেকে রংপুরে আসতে অনেক সময়ের ব্যাপার। দুপুরের মধ্যে অনেকেই আসতে পারবেন না। এ কারণে কিছুটা সময় দেওয়া প্রয়োজন ছিল।

তদন্তে অগ্রগতি নেই

ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির এ ঘটনায় তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয় ২৮ ডিসেম্বর। তবে তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত চক্রটি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আজিজুর রহমানকে তথ্যানুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক এবং সাইবার সেন্টারের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ও সহকারী প্রক্টর মুহা. শামসুজ্জামানকে কমিটির সদস্যসচিব করা হয়। কমিটির অন্য সদস্য হলেন সহকারী প্রক্টর এবং ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আতিউর রহমান।

কমিটির আহ্বায়ক আজিজুর রহমান বলেন, ২৮ ডিসেম্বর কমিটি হলেও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে অনুসন্ধান শুরু করা সম্ভব হয়নি। এরপরও অনেকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কিছুটা সময় তো লাগবে।

জালিয়াতির এ ঘটনা নিয়ে ২৪ ডিসেম্বর প্রথমআলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেছিলেন, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি চলছে। ছুটি শেষে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে গতকাল উপাচার্যের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।

 

 

আরো পড়ুন:

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি জালিয়াতির সাথে জড়িত পাঁচটি চক্র

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় আবাসিক হল বন্ধ থাকবে

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline