৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি
জলবায়ু চুক্তি ও জলবায়ু বিষয়ক প্রশ্নে কাজে দিবে
.
বাংলাদেশের পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতি
অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান
.
২২ এপ্রিল ২০১৬ তারিখ জাতিসংঘের সদর দফতরে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু তাতে বাংলাদেশ কতটুকু লাভবান হবে? বিশ্বে উষ্ণতা বেড়ে গেলে বাংলাদেশের যে ব্যাপক ক্ষতি হবে তা এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ১৭০টি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করল। বাকি দেশগুলো স্বাক্ষর করবে ২০১৭ সালের এপ্রিলের মধ্যে। তারপর এই চুক্তিটি প্রতিটি দেশের পার্লামেন্টে অনুমোদিত হতে হবে। তখন এটা আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত হবে। কিন্তু বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার কাজটি খুব সহজ হবে না। চুক্তিতে কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী সংস্থাগুলোর অসহযোগিতা, জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প ও সহজলভ্য না করার ব্যর্থতার কারণে এই প্যারিস চুক্তিটি ২০২০ সালের পর কতটুকু কার্যকরী হবে এই প্রশ্ন থাকলই। একটা বড় প্রশ্ন নিয়ে নিউইয়র্কে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষ হলো বটে তবে আমাদের আরো বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এটা সত্য বিশ্ব নেতাদের মধ্যে একটা উপলব্ধিবোধ এসেছে যে, কার্বন নিঃসরণকারী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হবে। কাজটি নিঃসন্দেহে সহজ নয়। এর সঙ্গে বেশ কিছু প্রশ্ন জড়িত। উন্নত বিশ্ব কর্তৃক উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক সাহায্য, জলবায়ু সমস্যা মোকাবিলায় টেকনোলজি ট্রান্সফার, উন্নত বিশ্বের নিজের কার্বন নিঃসরণ হার কমানো ইত্যাদি বিষয় জড়িত। এর আগে গেল ডিসেম্বরে লিমা কপ-২০ সম্মেলনে প্রতিটি দেশকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে নিজস্ব কর্মপদ্ধতি ও কাঠামো উপস্থাপনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ এটা করেছে। কিন্তু সব দেশ এটা করতে পেরেছে কিনা এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। চীন ও ভারতের মতো দেশের কার্বন নিঃসরণ নিয়েও কথা আছে। কেননা দেশ দুটি সম্প্রতি বিশ্বের শীর্ষ কার্বন নিঃসরণকারী দেশে পরিণত হয়েছে।
উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তনে যে ক’টি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের উপকূলে প্রতিবছর ১৪ মিলিমিটার করে সমুদ্রের পানি বাড়ছে। গত ২০ বছরে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮ সেন্টিমিটার। বাংলাদেশের ১৭ ভাগ এলাকা সমুদ্রের গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আগামীতে। আইপিসিসির রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশের কথা। অনেকের মনে থাকার কথা, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর পরিবেশের ব্যাপারে বিশ্ব জনমতের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ২০১২ সালের জানুয়ারিতে এন্টার্কটিকায় গিয়েছিলেন। আমাদের তৎকালীন পরিবেশ মন্ত্রীকেও তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সেখানে। বিশ্বের উষ্ণতা বেড়ে গেলে যেসব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ পরপর দু’বার বন্যা ও পরবর্তীতে ‘সিডর’-এর আঘাতের সম্মুখীন হয়। এরপর ২০০৯ সালের মে মাসে আঘাত করে ‘আইলা।’ এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশে ব্যাপক খাদ্যদ্রব্যের ঘাটতি দেখা দেয়। দেশে খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে যায়। অর্থনীতিতে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ‘সিডর’-এর পর বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয়ের এটি বারবার বিশ্ব সভায় আলোচিত হয়। সিডরের ক্ষতি ছিল গোর্কির চেয়েও বেশি। মানুষ কম মারা গেলেও সিডরের অর্থনৈতিক ক্ষতি ছিল ব্যাপক। সিডরে ৩০ জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছিল ৯টি জেলা। ২০০ উপজেলার ১ হাজার ৮৭১টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মোট ১৯ লাখ ২৮ হাজার ২৬৫ পরিবারের ৮৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫৬ জন মানুষ সিডরে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। মারা গিয়েছিলেন ৩ হাজার ৩০০-এর বেশি মানুষ। অর্থনৈতিক ক্ষতি ছিল ব্যাপক। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা। ‘সিডর’ ও ‘আইলা’র পর ‘মহাসেন’ বাংলাদেশে আঘাত করেছিল। যদিও এতে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার হিসাব আমরা পাইনি। ‘সিডর’ ও ‘আইলা’র আঘাত আমরা এখনো পরিপূর্ণভাবে কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আইলার আঘাতের পর খুলনার দাকোপা, কয়রা ও পাইকগাছায় যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল তা দূর করা সম্ভব হয়নি। জলাবদ্ধতা কোথাও কোথাও ১ মিটার থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত দেখা দেয়। আইলায় ৮০ ভাগ ফলদ ও বনজ গাছ মরে গিয়েছিল। দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে আজ নোনা জলের আগ্রাসন। সুপেয় পানির বড় অভাব ওইসব অঞ্চলে। এরপর ‘মহাসেন’ আমাদের আবারো ক্ষতিগ্রস্ত করে দিয়েছিল। আমাদের মন্ত্রী, সচিব কিংবা পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কর্তা-ব্যক্তিরা বিদেশ সফর ও সম্মেলনে অংশ নিতে ভালোবাসেন। কানকুন, ডারবান, কাতার কিংবা তারো আগে কোপেনহেগেন (কপ সম্মেলন) আমাদের পরিবেশ মন্ত্রী গেছেন। আমাদের কয়েকজন সংসদ সদস্য কোপেনহেগেনে প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে বিশ্ব জনমত আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। আমরা পরিবেশ রক্ষায় তাতে বড় ধরনের আর্থিক সহায়তা পাইনি।
বাংলাদেশ এককভাবে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনরোধে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারে না। বাংলাদেশ এককভাবে যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ও তা সামগ্রিকভাবে বিশ্বের উষ্ণতা রোধ করতে খুব একটা ভূমিকা রাখবে না। এ জন্য বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্তর্জাতিক আসরে জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় বিদেশি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এই সাহায্যের ওপর নির্ভর করা ঠিক নয়। পরিবেশ বিপর্যয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বড় ভূমিকা রয়েছে। গেলবার যে বন্যা হলো আবার আমাদের সে কথাটাই স্মরণ করিয়ে দিল। বন্যা, অতি বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় এখন এ দেশে স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু ‘সিডর’ ও আইলার আঘাতে আমাদের যেটি ক্ষতি হয়েছিল সেই ক্ষতি সারাতে সরকারের বড় বড় উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ১ হাজার ২৬৮ কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হলেও ওখানে ‘রাজনীতি’ ঢুকে গিয়েছিল। দলীয় বিবেচনায় টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। ভাবতে অবাক লাগে যেসব এনজিও জলবায়ু নিয়ে কাজ করেনি এবং এ ব্যাপারে যাদের কোনো অভিজ্ঞতাও নেই শুধু দলীয় বিবেচনায় তাদের নামে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। জলবায়ু তহবিলের অর্থ যাওয়া উচিত ওইসব অঞ্চলে যেখানে ঘূর্ণিঝড়, সাগরের আঘাত বেশি আর মানুষ ‘যুদ্ধ’ করে সেখানে বেঁচে থাকেন। অথচ দেখা গেছে জলবায়ুর জন্য বরাদ্দকৃত টাকা দেয়া হয়েছে ময়মনসিংহ পৌরসভাকে, মানিকগঞ্জের একটি প্রকল্প কিংবা নীলফামারী তিস্তা বহুমুখী সমাজকল্যাণ সংস্থাকে। সিরাজগঞ্জের প্রগতি সংস্থাও পেয়েছে থোক বরাদ্দ অথচ এসব প্রতিষ্ঠানের একটিরও জলবায়ুসংক্রান্ত কাজের কোনো অভিজ্ঞতাই নেই।
আমাদের জন্য তাই প্যারিস চুক্তির (২০১৬) গুরুত্ব অনেক। বাংলাদেশ পরিবেশগত নানা সমস্যায় আক্রান্ত। বাংলাদেশের একার পক্ষে এর সমাধান করা অসম্ভব বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই বাংলাদেশ আজ আক্রান্ত। সুতরাং বৈশ্বিকভাবে যদি বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি কমানো না যায় তাহলে বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয়রোধ করাও সম্ভব হবে না। তাই একটি চুক্তি অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে আরো প্রয়োজন জলবায়ু সমস্যা মোকাবিলায় বৈদেশিক সাহায্যের পূর্ণ প্রতিশ্রুতি এবং সেই সঙ্গে প্রযুক্তি হস্তান্তরের ‘কমিটমেন্ট।’ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পরিমাণ কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে আমাদের যেতে হবে। সোলার বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যারা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন স্থানীয়ভাবে তাদের কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে হবে। সুতরাং আর্থিক সাহায্যের প্রশ্নটি অত্যন্ত জরুরি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে হলেও সত্য বিশ্ব নেতারা বারবার সাহায্যের কথা বললেও সেই সাহায্য কখনোই পাওয়া যায়নি।
প্যারিস সম্মেলন (২০১৫) চলাকালে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি উদ্বেগজনক সংবাদ প্রকাশ করেছিল জার্মান ওয়ার্চ নামে একটি সংস্থা। প্রতি বছর বৈশ্বিক জলবায়ু সূচক তারা প্রকাশ করে থাকে। শীর্ষ সম্মেলন চলাকালেই তারা প্রকাশ করেছিল বৈশ্বিক জলবায়ু সূচক ২০১৬। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঝড়, বন্যা, ভূমিধস ও খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকা এরা প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশের অবস্থান দেখানো হয়েছে ৬ নম্বরে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর শীর্ষে রয়েছে হন্ডুরাস। তারপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে মিয়ানমার, হাইতি, ফিলিপাইন ও নিকারাগুয়া। তাই প্যারিস চুক্তিটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে ওই সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেক। শেষ পর্যন্ত একটি চুক্তি হলেও তাতে যদি আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকে তাহলে ওই চুক্তি মূল্যহীন হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে বিশ্ব নেতাদের সবাই যারা প্যারিস কপ-২১-এ যোগ দিয়েছিলেন তারা সবাই এখন প্যারিস চুক্তির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। আমাদের বনমন্ত্রী বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিটি স্বাক্ষর করেছেন নিউইয়র্কে। তিনি বলেছিলেন, এ ঐতিহাসিক চুক্তি বাস্তবায়ন হলে ধরিত্রী বাঁচবে, সূচনা হবে নতুন যুগের। মন্ত্রী আরো জানিয়েছিলেন, চুক্তিটি বাস্তবায়নে আরো পাঁচ বছর সময় রয়েছে। এই সময়ে চুক্তির অস্পষ্ট বিষয়গুলো আলোচনার সুযোগ রয়েছে। নিউইয়র্কে অনেক বিশ্বনেতাও বলেছেন এই চুক্তি বিশ্বের দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধির হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে। খাদ্য নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও বিশ্বশান্তি বজায় রাখতেও চুক্তিটি অনন্য ভূমিকা রাখবে বলেও তারা অভিমত পোষণ করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, শুধু চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়েই বিশ্বের উষ্ণতা কমানো যাবে না। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি দেশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর কৌশল নিজেদের মতো করে ঠিক করবে এবং এটাই হচ্ছে আসল কথা। নিজেদের কৌশল ঠিক করতে হবে। বাংলাদেশ কি তা পারবে? আমাদের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা বিদেশ সফর পছন্দ করেন। কিন্তু দূষণ কমানোর ব্যাপারে অত উৎসাহী নন। আমাদের পরিবেশমন্ত্রীও এ ব্যাপারে তেমন সক্রিয় এটা অনেকেরই মনে হয়নি। দেশের ভেতরে প্রায়শই পরিবেশ দূষণের সংবাদ হরহামেশা পত্রপত্রিকায় ছাপা হতে দেখি। কিন্তু তার কোনো কার্যকরী ভূমিকা চোখে পড়েনি। সুন্দরবনের কাছাকাছি একটি কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করে আমরা বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে রয়েছি। পরিবেশবাদীরা এর বিরোধিতা করলেও সরকার এ ব্যাপারে এখনো অনড়। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, বড় দল বিএনপি এ ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য না দিলেও বামসংগঠনগুলো সোচ্চার। তারা সুন্দরবন পর্যন্ত লংমার্চের আয়োজন করেছিল। বাগেরহাটের রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে গত ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা ব্যবহার করা হবে। এ জন্য বছরে ৪ মিলিয়ন টন কয়লা ভারত থেকে আমদানি করতে হবে। বিদ্যুৎ আমাদের দরকার সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু কয়লা পুড়িয়ে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এবং তাতে যে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে তা কি আমরা বিবেচনায় নিয়েছি? না, নেইনি।
ভারতীয় ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ারের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে বটে, কিন্তু পরিবেশের প্রভাব নিরূপণের জন্য ইআইএ সমীক্ষায় তা করা হয়নি। রামপালের গৌরম্ভর কৈকরদশ কাঠি ও সাতমারি মৌজায় ১ হাজার ৮৪৭ একর জমিতে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হবে যেটি সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে। কয়লা পোড়ানো হলে কার্বন ডাইঅক্সাইড, সালফার, নাইট্রিক এসিড বায়ুমণ্ডলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। এতে এসিড বৃষ্টি হতে পারে এবং তাহলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। সুন্দরবনের উদ্ভিদ মরে যাবে, নষ্ট হবে জীববৈচিত্র্য। পশুপাখির প্রজনন বাধাগ্রস্ত হবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কি অন্যত্র স্থানান্তরিত করা যেত না? আমাদের গর্ব এই সুন্দরবন। ইতোমধ্যে সুন্দরবনকে গ্লোবাল হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা এমন কিছু করতে পারি না যেখানে বিশ্বের বৃহত্তম এ প্যারাবনের অস্তিত্ব হুমকির সৃষ্টি করে। রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে সুন্দরবনের অস্তিত্ব হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণসংক্রান্ত ইউনেস্কো কনভেনশন লঙ্ঘন করছি। ফলে পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে আমরা যতই সোচ্চার হই না কেন বিদ্যমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠবে, আমরা আমাদের নিজেদের পরিবেশ রক্ষায় কতটুকু সচেতন। তাই প্যারিস চুক্তিতে যখন নিজেদের কর্মপদ্ধতির উদ্ভাবনের কথা বলা হয় তখন প্রশ্নটা ওঠে আমরা সচেতন কতটুকু। জাতিসংঘ কিংবা বিশ্ব নেতারা এসে আমাদের পরিবেশ দূষণ রোধ করা ঠিক করে দিয়ে যাবে না। এটা ঠিক করতে হবে আমাদের নিজেদের। এটাই হচ্ছে প্যারিস চুক্তির মূল কথা।
Daily Manobkontho
10.05.16
আরো পড়ুন:
0 responses on "বাংলাদেশের পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতি"