৩৭তম বিসিএস #লিখিত_প্রস্তুতি
আন্তর্জাতিকঃ
প্রশ্নঃমধ্যপ্রাচ্যে চীনের সম্ভাবনাকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন।
মধ্যপ্রাচ্যে চীনের সম্ভাবনাঃ
চীন-আরব রাষ্ট্রীয় সহযোগিতামূলক সম্পর্কের ভিত্তিতে নিয়মিত আন্তঃসভ্যতা সংলাপভিত্তিক আলোচনার গোলটেবিল বৈঠক হওয়া উচিত।
মধ্যপ্রাচ্যে চীন কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করে সেখানে ভারতের অবস্থানকে অতিক্রম করে ফেলেছে। ফলে পশ্চিম এশিয়ায় অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটে নতুন কৌশলগত অংশীদারিত্বের বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হচ্ছে। কয়েক বছর হাত গুটিয়ে বসে থাকার পর বেইজিং চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিপীড়নের শিকার মধ্যপ্রাচ্যে তারা নিজস্ব উদ্ভাবনী দক্ষতায় সঙ্কট নিরসনে ঝড়োবাতাস প্রবাহিত করবে।
এটি খুব পরিষ্কার বিষয়, মধ্যপ্রাচ্যে চীন দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে উচ্চতর লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। চীন চাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে শোষণ ও সহিংসতার ধারাবাহিকতাকে উচ্ছেদ করে ফেলতে।
চীন অনেক কঠিন ও সঙ্কুচিত সময়ে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল। যে সময় চীনের রাজনৈতিক সংস্কারমূলক কার্যক্রম আমেরিকাকে সতর্ক বার্তা দিচ্ছে। অন্যদিকে রাশিয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদে জড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে এ অঞ্চলে চীনের গর্ব করার একটি ইতিহাস রয়েছে। ১৪ শতাব্দীতে চীনা-আরব সভ্যতার বন্ধন তৈরি হয়েছিল। চীনে সে সময় অমুসলিম মিং রাজবংশের শাসক জু ইউয়াংঝাং মুক্ত মনে ইসলাম, আল্লাহ ও নবী (সা.) সম্পর্কে প্রশংসা করে শত শব্দের রচনা তৈরি করেছিলেন।
তবে চীন পশ্চিমাদের মতো আরব বিশ্বে কখনোই সাম্রাজ্যবাদী অবস্থান গ্রহণ করেনি । যার ফলে বর্তমান সময়ে চীনের পরিকল্পনা নিয়ে জনমনে বিস্ময় দেখা দিয়েছে এ অঞ্চলে চীনের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে অথবা তাদের এ অঞ্চলজুড়ে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার আয়োজনগুলো দেখে।
আরব-চীন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রাচীনকাল থেকেই সাংস্কৃতিক বিনিময় ও ব্যবসায়িক সম্পর্কের ওপর প্রতিষ্ঠিত। প্রচলিত সভ্যতাভিত্তিক আদর্শ, সহনশীলতা, উদারতা এবং উন্নতি ও প্রগতির পথে উচ্চাশা চীন-আরব সম্পর্কের ক্ষেত্রে চীনের নীতি নির্ধারকদের দিকনির্দেশনা যুগিয়েছে। চীনের নমনীয় শক্তি সবসময় আরব বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। চীন এশিয়ার বৃহৎ রাষ্ট্র হওয়ার পরও আরব বিশ্বে হস্তক্ষেপ না করার নীতি গ্রহণ করায় তা আরব জনগণের কাছে প্রশংসনীয় হয়েছে। এরকম অমোচনীয় সুসম্পর্ক আরব ও চীনের সম্পর্কে পারস্পরিক বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়েছে।
এখন চীন আরব সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে সংস্কার ও উন্নয়নের স্বার্থে একটি গবেষণা করা উচিত। চীন-আরব রাষ্ট্রীয় সহযোগিতামূলক সম্পর্কের ভিত্তিতে নিয়মিত আন্তঃসভ্যতা সংলাপভিত্তিক আলোচনার গোলটেবিল বৈঠক হওয়া উচিত। যেখানে উভয় অঞ্চলের বিখ্যাত ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরাও থাকবেন। এ আলোচনা শুধু আরবে নয়, চীনেও অনুষ্ঠিত হবে।
কারণ বেইজিং পশ্চিমা শক্তির মতো ব্যবসায়িক নেতৃত্বের পথে স্পষ্টভাবেই আগ্রহী নয়। কিন্তু চীন আরবের পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবেই ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে উচ্চাশা পোষণ করছে।
একটি বাস্তবতা হচ্ছে, চীন মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতা জিইয়ে থাকার প্রতি অধিক আগ্রহী তার ঘোষিত অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের সহযোগিতা ভৌগোলিক প্রভাবকে বিস্তৃত করবে।
কিন্তু চীনের আমদানিনির্ভর অর্থনীতিতে অর্ধেকের বেশি উপাদান উপসাগরের দেশগুলো থেকেই আমদানি করে। তাই বেইজিং সুখী মনোভাবে নেপথ্যে থেকে এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার আগুন উসকে দেয়ার ক্ষেত্রে স্থির অথচ দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
তাই এখন চীনের নেতৃত্ব প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে অঞ্চলগত আন্তঃনির্ভরতা ও স্থিতিশীলতা প্রস্ফুটিত করার জন্যই অর্থনৈতিক স্বার্থ বহাল রাখবে। এদিকে ভারতও আরব বিশ্বে তার ঐতিহাসিক সম্পর্ককে অবশ্যই ধরে রাখছে। যার ফলে এশিয়ার দুইটি শক্তিধর রাষ্ট্র যৌথভাবেই এ অঞ্চলে এগোতে পারবে কোনোরকম বিপরীত উদ্দেশ্য ছাড়াই।
আরব নিউজ অবলম্বনে : তৌফিকুল ইসলাম