৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি আন্তর্জাতিকে, পার্ট – ১৩

৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি

-আন্তর্জাতিক >>> ———–
চুক্তি >> টিপিপি। গুরুত্বপূর্ণ।

টীকা আসতে পারে।
/
/
বিতর্কিত টিপিপি চুক্তি
বিশ্বের বৃহত্তম মুক্তবাজার গড়ার লক্ষ্যে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে ৪ ফেব্রুয়ারি ১২টি দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীরা স্বাক্ষর করল ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) বা প্রশান্ত মহাসাগরীয় সহযোগিতা চুক্তি। শ্রমজীবীদের বিরোধিতাকে পাশ কাটিয়ে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি বহু আকাঙ্ক্ষিত আবার বিতর্কিতও। তাই স্বাক্ষরকারী দেশগুলোকে চুক্তি অনুমোদন কিংবা প্রত্যাহারের জন্য দুই বছর সময় দেওয়া হয়েছে
.
কী এই টিপিপি?

যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনাই, কানাডা, চিলি, জাপান, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম—এই ১২টি দেশ স্বাক্ষর করল টিপিপি। এই দেশগুলো বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়তে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় বিনিয়োগ করবে। অধিক নিরাপদে এসব দেশে এখন থেকে সহযোগীদের পণ্য সাশ্রয়ী শুল্কে প্রবেশ করতে পারবে। চুক্তির আওতায় বিভিন্ন পণ্য ও সেবা থেকে শুল্ক প্রত্যাহারের পাশাপাশি বেশ কিছু বাণিজ্যিক আইনও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে একটি একক বাজার তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। বলা হচ্ছে, চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে বৈশ্বিক অর্থনীতির ৪০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করবে এই জোট।

এই টিপিপি নিয়ে আলোচনা চলছে ২০০৮ সাল থেকে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা থাকায় চুক্তিটি নিয়ে মতদ্বৈততা চলে আসছিল দীর্ঘদিন। এ কারণে গত জুলাইয়েও হাওয়াইয়ে অনুষ্ঠিত টিপিপির বৈঠকে কোনো সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। আগস্টে এক সপ্তাহের আলোচনায় বসেছিলেন ১২টি দেশের প্রতিনিধিরা। ৯৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হলেও তখন চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান ও মেক্সিকোকে দায়ী করা হয়েছিল। নিউজিল্যান্ড ওই সময় বাগড়া দিয়ে বলেছিল, গবাদি পশু ও দুধের বাজার উন্মুক্ত করে দেওয়া না হলে তারা চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে না। জাপানের আপত্তি ছিল, গাড়ি ও ওষুধ ইস্যুতে। কয়েক মাস ধরে চুক্তির বিরোধিতা করে বিক্ষোভ হচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশে। গত অক্টোবরে চুক্তির ব্যাপারে সদস্য রাষ্ট্রগুলো সম্মত হয়, যার চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে ৪ ফেব্রুয়ারি। তবে চুক্তিতে ১২টি দেশ স্বাক্ষর করলেও সার্বিক চুক্তি অনুমোদন কিংবা প্রত্যাহারের জন্য দুই বছরের সময় দেওয়া হয় এসব সদস্য দেশকে। এর পরই এটি কার্যকর হবে।

চুক্তিতে আপত্তি

অকল্যান্ডে চুক্তি স্বাক্ষরের পর যখন ১২ দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীরা পরস্পরের সঙ্গে করমর্দন করছিলেন, তখন বাইরে কয়েক হাজার মানুষ এ চুক্তির বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্রেও এ চুক্তি নিয়ে সমালোচনা ছিল। চুক্তিতে জাপান অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাজার হারানোর আশঙ্কা করছে। নিজ দল ডেমোক্রেটিক পার্টির বিরোধিতার পরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, সমুদ্রসীমায় বিরোধ নিষ্পত্তি এবং সাইবার অপরাধের মতো হুমকি মোকাবিলায় টিপিপি মার্কিন শ্রমিকদের অনেকটা সুরক্ষিত রাখবে। আবার কোনো কোনো মার্কিনি মনে করেন, টিপিপি চুক্তির কারণে কাজের ক্ষেত্রগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল দেশে চলে যাবে। তবে ওবামার দাবি, চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকরা বেশি সুবিধা পাবেন এবং মার্কিন অর্থনীতি প্রসারিত হবে। চুক্তির বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের সাধারণ মানুষও। নোবেল বিজয়ী যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিত্জ মনে করেন, এক দশকের মধ্যেই টিপিপি বিশ্বের সবচেয়ে বাজে চুক্তি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হবে

ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, ইন্টারনেট তথা মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মেধাস্বত্বের ওপর বড় ধরনের হুমকি হিসেবে ভাবা হচ্ছে টিপিপিকে। এর আওতায় গ্রাহকদের ওপর সব ধরনের নজরদারিসহ ইন্টারনেটে দেওয়া সব তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি পিসিতে বা নেটে বসে কী করছে, আইনগতভাবে এখন তার ওপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। উইকিলিকসের প্রধান জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বলেছেন, টিপিপির ফলে সদস্য দেশগুলোর জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা খর্ব হবে। তাঁর মতে, এটা হবে বুদ্ধিবৃত্তিক ও সৃজনশীল সাধারণ মানুষের জন্য নির্মম অত্যাচার। অর্থাৎ ব্যক্তির সব কর্মকাণ্ড টিপিপির নিশানার মধ্যে চলে আসবে। অনেকে বলছেন, এখন ফেসবুক বা ইউটিউবে দেওয়া কোনো কনটেন্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আপত্তি করলে তা তুলে নিতে হবে। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের অফিস যুক্তরাষ্ট্রে। তাদের মতে, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে কার্যত ইন্টারনেটের মতো একটি বৈশ্বিক মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি জোরালো হবে। এ জন্য বিশ্বের বেশ কিছু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও ডিজিটাল অধিকার গ্রুপ টিপিপির বিরুদ্ধে মার্কিন কংগ্রেসে চিঠি দিয়েছে।

চাপে পড়বে কয়েকটি দেশ

চুক্তির পরই যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড থেকে খাদ্যপণ্য প্রবেশের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাপান। সেই সঙ্গে সাশ্রয়ী শুল্কে জাপানে তৈরিকৃত গাড়ি প্রবেশের সুযোগ দিতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ডের জন্য নিজের বাজার সহজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কানাডা। আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার আখ ও আখজাত পণ্য পাবে বিশেষ সুবিধা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিশাল মুক্তবাজার সৃষ্টির ফলে প্রথমেই চাপে পড়বে চীন। ওবামার কথাতেও তা-ই ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন, এটি কার্যকর হলে এতে শুধু মার্কিন অর্থনীতিই লাভবান হবে না, চীন এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টায় বিরত থাকবে।

রপ্তানি ঝুঁকিতে বাংলাদেশ!

টিপিপির কারণে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ঝুঁকি সহ দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। টিপিপিভুক্ত জাপান ও কানাডা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম বৃহৎ বাজার। এ দুটি বাজারে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধার আওতায় বিনা শুল্কে তৈরি পোশাক রপ্তানির সুযোগ পায়। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভিয়েতনাম এত দিন এ সুযোগ পায়নি। এখন টিপিপির ফলে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও কানাডাতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পোশাক রপ্তানি করতে পারবে ভিয়েতনাম। অন্যদিকে বাংলাদেশকে এখনকার মতোই ১৫-১৬ শতাংশ শুল্ককর পরিশোধ করতে হবে। এতে ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশের পোশাকের দাম বেড়ে যাবে। তখন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের ক্রেতা হারাবে বাংলাদেশ।

তাই এর সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব কেমন হতে পারে, তা জানতে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ১২টি দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া চীন, ভারতসহ টিপিপির বাইরে থাকা বিভিন্ন দেশ এর প্রভাব মোকাবিলায় কোন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে সে তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর ভিত্তিতেই সরকার পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে বলে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে জানানো হয়েছে।
.
সূত্র >> কালের কণ্ঠ ,

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline