তিস্তা ইস্যু সম্পর্কিত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রহমান স্যারের কলাম:
২৭ মে ২০১৬ তারিখ মমতা ব্যানার্জি পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ নিতে যাচ্ছেন। গত ৪ এপ্রিল পশ্চিম বাংলার বিধান সভায় নির্বাচন শুরু হয়ে শেষ হয় ৫ মে। ১৯ মে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ফলাফলে দেখা যায় বিপুল ভোটে পশ্চিম বাংলার মানুষ মমতার তৃণমূল কংগ্রেসকে বিজয়ী করেছে। বিপুল ভোটে তার এই বিজয় (২৯৪ আসনের ২১১টিতে তার দল জয়ী), কেন্দ্রের সঙ্গে ‘হিসেব-নিকেশ’ ইত্যাদি বিষয়ে তার অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করবে। ইতোমধ্যে বিজেপি সভাপতি তাকে পুনরায় এনডিএ জোটে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বাংলাদেশের জন্য তার এই বিজয়ের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষ করে তিস্তার পানি বণ্টনের ব্যাপারে তার সম্মতি একটি বড় ফ্যাক্টর। এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মমতার সম্মতি ছাড়া কোনো চুক্তিতে যেতে পারবে না। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি দু’ দুবার বাংলাদেশে এসেছেন। একবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আর দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। কিন্তু প্রতিবারই তিস্তার পানি বণ্টনের ব্যাপারে তিনি আমাদের হতাশ করেছেন। এমনকি আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে তিনি অযাচিতভাবে পশ্চিমবঙ্গের জন্য তিস্তায় বেশি পানি দাবি করেছিলেন। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশের মানুষ তার ওপর আস্থা রেখেছিল। ঢাকায় এসে তিনি বলেছিলেন, তিনি ‘কাঠবিড়াল হয়ে সেতুবন্ধনের’ মতো কাজ করে যেতে চান। অর্থাৎ বাংলাদেশ-ভারতের মাঝে এক ধরনের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে চান। কিন্তু তিনি কি তা করেছেন? না, করেননি। ঢাকায় দ্বিতীয়বারের মতো আসার আগে তিনি বলেছিলেন নতুন এক কথা আত্রাই নদীতে বাংলাদেশ বাঁধ দিয়েছে। আর তাতে পশ্চিমবঙ্গ কম পানি পাচ্ছে! তিনি জানেন রাজনীতিকে কিভাবে জটিল করতে হয়। যেখানে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার চাচ্ছে তিস্তার ব্যাপারে একটি সমঝোতা, সেখানে ‘আত্রাই প্রসঙ্গ’ নতুন করে উত্থাপন করে কৌশলী মমতা চাচ্ছেন তিস্তার প্রসঙ্গটি ‘ডিপ ফ্রিজ’-এ পাঠাতে। এটাই তার কৌশল। তিনি তিস্তায় পানি দেবেন না, যাতে করে বাংলাদেশ-ভারতের মাঝে যে সম্পর্কের ‘নয়া অধ্যায়’-এর সূচনা হয়েছে তা একটি প্রশ্নের মধ্যে থাকুক! বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের কারণে পশ্চিম বাংলায় বিজেপির জনপ্রিয়তা বাড়-ক, এটা মমতা কখনো চাননি। পশ্চিম বাংলার উত্তরাঞ্চলে (তিস্তার পানির ওপর যারা নির্ভরশীল) তার জনপ্রিয়তা তলানিতে ছিল। ‘ভোটের হিসাবে’ তিনি তাই চাননি তিস্তার পানি বণ্টন হোক। তিনি দেখাতে চেয়েছেন তিনিই প্রকৃত বাংলাদেশের বন্ধু। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘হাসিনা দিদি’ হিসেবে সম্বোধন করে তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন তিনি আন্তরিক! প্রটোকল তার কাছে মুখ্য ছিল না, ছিল গৌণ। একটা দেশের প্রধানমন্ত্রীকে যে এভাবে প্রকাশ্যে ‘দিদি’ বলে সম্বোধন করা যায় না, মমতা ব্যানার্জির বিবেচনায় এটা আসেনি। সেবার তার জন্য গণভবনে দুপুরের খাবারেরও আয়োজন করা হয়েছিল। ১২ পদের খাবারের তালিকায় ইলিশ ছিল ৩ পদের। সবাই জানেন বাংলাদেশের ইলিশের প্রতি মমতার বিশেষ টান আছে। আগে মমতা যখন দিল্লিতে রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে যারাই মমতার বিজয় ও তিস্তার পানি চুক্তির ভবিষ্যৎনয়াদিল্লি গেছেন (বিশেষ করে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী), তারা অবধারিতভাবেই সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন ‘পদ্মার ইলিশ।’ তাই ইলিশ প্রসঙ্গ এসেছিল (আপাতত রফতানি বন্ধ)। মমতার সফরে কিন্তু সারা জাতি ও মিডিয়া তখন তাকিয়ে ছিল মমতা তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে তার অনাপত্তির কথা জানিয়ে যাবেন। কেননা তিস্তায় পানি বণ্টনের সমস্যা একটাই আর তা হচ্ছে মমতা। মমতার আপত্তির মুখে তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না। এমনকি ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন তখনো মমতার আসার কথা ছিল। মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৭টি রাজ্যের কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী আসলেও শেষ মুহূর্তে মমতা তার আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন। ফলে শেষ পর্যন্ত চুক্তিটি আর হয়নি। এরপর অনেক সময় পেরিয় গেছে। কিন্তু তিস্তার ব্যাপারে মমতার দৃষ্টিভঙ্গির কি কোনো পরিবর্তন এসেছে? প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর তিনি দু’ দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন এ কথাটা। এর আগে ভারতীয় হাইকমিশন কর্তৃক আয়োজিত ‘বৈঠকি বাংলা’য়ও মমতা নিজেই বলেছিলেন তার ওপর ‘আস্থা’ রাখতে! স্থল সীমানা চুক্তি নিয়ে তার আপত্তি নেইÑএটা অবশ্য তিনি প্রমাণ করেছেন। ঢাকাতেও এ কথাটা পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন মমতা। কিন্তু তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে তার ‘কমিটমেন্ট’ কোথায়? সোজা সাপটা হিসাব হচ্ছে তিনি ঢাকায় এসে তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে কোনো ‘কমিটমেন্ট’ করে যাননি। তিস্তার পানির ব্যাপারে তার স্বার্থ অনেক বেশি। এখন সেখানে বিধানসভার নির্বাচন শেষ। এটাকে তিনি বিজেপির হাতে তুলে দিতে চাননি। উত্তরবঙ্গে পানির চাহিদা বেশি। মমতা এটা জানেন ও বোঝেন। বলা ভালো, ১৯ ফেব্রুয়ারি (২০১৪) পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর ঢাকা সফরের প্রাক্কালে তিস্তায় পানির সর্বনি¤œ প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছিল। এটা কাকতলীয় কি না জানি না। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে ক’টি বিষয় অন্তরায় সৃষ্টি করেছিল তার মাঝে তিস্তার পানি বন্টন অন্যতম। এ ক্ষেত্রে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একটা আগ্রহ থাকলেও শুধুমাত্র মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়নি। সেই মমতা ব্যানার্জিই এখন আবার ক্ষমতায় এলেন। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে তার ঢাকা আসার কথা থাকলেও তিনি আসেননি। তিস্তায় পানি বণ্টনের ব্যাপারে বাংলাদেশের স্বার্থ অনেক বেশি। গত ৬ ফেব্রুয়ারি (২০১৫) সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ওই মাসের প্রথম ৫ দিনে তিস্তায় পানি প্রবাহ ছিল ৫০০ কিউসিকের নিচে। সেচ প্রকল্পের পানি দেযা দূরের কথা, শুধু নদী বাঁচানোর জন্যই দরকার এক হাজার কিউসেক। ফলে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা আজ মৃত্যুমুখে। গত নভেম্বর থেকেই তিস্তায় পানি প্রবাহ কমতে থাকে। বাংলাদেশের লালমনিরহাটের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীতে ইতিহাসের সবচেয়ে কম পানি প্রবাহ রেকর্ড হয়। ফেব্রুয়ারি (২০১৫) মাসের প্রথম চার দিনের হিসাবে দেখা গেছে, প্রথম দিন পাওয়া গেছে ৪২৬ কিউসেক, দ্বিতীয় দিন ৪৭৫ কিউসেক, তৃতীয় দিন ৪৪৫ কিউসেক, আর চতুর্থ দিন ৪১৬ কিউসেক পানি প্রবাহিত হয় (সকালের খবর, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। যৌথ নদী কমিশন সূত্র জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবা ব্যারাজ নির্মাণ শুরুর আগে ১৯৭৩-৮৫ সময়কালে বাংলাদেশ অংশে তিস্তার পানি প্রবাহ ভালো ছিল বলে তুলনার জন্য এই সময়কালের হিসাবকে ঐতিহাসিক গড় প্রবাহ ধরা হয়। ওই ১২ বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম ১০ দিনে পানি প্রবাহ ছিল ৫৯৮৬ কিউসেক। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তা নেমে আসে ৯৬৩ কিউসেকে। এরপর তা নেমে যায় ৫০০ কিউসেকের নিচে। অথচ নদী রক্ষার জন্যই দরকার ১ হাজার কিউসেক পানি। আর বিদ্যমান সেচ প্রকল্পের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি ‘নোট ভারবাল’ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। মমতা ব্যানার্জির প্রথম ঢাকা সফরের আগে আমরা অনেক প্রত্যাশার কথা শুনেছি। তবে এটা সত্য, তিস্তার পানি বণ্টনের এটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে আমাদের নিরাপত্তার সঙ্গে এটা সরাসরি সম্পৃক্ত। আমাদের নীতি নির্ধারকরা যদি এটিকে হাল্কাভাবে দেখেন তাহলে এ দেশ, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ খুব বড় ধরনের সংকটে পড়বে। খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে থাকবে। এমনকি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এতে করে বাড়বে। মনে রাখতে হবে তিস্তায় পানি প্রাপ্তি আমাদের ন্যায্য অধিকার। আন্তর্জাতিক আইন আমাদের পক্ষে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব আমাদের অধিকারকে নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে মমতা ব্যানার্জির আপত্তি বা সমর্থন এটা বিষয় নয়। আমরা এটা বিবেচনায় নিতে চাই না। আমাদের অধিকার যেটি আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত, তা নিশ্চিত করবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সিকিম হয়ে ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ারের সমভূমি দিয়ে চিলাহাটি থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার উত্তর খাড়িবাড়ির কাছে ডিমলা উপজেলার ছাতনাই দিয়ে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। ছাতনাই থেকে এ নদী নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাটের সদর, পাটগ্রাম, হাতিবান্দা, কালীগঞ্জ, রংপুরের কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর হয়ে চিলমারীতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। ডিমলা থেকে চিলমারী এ নদীর বাংলাদেশ অংশের মোট ক্যাচমেন্ট এরিয়া প্রায় ১ হাজার ৭১৯ বর্গকিলোমিটার। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশন গঠনের পর তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে দু দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টনের শতকরা ৩৬ ভাগ বাংলাদেশ ও ৩৯ ভাগ ভারত ও ২৫ ভাগ নদীর জন্য সংরক্ষিত রাখার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু কোনো চুক্তি হয়নি। পরবর্তীতে ২০০৭ সালের ২৫, ২৬, ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ তিস্তার পানির ৮০ ভাগ দু’ দেশের মধ্যে বণ্টন করে বাকি ২০ ভাগ নদীর জন্য রেখে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। ভারত সে প্রস্তাবে রাজি হয়নি। এরপর যুক্ত হয়েছিল মমতার আপত্তি। বাংলাদেশের কোনো প্রস্তাবের ব্যাপারেই অতীতে মমতার সম্মতি পাওয়া যায়নি। এখানে আরো একটা বিষয় বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। তিস্তার পানি বণ্টনে সিকিমকে জড়িত করার প্রয়োজনীয়তা পড়েছে। কেননা সিকিম উজানে পানি প্রত্যাহার করে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। ফলে তিস্তায় পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে ক্রমেই। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে কৃষকদের কাছে তিস্তার পানির চাহিদা বেশি। সেচ কাজের জন্য তাদের প্রচুর পানি দরকার। এটা বরাবরই মমতার জন্য একটি ‘রাজনৈতিক ইস্যু।’ সুতরাং মমতা তিস্তা চুক্তি করে বাংলাদেশের পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করবেন এটা আমার কখনই বিশ্বাস হয়নি। এ ক্ষেত্রে আমাদের যেটি করণীয় তা হচ্ছে তিস্তার পানি বণ্টনের এটি অগ্রাধিকার দিয়ে ভারতের ওপর ‘চাপ’ অব্যাহত রাখা। আমরা ভারতের অনেক ‘দাবি’ পূরণ করেছি। নরেন্দ্র মোদির আমলে সীমানা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে দু দেশের সীমানা এখন চিহ্নিত। দু দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা একটা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের পর মমতা যদি তার ওপর রাখা আস্থার প্রতিদান না দেন, তাহলে তা যে দু দেশের সম্পর্কের মাঝে একটা অবিশ্বাসের জš§ দেবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গে রুদ্র কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিতে পারেন, যেখানে পশ্চিমবঙ্গের এই পানি বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশকে শতকরা ৫০ ভাগ পানি দেয়া সম্ভব বলে সুপারিশ করেছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রণব কুমার রায়ও এই সুপারিশ সমর্থন করেছিলেন। এর ভিত্তিতেই মমতা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ঢাকায় আসার আগে আত্রাই প্রসঙ্গটি তুলে তিনি একটি ‘জট’ লাগিয়ে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ আত্রাই-এর সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টনের এটি এক করে দেখেছেন। এটি একটি ভিন্ন বিষয়। আত্রাই নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু তিস্তায় পানি প্রাপ্তি আমাদের অগ্রাধিকার। এর সঙ্গে অন্য কোনো ইস্যুর তুলনা করা যাবে না। বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুত তিস্তার পানি বণ্টনের এটিকে সামনে রেখে ভারতের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে। সমুদ্র সীমানাও নির্ধারিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক আসরে। ‘দ্বিপাক্ষিক’ আলোচনায় সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হয়নি। আমাদের জরুরি প্রয়োজনে তিস্তার পানি বণ্টনের এটি আন্তর্জাতিক আসরে উত্থাপন করা যেতে পারে। কারো ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর আমাদের দেশের কোটি কোটি মানুষের বেঁচে থাকার এটি ঝুলে থাকতে পারে না। Daily Manobkontho 26.05.16
==
শেষ পর্যন্ত সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস আবারও বিজয়ী হল পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচনে। ২০১১ সালের নির্বাচনের চেয়ে এবার আরও ৩০টি আসন বেশি পেয়েছে তৃণমূল। ২৭ মে মমতা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। নির্বাচনের আগে জাতীয় কংগ্রেস ও বাম জোট একত্রিত হয়েছিল। কিন্তু তারা নিজেদের মমতার বিকল্প হিসেবে দাঁড় করাতে পারেনি। মমতা ছিলেন একাই একশ’। তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল, তা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ গ্রহণ করে নেয়নি। উপরন্তু জাতীয় কংগ্রেস ও বাম জোট ‘ঐক্য’ করলেও অনেক আসনেই বামরা কংগ্রেসের ভোট পায়নি বলে সংবাদপত্রের খবর। বিধানসভার ২৯৪ আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস যখন একাই ২১১টি আসন পায় (জাতীয় কংগ্রেস ৪৫, বাম ২৮, বিজেপি ও অন্যান্য ৭), তখন বুঝতে হবে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে মমতার অবস্থান অনেক শক্তিশালী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি খোদ নিজে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেও মমতার ‘অবস্থান’ নড়াতে পারেননি। ফলে আগামী দিনগুলো মোদির জন্য যে খুব সুখের হবে, তা বলা যাবে না। তবে মোদির প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে আসামে বিজেপির বিজয়। সেখানে কংগ্রেস সরকারের পতন হয়েছে। এখন পশ্চিমবঙ্গে মমতার বিজয়ে আমরা কতটুকু আশাবাদী হব? তিস্তার পানি বণ্টনের প্রশ্নে মমতা ব্যানার্জির নাম প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে। এটা এখন স্পষ্ট যে, মমতা ব্যানার্জির কারণেই তিস্তা চুক্তিটি হয়নি। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে নীতিগতভাবে রাজি হলেও শুধু মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে চুক্তিটি হয়নি। নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় মমতা তার সঙ্গে ঢাকায় এসেছিলেন। পরেও এসেছিলেন একবার। বলেছিলেন তার ওপর আস্থা রাখতে। তখন সংবাদপত্রে বলা হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচনের (উত্তরবঙ্গ) কারণে তিনি কোনো চুক্তিতে যেতে রাজি হচ্ছেন না। কারণ এতে করে বিজেপি এটাকে ইস্যু বানিয়ে ফেলতে পারে। তাই নির্বাচনের পর এখন বাংলাদেশের অনেকের প্রশ্ন- মমতা কি এখন রাজি হবেন একটি চুক্তি করতে? রুদ্র কমিশনের সুপারিশমালা তার কাছে আছে। এ কমিশনটি তিনিই করেছিলেন। অধ্যাপক কল্যাণ রুদ্র তার সুপারিশে উল্লেখ করেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের চাহিদা মিটিয়েও বাংলাদেশকে তিস্তার ৫০ ভাগ পানি দেয়া সম্ভব। তিনি এমন মতামতও দিয়েছিলেন যে, ‘ম্যানেজমেন্ট প্রযুক্তি’ ব্যবহার করে তিস্তার পানি মজুদ করা যায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রণব কুমারও তার সঙ্গে একমত হয়েছিলেন বলে কলকাতার পত্রিকাগুলো আমাদের জানিয়েছিল। তবে যতদূর জানা যায়, মমতা ব্যানার্জি রুদ্র কমিশনের ব্যাপারে খুশি ছিলেন না, যে কারণে এ কমিশনের রিপোর্টটি তিনি প্রকাশ করেননি। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর তিনি রুদ্র কমিশনের সুপারিশকে বিবেচনায় নেবেন কিনা, সেটাই বড় প্রশ্ন এখন। তবে এটাও সত্য, তার কাছে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ আগে। কেন্দ্র তাকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে যেতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে তিনি মোদির সঙ্গে একটি ‘সমঝোতায়’ যেতে পারেন। যেমন একটি সমঝোতায় তিনি স্থল সীমান্ত চুক্তি সমর্থন করেছিলেন। রাজ্যসভায় তৃণমূল সমর্থন না করলে বিলটি পাস হতো না। কেন্দ্র থেকে তার আর্থিক সাহায্য ও সহযোগিতা দরকার। নরেন্দ্র মোদি এ এটিকে তার স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। মমতার ঢাকায় আসার ব্যাপারেও সেই মানসিকতা কাজ করেছিল। নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের অগ্রাধিকার তালিকায় ছিল কানেকটিভিটির প্রশ্নটি। তিনি ভারতের এক অঞ্চলকে অন্য অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করতে চেয়েছেন বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে। আসাম, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গ- এ তিনটি রাজ্য এই প্রক্রিয়ায় জড়িত। মোদি এজন্যই চেয়েছিলেন এই তিন রাজ্যের তিন মুখ্যমন্ত্রী ঢাকায় যাবেন। তাই মমতা এসেছিলেন। তিস্তা এখানে প্রধান ছিল না। অনেক পরিকল্পনা মমতা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না, যদি না কেন্দ্র আর্থিকভাবে তাকে সাহায্য করে। তখন সামনে নির্বাচন ছিল। মমতা তাই ঝুঁকিটি নিতে চাননি। নির্বাচনের আগে কেন্দ্রের গোয়েন্দা সংগঠন সিবিআইর একটি চাপও ছিল মমতার ওপর। সারদা কেলেংকারি, তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ওপর সিবিআইর নজরদারি ছিল বেশি। ফলে এই ‘চাপ’কে অনেকটা নিউট্রাল করতে তিনি মোদির সঙ্গে ঢাকায় আসতে রাজি হয়েছিলেন। কোনো চুক্তি করতে নয়। এখন মমতা ব্যানার্জি পুনরায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে যোগ দিতেও পারেন! অমিত শাহের গলায় সেই সুর। এক সময় তিনি এই জোটে ছিলেন। কেন্দ্রের রেলমন্ত্রী ছিলেন। আবার বেরিয়েও এসেছিলেন। এখন পশ্চিমবঙ্গে বিজয়ের পর ওসব কেলেংকারি থেকে ‘মুক্ত’ হতে তিনি যদি আবারও এনডিএ জোটে ফিরে যান, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই! তার ওপর আস্থা রাখা কঠিন। যতদূর জানা যায়, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে ঢাকায় আসেননি একটাই কারণে। আর তা হচ্ছে, মমতাকে উপেক্ষা করে কেন্দ্র এককভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করতে চাচ্ছিল, যেটি মমতার মনঃপূত হয়নি। ভারতের সংবিধানে রাজ্য সরকারের কিছুটা অধিকার স্বীকৃত। রাজ্য সরকারকে উপেক্ষা করে কেন্দ্র এককভাবে কোনো চুক্তি করতে পারে না। ঢাকা সফরের আগে মোদি তাকে কথা দিয়েছিলেন, তিনি ঢাকায় তিস্তার ব্যাপারে কোনো চুক্তি করবেন না এবং তিস্তার ব্যাপারে ঢাকার সঙ্গে কোনো কথা হবে না। যদি কথা বলতেই হয়, এ ব্যাপারে মমতাই কথা বলবেন। মমতা কথা বলেছিলেন। কূটনৈতিক ভাষায় বলেছিলেন তার ওপর আস্থা রাখতে। বাংলাদেশের মানুষ আস্থা রেখেছিল। এখন নির্বাচন শেষ হয়েছে এবং মমতা বিজয়ী হয়েছেন। তিনি আগামী ৫ বছরের জন্য জনগণের ম্যান্ডেট পেয়েছেন। বিহারে নীতিশ কুমারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে (বিহারের রাজধানী পাটনায়) যোগ দিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন একটা মহাজোট গঠনের সম্ভাবনা তিনি জাগিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে তার কোনো সহাবস্থান হয়নি। জাতীয় কংগ্রেস ঐক্য করেছিল বামফ্রন্টের সঙ্গে। জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে তার ঐক্য না করার এটি কেন্দ্রে মোদি সরকারকে খুশি করে থাকবে। ফলে মমতা যদি না চান, তাহলে তিস্তার পানি ভাগাভাগির ব্যাপারে মোদি সরকার তাকে চাপ দেবে না। আমাদের জন্য তিস্তার পানি বণ্টনের এটি অত্যন্ত জরুরি। আন্তর্জাতিক আইন আমাদের পক্ষে। ভাটির দেশ হিসেবে আমাদের অধিকার স্বীকৃত। ভারত (এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ) পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নিতে পারে না। পশ্চিমবঙ্গ তা-ই করছে। ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল পানিশূন্য হচ্ছে। উল্লেখ্য, তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। সিকিম থেকে ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ারের সমভূমি দিয়ে চিলাহাটি থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার উত্তর খড়িবাড়ির কাছে ডিমলা উপজেলার ছাতনাই দিয়ে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। ছাতনাই থেকে এ নদী নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, রংপুরের কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর হয়ে চিলমারীতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। ডিমলা থেকে চিলমারী এ নদীর বাংলাদেশ অংশের মোট ক্যাচমেন্ট এরিয়া প্রায় ১ হাজার ৭১৯ বর্গকিলোমিটার। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন গঠনের পর তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টনে শতকরা ৩৬ ভাগ বাংলাদেশ ও ৩৯ ভাগ ভারত এবং ২৫ ভাগ নদীর জন্য সংরক্ষিত রাখার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তে তিস্তার পানি প্রবাহের পরিমাণ বা কোন জায়গায় পানি ভাগাভাগি হবে এ রকম কোনো বিষয় উল্লেখ না থাকায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে তিস্তার পানির ৮০ ভাগ দু’দেশের মধ্যে বণ্টন করে বাকি ২০ ভাগ নদীর জন্য রেখে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ভারত সেই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে উল্টো ‘তিস্তার কমান্ড এরিয়া তাদের বেশি’ এ দাবি তুলে ‘বাংলাদেশ তিস্তার পানির সমান ভাগ পেতে পারে না’ এই দাবি উপস্থাপন করেছিল। এরপর আর তিস্তার পানি বণ্টনের জট খোলেনি। এখানে বলা ভালো, বাংলাদেশ উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলার ৩৫টি উপজেলায় তিস্তা সেচ প্রকল্প থেকে বর্ষা মৌসুমে সম্পূরক ও শুষ্ক মৌসুমে সেচ দেয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৭৯ সালের আগস্টে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের প্রথম ফেজ কাজের উদ্বোধন করে। এরপর ভারত ১৯৮৫ সালে তিস্তার উৎসমুখে এবং তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের মাত্র ৬৫ কিলোমিটার উজানে গজলডোবা নামক স্থানে ব্যারাজ নির্মাণ করে। এর ফলে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পটি সেচ প্রদানে অকার্যকর হয়ে পড়ে। এই সেচ প্রকল্পের উপকৃত এলাকা ৭ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর। এদিকে কিশোরগঞ্জ উপজেলার (নীলফামারী জেলার অন্তর্গত) বাহাগিলি নামক স্থানে তিস্তা প্রকল্পের দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজও হাতে নেয়া হয়েছে। এ কাজ সম্পন্ন হলে রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলার ৪ লাখ ৪৮ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসবে। কিন্তু পানির অভাবে তিস্তা এখন শুধু নামেই আছে। পানি নেই বললেই চলে। ভরাট হয়ে গেছে ৬৫ কিলোমিটার নদী। তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী হওয়ায় জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পানি প্রবাহ কনভেনশন ১৯৯৭ অনুযায়ী বাংলাদেশের পানি প্রাপ্তি সেখানে স্বীকৃত। এক্ষেত্রে ভারতের কাছে চাওয়ার কিছু নেই। মমতা ব্যানার্জির আপত্তিও গ্রহণযোগ্য নয়। তিস্তা চুক্তি হওয়াটা বাঞ্ছনীয়। তিস্তা চুক্তি না হলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া যাবে না। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। দীর্ঘদিনের ছিটমহল সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়েছে। ভারতকে আমরা ট্রানজিট দিয়েছি। ভারত থেকে আমরা বিদ্যুৎ কিনছি। বিবিআইএন নামে নতুন একটি উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্ম হয়েছে। এই উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা যদি ‘কাজ’ করে, তাহলে বদলে যাবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনীতি। বাংলাদেশ এই উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা থেকে উপকৃত হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘জটিলতা’ এখনও রয়ে গেছে। সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করার ঘোষণা, অবৈধ অভিবাসীদের কথা বলে বাংলাদেশকে কটাক্ষ করা, সীমান্তে হত্যা অব্যাহত রাখা ইত্যাদি বিষয় দু’দেশের সম্পর্ক আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পথে প্রধান অন্তরায়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে তিস্তার পানি বণ্টনের এটিও। মমতা ঢাকায় এসে বলেছিলেন তার ওপর আস্থা রাখতে। বাংলাদেশের মানুষ তার ওপর আস্থা রেখেছে। কিন্তু অনির্দিষ্টকালের জন্য মানুষ আস্থা ধরে রাখতে পারে না। এর সমাধান বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে মমতা ব্যানার্জিকেই এগিয়ে আসতে হবে। ঢাকায় তিনি বলেছিলেন, তিনি ‘কাঠবিড়ালির’ মতো ভূমিকা পালন করতে চান দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে। এখন তিনি অনেক সংহত। ভোটে হেরে যাওয়ার ভয় তার নেই। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি কিংবা বাম জোটও তার জন্য কোনো ফ্যাক্টর নয়। তাই আমরা চাই ‘কাঠবিড়ালি’ নয়, বরং তিস্তার পানি বণ্টনের ব্যাপারে তিনি নিজে উদ্যোগ নেবেন। রুদ্র কমিশন যে ‘ম্যানেজমেন্ট প্রযুক্তি’ ব্যবহারের কথা বলেছেন, সে অনুযায়ী অর্থাৎ প্রাপ্ত পানি ধরে রাখা ও তার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। এখন উদ্যোগটি নিতে পারেন মমতা স্বয়ং। না হলে বাংলাদেশকে তার পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ‘বিকল্প’ ভাবতে হবে।
Daily Jugantor 21.05.16
আরো পড়ুন:
0 responses on "তিস্তা ইস্যু সম্পর্কিত"