ডাচ-বাংলা ব্যাংকে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ, ৩৫ লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ

ডাচ-বাংলা ব্যাংকে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ, ৩৫ লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ

সারাদেশে শিক্ষার্থীদের খোলা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের প্রায় ৩৫ লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। গত কয়েক বছরে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দিয়ে প্রায় ৭০ লাখ অ্যাকাউন্ট খোলানো হয় এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এটাকে তাদের ব্যাপক সাফল্য হিসেবে প্রচার করে আসছে। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা বিতরণে ডাচ-বাংলার মোবাইল ব্যাংকিং রকেটের বিরুদ্ধেও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ব্যাংকটির সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও চিফ টেকনোলজি অফিসার মো: আবুল কাসেম খান সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উপবৃত্তি বিতরণ সংক্রান্ত এক আলোচনায় বলেন, ‘টোটালি আমরা এ পর্যন্ত সত্তর লাখের মতো এ্যাকাউন্ট খুলেছি। এর মধ্যে মনে হয় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ এ্যাকাউন্ট এ্র্যাকটিভ আছে, বাকিগুলো থাকে না।’

স্নাতক পর্যায়ে উপবৃত্তি বিতরণে অনিয়ম প্রসঙ্গে অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিশিক্ষাকে জানান, এক হাজার ১৮১টি ডিগ্রি কলেজ ও ১ হাজার ৫৪টি ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তি বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা  যায়, শিক্ষার্থীপ্রতি বছরে ৪ হাজার ৯০০ টাকা হারে ১২৩ জন শিক্ষার্থীর ৩ বছরের ১৮ লাখ ৮ হাজার ১০০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও তাদের হাতে পৌঁছায়নি। রংপুরের কাউনিয়া ডিগ্রি কলেজ, লালমনিরহাট সরকারি কলেজ, লালমনিরহাট নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসা, লালমনিরহাট আদর্শ ডিগ্রি কলেজ সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট একটি শিক্ষালয়ের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার প্রতিষ্ঠানের ৫৮ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির জন্য নির্বাচিত হলেও তাদেরকে উপবৃত্তি দেওয়া হয়নি। বৃত্তির অর্থ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে শিক্ষালয়ের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে নানা টালবাহানা করে কালক্ষেপণ করা হয়। শেষ পর্যন্ত বৃত্তির কোনো টাকা দেয়নি ব্যাংক বর্তৃপক্ষ।

আরেকটি শিক্ষালয়ের অধ্যক্ষ অভিযোগ করে বলেছেন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সেবার মনমানসিকতা নেই। বরং ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রকল্পের একটি চক্র শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির অর্থ আত্মসাৎ করছে। টিউশন ফি বাবদ মাসে কলেজে ৪৫ টাকা দেওয়ার বিধান থাকলেও তাও পাওয়া যায়নি।

স্নাতক (পাস) ও সমমানের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় সহযোগিতা করতে সরকার উপবৃত্তি প্রকল্প চালু করে। স্নাতক উপবৃত্তি প্রকল্প শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনেও এসব দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

আইএমইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, উপবৃত্তির জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হলেও অসংখ্য শিক্ষার্থী উপবৃত্তির টাকা পাননি। কেউ কেউ প্রথম কিস্তির টাকা পেলেও পরের কিস্তিগুলো পায়নি। আইএমইডির কর্মকর্তারা রংপুর, লালমনিরহাট, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার ৮টি শিক্ষালয় পরিদর্শন করে উপবৃত্তির অর্থ লোপাটের সত্যতা পান।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপবৃত্তির টাকা বিতরণে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের চরম অসহযোগিতা ছিল। টাকা বিতরণে শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠানপ্রধান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। উপজেলা বা কলেজভিত্তিক বিতরণকৃত টাকা ও শিক্ষার্থীর সংখ্যার তথ্য দিতে পারেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। উপবৃত্তি পাওয়ার শর্ত ভঙ্গ অর্থাৎ শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতির হার কম, ড্রপ আউট, বিয়ে হলে তাদের বাদ দিয়ে নতুন শিক্ষার্থী ঠিক করার এটি ছিল জটিল ও সময়সাপেক্ষ।

ভবিষ্যতে উপবৃত্তির টাকা বিতরণের সঙ্গে জড়িতের সমন্বয় জোরদার, কারিগরি ত্রুটি সমাধান, উপবৃত্তি বিতরণে ব্যাংকের হেল্প ডেস্ক চালু এবং বৃত্তির সুফল নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির সুপারিশ করেছে আইএমইডি।

প্রতিবেদনে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অর্থ দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, কিছুদিন আগে উপবৃত্তি প্রকল্পের মূল্যায়ন প্রতিবেদন পেয়েছি। সেখানে অর্থ সংক্রান্ত কিছু অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। এটি খতিয়ে দেখা হবে।

২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত স্নাতক উপবৃত্তি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়। প্রকল্পটি শেষ হলে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের মাধ্যমে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।

জানা যায়, দু্ই বছরেরও বেশি সময় আগে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর উপবৃত্তির অর্থ বিতরণের জন্য স্নাতক (ডিগ্রি) ও সমমানের শিক্ষার্থীদের ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের (ডিবিবিএল) মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশ দেয়। ওই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অ্যাকাউন্ট খুলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে জমা দিতে বলা হয়।

নির্দেশনা বলা হয়, শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা ও টাকা উত্তোলনের বিষয়ে অবগত করার জন্য ডাচ বাংলা ব্যাংকের প্রতিনিধি, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষালয়ের প্রধানের সমন্বয়ে এক দিনের ওরিয়েনটেনশন প্রোগ্রাম করবে। নির্দেশনায় আরো বলা হয়, শিক্ষার্থীদের নিজের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।

একইভাবে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির দায়িত্বও দেয়া হয় ডাচ-বাংলা ব্যাংককে। কয়েকলাখ শিক্ষার্থীকে অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা হয়। কিন্তু উপবৃত্তি বিতরণের নয়ছয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন পরিচালক দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, ফরিদ উদ্দিন নামের জামাতপন্থী  এক শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা মাধ্যমিক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রকল্পে রয়েছেন বছরের পর বছর। তিনি ডাচ-বাংলার পক্ষে সাফাই গাওয়ায় সম্প্রতি তাকে ধমক দেয়া হয়েছে।

 

আরো পড়ুন:

ডাচ-বাংলা ব্যাংক এসএসসি শিক্ষাবৃত্তি ২০১৭ অনলাইনে আবেদনের করবেন যেভাবে

ডাচ বাংলা ব্যাংক এসএসসি স্কলারশীপ/শিক্ষাবৃত্তির ফলাফল ২০১৭

ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এইচএসসি / সমমান শিক্ষাবৃত্তি ২০১৭ যেভাবে আবেদন করবেন

বাংলাদেশের সকল ব্যাংকের সকল ব্রাঞ্চের সুইফ্ট কোড সমুহ

মন্তব্য করুন

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline