৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি
আন্তর্জাতিক রাজনীতি
.
চীন কেন জি-৭ জোটে নয়
—
দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে চীন ও সাতটি শিল্পোন্নত দেশের জোট জি-৭। গত মাসের ২৬-২৭ তারিখ জাপানের ইসেশিমায় অনুষ্ঠিত জোটের শীর্ষ বৈঠকে পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগরে বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয় আলোচনাই যে কোনো সংঘাত অবসানের কার্যকর পন্থা। এর ত্বরিত ও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াংয়ি বলেছেন, ‘জোট নেতাদের উচিত অর্থনৈতিক ইস্যুর মধ্যে কথাবার্তা সীমাবদ্ধ রাখা, দক্ষিণ চীন সাগর বিতর্কে নাক গলানো নয়।’ চীনের প্রতিক্রিয়া ছিল এতই সোজা সাপ্টা ও কড়া ভাষায় যে এতে কূটনৈতিক শিষ্ঠাচারের দিকে লক্ষ্য রাখা হয়নি বলেও অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন। চীন বর্তমানে একটি অর্থনৈতিক শক্তি হওয়ার পরও গ্রুপ সেভেনের সদস্য নয়। কেন সদস্য নয় সে কথায় একটু পরে আসা যাক।
এবাবের জি-৭ সম্মেলন জোটের শীর্ষ নেতারা ছাড়াও হাজির ছিলেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রধানগণ। ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রধান ডোনাল্ড টাস্ক মন্তব্য করেছেন যে, চীন যেভাবে আন্তর্জাতিক জলসীমায় নিজের দাবি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে সেই প্রেক্ষিতে জি-৭ এর উচিত আরো ‘স্পষ্ট ও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা’। তিনি বলেন, প্রায় পুরো দক্ষিণ চীন সাগরের ওপরেই চীন মালিকানা দাবি করতে চলেছে। এ নিয়ে চীনের দক্ষিণ ও পূর্ব এশীয় প্রতিবেশী দেশগুলো উদ্বিগ্ন। এটি নিয়ে ২৬ মে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা সিনহুয়া একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। এতে জাপানের সমালোচনা করে বলা হয়েছে জি-৭ স্বাগতিক ও সভাপতি হওয়ার সুবাদে জোটকে কাজে লাগিয়ে জাপান এখন চীনকে একঘরে করতে উঠেপড়ে লেগেছে। ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সমম্বয়ে জি-৭ গঠিত। সিনহুয়ার ওই নিবন্ধে বলা হয়, ‘জি-৭ এর উচিত নিজস্ব এজেন্ডার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা, এর বাইরের কোনো বিষয়ে নাক না গলানো। মূলত অর্থনৈতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনার ১৯৭০-এর দশকে জি-৭ এর জন্ম হলেও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও বিভিন্ন আঞ্চলিক বিরোধের মতো ইস্যুগুলো জোটের এজেন্ডায় সব সময় স্থান পেয়ে এসেছে। এবারের সম্মেলনে দক্ষিণ চীন সাগর ছাড়াও শরণার্থী সঙ্কট, সন্ত্রাসবাদ, সিরিয়া, লিবিয়া, ইরান, ইরাক, আফগানিস্তান, উত্তর কোরিয়া, ইউক্রেন ও রাশিয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগর কেবল স্থানীয় সীমারেখা চিহ্নিতকরণ বিতর্ক নয়। বরং এর সঙ্গেও অর্থনীতির যোগ রয়েছে। এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক নৌপথ। এই পথ যেন বাধাহীন ও নিরাপদ থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা শিল্পোন্নত দেশগুলোর রয়েছে। এবারের সম্মেলনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো ২০০৮ সালের পর এশিয়ায় জোট নেতৃবৃন্দ বৈঠকে বসলেন।
বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তি হওয়া সত্ত্বেও চীন ধনী দেশগুলোর ক্লাব জি-৭ এর সদস্য নয়। এর প্রধান কারণ দেশটি মানব উন্নয়ন সূচকে (এইচডিআই) অনেক পিছিয়ে আছে। জি-৭ সদস্য হওয়ার প্রথম শর্ত এইচডিআই র্যাংকিংয়ে ওপরের দিকে থাকা। দ্বিতীয় শর্ত মোট জাতীয় সম্পদ।
জি-৭ ভুক্ত দেশগুলো এইচডিআই র্যাংকিংয়ে মোটামুটি প্রথম থেকে ২৫ এর মধ্যে রয়েছে। এদিক থেকে অনেক পিছিয়ে চীন। এক্ষেত্রে চীনের অবস্থান হলো ৯০। চীন অর্থনৈতিক উন্নয়ন করলেও নাগরিকদের জীবনযাত্রার মানের সার্বিক উন্নয়ন ঘটাতে পারেনি। তাছাড়া পরিবেশ উন্নয়ন ও মানবাধিকার রেকর্ডও একটি বড় ইস্যু। এ বিষয়গুলোতেও দেশটির অবস্থা আশাব্যঞ্জক নয়। তাছাড়া এর রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক কারণও রয়েছে। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ ও তার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববাজারে তেল সঙ্কট মোকাবিলায় করণীয় স্থির করতে গিয়ে ধনী শিল্পোন্নত দেশগুলো জোটের গোড়াপত্তন করে। শুরুতে এটি ছিল জি-৬। পরে কানাডা এতে যোগ দিয়েছে। চীন ওই সময়ে অর্থনৈতিকভাবে আজকের মতো এতটা অগ্রসরমান ছিল না। জোটভুক্ত প্রতিটি দেশই কম্যুনিজম ব্লকের বাইরে। সে কারণেও চীন কুলীন এই ক্লাবের সদস্য হতে পারেনি।
.
তথ্যসূত্র > ইন্টারনেট
0 responses on "চীন কেন জি-৭ জোটে নয়"