এ বছর এইচএসসি ফলাফল খারাপ হওয়ার কারণ

এ বছর এইচএসসি ফলাফল খারাপ হওয়ার কারণ

নতুন পদ্ধতিতে উত্তরপত্র মূল্যায়ন এবং কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ফল বিপর্যয় এবার উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি(HSC) বা উচ্চ মাধ্যমিক) পরীক্ষার সামগ্রিক ফলের ওপর প্রভাব ফেলেছে। এর সঙ্গে চারটি শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজীতে পাসের হার কমে যাওয়া এবং বহু নির্বাচনী প্রশ্নের (এমসিকিউ) অংশে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের পাস করতে না পারাও খারাপ ফলের কারণ। মূলত এই চার কারণেই এবার ফল খারাপ হয়েছে।

আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি(HSC) বা উচ্চ মাধ্যমিকর ফল বিশ্লেষণে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এইচএসসি(HSC) বা উচ্চ মাধ্যমিকতে এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ গতবারের চেয়ে কমেছে। এবার গড় পাসের হার ৬৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। গতবার এই হার ছিল ৭২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। পাসের হার ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বিন্দু কমেছে। ফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ কমেছে ১৫ হাজার ৭০৮। এবার আট বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩৩ হাজার ২৪২ জন শিক্ষার্থী। গতবার পেয়েছিলেন ৪৮ হাজার ৯৫০ জন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এসএসসি (ssc) বা মাধ্যমিকি পরীক্ষার মতো এবার এইচএসসি(HSC) বা উচ্চ মাধ্যমিকতেও নতুন পদ্ধতিতে প্রথমবারের মতো মডেল উত্তরপত্র অনুযায়ী খাতা মূল্যায়ন করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন বিষয়ের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই আগে থেকেই প্রশিক্ষিত তিনজন পরীক্ষককে বোর্ডে ডেকে আনা হয়। তাঁরা নমুনা হিসেবে ভালো, মাঝারি ও খারাপ মানের তিনটি উত্তরপত্র সংগ্রহ করেন। সেগুলো এই তিনজনও দেখেন এবং পরে ২০ জন পরীক্ষককে দিয়ে দেখানো হয়। তাতে দেখা যায়, একই উত্তরপত্র হলেও একেকজন একেক রকম নম্বর দিচ্ছেন। পরে সবাই মিলে একটি মডেল উত্তরপত্র চূড়ান্ত করেন। সেটি খাতা নিতে আসা পরীক্ষকদের নির্দেশনা আকারে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, এই উত্তরপত্রে কেমন নম্বর দেওয়া হতে পারে, তার একটি ধারণা দেওয়া হয়। খাতা জমা দেওয়ার পর আবার সেখান থেকে দৈবচয়ন ভিত্তিতে সাড়ে ১২ শতাংশ খাতা যাচাই করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় পরীক্ষকেরা সতর্ক হয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন। বোর্ডের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই প্রক্রিয়ায় মূল্যায়ন তুলনামূলক সঠিক হচ্ছে। ফলে আগের মতো আর ঢালাও নম্বর পাওয়া যাচ্ছে না।

এত দিন পরীক্ষায় উদারভাবে বেশি নম্বর দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ ছিল। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যেও এই অভিযোগের এটি উঠে এসেছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল বলেছেন, এবারের ফলে তাঁরা বিস্মিত নন। বরং নতুন পদ্ধতিতে সঠিকভাবে মূল্যায়ন হয়েছে, এটাই বিবেচ্য বিষয়। তিনি বলেন, তাঁরা অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, আগে সব পরীক্ষক সঠিকভাবে খাতা দেখতেন না। কেউ কম বা বেশি নম্বর দিতেন। এ জন্য এটাকে অনেকে হাস্যকর করে বলতেন, ওজন করে নম্বর দেওয়া হয়। এ জন্যই বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটের মাধ্যমে সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তবে বিভিন্ন বোর্ডের পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লা বোর্ডের ফল বিপর্যয়ের বড় প্রভাব পড়েছে এবারের সার্বিক ফলাফলে। এই বোর্ডে পাসের হার ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। সার্বিক গড় পাসের হারের চেয়ে এই বোর্ডে পাসের হার ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বিন্দু কম। এ ছাড়া মানবিক শাখায় ৪২ হাজার ৩৯৩ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেন মাত্র ১৬ হাজার ২৭২ জন। এক শাখাতেই বিরাটসংখ্যক এই পরীক্ষার্থী ফেল করায় গড় পাসের হার কমেছে। এই বোর্ডে ইংরেজীতে প্রায় ৩৮ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করতে পারেননি।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল খালেক প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে তাঁরা মনে করছেন, ইংরেজীর কারণেই ফল খারাপ হয়েছে। তবে এটি তাঁরা আরও মূল্যায়ন করে দেখবেন।

ইংরেজী ফল শুধু কুমিল্লা বোর্ডেই খারাপ হয়নি, চট্টগ্রাম ও দিনাজপুর বোর্ডেও এ বিষয়ের ফল খারাপ হয়েছে। যশোর বোর্ডেও ইংরেজীর কারণে ফল খারাপ হয়েছে।

যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল আলিম প্রথম আলোকে বলেন, ইংরেজীতে গতবার পাসের হার ছিল ৮৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ, সেখানে এবার পাস করেছেন ৭২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। পদার্থেও গতবারের চেয়ে পাসের হার কমেছে। এই দুই বিষয়ে পাসের হার কমে তা বোর্ডের ফলে প্রভাব ফেলেছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, এবার এমসিকিউ অংশে পাসের হার অনেক কম। অথচ আগে এই অংশে পাসের হার বেশি হতো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আগে অনেক পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে এমসিকিউ অংশের প্রশ্নপত্র বাইরে চলে আসত এবং তা সমাধান করে ভেতরে দেওয়া হতো। এতে কিছু শিক্ষকও জড়িত ছিলেন। এ বিষয়ে কড়াকড়ি অবস্থান নেওয়ায় এই প্রক্রিয়া কমে গেছে। এ কারণে এমসিকিউতে অনেকে ফেল করেছেন।

গতকাল সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের অনুলিপি তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। পরে বেলা একটায় সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন। এর পরপরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ফল প্রকাশ হতে থাকে। এবার আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৯ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩৮ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৯৪২ জন। তবে কারিগরি, মাদ্রাসাসহ ১০ বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭০ জন। এর মধ্যে পাস করেছেন ৮ লাখ ১ হাজার ৭১১ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন।

মানবিকে ধাক্কা

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবার মানবিক শাখায় ফল বেশি খারাপ হয়েছে। আট বোর্ডের অধীনে এই শাখায় পাসের হার ৫৮.১৪ শতাংশ। অথচ গড় পাস ৬৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এই শাখায় পাসের হার কমার কারণে সার্বিক পাসের হার স্বাভাবিকভাবেই কমেছে। আট বোর্ডে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩৩ হাজার ২৪২ জন। এর মধ্যে মানবিক শাখায় পেয়েছেন ১ হাজার ৭২৬ জন। ব্যবসায় শিক্ষায় ২ হাজার ৫৮১ জন এবং বাকি ২৮ হাজার ৯৩৫ জনই বিজ্ঞানের। বিজ্ঞান শাখায় পাসের হারও বরাবরের মতো বেশি (৮৩ দশমিক ১৪ শতাংশ)।

শীর্ষে সিলেট

বোর্ডওয়ারি ফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, এবার পাসের হারে সবার শীর্ষে আছে সিলেট বোর্ড, ৭২ শতাংশ। ঢাকা বোর্ডে ৬৯ দশমিক ৭৪, রাজশাহী বোর্ডে ৭১ দশমিক ৩০, যশোরে ৭০ দশমিক শূন্য ২, চট্টগ্রামে ৬১ দশমিক শূন্য ৯, বরিশালে ৭০ দশমিক ২৮ এবং দিনাজপুর বোর্ডে পাসের হার ৬৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

পাসে ছাত্রীরা এগিয়ে

১০টি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হারে ছাত্রদের (৬৭ দশমিক ৬১ শতাংশ) চেয়ে ছাত্রীরা (৭০ দশমিক ৪৩ শতাংশ) এগিয়ে আছেন। তবে মোট জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে শিক্ষার্থী ২০ হাজার ৫৩৫ এবং ছাত্রী ১৭ হাজার ৪৩৪ জন।

শতভাগ-শূন্যভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান

এইচএসসি(HSC) বা উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় এবার ৫৩২টি প্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন। গতবার এমন প্রতিষ্ঠান ছিল ৮৪৮টি। অন্যদিকে শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠান এবার ৭২টি। গতবার ছিল ২৫টি। অর্থাৎ এ দুই ক্ষেত্রেই অবনতি হয়েছে।

 

আরো পড়ুন:

কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের বৈধতা প্রশ্নে অনুষ্ঠিত সভা শেষ হয়েছে

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি কমানোর দাবিতে শিক্ষার্থীদের ধর্মঘট

রহমতুল্লাহ মডেল হাই স্কুলে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় ৭৪ শতাংশ পাস করেছে

গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান ডিপ্লোমা পরীক্ষা আগামী ১৯শে ডিসেম্বর শুরু হবে

এসএসসিএইচএসসি ফরম পূরণে বাড়তি ফি ফেরত না দিলে ম্যানেজিং কমিটির কার্যক্রম স্থগিত: হাই কোর্

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline