আগামী বছর থেকে নতুন পদ্ধতিতে তৈরী করা প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হবে। তবে পদ্ধতিটি কী তা এখনও নিশ্চিত নয়।
আজ মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় অনেকেই প্রশ্ন ব্যাংকের কথা বলেছেন। সবার সঙ্গে কথা বলে পদ্ধতি ঠিক করা হবে। চলতি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের এ পর্যন্ত ১৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সভা শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন।
পরীক্ষায় এমসিকিউ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন) থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি আগে থেকেই এমসিকিউ বন্ধের বিষয়ে বলে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বলার পর এটা এখন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা হবে।
চলতি এসএসসি পরীক্ষায় একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় এই জরুরি সভা ডাকা হয়। তবে সভায় আগামী দুই এপ্রিল থেকে শুরু উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা কীভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সোহরাব হোসাইন বলেন, যেহেতু আগামী এইচএসসি পরীক্ষা নতুন পদ্ধতিতে নেওয়ার সুযোগ নেই। তাই এটা কীভাবে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্তগুলো অব্যাহত থাকবে।
শিক্ষামন্ত্রীর নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপত্বিতে সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ডাক ও টেলিযোগ এবং তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, আইসিটি সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সব দপ্তর ও সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রশ্ন ফাঁসের ক্ষেত্রগুলো তুলে ধরা হয়েছে। সর্বোপরি পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণকে কষ্টসাধ্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বিজি প্রেস প্রশ্ন কম্পোজ এডিট, প্রিন্ট ও প্যাকেজিং পর্যায়ে প্রায় ২৫০ ব্যক্তির সম্পৃক্ততা রায়েছে। তারা প্রশ্নপত্র কপি করতে না পারলেও তা স্মৃতিতে ধারণ করা সম্ভব। এভাবেও প্রশ্ন ফাঁস করা সম্ভব হতে পারে বলে মনে করছে শিক্ষা-মন্ত্রণালয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে ট্রেজারি বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে অনেক কেন্দ্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। অতিরিক্ত কেন্দ্রের অনুমতি দেয়া হয়েছে। অথচ সেখানে পর্যাপ্ত জনবলের অভাব রয়েছে। তাছাড়া ভেন্যুগুলো থেকে মূল কেন্দ্রগুলোর দূরত্ব অনেক বেশি। ফলে ৩০ মিনিটের আগে কেন্দ্র সচিব প্রশ্ন খুলতে বাধ্য হচ্ছেন। সেখান থেকেও প্রশ্ন ফাঁস হতে পারে।
সভায় বলা হয়েছে, পরীক্ষার্থী বা পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তদের স্মার্টফোন নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। গুটি কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে মূল প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসকারীদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরা তৎপরতা আরও বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। এটা পরীক্ষার শুরুর ১৫ দিন আগে থেকেই শুরু করা হলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।
গোয়েন্দা বাহিনীর লোকবল ও অবকাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত স্বল্পতার কারণে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নজরদারী করা সম্ভব হচ্ছে না। দুষ্কৃতিকারীদের তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার ও শস্তির আওতায় আনতে না পারায় অন্যরাও অপরাধ করতে ভয় পাচ্ছে না। ফলে প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিটিআরসি কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন আপলোডকারীদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এবং সন্দেহজনক অ্যাকাউন্টগুলোও শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
পাবলিক পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সভায় কার্যপত্রে এসব বিষয় তুলে ধরেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এসব সমস্যা কীভাবে সমাধান করা সম্ভব সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে।
উল্লেখ, আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে চলমান এসএসসি পরীক্ষা। এরপর ২ এপ্রিল থেকে শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা।
আরো পড়ুন:
0 responses on "আগামী বছর থেকে নতুন পদ্ধতিতে তৈরী করা প্রশ্নে পরীক্ষা হবে"