
১১ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী কোনো ক্যাম্পাস নাই এবং তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার কোনো উদ্যোগও নাই।
কয়েকদফা সময় দেয়ার পরও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের অধিকাংশ বিধান ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনার শর্ত পূরণে ব্যর্থ ১১ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে সরকার। তবে, এই সিদ্ধান্ত অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। তাদের কোনো ক্ষতি বা সমস্যা হবে না। ভর্তি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়েই তারা শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখতে পারবে। এ ছাড়া আরও ৩২ বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারের কাছে বার্ষিক হিসাব জমা না দেওয়াসহ নানা কারণে কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। গত রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ সভা প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: সোহরাব হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, পুরনো ৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯টি স্থায়ী ক্যাম্পাসে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু বাকি ৩২টির মধ্যে ১১টি সামান্যতম কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে তাদের কাছ থেকে এ-সংক্রান্ত ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, এই ১১টির মধ্যে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার কোনোরকম উদ্যোগ নেয়নি। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য জমি কিনেছে, যদিও নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি বা স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেনি। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এসব কারণে তাদের শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নতুন শিক্ষার্থী বন্ধ করা হবে যে ১১ বিশ্ববিদ্যালয়ে :
১) স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ,
২) ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ,
৩) ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ (ইউডা),
৪) বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি,
৫) রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা,
৬) আশা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ,
৭) ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া,
৮) প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি,
৯) স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ,
১০) ইবাইস ইউনিভার্সিটি এবং
১১) প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়।
জানা যায়, অভিযুক্ত ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া উত্তর সন্তোষজনক না হলে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই এসব প্রতিষ্ঠানে নতুন করে শিক্ষার্থী বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ তালিকাভুক্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসিতে নতুন বিভাগ ও বিষয় খোলার অনুমতির জন্য আবেদন করলেও তা অগ্রাহ্য করা হবে। পাশাপাশি গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে সনদ বিতরণের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আবেদন করলেও অনুমতি দেওয়া হবে না। এ ছাড়া বিদেশি অর্থায়ন বন্ধের নির্দেশসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাও বন্ধ করে দেওয়া হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত দশ বছর যাবত এমন আল্টিমেটাম কয়েকবার দেয়া হয়েছে। মালিকপক্ষ মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কতিপয় কর্মকর্তার সঙ্গে আঁতাত করে বারবার সময় বাড়িয়ে নেয়। শোকজ আর শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের হুমকি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পরপরই দৌড়ঁঝাপ শুরু করে অভিযুক্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকপক্ষ। মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির প্রভাবশালী কর্মকর্তা ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কর্মচারিদের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ পুরনো।
ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক কর্মকর্তা ফেরদৌস জামানের সম্পদের পাহাড়ের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুনীতি দমন কমিশন। বর্তমানের ফেরদৌস জামান ইউজিসির পরিকল্পনা শাখার অতিরিক্ত পরিচালক।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রেপ্তার পিও মোতালেব ও কর্মচারি নাসিরের বিরুদ্ধে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে সুবিধা নেয়ার অভিযোগ বেশ পুরনো।
এছাড়া তিনবছর আগে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল সুনির্দিষ্টভাবে বলেছে যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নানাভাবে ঘুষ নেন মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কর্মকর্তারা।
আরো পড়ুন: