৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি
.
বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ টপিকসে আন্তর্জাতিকে কাজে দিবে
বৈশ্বিক জঙ্গিবাদ পশ্চিমা বিশ্বের একটি খেলারই অংশ : ডা. এম এ হাসান
===
যুগান্তর : বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ বাড়ছে কেন?
.
ডা. এম এ হাসান : বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ বাড়ছে কেন এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে ক’টি বিষয় পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। এর একটি হল সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা, অন্যগুলো হল- এর কারণ, এর প্রয়োগ, পরিধি, বিস্মৃতি ও বাস্তবতা। শক্তি প্রয়োগ ও সংঘাতের মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমষ্টির ওপর আঘাত এনে ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করে বা ভীতির আবহ তৈরি করে সাধারণ মানুষের মনে ভীতি সৃষ্টি করা সন্ত্রাসের প্রাথমিক লক্ষ্য। ভিন্ন মত, সংস্কৃতি ও দর্শনে বিশ্বাসী তথা ভিন্ন জাতি ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর ওপর উগ্র আঘাত হেনে সরকার ও জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ফায়দা লাভের চেষ্টা এবং এর বাস্তবায়নকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে অভিহিত করা হয়। তবে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থ এবং আগ্রাসী চক্রের নষ্ট পরিকল্পনার কারণে এই সন্ত্রাসের উৎপত্তি, লালন ও বিস্তৃতি, এমনকি এর সংজ্ঞা একটি ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। প্রাচীন যুগে শক্তিধর গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন দেশের নিষ্ঠুর উপজাতি তথা নিপৃতিরা ভয়াবহ নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে সংগঠিত সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিশেষ জাতি ও গোষ্ঠীর মর্যাদা ও মনোবল ছিন্নভিন্ন করার চেষ্টা করেছে। খ্রিস্টপূর্ব ১০৫ অব্দে Cimbri গোত্রভুক্ত যোদ্ধারা যখন রোম আক্রমণ করে তখন রোম সরকার Terror Cimbricus নামক একটি কৌশল প্রয়োগ করে। সেই থেকে ক্ষমতাসীনদের ওপর যে কোনো রকম সশস্ত্র আঘাতকেই সন্ত্রাস বলে ব্যাখ্যা করা হয়। আরও স্পষ্ট করে বললে, ব্যক্তিস্বার্থ, গোষ্ঠীস্বার্থ এবং সামষ্টিক স্বার্থে পরিকল্পিতভাবে যুদ্ধের বাইরে সাধারণের ওপর যে আঘাত হানা হয় সেটা যেমন সন্ত্রাস তেমনি যে কোনো বৈধ অথবা প্রতিষ্ঠিত সর্বজনস্বীকৃত সরকারের ওপর যে কোনো আঘাতকে সন্ত্রাস বলে অভিহিত করা হয়। বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে প্রত্যেক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থসহ ধর্মীয় ও গোষ্ঠীগত অসহিষ্ণুতার প্রভাব থাকে সুগভীরভাবে। ব্যক্তি ও সমষ্টির নিজস্ব ঘৃণা ও ঘৃণ্য কৌশলকে সমষ্টির আবেগে মুড়িয়ে সন্ত্রাসী উন্মাদনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার বহু উদাহরণ রয়েছে। দেশে দেশে সংঘটিত বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডগুলো মালা গেঁথে নানা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রের সঙ্গে সেতুবন্ধন স্থাপনের চেষ্টা এমন কৌশলের উদাহরণ, যেটা এখন বাংলাদেশে ঘটছে। সাম্রাজ্যবাদী তথা ঔপনিবেশিক সরকারগুলোর নষ্ট কর্ম বিবেচনায় নিলে অনেক রাজনৈতিক সন্ত্রাসকে ন্যায়সঙ্গত মনে হতে পারে। এ কারণের পেছনে একটি নরম সমর্থন তৈরি হয়। সন্ত্রাসের লক্ষ্য হল স্বল্পপরিসরে বৃহত্তম ক্ষতিসাধন, বিশেষ করে মনজাগতিক ক্ষতিসাধন। সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য হল সাধারণের মনে ভীতি সৃষ্টি করে একই সঙ্গে সবার মনোযোগ আকর্ষণ এবং নিজস্ব মতবাদকে সামনে আনা, সরল কথায় অন্যের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে নিজের ঝাণ্ডা ওড়ানো এবং নিজের স্বার্থসিদ্ধি। এটা তাদের কৌশলের অংশ। তারা সরকার, দেশের আইন প্রয়োগকারী সংগঠন এবং আইন প্রণেতাদের চিন্তা ও কর্মের গতিধারা পরিবর্তন করতে গিয়ে অনৈতিক, অমানবিক ও নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে দ্বিধাবোধ করে না। তারা সাম্রাজ্যবাদী দেশ ও ভোগবাদী সমাজের নানা নষ্ট কর্ম, লোভ ও অনাচারকে সামনে এনে অথবা রাষ্ট্র ও সমাজের স্খলন, পতনকে অতিরঞ্জিত করে নিজেদের অপকর্মগুলোকে ন্যায়সঙ্গত প্রমাণ করার চেষ্টা করে।
..
যুগান্তর : আইএস, আল কায়দা এরা কারা? এরা কাদের সৃষ্টি?
,
ডা. হাসান :
.
এ প্রসঙ্গে প্রথমেই বলা দরকার, স্বার্থান্ধ ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো অনেক ক্ষেত্রে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পেছন থেকে মদদ দেয় অথবা নৈতিকতাহীন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সন্ত্রাসী সৃষ্টি করে। আফগানিস্তানের মাটি থেকে সোভিয়েতদের বিতাড়িত করতে জাতীয়তাবাদী ইসলামী মুজাহিদদের যে অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা ঢেলে দেয় আমেরিকা, তা-ই কালক্রমে আল কায়দা সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এর আগে ৭০-এর দশকে ইরানের শাহ ক্ষমতাবান হয়ে উঠলে তা প্রতিহত করতে আমেরিকা ও তার মিত্র ফ্রান্স ওই দেশে অবস্থানকারী আয়াতুল্লাহ খোমেনির ক্ষমতায়নে পথ করে দেয়। সিআইএ সৃষ্ট ইরানের গোয়েন্দা সংগঠন সাভাক বাহিনীকে ধ্বংস করে ইরানের শাহকে মরা ইঁদুরের মতো ছুড়ে দিয়েছিল আমেরিকা। এতে করে ইরানে যে মৌলবাদীদের উত্থান হয় তারাই কালক্রমে আক্রমণ করে যুক্তরাষ্ট্রকে। ইরানের কাছে আমেরিকার হেনস্তা হওয়ার এটি সস্ত্রাসীদের নিঃসন্দেহে উৎসাহিত করেছে। আফগানিস্তানের মাটিতে যে ইসলামী মুজাহিদ গোষ্ঠীকে যুক্তরাষ্ট্র একসময় সাহায্য করেছিল, তারাই আমেরিকাসহ পাশ্চাত্য গোষ্ঠীকে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে যুদ্ধ ও সংঘাতে জড়ায়। তাতে ইসলামী জনগোষ্ঠীর দু’ধারার মানুষ সম্পৃক্ত হয়। এর মধ্যে একটি ইরান ও শিয়া প্রভাবিত মুজাহিদীন গোষ্ঠী, অন্যটি পাকিস্তান ও সৌদি সুন্নিগোষ্ঠী প্রভাবিত তালেবান। আইএসআই ও পাকিস্তান প্রশিক্ষিত তালেবান গোষ্ঠীটি আল কায়দা নাম গ্রহণ করে। আমেরিকান গবেষকদের মতে আল কায়দার তৎপরতা শুরু হয় ১৯৮৮ সালে। এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সামনে এসেছেন ওসামা বিন লাদেন, আবদুল্লাহ আজম, আইমান আল জাওয়াহেরি প্রমুখ। এদের অনেকে সালাফিস্টদের অনুসরণ করে।
.
যুগান্তর : সালাফিস্ট চিন্তাধারার অধিকারী আসলে কারা? এদের কর্মকাণ্ডের শুরু কবে থেকে?
.
ডা. হাসান : সালাফিস্টদের অভিযাত্রা শুরু হয় ১৯৮৮-১৯৯৯ সালে। মওদুদীবাদী ও ব্রাদারহুড গোষ্ঠীর সঙ্গে সালাফিস্ট চিন্তাধারার অনেক মিল রয়েছে। সপ্তম শতকের খারিজিদের (খারিজাইট) অনুসরণ করে এরা উঠে এসেছে। খারিজি ও সালাফিস্টদের চিন্তাধারায় যথেষ্ট মিল ছিল। ১৮ শতকের শেষে এবং ১৯ শতকের শুরুতে কোনো কোনো ইসলামিস্ট ধর্মকে জাতীয়তার অংশ করতে চেয়েছে এবং রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার চেয়েছে। এরা ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ইসলামী রাষ্ট্রের ঐক্য চেয়েছে। তবে ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারতের জামিয়াত-এ-উলুমে-হিন্দ শুরু থেকে নিজেদের প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে দূরে রেখেছে। মাওলানা মেহমুদ, আহমেদ মাদানী, সৈয়দ হোসেন, আহমেদ দেহেলবী প্রমুখ ইসলামী চিন্তাবিদ ১৯১৯ সালে এমন একটি বিশাল সংঘ তৈরি করে। ওই সংঘ জাতীয়তাবাদী চিন্তা ও দর্শনকে প্রাধান্য দিয়ে ভারতের সংবিধানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। সেই সঙ্গে অমুসলিমদের সঙ্গে সদাচারণ ও হিন্দুদের কাফের হিসেবে আখ্যায়িত না করে ধর্মভিত্তিক অনাচারে লিপ্ত না হওয়ার চুক্তি করে। শুরুতে প্যান-ইসলামিস্টদের বিস্তার ঘটে মিসর, ইয়েমেন, লিবিয়া, ইরাক, সিরিয়া, তুরস্ক ও ভারতে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাথ পার্টি ও নাসেরি চিন্তার বিকাশ ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। ওই সময় ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ব্রাদারহুড ও অন্যান্য মৌলবাদীকে পিছু হটিয়েছে। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর এরা পুনরায় ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হয়। সালাফিস্ট জিহাদি গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ কর্মকাণ্ড শুরু হয় ১৯৯০-এ। এটা ব্রাদারহুডকে অনুসরণ করলেও সব উগ্র মুসলিম দলগুলোর মধ্যে এরাই উগ্রতম। সপ্তম শতকে খারিজি মতবাদের তাত্ত্বিক দর্শন এবং ব্রাদারহুডের কাঠামো নিয়ে সৃষ্ট এই উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠীই সালাফিস্ট। এদের লক্ষ্য হল আল্লাহর শাসন প্রতিষ্ঠা, মানুষের সৃষ্ট সব সংবিধান অমান্য করা, শরিয়াহ আইন প্রয়োগ করে আমেরিকাসহ সব ‘অবিশ্বাসীর’ রাষ্ট্র ও শাসনের প্রতি আঘাত হানা। সর্বোপরি বিধর্মীদের কাফের বলে এবং তথাকথিত ধর্মবিচ্যুত মুসলমানদের তাকফির বলে নিধন করাকে এরা ধর্মীয় কাজ বলে মনে করে। আল কায়দা ও আইএস কোনো না কোনোভাবে সালাফিস্টদের মিশ্র মতবাদ গ্রহণ করে কাজ করছে। ভিন্ন মতে এই সালাফিস্টরা ১৯৪৮-এর পরপর ক্ষুদ্র পরিসরে পাকিস্তানের রাজনীতিতে শেকড় গাড়ে জামায়াত এবং তাদের সমমনা দলগুলোর মধ্যে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ভারতের মাটিতে ইতিপূর্বে যারা ফারাজি আন্দোলন করেছিল, তাদের অনেকেই ওই চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত ছিল। ইসলামিক রিচুয়াল বা আনুষ্ঠানিকতাভিত্তিক ধর্মাচারে বিশ্বাসী গোষ্ঠীর মধ্যে যারা শরিয়াহ আইনকে প্রাধান্য দিয়ে ধর্মের বিভাজনকে মুখ্য করে তোলে এবং সুফিবাদের সূক্ষ্ম তথা আধ্যাত্মিক মতবাদকে ইসলাম ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে করে তারাই সালাফিস্ট। এরা শিয়া, হাম্বালি, কাদিয়ানিসহ নানা ভিন্নমতালম্বীর সঙ্গে অসহিষ্ণু আচরণকে প্রাধান্য দেয়। এরা জিহাদকে আত্মার মুক্তি অর্থে গ্রহণ করে না। ভিন্নমতালম্বীদের হত্যাকে এরা ধর্মীয়ভাবে বৈধতা দেয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যে নষ্ট দর্শন হৃদয়ে পোষণ করেছিল, সেই দর্শন ও ঘৃণাকে উসকে দিয়েছিল সালাফিস্টরাই। এরাই পাকিস্তানের বালুচদের ওপর নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। সাদ্দামের সময় তার সেনারা কুর্দিদের হত্যা করেছে। সোমালিয়া, সুদান, নাইজেরিয়ায় এরাই অপকর্ম করে যাচ্ছে। ইউরোপের মাটিতে বসনিয়ার গৃহযুদ্ধে অংশ নেয় এরাই।
.
যুগান্তর : আল কায়দা নামে তাদের কর্মকাণ্ড তো অনেক পরের ব্যাপার?
.
ডা. হাসান :
২০০১ সালের আগে আল কায়দা যেমন প্রচার ও জনসমর্থন পায়নি, তেমনি শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের মধ্য দিয়ে এদের ভয়াবহ মুখচ্ছবি জনসম্মুখে আসে। সোভিয়েত সেনাদের আফগানিস্তান থেকে বিদায় করার যুদ্ধে অংশ নেয় ধর্মান্ধ মুজাহিদ ও জঙ্গিগোষ্ঠী। সোভিয়েতকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে উজবেকিস্তান ও চেচনিয়ার সোভিয়েতবিরোধী গ্র“পগুলোকে পাশ্চাত্যের সমর্থন ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। ইসলামী বিশ্বে নানা যুদ্ধ ও সংঘাতের ঘটনা অনুসরণ করলে এই ভ্রান্ত মতবাদের উত্থানে পাশ্চাত্যের নেতিবাচক ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। আল কায়দা সারা বিশ্বে একক চেইন অব কমান্ডে চলে না। এটি একটি ভ্রান্ত দর্শন।
.
যুগান্তর : আল কায়দার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কী?
–
ডা. হাসান : আল কায়দার সঙ্গে সিআইএ’র সখ্যের বিষয়ে অথবা ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে বুশ পরিবারের নৈকট্যের বিষয়ে অনেকেই জানেন। আফগানিস্তানে মুজাহিদ খালক নেতা ছিলেন মোল্লা মাসুদ বা আহমেদ শাহ মাসুদ নামে এমন একজন গেরিলা কমান্ডার, যিনি ছিলেন সমর কৌশলে সেরা সমরবিদদের মতো মেধাবী। দেশপ্রেমিক এই নেতা আফগানিস্তানের প্রকৃত সমস্যা ও সমাধান দুটোই ভালো বুঝেছিলেন। আর তালেবানদের নেতা ছিলেন মোল্লা ওমর। তালেবানদের ওপর সওয়ার হয়ে লাদেন ও ইসলামিক ব্রাদারহুড গোষ্ঠী সৃষ্টি করে আল কায়দা। আল কায়দার নেতা লাদেন ও তাদের অন্য শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত কিছু আরব ও পাকিস্তানি সামরিক সদস্যের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। আইএসআই ও সিআইএ প্রভাবিত আল কায়দার নেতা হয়েছিলেন বিন লাদেন। সিআইএ ও আইএসআইর সহযোগিতায় তারা মোল্লা মাসুদকে সুকৌশলে হত্যা করে এবং নিজেদের নেতৃত্বকে কণ্টকবিহীন করে। এরা টুইন টাওয়ার ধ্বংসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
.
যুগান্তর : কিন্তু নাইন-ইলেভেনের ঘটনা আসলে কাদের কাজ, তা নিয়ে তো নানা বিতর্ক আছে?
–
ড. হাসান : ওই পরিকল্পনায় এমন কিছু বুদ্ধিমান ও শক্তিধর গোষ্ঠী পর্দার পেছন থেকে কলকাঠি নাড়াচ্ছিল যারা চাচ্ছিল মুসলমান ও খ্রিস্টানদের মধ্যে এমন একটা বিরোধ সৃষ্টি করতে যেটি সহজে শেষ না হয়। এ ক্ষেত্রে অনেকে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংগঠন মোসাদ এবং কিছু ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে সন্দেহের চোখে দেখে। এই সংঘাত থেকে ফায়দা লাভের চেষ্টা করে ইউরোপ ও আমেরিকার অস্ত্র বিক্রেতারা ও ইসরাইল। এতে করে যে সন্ত্রাস ও সংঘাত শুরু হয় তা সোমালিয়া থেকে ইয়েমেন, ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বিবেক-বিবেচনাহীন ইরাক যুদ্ধ এবং লিবিয়ার গাদ্দাফিকে হত্যার ঘটনা এই সন্ত্রাস বিস্তারে অপরিমেয় ঘৃতাগ্নি সংযুক্ত করেছে।
.
যুগান্তর : তার মানে পশ্চিমাদের কারণেই সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদ বাড়ছে?
.
ড. হাসান : টুইন টাওয়ার ধ্বংসের সঙ্গে নাগাসাকি ও হিরোশিমা ধ্বংসকাণ্ড বা ইরাক, সিরিয়া তথা আফগানিস্তানের ধ্বংসযজ্ঞের কোনো তুলনা চলে না। তবু প্রত্যেক বিবেকবান মানুষ ওই ধ্বংসকাণ্ড এবং আমেরিকার জনগণের প্রাণনাশের ঘটনায় কেঁদেছে। তাদের ব্যথাকে নিজেদের ব্যথা বলে মনে করে। তারপরও আমেরিকা ও পাশ্চাত্য যেভাবে সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে আসামি মনে করে সন্দেহের চোখে দেখছে, ইসলামোফোবিয়া তৈরি করছে বা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী নানা দেশের নাগরিকদের নানাভাবে নিগৃহীত করছে, তা সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। একটি ভিন্ন ধর্মগোষ্ঠীকে বিচ্ছিন্ন করে, নিগৃহীত করে, তাদের প্রতি বিদ্বেষ বা ঘৃণা পোষণ করে তাদের ভিন্ন পরিচয়ের বৃত্তে ঠেলে দেয়ার ফলে যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে, সেটাই কারও কারও মধ্যে নষ্ট পরিচয় সৃষ্টি করছে। এভাবে ক্ষোভ ও ঘৃণা তৈরি করে সন্ত্রাস সৃষ্টির পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে লিবিয়ার শাসক গাদ্দাফিকে যেভাবে অপসারণ করা হয়েছে এবং সাদ্দাম ও গাদ্দাফির সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা যেমন সন্ত্রাসী সৃষ্টিতে প্রণোদনা হিসেবে কাজ করেছে, তেমনি তাদের অবর্তমানে রাষ্ট্র ও সমাজে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা সন্ত্রাসী সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি করেছে। সিরিয়ায় যে লাখ লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছে তার যৎকিঞ্চিত মূল্য পরিশোধ করছে আরব ও ইউরোপীয় নানা দেশ। প্রতিটি যুদ্ধ ও সংঘাত নতুন সংঘাত ও মৃত্যুকে টেনে আনে। এর আগে একই রকমভাবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে আফগানিস্তানসহ তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশ। পাশ্চাত্য সমর্থিত ইসরাইলিদের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টির ইন্ধন দিচ্ছে।
.
যুগান্তর : আল কায়দা সৃষ্টির কথা বললেন। আর আইএস?
.
ড. হাসান : আল কায়দার মতো একই প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়েছে আইএস। মূলত সাদ্দামের পতনের পরপর ইরাকের শক্তিধর সুন্নিগোষ্ঠীগুলো ক্ষমতার বলয় থেকে ছিটকে পড়ার সঙ্গে আইএসের উদ্ভবের সম্পর্ক রয়েছে। সাদ্দাম হোসেনের সমর্থক সেনাবাহিনী, সুন্নি সেনাকর্মকর্তারাই আইএস সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। ইরানবিরোধী আরব দেশগুলো শুরুতে এদের অস্ত্র ও অর্থের জোগান দেয়। এদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল শিয়া শাসকদের উৎখাত। পরবর্তীকালে এরা সুন্নিশাসিত একটি মুক্ত অঞ্চল সৃষ্টির চেষ্টা করে। তাদের প্রাথমিক বিজয়ে উৎসাহিত হয়ে এদের মদদ দিতে এগিয়ে আসে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংগঠন আইএসআই ও মার্কিন গোয়েন্দা সংগঠন সিআইএ। এরাই শিয়া ধর্মালম্বী সিরিয়ার শাসক আসাদকে উৎখাতের চেষ্টা চালায়। এদের নিয়ে জটিল খেলায় মাতে ইউরোপ ও ইসরাইলের বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংগঠন এবং তুর্কি সরকার।
.
যুগান্তর : আইএস ইউরোপে হামলা করছে কেন?
.
ড. হাসান : আরব ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন ইউরোপীয় দেশগুলোকে ইসলামবিদ্বেষী তথা মুসলিমদের প্রতি বৈরী করার জন্যই আইএসকে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে ইউরোপীয়দের বিরুদ্ধে। ইউরোপ ও আমেরিকায় ইসলামের বিস্তার তথা প্রভাব কমিয়ে আনার জন্য নানা কায়দা-কৌশল ব্যবহৃত হচ্ছে। ইউরোপ অস্থিতিশীল হলে আমেরিকাই লাভবান হবে। জার্মান নেতৃত্বাধীন ইউরোপ শক্তিশালী হোক এটা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য চায় না। এটা অধিকাংশ জার্মান নাগরিক ও ইউরোপীয় প্রগতিশীল মানুষের অন্তরের কথা। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এই ভ্রান্ত রাজনীতি থেকে ফিরে আসুক সেটা সব বাস্তববোধ ও বিবেকবান মানুষের আকাক্সক্ষা। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সঙ্গে সঙ্গে শক্তিশালী সংঘবদ্ধ ইউরোপ সৃষ্টির একটি মুক্তচিন্তা ইউরোপীয়দের মাথায় আসে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আমেরিকানির্ভর ইউরোপ বা ন্যাটোনির্ভর ইউরোপ শক্তিশালী ইউরোপের চেয়ে বেশি কাম্য। এ কারণেই আইএসের লক্ষ্য প্রধানত ইউরোপের মাটি।
.
যুগান্তর : অনেক ইউরোপীয় তরুণ-তরুণী আইএসে যোগ দিচ্ছে। কোন আকর্ষণে?
..
ড. হাসান : আরব বিশ্বে নানা যুদ্ধ-সংঘাতে লাখ লাখ মানুষ যেমন নিহত হয়েছে, তেমনি অনেকে গৃহহীন হয়ে অভিবাসী হয়েছে ইউরোপে। আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে আলজেরিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়াসহ আরব ও আফ্রিকার যে দেশগুলো ফ্রান্স ও বেলজিয়াম শাসিত ছিল, সেখানকার মানুষ অভিবাসী হয়ে আছে ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ ইউরোপের নানা দেশে। শিক্ষাদীক্ষায় পিছিয়ে থাকা, অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এই গোষ্ঠী আত্মপরিচয়ের সংকটে ভুগছে। ফ্রান্সসহ এসব দেশে অভিবাসীদের সাংস্কৃতিক ইন্টিগ্রেশন (একীভবন) নিম্ন পর্যায়ে হওয়ায় তারা জঙ্গিদের আপন করে নিচ্ছে। আবার ওই রাষ্ট্রগুলোর চিন্তা-চেতনা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় ওইসব স্থানে আইএসের হামলা সহজ হয়ে উঠছে। তবে এ ক্ষেত্রে সিআইএ ও মোসাদের কোনো ভূমিকা রয়েছে কিনা সেটা ভেবে দেখা প্রয়োজন। ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী ইসরাইলের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেও আইএস ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়েছে এমন উদাহরণ নেই। পক্ষান্তরে ইউরোপের জনগোষ্ঠী ছাড়া আইএসের লক্ষ্য শিয়া, ইয়াজিদি ও কুর্দি জনগোষ্ঠী। প্রাচীন কুর্দি জনগোষ্ঠী যারা মানব সভ্যতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, তাদের যুগের পর যুগ অবদমন করে রেখেছে ইরান, ইরাক এবং সাম্রাজ্যবাদী তুর্কি শাসকরা।
.
যুগান্তর : আত্মপরিচয়ের সংকট জঙ্গিবাদ বৃদ্ধিতে কী ভূমিকা রাখছে?
.
ডা. হাসান : মানুষের জন্মগত প্রকৃতি, প্রবণতা, মানসিক অবস্থানের সঙ্গে পরিবার ও সমাজের শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বপ্ন, ব্যক্তিগত আকাক্সক্ষা এবং অর্জনের বিক্রিয়াগুলো নির্মাণ করে আত্মপরিচয়। নানা ঘাত-প্রতিঘাত, সফলতা-বিফলতা, সামগ্রিক প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির প্রেক্ষাপটে ওই পরিচয় এমন নিবিড়ভাবে আপন সত্তার সঙ্গে মিশে যায় যেন মনে হয় এটি মূল দেহ এবং পরিচয়ের বৃক্ষ। কল্পিত শিকড় ভুলিয়ে দেয় সত্যিকার শিকড়ের কথা, ভুলিয়ে দেয় নৃতাত্ত্বিক পরিচয় এবং বায়োলজিক্যাল বাস্তবতার এটি। কালচারাল আগ্রাসন ও ডিফিউশন অথবা আরোপিত সংস্কৃতি ছেয়ে ফেলে মাটির গন্ধে ও প্রকৃতির সঙ্গে বেড়ে ওঠা অতি আপন সংস্কৃতিকে। এতে করে একজন মানুষ বা গোষ্ঠীর কাছে আপনজন বা কাছের মানুষগুলো দূরের মানুষ বলে প্রতীয়মান হয়। কখনও কখনও ধর্ম ও বিশ্বাসের ভিন্নতার কারণে কাছের মানুষটি শত্রু হিসেবে বিবেচিত হয়। এতে উপেক্ষিত হয় শিকড়ের বন্ধন, ভৌগোলিক বন্ধন, সামাজিক বন্ধন, মানবতার বন্ধন, এমনকি আত্মীয়তার ঐক্য। এতে আরোপিত পরিচয়ধারী মানুষটি আপন করে নেয় দূরের মানুষ বা কল্পিত ছায়াকে। নষ্ট ভাবাদর্শনে দিক্ষীত হয়ে শত্রুজ্ঞান করে কল্পিত বিরোধী পক্ষকে অথবা সাধারণ মানুষকে। কখনও অনেকে মিলে সমষ্টিগতভাবে শত্রুজ্ঞান করে সাধারণ শত্রুকে।
.
যুগান্তর : বৈশ্বিক জঙ্গিবাদ মোকাবেলার পথটা কী হওয়া উচিত?
.
ডা. হাসান : বৈশ্বিক জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে হলে সমগ্র বিশ্বের শাসনব্যবস্থা তথা অর্থনৈতিক কাঠামোকে নতুন করে সাজাতে হবে। যতদিন পর্যন্ত পাশ্চাত্য শক্তি আরব বা আফ্রিকার মাটিতে শাসন ও শোষণের ইতি না টানছে ততদিন কোনো না কোনোভাবে সন্ত্রাস টিকে থাকবে। সাম্যভিত্তিক তথা মানব মর্যাদাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বা রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তিত না হলে বিচ্ছিন্নভাবে বৈশ্বিক জঙ্গিবাদ ঠেকানো অসম্ভব একই সঙ্গে নানা দেশের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী বা অভিবাসীদের ইন্টিগ্রেশনের পথ খুলে দিয়ে নব আত্মপরিচয় নির্মাণের ব্যবস্থা না নিলে সন্ত্রাসবাদ দমন অধরা থেকে যাবে। সন্ত্রাসের পেছনে মানুষের নষ্ট পরিচয়ের ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বৈশ্বিক জঙ্গিবাদ সফলভাবে মোকাবেলা করতে হলে প্রকৃত জঙ্গিদের ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের থেকে আলাদা করে দেখতে হবে। পশ্চিমা বিশ্ব ইহুদিদের যেমন আপন করে নিয়েছে, তেমনি মুসলমানদেরও আপন করে নিতে হবে। সামগ্রিক বৈরিতা ও ইসলামবিরোধী হেটস্পিচ্ অবস্থানকে আরও জটিল করবে। এ সমস্যার মূলে কুঠারাঘাত করতে হলে রাষ্ট্রশাসনে ন্যায় ও সমতাভিত্তিক নীতি অনুসরণ করতে হবে দেশে ও দেশের বাইরে। পশ্চিমা গণতন্ত্র নয়, সাম্য ও সামাজিক গণতন্ত্রই বিশ্বকে মুক্তির পথ দেখাতে পারে। জিডিপিভিত্তিক উন্নয়নের গোলকধাঁধা থেকে বেরিয়ে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনতে পারলে, আধুনিক শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে পারলে, শান্তিকে উন্নয়নের সূচক হিসেবে গ্রহণ করতে পারলে সন্ত্রাস থেকে অনেকটা বেরিয়ে আসা সম্ভব। অসহিষ্ণুতা, ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে বেরিয়ে মানবজাতির মূল ঐক্যকে সামনে আনতে পারলে, ইতিবাচক কোড অব কনডাক্ট অনুসরণ করলে, সঠিক আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে পারলে নষ্ট দর্শন, নষ্ট কর্ম, নষ্ট পরিচয় থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। বৈশ্বিক জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে হলে এদের প্রচার এবং সদস্য সংগ্রহের পথটি বন্ধ করতে হবে। যেন রাজনৈতিক ইস্যু বা বৈষম্যকে পুঁজি করে তারা জনগণের সহানুভূতি অর্জনের চেষ্টা চালাতে সক্ষম না হয়। এটি বন্ধ করতে হবে বহুমুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে। বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠী তথা নানা মতবাদ ও দর্শনে বিশ্বাসীদের মধ্যে ব্যাপক ডায়ালগের সুযোগ তৈরি করতে হবে। ঢাকঢোল না পিটিয়ে অনেকটা নিভৃতে এসব করতে হবে। ধর্মের অসাধারণ শক্তিকে আমলে এনে প্রতিটি ধর্মের অন্তর্নিহিত দর্শন, ডিভাইন কমান্ড ও রিচুয়ালকে আলাদাভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। এটা নিয়ে প্রচুর একাডেমিক গবেষণা ও আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। এ কাজের ভার কেবল পুরোহিত ও ধর্মযাজকদের ওপর ছেড়ে দিলে হবে না। সমাজে সভা-সমাবেশ উপাসনালয়ে বক্তব্য রাখতে পারবেন এমন ধর্মীয় নেতাদের রেজিস্ট্রেশন করা প্রয়োজন। তাদের বক্তব্যের দায়দায়িত্ব আইনগতভাবে গ্রহণ করে তারা কাজ শুরু করবে। এর বিনিময়ে তারা সম্মান ও পারিতোষিক পাবেন। ঘৃণার বাণী প্রকাশ এবং এর মাধ্যমে উসকানি সৃষ্টি কঠোরভাবে দণ্ডনীয় হওয়া প্রয়োজন। বৈষম্য ও ঘৃণাকে পুঁজি করে কোনো ব্যক্তি ও জনগোষ্ঠীর ক্ষতিসাধন এমন শীর্ষ ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত যেটি হবে দ্রুত বিচার আইনে বিচারযোগ্য। ধর্ম ও দর্শনের ব্যাপক পাঠ এবং সভ্যতা ও সহনশীলতার শিক্ষা স্কুল শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। ন্যায় ও মূল্যবোধের শিক্ষাটি আনুষ্ঠানিক হওয়া প্রয়োজন। এটি একই সঙ্গে স্কুল ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। প্রতিটি মিডিয়ায় এক-দশমাংশ সময় এমন শিক্ষাগুলোর প্রচার বাধ্যতামূলক হওয়া প্রয়োজন।
.
যুগান্তর : রাজনীতির ক্ষেত্রে কী করতে হবে?
.
ডা. হাসান : রাজনীতিকদের জন্যও তৃণমূলে শিক্ষা প্রবর্তন করা প্রয়োজন। দেশ যে প্রগতির স্বপ্ন দেখছে সেই স্বপ্নের মাঝে শান্তিকে সবচেয়ে বড় স্থান দিতে হবে। শান্তি হল উন্নয়নের প্রধান সূচক। আর ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা, ন্যায় ও মানব মর্যাদার চর্চা করে এর দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে স্থানীয় সরকারকে। সমঝোতা ও সহনশীলতার মাধ্যমে যৌথ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচনে ভিন্ন পথ খুঁজে নিতে হবে। প্রচলিত নির্বাচনে অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যবহার রোধ অনেকটাই অসম্ভব। এ কারণে বহু স্তরবিশিষ্ট নির্বাচন এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে। সামাজিক বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে ক্রেতা-বিক্রেতার দূরত্ব কমিয়ে আনতে পারলে, ক্ষমতার প্রান্তিক ডিফিউশনের মাধ্যমে শাসক ও শাসিতের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনতে পারলে, তৃণমূল পর্যায়ে যৌথ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করা গেলে সমাজ থেকে নানা অন্যায়ের সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসকেও বিদায় করা যাবে।
.
যুগান্তর : দেশে বিদেশীদের ওপর, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর যেসব হামলা হচ্ছে, এগুলো কাদের কাজ?
.
ডা. হাসান : বড় ধরনের চেইন অব কমান্ডসহ বড় কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে এমন নয়। এসব করছে তারা, যারা হয়তো এর মাধ্যমে কোনো ফায়দা লাভের চেষ্টা করছে। সেটা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত ফায়দা হতে পারে অথবা তাদের মদতদাতাদের ফায়দা হতে পারে। বস্তুত যারা নানা কারণে সমাজের মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারছে না, যারা আত্মপরিচয়ের সংকটে ভুগছে, যাদের মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও অপরের প্রতি মায়া-মমতা কম, অপরের প্রতি যারা ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করে, যারা নানা মতবাদ ও বিশ্বাসের কারণে এবং পশ্চিমা মিডিয়ায় নানা অন্যায়-অত্যাচারের চিত্র দেখে মনে করছে পশ্চিমারা ইসলামী বিশ্বের ওপর বা তাদের ধর্মের মানুষের ওপর নিষ্ঠুর আচরণ করছে, অথবা যারা মনে করছে ওদের ভিন্ন দর্শন দ্বারা তাদের দেশের সাধারণ মানুষ প্রভাবিত হলে দেশের ক্ষতি হবে বা তাদের স্বার্থ বিঘ্নিত হবে- তারাই এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। সেই সঙ্গে যারা বা যেসব মৌলবাদী বা জঙ্গিগোষ্ঠী ভিন্নমতাবলম্বী ও ভিন্নধর্মাবলম্বীদের ওপর আঘাত করে নানাভাবে আলোচনায় আসতে চায়, আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে চায়, তারাও এসব ঘটাতে পারে।
.
যুগান্তর : প্রতিটি ঘটনার পর সাইট ইন্টেলিজেন্সের ওয়েবসাইটে আইএসের দায়িত্ব স্বীকারের দাবি করা হচ্ছে। এ এটিকে কীভাবে দেখছেন?
.
ডা. হাসান : এ ধরনের প্রাইভেট সংগঠনের কর্মকাণ্ডে সব সময় নিজস্ব এজেন্ডা থাকে বলে আমি মনে করি। সাইট ইন্টেলিজেন্স ফান্ড পাচ্ছে কোত্থেকে এটা পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। তাহলে বোঝা যাবে তারা কার এজেন্ডা পালন করছে।
.
যুগান্তর : মধ্যপ্রাচ্যের আইএস সরাসরি বাংলাদেশে নিয়োজিত রয়েছে বলে মনে করেন?
.
ডা. হাসান : না, আমি তা মনে করি না। বাংলাদেশ থেকে কিছু লোক আফগান যুদ্ধে যাওয়ার আগে এখানে এ ধরনের কোনো সন্ত্রাসী হামলা হয়নি। যখন থেকে ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ধর্মের রিচুয়াল বা আনুষ্ঠানিকতাগুলো প্রাধান্য পাচ্ছে তখন থেকে এ বিষয়গুলো সামনে আসছে, অর্থাৎ যাদের আমরা জঙ্গি বলছি তারা কোনো ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করছে। এরা লাইম লাইটে আসার জন্য, আরও ব্যাপক একটি আমব্রেলা তৈরির জন্য এই কাজগুলো করছে। এদের এজেন্ডা নিজেদের আরও বেশি প্রতিষ্ঠা করা এবং সারা বিশ্বে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করে অন্যের হয়ে খেলা।
.
যুগান্তর : জঙ্গি তৎপরতা মোকাবেলায় আমাদের বিশেষভাবে কোন এটির ওপর জোর দেয়া উচিত?
.
ডা. হাসান : প্রতিটি পাড়ায়, প্রতিটি মহল্লায় শক্তিশালী নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয় কোনো কিছুকেই এর বাইরে রাখা যাবে না। এ বিষয়ে ২০০১-০২ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে কিছু ব্যক্তি ও সংস্থার সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছিল, যারা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করেন। যুক্তরাষ্ট্র যদি ১৩-১৪ বছর ধরে এ ব্যবস্থাধীনে চলতে পারে তাহলে আমরা কেন পারব না? শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপ ও আফ্রিকার অনেক দেশে আমি গিয়েছি- সব জায়গায় আমাকে নজরদারির মধ্যে থাকতে হয়েছে। এমন কোনো হোটেলে আমি থাকিনি, এমন কোনো রাস্তায় চলিনি যেটি ক্যামেরার আওতায় ছিল না। এমন কোনো কথা বলিনি যার ৮০ শতাংশ রেকর্ড হয়নি। আমাদেরও এ ব্যবস্থা ছাড়া উপায় নেই। প্রাইভেসি নিয়ে ভাবলে চলবে না। দেশের ও জনগণের নিরাপত্তার জন্য এটা করতে হবে। সবার পরিচয় সংরক্ষণের জন্য একটা ডাটাব্যাংক তৈরি করতে হবে।
.
যুগান্তর : তার মানে নজরদারি ব্যবস্থাটা জোরদার করতে হবে?
.
ডা. হাসান : নজরদারি ব্যবস্থা বললে কম বলা হবে। এটা হতে হবে একটি ম্যাসিভ মনিটরিং সিস্টেম, যার আওতার বাইরে থাকবে না একজনও। অনেকটা হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মতো।
.
যুগান্তর : এ মুহূর্তে মোসাদ নামটি বেশি আলোচিত। দেশকে অস্থিতিশীল করতে কোনো বিদেশী গোয়েন্দা সংগঠন সক্রিয় বলে মনে করেন?
.
ডা. হাসান : এক দেশের গোয়েন্দা সংগঠন আরেক দেশে নানাভাবেই নিয়োজিত থাকে। নাইন-ইলেভেনের ঘটনায় আল কায়দার সঙ্গে মোসাদের নৈকট্যের কথা আলোচনায় এসেছে। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংগঠন আইএসআইর সঙ্গে একত্র হয়ে আল কায়দা কর্তৃক সৌদি নাগরিকদের ব্যবহারের একটা ইতিহাস রয়েছে। পেছন থেকে খেলেছে সিআইএ ও মোসাদ। এমন হতে পারে, সিআইএ মোসাদের মাধ্যমে খেলেছে, সরাসরি আসেনি অথবা মোসাদ আর কারও মাধ্যমে খেলেছে, সরাসরি আসেনি। এটি খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে খুবই সুপরিকল্পিত একটি খেলা। ফলে একটি সাংস্কৃতিক যুদ্ধ শুরু হয়েছে। অনেকে বলছে ‘সভ্যতার সংকট’। আসলে এ রকম কিছু নয়। আমি এটাকে বলব ইসলামী সংস্কৃতি ও খ্রিস্টীয় সংস্কৃতির মধ্যে সংঘাত। এর পেছনে বেশ কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রধানত পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামের সম্প্রসারণ রোধ করতে এবং আরব ও মুসলিম বিশ্ব থেকে সম্পদ আহরণের জন্য এ সংঘাত সৃষ্টি করা হয়েছে। এটি জিইয়ে রেখে কাদের লাভ? পশ্চিমা বিশ্ব ও ইসরাইলের। এ সংঘাতের মধ্য দিয়ে ইসলামী বিশ্ব হারিয়েছে অনেক- আমাদের নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে, আমরা মর্যাদাহানিকর পরিস্থিতিতে পড়ছি। আমাদের কোনো লাভ হয়নি। কাজেই পরিণতি দেখেই বোঝা যায় এখানে কার কী খেলা, কারা খেলছে, কারা লাভবান হচ্ছে এবং কারা এর শিকার হচ্ছে।
.
যুগান্তর : তার মানে পুরো জঙ্গিবাদ ব্যাপারটাই এক ধরনের খেলা?
.
ডা. হাসান : অবশ্যই। তবে তা একটি ভয়াবহ নৃশংস খেলা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে নাগাসাকি ও হিরোশিমায় আণবিক বোমা নিক্ষেপের মতো খেলা, যেটা হাসতে হাসতে করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রুমেন। তাকে সাহায্য করেছিল বিকৃত মস্তিষ্কসম্পন্ন কিছু বিজ্ঞানী। মিথ্যা অভিযোগ এনে ইরাকে হামলা চালানো হল, সাদ্দামকে উৎখাত করা হল। লিবিয়ায় গাদ্দাফিকে উৎখাত করা হল। এগুলোকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বললে খুব কম বলা হবে। তারা যত বড় অপরাধই করে থাকুন না কেন, তাদের তো আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিচার করা যেত। তাহলে বুঝতাম এ ক্ষেত্রে মানব মর্যাদা ও ন্যায়বিচারকে সমুন্নত রাখা হয়েছে। সাদ্দাম ও গাদ্দাফি যদি অন্যায় করে থাকেন, তাহলে ইরাক ও লিবিয়ায় লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানির জন্য, পঙ্গু হওয়ার জন্য, মানুষের স্বপ্ন ধ্বংস হওয়ার জন্য যারা দায়ী তাদের অন্যায়টা কত বড়! আজ এসব দেশের লাখ লাখ মানুষ অভিবাসী হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের সংখ্যা ২০ লাখেরও বেশি। এদের সন্তানরা যখন বড় হবে, যখন তারা শিক্ষা পাবে না, বাসস্থান পাবে না, আত্মপরিচয়ের সংকটে ভুগবে, তখন তারা আরও বেশি করে সন্ত্রাসে জড়াবে। কাজেই যতক্ষণ এ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান না হচ্ছে ততক্ষণ এ থেকে মুক্তি নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত না রাজনীতির মূল লক্ষ্য হবে শান্তি, ততক্ষণ শান্তি স্থাপন করা যাবে না।
.
যুগান্তর : সবশেষে ভিন্ন একটি প্রসঙ্গ। আপনি দ্য হেগে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সম্প্রতি এ আদালতে বিএনপি-জামায়াতের একটি অভিযোগ (‘২০১৩ গণহত্যা’) খারিজ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
.
ডা. হাসান : বৈশ্বিক বিচারহীনতা রোধে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠান আইসিসি। এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন মি. রবিন কুক। ১৯৯৭-এর পরে আইসিসি যখন তার কার্যক্রম বেগবান করতে চাচ্ছিল তখন তারা জাতিসংঘ ও অ্যামনেস্টিকে সহযোগী করে তাদের সমর্থক তৈরি করার চেষ্টা করে। এরাই সম্মিলিতভাবে আমাকে ওই কর্মে সংযুক্ত করে। ওই সময় আমি বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা নিয়ে কাজ করছিলাম। তাতে তাদের সমর্থন ছিল। ইউরোপীয় মূল্যবোধ ও ন্যায়বোধের প্রকাশ হল আইসিসি। তারা কখনও বিচারহীনতাকে প্রশ্রয় দেয় না। ইউরোপ ওই আলোকেই আমাদের বিচারকে দেখছে। ন্যায়সঙ্গত অবস্থানের কারণে তারা আমাদের বিচারিক কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দেবেন এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
.
যুগান্তর : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
.ডা. হাসান : আপনাকেও ধন্যবাদ।
যুগান্তর , ৩১মে।
ডা. এম এ হাসান মূলত একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও বিজ্ঞানী। তার কর্মপরিধি চিকিৎসাবিজ্ঞান থেকে সামাজিকবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান ও দর্শনের নানা বিষয় পর্যন্ত বিস্তৃত। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে তিনি একাধিকবার কথা বলেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। বিচারহীনতার নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি) আয়োজিত শীর্ষ সম্মেলনে। এসব কাজের জন্য ২০০৩ সালে বেলজিয়াম সরকার তাকে সম্মানিত করে। ১৯৯৭-এর পর তিনি আইসিসির কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন। ওই সময় তিনি বাংলাদেশে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা নিয়ে কাজ করেন। সম্প্রতি যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বৈশ্বিক জঙ্গিবাদ ও সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন -আসিফ রশীদ –