বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদী (Main Rivers of Bangladesh)
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা প্রায় ৭০০ অধিকসংখ্যক নদী থাকার কারণে বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলে। এজন্য এ দেশের মানুষের জীবনযাত্রা, সাংস্কৃতিক ও অর্থনীতির উপর নদীর প্রভাব রয়েছে। পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, মেঘনা ও কর্ণফুলী বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদী। এ নদ-নদীগুলোর উপনদী ও শাখানদী রয়েছে। উপনদী ও শাখানদীসহ বাংলাদেশের নদীর মোট দৈর্ঘ্য হলো প্রায় ২২,১৫৫ কিলোমিটার। নিচে বাংলাদেশের নদীগুলোর বর্ণনা দেওয়া হলো ।
পদ্মা :
————
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম নদী পদ্মা। গঙ্গা নদী হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এরপর প্রথমে দক্ষিণ-পশ্চিম ও পরে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে ভারতের হরিদ্বারের নিকট সমভূমিতে পড়েছে। এরপর ভারতের উত্তর প্রদেশ ও বিহার রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান নামক স্থানে ভাগীরথী (হুগলি নদী) নামে এর একটি শাখা বের হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। গঙ্গা নদীর মূল প্রবাহ রাজশাহী অঞ্চলের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সীমানা বরাবর এসে কুষ্টিয়ার উত্তরপশ্চিম প্রান্তে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর দৌলতদিয়ার নিকট যমুনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। গঙ্গার মূল ধারা হওয়াতে দৌলতদিয়া পর্যন্ত এইবাংলাদেশের এ অঞ্চলগুলোর মাটি খুব উর্বর বলে কৃষিজাত দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে তা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।এরপর দৌলতদিয়ার নিকট যমুনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। গঙ্গার মূল ধারা হওয়াতে দৌলতদিয়া পর্যন্ত এই বাংলাদেশের নদ-নদী নদীটি গঙ্গা নদী নামেই পরিচিত। তবে বাংলাদেশে প্রবেশের পর থেকেই স্থানীয়ভাবে অনেকে একে পদ্মা নামে চেনে। গঙ্গা ও যমুনার মিলিত ধারা পদ্মা নামে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে চাঁদপুরের কাছে মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এই তিন নদীর মিলিত প্রবাহ মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। বাংলাদেশে গঙ্গা-পদ্মা বিধৌত অঞ্চলের আয়তন হচ্ছে ৩৪,১৮৮ বর্গকিলোমিটার। কুমার, মাথাভাঙা, ভৈরব, গড়াই, মধুমতী, আড়িয়াল খাঁ ইত্যাদি গঙ্গা-পদ্মা নদীর প্রধান উপনদী। পুনর্ভবা, নাগর, পাগলা, কুলিক ও ট্যাংগন মহানন্দার উপনদী।
ব্রহ্মপুত্র :
————
এ নদ হিমালয় পর্বতের কৈলাস শৃঙ্গের নিকটে মানস সরোবর থেকে উৎপনড়ব হয়ে প্র মে তিব্বতের উপর দিয়ে পূর্ব দিকে ও পরে আসামের ভিতর দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়েছে। অতঃপর ব্রহ্মপুত্র কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর দেওয়ানগঞ্জের কাছে দক্ষিণ-পূর্বে বাঁক নিয়ে ময়মনসিংহ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভৈরববাজারের দক্ষিণে মেঘনায় পতিত হয়েছে। ধরলা ও তিস্তা ব্রহ্মপুত্রের প্রধান উপনদী এবং বংশী ও শীতলক্ষ্যা প্রধান শাখানদী।
যমুনা :
————
ময়মনসিংহ জেলার দেওয়ানগঞ্জের কাছে ব্রহ্মপুত্রের শাখা যমুনা নদী নামে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে দৌলতদিয়ার কাছে গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়ে পদ্মা নাম ধারণ করে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। করতোয়া ও আত্রাই যমুনার প্রধান উপনদী। ধলেশ্বরী এর শাখানদী এবং ধলেশ্বরীর শাখানদী বুড়িগঙ্গা।
মেঘনা :
————
আসামের বরাক নদী নাগা-মণিপুর অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশের সিলেট জেলায় প্রবেশ করেছে। উত্তরের শাখা সুরমা পশ্চিম দিকে সিলেট, ছাতক, সুনামগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আজমিরীগঞ্জের কাছে উত্তর সিলেটের সুরমা, দক্ষিণ সিলেটের কুশিয়ারা নদী এবং হবিগঞ্জের কালনী নদী একসঙ্গে মিলিত হয়েছে। পরে কালনী, সুরমা ও কুশিয়ারার মিলিত প্রবাহ কালনী নামে দক্ষিণে কিছুদূর প্রবাহিত হয়ে মেঘনা নাম ধারণ করেছে। মেঘনা ভৈরববাজারের দক্ষিণে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে মিলিত হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়েছে এবং চাঁদপুরের কাছে পদ্মার সঙ্গে মিলিত হয়ে মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। বাংলাদেশে মেঘনা বিধৌত অঞ্চল হচ্ছে ২৯,৭৮৫ বর্গকিলোমিটার। মনু, বাউলাই, তিতাস, গোমতী মেঘনার উপনদী।
এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।