জেএসজি, এসএসসি (ssc) বা মাধ্যমিকি, এইচএসসি(HSC) বা উচ্চ মাধ্যমিক হোক কিংবা কোমলমতি শিশুদের পিএসসি পরীক্ষা; বর্তমানে পাবলিক পরীক্ষায় ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস’ খবরটি অত্যন্ত সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর এসব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকেও। ফাঁসকারীদের অনেককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া সত্ত্বেও এ অপরাধের অবসান ঘটছে না। কথা হচ্ছে, এই অন্যায় কাজ বন্ধ করার দায়িত্ব কি শুধু কর্তৃপক্ষেরই?
কথায় আছে, ‘এক হাতে তালি বাজে না’। যদি সাধারণভাবে বলি তাহলে বলা যায়, কোনো কিছুর ক্রেতা না থাকলে বিক্রেতাও থাকবে না। যতদিন পরীক্ষার প্রশ্ন কেনার ক্রেতা থাকবে, ততদিন পর্যন্ত এর বিক্রেতাদের পুরোপুরিভাবে প্রতিরোধ করা অসম্ভব। আর যেখানে এই শিক্ষা ক্রয়ের ক্রেতারা সক্রিয়, সেখানে শিক্ষা ও জ্ঞানের নয় বরং প্রতারণা ও ভেলকিবাজির রাজত্ব চলে।
বাবা-মায়েরা তাঁদের সন্তানদের জ্ঞানের আধিক্যের চেয়ে পরীক্ষায় নম্বরের আধিক্য দেখতে বেশি ইচ্ছুক। আর এ লিপ্সা ও লোকদেখানো অহংকারের কারণে কেউ কেউ নিজ সন্তানকে জ্ঞানার্জনে উদ্বুদ্ধ না করে জ্ঞান ক্রয়ে অনুপ্রাণিত করছেন। যেটি ভবিষ্যত্ বংশধরকে অন্তঃসারশূন্য করছে। সব বাবা-মা-ই সন্তানের উন্নতি চান। আর কোনো পাবলিক পরীক্ষায় সন্তান সর্বোচ্চ ভালো রেজাল্ট করবে তা সকল অভিভাবকেরই প্রত্যাশা। এজন্য তাঁদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টাও থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে তা অবশ্যই সন্তানের পরীক্ষার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে; প্রশ্ন কেনার ক্ষেত্রে নয়।
আসলে যারা পরীক্ষার প্রশ্ন কেনার মানসিকতাসম্পন্ন, তারা পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্যকেই নষ্ট করে দেয়। পরীক্ষা হলো এমন এক মাধ্যম যার দ্বারা একজন শিক্ষার্থী তার অর্জিত জ্ঞান যাচাই এবং এই জ্ঞানকে কীভাবে ও কোন সময়ে প্রয়োগ করতে হবে তার কৌশল শিখতে পারে। তবে অনেক মা-বাবা তাঁদের সন্তানদের জন্য এ পরীক্ষাকে যুদ্ধের সমতুল্য করে তুলেছেন। যেটি পার করার জন্য যদি নিজ সন্তান প্রতারণা ও ভুল পথও অনুসরণ করে তাহলে তা বৈধ হিসেবে বিবেচনা করেন তাঁরা। কিন্তু শিক্ষা ও পরীক্ষার আসল লক্ষ্য তো তা নয়। শিক্ষার সঙ্গে একটি বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর তা হলো নৈতিকতা। শিক্ষা ছাড়া যেমন নৈতিকতার যথাযথ পরস্ফুিটন ঘটে না, তেমনি নৈতিকতা ছাড়া অর্জিত হয় না শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য
কারো জ্ঞানের পরিধি যখন তার সার্টিফিকেট ও পরীক্ষার নম্বর দিয়ে বিবেচনা করা হয়, তখন আসলে তার মেধা নয় বরং তার পুঁথিগত বিদ্যা কত বেশি তা যাচাই করা হয়। মূলত আমাদের সমাজের কতিপয় মানুষের এ ধরনের মানসিকতার কারণে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো জঘন্য অপরাধ সমাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা সম্ভব হচ্ছে না। যেখানে শিক্ষার্জন অপেক্ষা শিক্ষা ক্রয় করার মানসিকতার জয়জয়কার, সেখানে কখনোই মনুষ্যত্ব এবং স্বাধীনচেতার মনোবৃত্তির প্রকাশ ঘটবে না। অর্থাত্ একমাত্র নিজেদের সচেতনতা এবং সততাকে জাগ্রত করতে পারলেই এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো অপরাধ দূর হবে; অন্যথায় তা কখনোই অসম্ভব
আরো পড়ুন:
0 responses on "প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করার দায়িত্ব কি শুধু কর্তৃপক্ষেরই?"