স্টাফ রিপোর্টার : আমাদের দেশে প্রশ্ন ফাঁস ও ফল ফাঁস একটা সাধারণ ব্যাপারে দাড়িঁয়েছে। একটা জাতিকে ধ্বংস করতে ও পিছনে ফেলার জন্যে তার মধ্যে দুটো জিনিস ছড়িয়ে দেওয়াই যথেষ্ঠ। প্রথমত জাতির মস্তিষ্ক মেধাশূণ্য করে দেওয়া, দ্বিতীয়ত প্রজন্মের হাতে মাদক ধরিয়ে দেওয়া। আজ দুটোরই প্রতিযোগিতা বেড়েছে আমাদের মধ্যে। প্রশ্নফাঁস প্রজন্মের মেধাকে যেমন ধ্বংস করছে, তেমনি মেধাহীন একটি বিশাল প্রজন্মের মুখোমুখি দাড়িয়ে গেছি আমরা। এটা এখন কোন নিতান্ত মামুলি বিষয় নয়, এটা এখন জাতীয় সমস্যাও বটে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীর বাংলাদেশ বহুমুখি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে এটা নিশ্চিত। এখন প্রথম শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে প্রশ্ন ফাঁসের এই প্রতিযোগিতা।

আমরা এই প্রশ্ন ফাসঁ ঠেকাতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি।এগুলো হলো চাহিদা কমিশন, পরীক্ষা কমিশন, ফলাফল কমিশন, নিয়োগ কমিশন, অভিযোগ কমিশন এবং তদারকি ও একশান কমিশন। এই ৬টি ধাপ নিয়ে গঠিত হবে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল শিক্ষা কমিশন বা ডিইসি। এই কমিশনই বাস্তবায়ন করবে এই ধাপগুলোর কাজ।

 

১.চাহিদা কমিশন

চাহিদা কমিশন হলো ‘এসিএসডিইএম’ মডেলের প্রথম ধাপ। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন পরীক্ষা ছাড়া সরাসরি নিয়োগ তেমন একটা নাই। এ কমিশনের কাছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর গেজেট অনুযায়ী মোট জনবল, জনবল ঘাটতি এবং জনবল চাহিদা রেকড থাকবে। প্রতিষ্ঠানসমূহের চাহিদা অনুযায়ী নিয়োগ কমিশন বিজ্ঞপ্তি প্রদান করবে এবং আবেদন যাচাই বাচাই করে পরীক্ষার জন্যে সুপারিশ করবে পরীক্ষা কমিশনের নিকট। একটি সারকুলার দেওয়ার সবোর্চ্চ ৩০ দিনের মধ্যে পরীক্ষার সুপারিশ করতে হবে এই কমিশনকে।

২. পরীক্ষা কমিশন

এটি ‘এসিএসডিইএম’ মডেলের দ্বিতীয় ধাপ। এই ধাপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। এই ধাপের সুষ্ঠ বাস্তবায়নই পুরো মডেলের সাফল্য। এই ধাপটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং নিয়োগ এই ক্যাটাগরিগুলো আলাদা করে কাজ করবে। পরীক্ষা কমিশনের কাজ শেষ হবে নিচের তিনটি ধাপে।

ডিজিটাল পরীক্ষা কক্ষ প্রস্তুত: ডিজিটাল পরীক্ষা কক্ষের জন্যে স্থান নির্বাচন গুরুত্বর্পূণ একটি কাজ। কক্ষটি যত বড় হবে ততই সুবিধা। ছোট ছোট কক্ষ হলে ব্যায় বাড়বে কিন্তু অসুবিধে নাই। নির্বাচিত স্থান বা কক্ষে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর বসানো হবে অস্থায়ী বড় আকারের ডিজিটাল কোর্ডযুক্ত বিশেষ মনিটর। মনিটরগুলো পরিচালিত হবে একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। মূলত এই মনিটরগুলোই হবে শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল প্রশ্নপত্র। পরীক্ষার্থী যেন সুবিধামত পরীক্ষা দিতে পাওে, সেভাবে ডিজিটাল মনিটর বসানো এবং প্রশ্ন ডেলিভারি দেওয়া হবে কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে। সময় শেষ হওয়া মাত্রই মনিটর থেকে প্রশ্ন মুছে যাবে। এরপর উত্তরপত্র সংগ্রহের কাজ করবে পরীক্ষক। পরীক্ষা শেষে মূল প্রশ্নপত্রটি কমিশনের ওয়েবসাইটে দেখা যাবে।

প্রশ্ন প্রনয়নের জন্যে পরীক্ষক নির্বাচন পদ্ধতি : বিষয় ভিত্তিক পরীক্ষা বিবেচনা করে ১০০ জন প্রাথমিক প্রশ্নকর্তা এবং ৫জন ফাইনাল প্রশ্নকর্তা নির্বাচন করা হবে। অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে একই দিনে একই জায়গায় বসে ১০০টি প্রশ্ন তৈরি করবে প্রাথমিক প্রশ্নকর্তারা। এর জন্যে তাদের সময় দেওয়া হবে সর্বোচ্চ ১দিন। ৫জন ফাইনাল পরীক্ষক ১০০টি প্রশ্ন থেকে ৫ সেট প্রশ্ন প্রস্তুত করবে চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্যে। এ কাজে তাদের সময় দেওয়া হবে সর্বোচ্চ ৫দিন। ৬ষ্ঠ দিনের মাথায় চূড়ান্ত প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। চূড়ান্ত প্রশ্ন তৈরির পর পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অত্যন্ত গোপনীয়তায় কন্টোল টাওয়ারে অবস্থান করবে এই ৫জন পরীক্ষক। পরীক্ষার দিন আইটি সহায়তা দেওয়ার জন্যে একজন আইটি স্পেশালিষ্ট তাদের সাথে যুক্ত হবেন পরীক্ষা শুরুর একঘন্টা আগে।

প্রশ্ন ডেলিভারি পদ্ধতি : এই ধাপটি ডিজিটাল এক্সাম মডেলের সাফল্য ধাপ। চূড়ান্ত প্রশ্ন প্রস্তুতকারি ৫জন পরীক্ষক পরীক্ষা শুরুর আধাঘন্টা আগে সিদ্ধান্ত নিবেন কোন সেটে পরীক্ষা নিবেন। চাইলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ৫টি সেটির ৫টি আলাদা আলাদা অংশ ডেলিভারি দিয়ে এক সেট প্রশ্ন তৈরি হতে পারে। আইটি স্পেশালিস্ট বাটন চাপার সাথে সাথে সারাদেশের সব পরীক্ষা কেন্দ্রের সমস্ত মনিটরগুলোতে প্রশ্ন দেখা যাবে। শুরু হবে পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে খাতাগুলো প্রেরণ করা হবে ফলাফল কমিশনের নিকট। পুরো প্রক্রিয়াটি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের মতো সম্প্রসারিত হবে। এভাবেই শেষ হবে নকল মুক্ত ডিজিটাল এক্সাম পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় রংপুরে বসেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বুয়েটের পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব। পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হবে মাত্র ৩৬ দিনের মধ্যে।

৩. ফলাফল কমিশন

এই কমিশনের কাজ হলো খাতা মূল্যায়ন করে পরীক্ষার ফলাফল কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা। প্রাথমিক প্রশ্ন প্রস্তুতকারী ১০০জন প্রশ্নকর্তা খাতা মূল্যায়নের জন্যে সারাদেশ থেকে একটি টিম গঠন করবেন। এই ১০০ জনকে মনিটরিং করবেন চূড়ান্ত প্রশ্ন প্রস্তুতকারী ৫জন পরীক্ষক। এই প্রক্রিয়ায় ফলাফল ওয়েবসাইটে দেওয়া পর্যন্ত এই কমিশন সময় পাবে সবোর্চ্চ ৭দিন। ফলাফল রিভিউ করার জন্যে শিক্ষার্থীদের সময় দেওয়া হবে ১দিন। রিভিউর ফলাফলের জন্যে কমিশন সময় পাবে সবোর্চ্চ ২দিন। অর্থাৎ পরীক্ষা শেষ হবার সর্বোচ্চ ১০ দিনের মাথায় একজন পরীক্ষার্থী কমিশনের ওয়েবসাইটে তার ফলাফল দেখতে পাবে। ১২তম দিনে ফলাফল কমিশন চূড়ান্ত প্রার্থীদের একটি তালিকা পাঠাবেন নিয়োগ ও বাস্তবায়ন কমিশনের নিকট।

৪.নিয়োগ কমিশন

এই কমিশনের কাজ হচ্ছে ২টি। প্রথমটি হলো ফলাফল কমিশনের সুপারিশকে বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী স্বস্ব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া। সেই সাথে প্রার্থীর দক্ষতা ও মান উন্নয়নের জন্যে নিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় আদেশ দেওয়া। দ্বিতীয়টি হলো প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার পরে অত্র প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ করছে কি না, সেটি তদারকি করা। কোন প্রার্থী কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান কমিশনের কাছে তথ্যগেপান করলে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ নেওয়ার জন্যে অভিযোগ কমিশনকে সুপারিশ করবে নিয়োগ কমিশন। দুর্ঘটনাজনিত কারণে প্রতিষ্ঠানের শর্ত অনুযায়ী নিয়োগকৃতের ক্ষতিপূরণ আদায়ে এ কমিশন বদ্ধপরিকর। ফলাফল কমিশনের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার সর্বোচ্চ ৭দিনের মধ্যে উর্ত্তীণ প্রার্থীর নিয়োগ বাস্তবায়ন করতে হবে এ কমিশনকে।

৫.অভিযোগ কমিশন

এই কমিশনটি সারাদেশের শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত অভিযোগ গ্রহণ করবে। এই কমিশনের কাজ হচ্ছে অভিযোগ যাচাই বাচাই করে বাস্তবায়ন করার জন্যে একশান কমিশনে সুপারিশ করা। শিক্ষক সমস্যা, পরীক্ষাগত সমস্যা, ফলাফল সমস্যা, নিয়োগ সমস্যা, চাহিদা সমস্যা, অনিয়ম সমস্যা, দক্ষতা সমস্যা, ডিজিটালাইজেশন সমস্যা, অবৈধ নিয়োগ, শিক্ষক সংকট, বেতনভাতা সমস্যা, রাস্তা অবরোধ, মানববন্ধন ও ইত্যাদি নিয়ে এই কমিশন কাজ করবে। এই কমিশন সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে উত্থাপিত সমস্যার সমাধান করতে হবে।

৬. একশান কমিশন

এই কমিশনের কাজ হচ্ছে অভিযোগ কমিশনের সুপারিশকে বাস্তবায়ন করা। এক্ষেত্রে এ কমিশন আইন আদালত থেকে শুরু করে প্রশাসনের সবস্তরকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করবে। তবে কেউ যদি মিথ্যা সাক্ষি দিয়ে নিজস্ব স্বার্থে কাউকে শাস্তি প্রদানের জন্যে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে কমিশনকে বাধ্য করে এবং এটি প্রমাণিত হয়, তাহলে কমিশন অভিযোগকারীকে সমশান্তি প্রদান করিতে পারবে। অভিযোগ কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্যে এই কমিশন সময় পাবে সবোর্চ্চ ৩ দিন।

এই কমিশন হবে সর্বোচ্চ ক্ষমতাশীল। এই কমিশনের হাতে সারাদেশের সমস্ত শিক্ষালয়ের লাইসেন্স প্রদান এবং বাতিলের এখতিয়ার থাকবে। এ ক্ষেত্রে অভিযোগ এবং একশন কমিশন একত্রিত হয়ে কাজ করবে। সেরা ফলাফলের জন্যে জন্যে এওয়ার্ড প্রদান এবং খারাপ ফলাফলের জন্যে এমপিও বাতিলের ক্ষমতা থাকবে এই কমিশনের হাতে।

এভাবেই এই ৬টি ধাপের সম্পুন্ন বাস্তবায়নের ফলে গঠিত হবে একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা কমিশন। সারাবছর একটি নিদ্দিষ্ট সময়ে সারকুলার দিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা করে নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে যেমন কমবে হয়রানি তেমনি বাঁচবে সময় ও কোটি কোটি টাকা রাজস্ব।

– আরিফ চৌধুরী শুভ

সাংবাদিক ও লেখক।
উদ্যোক্তা ও সংগঠক নো ভ্যাট অন এডুকেশন আন্দোলন।

মন্তব্য করুন

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline