সরকারকে চাপ প্রয়োগ করে কোনো কিছু আদায় করা সম্ভব না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কোথায় কোথায় জাতীয়করণ করতে হবে বা করতে হবে না, তা নীতিমালার ভিত্তিতে হবে। যখন তখন যে কেউ দাবি করলে সেটা পূরণ করা অসম্ভব সেটা তো সকলকে অনুধাবন করতে হবে, বুঝতে হবে।’
নানা দাবিতে একের পর এক শিক্ষক সংগঠনের আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত শিক্ষা সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট, বরিশাল, রংপুর ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কেন্দ্রসহ মোট ১১টি ভবন ও প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। তাছাড়া দেশের সাতটি সেরা কলেজকে সম্মাননাও দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এইটুকু ভরসা রাখতে হবে যে, আওয়ামী লীগ যতক্ষণ ক্ষমতায় আছে, কাউকে বঞ্চিত করে নাই, বঞ্চিত করবে না। তবে এটুকু আমি বলব, চাপ দিয়ে কিন্তু কিছু আদায় করা যাবে না।’
গত ডিসেম্বর থেকে নানা দাবি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন শিক্ষকরা। প্রথমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেছেন প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের ‘বেতন বৈষম্য’ কমাতে বেতন গ্রেড উন্নীত করার দাবি নিয়ে।
সেই আন্দোলন শেষ হতে না হতেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ননএমপিও শিক্ষালয়ের শিক্ষকরা অনশন করেছেন এমপিওভুক্তির দাবিতে।
এই আন্দোলন শেষ হতে না হতেই আন্দোলনে নামেন ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা। তাদের অনশন হয় প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে। এরপর আবার অনশন শুরু করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সংগঠন। তাদের দাবি, তাদের প্রতিষ্ঠান সরকারি করতে হবে। আরও আন্দোলনে আছেন জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক সরকারের শেষ বছর এভাবে শিক্ষক আন্দোলন হয়েছে বাংলাদেশে। শিক্ষক নেতারা জানান, সরকারের শেষ বছর দাবি আদায় সহজ হয় বলে তারা এভাবে আন্দোলনে নামেন।এবারও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দাবি পূরণে আশ্বাস পেয়েই অনশন কর্মসূচি ভেঙে বাড়ি ফিরেছেন নন এমপিও শিক্ষক, ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা।
শিক্ষকদের এসব আন্দোলন নিয়ে এই প্রথম কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী। জানিয়ে দিলেন, নীতিমালা ছাড়া কোনো দাবি পূরণে ব্যবস্থা নেয়ার ইচ্ছা তার নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি মনে করে সরকারের এটা শেষ বছর, কাজেই অযৌক্তিক দাবি করলেই আমরা সব শুনে নেব, আমি কিন্তু ক্ষমতার পরোয়া করি না, এটুকু বলে দিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে নিজের আখের গোছানো, নিজের ভাগ্য গড়ে তোলা বা নিজের ছেলেমেয়ের ভাগ্য গড়ে তোলা বা নিজের সম্পদ গড়ে তোলা, সেটা কিন্তু আমাদের নীতি না। আমরা করি না।’
শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশকে এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। আমরা তার স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেক বিদ্যালয় জাতীয়করণ ও শিক্ষকদের চাকরি সরকারি করেছে। আমরা ক্ষমতায় এসে দেশের কোনো কোনো গ্রামে স্কুল প্রয়োজন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ সে বিষয়ে একটি জরিপ করেছিলাম। সেই ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থানে প্রায় দেড় হাজার স্কুল করেছিলাম। আমরাই একেকটি জেলাকে নিরক্ষরমুক্ত করে সরকারিভাবে ঘোষণা করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তবে আমরা দেশের উন্নয়নে যখনই কাজ করি তখনই একটি আঘাত আসে। জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই আঘাত শুরু হয়।
তিনি বলেন, জাতির পিতা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। তিনি যদি ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে পারতেন তা হলে দেশের তৃণমূলপর্যায়ে আজ অনেক উন্নয়ন হতো। ক্ষমতায় এসে আমরা শিক্ষারও ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলাম। এটি ছাড়া কোনো জাতি শিক্ষিত হতে পারে না, এগিয়ে যেতেও পারে না। ড. কুদরত-ই-খোদা শিক্ষা কমিশন বঙ্গবন্ধুর হাতে রিপোর্ট দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি পদক্ষেপ নেওয়ার সময় পাননি। তার আগেই তাকে হত্যা করা হয়।
‘আর এটা শিক্ষকদের জানা উচিত যে, আমি ৯৬ তে এসে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। কারও কিন্তু দাবি করতে হয়নি, আন্দোলন করতে হয়নি, আমরা তার আগেই করে দিয়েছি। কারণ আমরা একে গুরুত্ব দেই, দেশকে উন্নত করতে চাই আমরা। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যারা শিক্ষক, আপনারা মহৎ পেশায় নিয়োজিত আছেন, আপনাদের হাতেই রয়েছে জাতির ভবিষ্যত।’ ‘একজন শিক্ষকের কাছ থেকে আমি এটুকুই চাই যে আপনারা কতটুকু দিতে পারলেন, কতটুকু করতে পারলেন, মানুষ গড়ার কারিগর আপনারা, কী ধরনের মানুষ তৈরি করতে পারলেন বা আপনাদের কাছ থেকে যারা শিক্ষা নিয়েছে তারা এই দেশকে কতটুকু এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে, দেশকে কীভাবে আরও উন্নত করতে পারবে-সেটাই হচ্ছে বড় কথা।’
আরো পড়ুন:
0 responses on "কোথায় কোথায় জাতীয়করণ করতে হবে বা করতে হবে না, তা নীতিমালার ভিত্তিতে হবে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী"