কি ভাবে সঠিক নিয়মে পড়ালেখা করা যায়?
১. পড়তে বসার আগে একটু চিন্তা কর- কী
পড়বেন, কেন পড়বেন, কতক্ষণ ধরে পড়বেন।
প্রত্যেকবার পড়ার আগে কিছু টার্গেট ঠিক করে নিন। যেমন, এত পৃষ্ঠা বা এতগুলো অনুশীলনী।
২. বিষয়ের বৈচিত্র্য রাখুন। নিত্য নতুন পড়ার কৌশল চিন্তা কর
৩. এনার্জি লেভেলের সঙ্গে আগ্রহের একটা
সম্পর্ক আছে। এনার্জি যত বেশি মনোযোগ
নিবদ্ধ করার ক্ষমতা তত বেশি হয়। আর অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর দিনের প্রথমভাগেই এনার্জি বেশি থাকে। তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যে পড়াটা দিনে ১ ঘন্টায় পড়তে পারছে সেই একই পড়া পড়তে রাতে দেড় ঘণ্টা লাগছে। তাই কঠিন, বিরক্তিকর ও একঘেয়ে বিষয়গুলো সকালের দিকেই পড়ুন। পছন্দের বিষয়গুলো পড়ুন পরের দিকে। তবে যদি উল্টোটা হয়, অর্থাৎ রাতে পড়তে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাহলে সেভাবেই সাজান আপনার রুটিন।
৪. একটানা না পড়ে বিরতি দিয়ে পড়বেন। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, একটানা ২৫ মিনিটের বেশি একজন মানুষ মনোযোগ দিতে পারে না। তাই একটানা মনোযোগের জন্যে মনের ওপর বল প্রয়োগ না করে প্রতি ৫০ মিনিট পড়ার পর ৫ মিনিটের একটা ছোট্ট বিরতি নিতে পারেন। কিন্তু এ বিরতির
সময় টিভি, মোবাইল বা কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত হবেন না যেটি হয়তো ৫ মিনিটের নামে দুঘণ্টা নিয়ে নিতে পারে।
৫. মনোযোগের জন্যে আপনি কোন ভঙ্গিতে
বসছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ। সোজা হয়ে আরামে
বসুন। অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া বন্ধ কর চেয়ারে এমনভাবে বসুন যাতে পা মেঝেতে লেগে থাকে। টেবিলের দিকে একটু ঝুঁকে বসুন। আপনার চোখ থেকে টেবিলের দূরত্ব অন্তত দু ফুট হওয়া উচিৎ।
৬. পড়তে পড়তে মন যখন উদ্দেশ্যহীনতায়
ভেসে বেড়াচ্ছে জোর করে তখন বইয়ের
দিকে তাকিয়ে না থেকে দাঁড়িয়ে পড়ুন। তবে রুম ছেড়ে যাবেন না। কয়েকবার এ অভ্যাস করলেই দেখবেন আর অন্যমনস্ক হচ্ছেন না।
৭. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পড়তে বসুন এবং পড়তে বসার আগে কোনো অসমাপ্ত কাজে হাত দেবেন না বা সেটার কথা মনে এলেও পাত্তা দেবেন না। চিন্তাগুলোকে বরং একটা কাগজে লিখে ফেলুন।
৮. টার্গেট মতো পড়া ঠিকঠাক করতে পারলে
নিজেকে পুরস্কৃত কর, তা যত ছোটই হোক।
—
দীর্ঘসময় পড়া মনে রাখার সহজ উপায়:
ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, পড়া মনে রাখতে না পারা। সাধারণত অতিরিক্ত লেখাপড়ার চাপে তাদের এই সমস্যা হয়ে থাকে। দেখা যায় যে অনেক পরিশ্রম করে পড়া মুখস্ত করে পরীক্ষা দিতে গেলেন, কিন্তু পরীক্ষা হলে গিয়ে সব বেমালুম ভুলে বসেছেন। তাই এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবার উপায় হিসেবে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে হবে। আসুন জেনে নিই সহজ কয়েকটি উপায়, যেটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং পড়া অনেকক্ষণ মনে রাখতে সাহায্য করবে।
মনোযোগ তৈরি করাঃ
মানুষের সমস্ত ক্রিয়াই নিয়ন্ত্রণ করে মন। আর মনটিকেই প্রথমত বুঝিয়ে নিতে হবে যে এখন আমি এই কাজটি করব এবং এই কাজটি আমাকে মনে রাখতে হবে। তাই পড়ার বিষয়ে আগে মনোযোগ বসিয়ে নিতে হবে। যে পড়াটি পড়বেন সেই পড়াটিতে মনোযোগ স্থাপন করতে হবে।
মেডিটেশন করে নিনঃ
পড়াশোনায় মনোযোগ পুরোপুরি বসাতে চাইলে ব্রেন থেকে যাবতীয় যত চিন্তা তা মুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ ব্রেনটিকে রিফ্রেশ করতে হবে। এর জন্য মেডিটেশন সবচেয়ে উপযোগী। মেডিটেশন ব্রেনকে সতেজ ও চিন্তামুক্ত করে তোলে এবং এর কাজ করার ক্ষমতাকে হাজার গুল বাড়িয়ে দেয়। এর জন্য স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তুলতে মেডিটেশন করে নিতে পারেন।
জটিল টপিকগুলো বারবার পড়ুনঃ
মনে রাখার জন্য ছোটবেলা থেকেই বারবার পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে বলেন বাবা মায়েরা। একটি বিষয়ে অনেক জটিল টপিক থাকতে পারে। এই জটিল টপিকগুলো একবার পড়ে মনে রাখা সম্ভব না। তাই এই ধরনের জটিল টপিকগুলো বারবার পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রয়োজনে অবসর সময়ে তা আওড়াতে পারেন। এতে এটি মনে থাকবে বেশি।
বাস্তবের সাথে মিলিয়ে পড়ুনঃ
কোনো কিছু মনে রাখার জন্য তা যদি বাস্তব কোনো বিষয়ের সাথে মিলিয়ে পড়া যায় তাহলে তা অনেক বেশি মনে থাকে। এজন্য যতটা সম্ভব বাস্তব কোনো বিষয়কে উদাহরণ হিসেবে ধওে পড়াটি মুখস্ত কর
পড়াটি কাউকে বোঝানঃ
স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে বা পড়াটি মনে রাখতে সবচেয়ে উপযোগী মাধ্যম হল যে পড়াটি আপনি পড়েছেন তা অন্যকে যদি বুঝিয়ে বলা। এমন অবস্থাতে আপনি যদি কাউকে কোনো জটিল বিষয় বুঝিয়ে বলেন যেমনটা টিচাররা স্টুডেন্টদের বুঝিয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনার ব্রেনে এমনভাবে গেঁথে যাবে যেটি কখনই আপনি ভুলবেন না।
এভাবেই পড়তে পারলে অবশ্যই এই পদ্ধতি আপনাকে আপনার পড়া মনে রাখতে সাহায্য করবে।
আরো পড়ুন: