
আমাদের সাধারণ সমস্যা হল আমাদের এত বড় সিলেবাস এবং পড়ার সময় থাকে খুবই অল্প। আর কিছুদিন পর পর পরীক্ষার হাতছানি তো আছেই। এসব টেনশানে এত গুলো বিষয়ের বইয়ের মধ্যে কোনটা ছেড়ে কোনটা পড়ব তার কোন ঠিক থাকেনা। এজন্য অনেকেই পড়ায় মনোযোগী হতে অক্ষম হয়ে যাই। এ সমস্যা এড়াতে কিছু উপায় অনুসরণ করলে আপনারা মোটামুটি পড়াশুনায় মনোযোগী হতে পারবেন।
১. পড়তে বসার আগে একটু চিন্তা কর- কী পড়বেন, কেন পড়বেন, কতক্ষণ ধরে পড়বেন। প্রত্যেকবার পড়ার আগে কিছু
টার্গেট ঠিক করে নিন। যেমন, এত পৃষ্ঠা বা এতগুলো অনুশীলনী।
২. বিষয়ের বৈচিত্র্য রাখুন। নিত্য নতুন পড়ার কৌশল চিন্তা কর
৩. এনার্জি লেভেলের সঙ্গে আগ্রহের একটা সম্পর্ক আছে। এনার্জি যত বেশি মনোযোগ নিবদ্ধ করার ক্ষমতা তত বেশি হয়। আর অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর দিনের প্রথমভাগেই এনার্জি বেশি থাকে। তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যে পড়াটা দিনে ১ ঘন্টায় পড়তে পারছে সেই একই পড়া পড়তে রাতে দেড় ঘণ্টা লাগছে। তাই কঠিন, বিরক্তিকর ও একঘেয়ে বিষয়গুলো সকালের দিকেই পড়ুন। পছন্দের বিষয়গুলো পড়ুন পরের দিকে। তবে যদি উল্টোটা হয়, অর্থাৎ রাতে পড়তে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাহলে সেভাবেই সাজান আপনার রুটিন।
৪. একটানা না পড়ে বিরতি দিয়ে পড়বেন। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, একটানা ২৫ মিনিটের বেশি একজন মানুষ মনোযোগ
দিতে পারে না। তাই একটানা মনোযোগের জন্যে মনের ওপর বল প্রয়োগ না করে প্রতি ৫০ মিনিট পড়ার পর ৫ মিনিটের একটা
ছোট্ট বিরতি নিতে পারেন। কিন্তু এ বিরতির সময় টিভি, মোবাইল বা কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত হবেন না যেটি হয়তো ৫ মিনিটের নামে দু- ঘণ্টা নিয়ে নিতে পারে।
৫. মনোযোগের জন্যে আপনি কোন ভঙ্গিতে বসছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ। সোজা হয়ে আরামে বসুন। অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া বন্ধ কর চেয়ারে এমনভাবে বসুন যাতে পা মেঝেতে লেগে থাকে। টেবিলের দিকে একটু ঝুঁকে বসুন। আপনার চোখ থেকে টেবিলের দূরত্ব অন্তত দু ফুট হওয়া উচিৎ।
৬. পড়তে পড়তে মন যখন উদ্দেশ্যহীনতায় ভেসে বেড়াচ্ছে জোর করে তখন বইয়ের দিকে তাকিয়ে না থেকে দাঁড়িয়ে পড়ুন। তবে রুম ছেড়ে যাবেন না। কয়েকবার এ অভ্যাস করলেই দেখবেন আর অন্যমনস্ক হচ্ছেন না।
৭. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পড়তে বসুন এবং পড়তে বসার আগে কোনো অসমাপ্ত কাজে হাত দেবেন না বা সেটার কথা মনে
এলেও পাত্তা দেবেন না। চিন্তাগুলোকে বরং একটা কাগজে লিখে ফেলুন।
৮. টার্গেট মতো পড়া ঠিকঠাক করতে পারলে নিজেকে পুরস্কৃত কর, তা যত ছোটই হোক।
৯. যেখানে আপনি পড়তে কমফোর্ট ফিল করবেন, সেখানেই পড়বেন। সবসময় একই জায়গায় বা পরিবেশে পড়ার চেষ্টা করবেন।
১০. এমন জায়গায় পড়তে বসুন যেখানে আপনি সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারবেন।
মনোযোগের সাথে অনেক বড় সম্পর্ক আছে স্মৃতিশক্তির। আপনি অনেক যত্ন করে মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করছেন। কিন্তু সেই পড়া ভুলে গেলে কোন লাভ হল না। তাই কিছু টিপস অনুসরণ করবেন আপনার স্মৃতিশক্তিকে যত্ন করার। আপনার শরীরের প্রায় সব কাজই করে মস্তিষ্ক। আর এর যত্ন নেয়াও জরুরী।
স্মৃতিশক্তির যত্ন নেয়ার উপায়ঃ
ইতিবাচক চিন্তা কর নেতিবাচক চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। সন্দেহবাতিক মন মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। মনের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগাযোগটা খুব গভীর। তাই মনের পরিচর্যা কর নিজেকে নিয়োজিত রাখুন সৃষ্টিশীল কাজে। ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ কর ক্রোধ বা রাগ মন ও মস্তিষ্কের শত্রু। আমরা যখন রেগে যাই তখন শরীরে নিঃসৃত হয় বিশেষ এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ যা
আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। মেডিটেশন কর নিয়ম করে দিনের কিছু সময় মেডিটেশন কর যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। সম্ভব না হলে অন্তত সকাল-সন্ধ্যা খোলা ময়দানে হাঁটুন। এ অভ্যাসগুলো মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। মস্তিষ্কের তথ্য ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। স্মরণশক্তি মূলত নির্ভর করে আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতার ওপর। মেডিটেশন আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ায়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন সারাক্ষণ কাজ আমাদের মস্তিষ্ককে ক্লান্ত করে তোলে। ক্লান্তি মস্তিষ্কের কাজ
করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। প্রতিদিন গড়ে ছয়-সাত ঘণ্টা ঘুমান। দীর্ঘ কাজের ফাঁকে একটু ব্রেক দিন। কাজে মনোনিবেশ করা সহজ হবে।
পড়া মনে রাখার উপায়ঃ
১. আত্মবিশ্বাস: আত্মবিশ্বাস যেকোনো কাজে সফল হওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত। মনকে বোঝাতে হবে পড়াশোনা অনেক সহজ বিষয় আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে। তাহলে অনেক কঠিন পড়াটাও সহজ মনে হবে। কোনো বিষয়ে ভয় ঢুকে গেলে সেটা মনে রাখা বেশ কঠিন। আর পড়ালেখা করার উত্তম সময় হচ্ছে ভোর। সকালে মস্তিষ্ক ফ্রেশ থাকে।
২. কনসেপ্ট ট্রি: পড়া মনে রাখার ভালো কৌশল হলো ‘কনসেপ্ট ট্রি’। এ পদ্ধতিতে কোনো একটি বিষয়ে শেখার আগে পুরো
অধ্যায়টি সাতটি অংশে ভাগ করে প্রতিটি অংশের জন্য এক লাইনে একটি করে সারমর্ম লিখতে হবে। তারপর খাতায় একটি গাছ এঁকে সাতটি সারমর্মকে গাছের একেকটি পাতায় লিখে রাখতে হবে। পাতাগুলোতে প্রতিদিন চোখ বোলালেই অধ্যায়টি সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যাবে। এটি একটি পরীক্ষিত বৈজ্ঞানিক ধারণা। বাংলা ও ভূগোলের জন্য এ কৌশলটি বেশি কার্যকর।
৩. কি ওয়ার্ড: যেকোনো বিষয়ের কঠিন অংশগুলো ছন্দের আকারে খুব সহজে মনে রাখা যায়। যেমন: রংধনুর সাত রং মনে রাখার সহজ কৌশল হলো ‘বেনীআসহকলা’ শব্দটি মনে রাখা। প্রতিটি রঙের প্রথম অক্ষর রয়েছে শব্দটিতে। এমনিভাবে ত্রিকোণমিতির সূত্র মনে রাখতে ‘সাগরে লবণ আছে, কবরে ভূত আছে, ট্যারা লম্বা ভূত’ ছড়াটি মনে রাখা যেতে পারে। এর অর্থ দাঁড়ায়, সাইন=লম্ব/অতিভুজ (সাগরে লবণ আছে), কস=ভূমি/অতিভুজ (কবরে ভূত আছে), ট্যান=লম্ব/ভূমি (ট্যারা লম্বা ভূত)।
৪. কালরেখা: ইতিহাস মনে রাখায় এ কৌশলটি কাজে দেবে। বইয়ের সব অধ্যায় সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা নিয়ে গত ৪০০ বছরের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা বানাতে হবে। সেখান থেকে কে, কখন, কেন উল্লেখযোগ্য ছিলেন, সেটা সাল অনুযায়ী খাতায় লিখতে হবে। প্রতিদিন একবার করে খাতায় চোখ বোলালে খুব সহজে পুরো বই সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হবে। ফলে ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। কিন্তু আলাদা আলাদাভাবে ইতিহাস মনে রাখাটা কষ্টকরই বটে!
৫. উচ্চঃস্বরে পড়া: পড়া মুখস্থ করার সময় উচ্চঃস্বরে পড়তে হবে। এই পদ্ধতিতে কথাগুলো কানে প্রতিফলিত হওয়ার কারণে সহজে আয়ত্ত করা যায়। শব্দহীনভাবে পড়ালেখা করলে একসময় পড়ার গতি কমে গিয়ে শেখার আগ্রহ হারিয়ে যায়। আর আগ্রহ না থাকলে পড়া শেখার কিছুক্ষণ পরই তা মস্তিষ্ক থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। শেখা হয়ে যাওয়ার পর বারবার সেটার পুনরাবৃত্তি করতে হবে। এটাও পড়া মনে রাখার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে।
৬. নিজের পড়া: নিজের মতো ক্লাসে মনোযোগী হতে হবে। স্যারদের লেকচার ও পাঠ্যবইয়ের সাহায্য নিয়ে নিজে নিজে নোট করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। একটি প্রশ্নের উত্তর কয়েকভাবে লেখার চর্চা করতে হবে। নিজের তৈরি করা পড়া নিজের কাছে অনেক সহজ মনে হবে। পরবর্তী সময়ে নিজের লেখাটি দু-একবার পড়লে অনায়াসেই সেটি আয়ত্ত হয়ে যাবে এবং নিজের মতো করে লেখা যাবে। আর এভাবে পড়লে ভুলে যাওয়ার আশঙ্কাও কম থাকে।
৭. নতুন-পুরনোর সংমিশ্রণ: নতুন কিছু শেখার সময় একই রকম আরো বিষয় মিলিয়ে নিতে হবে। কারণ একেবারে নতুন কোনো তথ্য ধারণ করতে মস্তিষ্কের বেগ পেতে হয়। কিন্তু পুরনো তথ্যের সঙ্গে নতুন তথ্য সংযোজন করতে পারে খুব সহজে। উদাহরণস্বরূপ, ‘সিডি’ শব্দটি শেখার ক্ষেত্রে পুরনো দিনের কলের গানের কথা মনে রাখলে শব্দটা সহজেই মনে থাকবে। শুধু মনে রাখতে হবে, শব্দ দুটোর মধ্যে পার্থক্যটা কী। ফিজিক্সের নতুন কোনো সূত্র শেখার সময় মনে করে দেখতে হবে, এ ধরনের সূত্র আগে পড়া কোনো সূত্রের সঙ্গে মেলে কি না।
৮. কেনর উত্তর খোঁজা: এ নিয়মটা প্রধানত বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য প্রযোজ্য। তাদের মনে সব সময় নতুন বিষয় জানার আগ্রহ প্রবল হতে হবে। অনুসন্ধানী মন নিয়ে কোনো কিছু শিখতে চাইলে সেটা মনে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর কোনো অধ্যায় পড়ার পর সেটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ল্যাবে ব্যবহারিক ক্লাস করতে হবে। তাহলেই বিজ্ঞানের সূত্র ও সমাধানগুলো সহজে আয়ত্ত করা যাবে।
৯. কল্পনায় ছবি আঁকা: বিষয়সদৃশ একটি ছবি আঁকতে হবে মনে। গল্পের প্রতিটি চরিত্রকে আশপাশের মানুষ বা বস্তুর সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই বিষয়টি নিয়ে পড়তে বসলে মানুষ কিংবা বস্তুটি কল্পনায় চলে আসবে। এ পদ্ধতিতে কোনো কিছু শিখলে সেটা ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। আর মস্তিষ্ককে যত বেশি ব্যবহার করা যায়, তত ধারালো হয় ও পড়া বেশি মনে থাকে।
১০. পড়ার সঙ্গে লেখা: কোনো বিষয় পাঠ করার সঙ্গে সঙ্গে সেটি খাতায় লিখতে হবে। একবার পড়ে কয়েকবার লিখলে সেটা সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। পড়া ও লেখা একসঙ্গে হলে সেটা মুখস্থ হবে তাড়াতাড়ি। পরবর্তী সময়ে সেই প্রশ্নটির উত্তর লিখতে
গেলে অনায়াসে মনে আসে। এ পদ্ধতির আরেকটি সুবিধা হচ্ছে হাতের লেখা দ্রুত করতে সাহায্য করে। পড়া মনে রাখতে হলে শেখার সঙ্গে সঙ্গে বেশি বেশি লেখার অভ্যাস করতে হবে।
১১. অর্থ জেনে পড়া: ইংরেজী পড়ার আগে শব্দের অর্থটি অবশ্যই জেনে নিতে হবে। ইংরেজী ভাষা শেখার প্রধান শর্ত হলো শব্দের অর্থ জেনে তা বাক্যে প্রয়োগ করা। বুঝে না পড়লে পুরোটাই বিফলে যাবে। সৃজনশীল পদ্ধতিতে ইংরেজী বানিয়ে লেখার
চর্চা করা সব থেকে জরুরি। কারণ পাঠ্যবইয়ের যেকোনো জায়গা থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। ইংরেজী শব্দের অর্থভাণ্ডার সমৃদ্ধ হলে কোনো পড়া ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
১২. গল্পের ছলে পড়া: যেকোনো বিষয় ক্লাসে পড়ার পর সেটা আড্ডার সময় বন্ধুদের সঙ্গে গল্পের মতো করে উপস্থাপন করতে
হবে। সেখানে প্রত্যেকে প্রত্যেকের মনের ভাবগুলো প্রকাশ করতে পারবে। সবার কথাগুলো একত্র করলে অধ্যায়টি সম্পর্কে ধারণাটা স্বচ্ছ হয়ে যায়। কোনো অধ্যায় খণ্ড খণ্ড করে না শিখে আগে পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিতে হবে। পরে শেখার সময় আলাদাভাবে মাথায় নিতে হবে। তাহলেযেকোনো বিষয় একটা গল্পের মতো মনে হবে।
১৩. মুখস্থ বিদ্যাকে ‘না’ বলা: মুখস্থ বিদ্যা চিন্তাশক্তিকে অকেজো করে দেয়, পড়াশোনার আনন্দও মাটি করে দেয়। কোনো কিছু না বুঝে মুখস্থ করলে সেটা বেশিদিন স্মৃতিতে ধরে রাখা যায় না। কিন্তু তার মানে এই নয়, সচেতনভাবে কোনো কিছু মুখস্থ করা যাবে না। টুকরো তথ্য, যেমন: সাল, তারিখ, বইয়ের নাম, ব্যক্তির নাম ইত্যাদি মনে রাখতে হবে। কী মনে রাখছেন, এর সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ের কী সম্পর্ক তা খুঁজে বের করতে হবে। এ ছাড়া বিজ্ঞানের কোনো সূত্র কিংবা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আয়ত্ত করতে সেটা আগে বুঝে তারপর মুখস্থ করতে হবে।
পরীক্ষার আগে করণীয় কিছু পরামর্শঃ
১. আপনাকে আপনার পরীক্ষা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে।
২. পরীক্ষার আগেই আপনাকে পরীক্ষার সিলেবাস ভিত্তিক বিষয়, প্রশ্ন কাঠামো এবং নম্বর বণ্টন সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। তখনই আপনি আপনার প্রস্তুতি কতটুকু যথার্থ হয়েছে তা উপলব্ধি করতে পারবেন।
৩. পড়াশোনার জন্য সর্বোত্তম এবং সর্বোচ্চ সময়টুকু আলাদা করে বাকি সময়ে অঙ্ক কর্ম খাওয়া-দাওয়া, ঘুম সহ প্রাত্যহিক কাজ সেরে ফেলবেন।
৪. অতিরিক্ত পড়া উচিত নয়। এতে মস্তিষ্কের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। মস্তিক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। মস্তিক পড়া মেমোরাইজ করতে পারে না।
৫. পড়ার সময় একটি টার্ম শেষ না করে হুট করে অন্যটায় চলেযাবেন না।
৬. কখনোই শুয়ে শুয়ে পড়বেন না।
৭. পড়ার সময় ভারি খাবার গ্রহণ করবেন না।
৮. একটানা এক ঘণ্টা পড়ার ভেতর ৫-১০ মিনিট বিরতি নিয়ে আবার পড়া শুরু কর এতে মস্তিষ্কের ওপর চাপ সৃষ্টি হয় না।
৯. পরীক্ষার প্রয়োজনীয় সামগ্রী (যেমন: পেন্সিল, কলম, ক্যালকুলেটর, অ্যাডমিট কার্ড, টাকা ইত্যাদি) আগে থেকে প্রস্তুত করে রেখে দিন।
১০. পড়ার সময়টাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে পরিকল্পনা মতো পড়ুন।
১১. পরীক্ষা শুরুর আগে দিনগুলোতে খুব বেশি করে পড়তে যাবেন না, যদি যথার্থ প্রস্তুতি থাকে।
১২. যেকোনো প্রয়োজনে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, ভার্সিটিতে পড়ুয়া বড় ভাই বা আপুর সাহায্য ও পরামর্শ নিন।
১৩. ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঐ দিনের পড়াগুলোর উপর একটু চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।
১৪. পরীক্ষার আগের দিন রাত জেগে পড়বেন না।
১৫. আপনার চারপাশের সামান্য বিষয় বা ঘটনা আপনার মনকে এলোমেলো করে দিতে পারে। তাই পড়ার সময় মোবাইল
ফোন, গল্পগুজব, সংবাদ পত্র, ম্যাগাজিন ইত্যাদি থেকে দুরে থাকুন।
১৬. পড়ার টাইমটেবিল এমন ভাবে প্রস্তুত কর, যেন পরীক্ষার আগে রিভিশনের যথেষ্ট সময় থাকে।
পড়া মনে রাখার জন্য খাবার গ্রহণের দিকে নজর দেয়াটা জরুরী। কারণ খালি পেটে পড়াশুনা করার মন থাকেনা। তাই নিয়ম করে খাবার গ্রহণ করাটা জরুরী।
১. আপনাকে পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে। কেননা জীবাণুযুক্ত খাবার আপনার অসুখের কারণ হতে পারে এবং পরীক্ষাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
২. পুষ্টি-যুক্ত খাবার গ্রহণ কর সতেজ ফলমূল খাবেন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান কর
৩. খাবার গ্রহণ করার সময় পড়বেন না।
৪. ফুটপাতের ধুলাবালি ও জীবাণুযুক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
৫. পরীক্ষার আগে কখনই বেশী করে চা বা চা-কফি বা ফিজি জাতীয় খাবার (যেমন: কোকাকোলা বা টাইগার) খাবেন না।
৬. বিভিন্ন কুসংস্কার যেমনঃ পরীক্ষা দেওয়ার আগে ডিম খাওয়া উচিত নয়, এগুলো কুসংস্কার থেকে দুরে থাকুন। ডিম খেলে
আপনি যেমন শারীরিক দিক থেকে শক্তি পাবেন তেমনি মানসিক দিক থেকেও শক্তি পাবেন। অতএব ডিম খাবেন। এতে কোন
সমস্যা নেই।
৭. দুধ পান কর এতে মানসিক ও শারীরিক বল পাওয়া যায়।
খাওয়া যেমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ঘুমও গুরুত্বপূর্ণ। কঠোর পরিশ্রম করে বিশ্রাম না নিলে শরীরের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। তাই বিশ্রামও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বিশ্রাম বিষয়ক কিছু পরামর্শ।
১. পরীক্ষার আগে ও চলাকালে নিয়ম করে ৬ ঘণ্টা ঘুমাবেন। মনে রাখবেন পর্যাপ্ত ঘুম আপনার পড়াকে মেমোরাইজড করতে সাহায্য করে।
২. উদ্বেগের কারণে ঘুম না হলে কখনোই ঔষধ (ঘুমের ঔষধ) খাবেন না।
৩. ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিজেকে টেনশন মুক্ত করে প্রশান্ত মনে ঘুমাতে যাবেন।
৪. দু-এক দিন ঘুম কম হলেও এত উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
অভিভাবকের যেসব দায়িত্বঃ
১. পরীক্ষার সময় আপনার সন্তানকে যত্নের ভিতর রাখুন।
২. আপনার সন্তানকে বেশী রাত জাগতে দেবেন না।
৩. তাকে পড়াশোনা ব্যতীত অঙ্ক করতে দেবেন না। বিশেষ করে পরীক্ষা চলাকালীন।
৪. পরীক্ষার দিন তার প্রয়োজনীয় সামগ্রী (যেমন: পেন্সিল, কলম, ক্যালকুলেটর, অ্যাডমিট কার্ড, টাকা ইত্যাদি) গুছিয়ে রাখুন।
৫. পরীক্ষা খারাপ হলে তাকে বকাঝকা করবেন না। বরং তাকে আশ্বাস দিন এবং পরবর্তী পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার জন্য
তাকে উৎসাহ দিন।
৬. আপনার সন্তান যেন পরীক্ষা নিয়ে অতিরিক্ত মানসিক চাপ না নেয় সে বিষয়ে সচেতন থাকবেন।
৭. আপনার সন্তান যেন সুন্দর পরিবেশে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে পারে এ বিষয়ে আপনি সচেতন থাকুন।
পরীক্ষার দিনে যেটি করবেন:
১. পরীক্ষার দিন নিজেকে রিল্যাক্স মুডে রাখতে চেষ্টা কর অস্থির হবেন না। নিজেকে শান্ত রাখুন।
২. বাসা থেকে বের হওয়ার আগে দেখে নিন আপনার অ্যাডমিট কার্ড সহ আপনার প্রয়োজনীয় সকল জিনিস পত্র সঙ্গে
নিয়েছেন কী না।
৩. পরীক্ষার প্রথম দিনে পরীক্ষার হলে একটু আগে ভাগে রওনা দিন। কারণ পরীক্ষার জন্য রোল নম্বর খুঁজতে সময় পাওয়া
যাবে।
৪. পরীক্ষা শুরুর আগে কীভাবে কতসময়ের ভেতর পরীক্ষা দেবেন তার একটা পরিকল্পনা করে নিন।
পরীক্ষার সময় বা হলে যেটি করবেন:
১. একটি প্রশ্নের উত্তর করার সময় কোন ক্রমেই অন্য প্রশ্ন নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।
২. যেহেতু পরিক্ষার হলে সময় খুব অল্প, তাই প্রথম দিকে জানা প্রশ্নের উত্তর দিন।
৩. লুজশিট নেওয়ার সময় অবশ্যই খেয়াল করবেন লুজশিটে ক্লাস শিক্ষকের সাক্ষর দেওয়া আছে কী না।
৪. লেখার সময় বানান শুদ্ধ করে লেখার চেষ্টা করবেন।
৫. লেখা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে লিখবেন, এতে করে নম্বর বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৬. প্রশ্নে ভূমিকা, বর্ণনা এবং উপসংহার সহকারে লেখা উচিত, এর ফলে সম্পূর্ণ নম্বর পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৭. পরিক্ষার খাতায় বিভিন্ন শব্দ যেমনঃ PTO লেখা উচিত নয়।
৮. লেখার লেআউট সঠিক রাখার চেষ্টা করবেন।
৯. ভদ্রতা বজায় রাখুন।
১০. নকল করা বা অন্যের দেখা, কারো সাথে কথা বলা ইত্যাদি বদ অভ্যাস থেকে বিরত থাকুন। কারণ এর ফলে পরীক্ষা থেকে
বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
১১. একজাম পেপার জমা দেওয়ার আগে দু-তিনবার দেখে নিন কোথাও কোন ভুল-ত্রুটি আছে কি-না।
১২. খাতায় অবশ্যই মার্জিন ব্যবহার করবেন এবং মার্জিনের বাহিরে কোন কিছু লিখবেন না।
১৩. প্রশ্ন লেখার পূর্বে নম্বর লিখুন যেমনঃ ১ নং প্রশ্নের ক নং উত্তর। এটি অধিকাংশ শিক্ষকরাই পছন্দ করে।
পড়াশোনা জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। স্বল্প সময়ে বিশাল সিলেবাস পড়ার জন্য মনোযোগ অর্জন করাটাও অনেক কষ্টসাধ্য। তবে মনোযোগ দেয়াটা খুবই জরুরী। উপরে বর্ণিত পরামর্শ গুলো অনুসরণ করে চললে আশা করা যায় পড়া মনে রাখা এবং পরীক্ষায় ভাল করা যাবে।
এরকম পরামর্শ ও শিক্ষাভিত্তিক তথ্য পেতে ইশিখনের সাথে থাকুন। শেয়ার করে সবাইকে জানার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য।