৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি
আন্তর্জাতিকে কাজে দিবে
===উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা
জানুয়ারি মাসে পরমাণু অস্ত্র প্রযুক্তি পরীক্ষা ও ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যালেস্টিক মিসাইল উেক্ষপনের সাজা হিসাবে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নতুন এক দফা নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। মার্চ মাসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপের ধারাবাহিকতাতেই ইইউ নতুন এই সিদ্ধান্তটি জানাইয়াছে। শুক্রবার ঘোষিত এই পদক্ষেপগুলো সারা দুনিয়া হইতে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করিয়া রাখা উত্তর কোরিয় নেতৃত্বকে কতখানি বেগ দিতে সক্ষম হইবে, তাহা লইয়া অবশ্য কোন কোন বিশেষজ্ঞ সন্দেহ পোষণ করিতেছেন।
উত্তর কোরিয়ার উপরে নতুন করিয়া চাপ গড়িবার জন্য ইইউ বানিজ্যিক, আর্থিক, বিনিয়োগ ও যোগাযোগ খাতকে লক্ষ্য করিয়া নানাবিধ অবরোধ দিয়াছে। নতুন বিধি-নিষেধের কারণে ইইউ নাগরিকেরা চাহিলেও আর উত্তর কোরিয়ার খনি, রিফাইনারি কিংবা রসায়ন শিল্পে বিনিয়োগ করিতে পারিবে না। উত্তর কোরিয়ার সহিত সংশ্লিষ্ট কোনো বিমান ইইউ এর সীমানা ঘেঁষিতে পারিবে না। দেশটি হইতে ইইউতে কিংবা ইইউ হইতে দেশটিতে কোনো ধরণের তহবিল গমনাগমনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আসিয়াছে এইবার। উল্লেখ্য, ২০০৬ সাল হইতেই উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নানাবিধ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতেছে ইইউ। জাতিসংঘও পরমাণু অস্ত্র প্রযুক্তি ও মিসাইল পরীক্ষার দায়ে ২০০৬ সাল হইতে অদ্যাবধি দেশটির বিরুদ্ধে পাঁচ দফা ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছে। তবে জাতিসংঘের অবরোধগুলির মত ইইউ এর ব্যবস্থাগুলির কার্যকর হওয়া লইয়াও সন্দেহের অবকাশ রহিয়াছে। এইক্ষেত্রে গণচিনের ভূমিকা আসিবে সর্বাগ্রে। প্রতিবেশী চীন হইতেছে উত্তর কোরিয়ার প্রধান সহায় ও সুরক্ষা ঢাল। গত কিছুদিন ধরিয়া পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনার মুখে উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে কিছুটা কড়া অবস্থান ব্যক্ত করিলেও, এখন অবধি চীন বলিতে গেলে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক হইতে দেশটিকে একরকম আগলাইয়া রাখিয়াছে। একাধিক নির্ভরযোগ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, আন্তর্জাতিক অবরোধগুলির বরাতে এই দুই দেশের মধ্যেকার প্রকাশ্য অর্থনৈতিক বন্ধন প্রতিনিয়ত বাড়িয়াই চলিয়াছে। চলতি বত্সরের প্রথম তিন মাসে গত বত্সরের একই সময়কালের তুলনায় উত্তর কোরিয়ার সহিত চিনের ঘোষিত আমদানী-রপ্তানী যথাক্রমে ১৫ ভাগ ও ১১ ভাগ বাড়িয়াছে। রাশিয়া এবং ইরানের মত দেশও, উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা দুনিয়ার মত অবস্থান লইয়া বসিয়া থাকে নাই। পানামা পেপারসের বরাতে কিছু দিন পূর্বে জানা গিয়াছে যে, এমনকি একটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানও বেনামে উত্তর কোরিয়াতে অস্ত্র বিক্রয় ও অস্ত্র সংগ্রহের কোম্পানি খুলিয়া বসিয়াছে!
তাহা হইলে ব্যাপারটি কী দাঁড়াইতেছে? বাস্তবতা এই যে পশ্চিমা বিশ্ব এবং প্রতিবেশী জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যতই দৌড়ঝাঁপ করিতে থাকুক না কেন, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু প্রকল্প ধবংস করিয়া ফেলা তাহাদের জন্য সহজসাধ্য কোন কাজ হইবে না। উত্তর কোরিয়াতে সরকার পরিবর্তন করিয়া নতুন বাস্তবতা নির্মানের প্রকল্পও কাজ করিবে বলিয়া মনে হয় না। এই ক্ষেত্রে কোনো অবস্থাতেই চীন কিংবা রাশিয়ার সম্মতি মিলিবে বলিয়া মালুম হয় না। এমতাবস্থাতে, অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ বিশ্লেষকদিগের কেউ-কেউ একটিমাত্র বিকল্পের কথাই ভাবিতেছেন। তাঁহারা মনে করিতেছেন যে, দুর্বোধ্য-বিচ্ছিন্ন উত্তর কোরিয়াকে সামরিক পরমাণু প্রকল্প হইতে বিরত করিতে হইলে, পশ্চিমা বিশ্বকে যেমন করিয়া হোক না কেন আলোচনার দ্বার উন্মোচন করিতে হইবে। তাহা না হইলে বিপজ্জনক এই রাষ্ট্রটির দিক হইতে বিপদের ঝুঁকি বাড়িবে বৈ কমিবে না।