৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি
ইইউ থেকে ব্রিটেনের এক্সিট হ্যাঁ / না ?
=
আগামী ২৩ জুন ব্রিটেনের জন্য হতে পারে এক অবিস্মরণীয় দিন। ওই দিনে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত থাকা না থাকা প্রশ্নে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।
ইইউ থেকে ব্রিটেনের এক্সিট বা বেরিয়ে যাওয়াকে বলা হচ্ছে ব্রেক্সিট।
যারা এর পক্ষে প্রচারণা যুদ্ধে নেমেছেন, তাদের বলা হচ্ছে লিভ গ্রুপ।
আর যারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন, তাদের বলা হচ্ছে রিমেইন গ্রুপ। এই গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তবে প্রধানমন্ত্রীর নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির অনেক নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও অনেক ঘনিষ্ঠ সহকর্মী এই ইস্যুতে তার বিরোধিতা করছেন।
..
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার এটি বেশ কয়েক বছর ধরেই আলোচিত হয়ে আসছে যুক্তরাজ্যে। কনজারভেটিভ পার্টি এবং ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টি-ইউকেআইপি’র নেতাদের ক্রমবর্ধমান দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে যোগ করেন ব্রেক্সিট ইস্যুতে গণভোট আয়োজনের। ১৯৭৫ সালের ঐতিহাসিক প্রথম গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত থাকার পক্ষে মত জানিয়েছিলো ব্রিটেনবাসী। সে সময় ব্রিটিশদের কিছুই বলার ছিলো না বলেও পরবর্তীতে দাবি ওঠে। এরই সূত্র ধরে ব্রিটেনকে ইইউ থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রত্যয় নিয়ে নব্বই দশকের শুরুতে জন্ম নেয় নতুন দল ইউকেআইপি। তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় দলটি। ২০১৫ সালের নির্বাচনে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হবার পূর্বাভাষ পেয়ে ইউকেআইপি’র সাথে জোট গঠন করে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি। অনেকটা এই দলের পাল্লায় পড়েই দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচনে জয়ী হলে ব্রেক্সিট ইস্যুতে গণভোট আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বসেন ডেভিড ক্যামেরন। তবে বাস্তবে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে দেশের কি কি ক্ষতি হতে পারে, তা-ই একে একে উঠে আসছে ক্যামেরনের প্রচারণায়। দেশবাসীকে তিনি বোঝাতে চাইছেন,
১.ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হলে দেশে মহাবিপর্যয় নামবে।
বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে দারুণ সংকটে পড়বে ব্রিটেন।
কারণ যুক্তরাজ্যের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় অর্ধেকই হয়ে থাকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সাথে। অন্যদিকে, একক ইইউ বাজারে পণ্য, সেবা, মুদ্রা ও শ্রমিকের অবাধ চলাচলের সুবিধা পেয়ে থাকে ব্রিটেন।
.
প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সর্বশেষ যেটা বলেছেন, সেটা হলো,
ব্রিটেন যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নে না থাকে তবে আগামীতে
২.পেনশন খাত,
৩.ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস,
৪.এমনকি প্রতিরক্ষা খাতকে দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
ক্যামেরনের সাথে তাল মিলিয়ে এমন ভীতি ছড়াচ্ছেন রিমেইন গ্রুপের সবাই। অনেকে এও বলছেন,
৫.যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যেতে পারে।
রিমেইন গ্রুপের পক্ষে রয়েছেন কনজারভেটিভ ও লেবার পার্টির কিছু প্রভাবশালী নেতাসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রুপ।
এর বাইরে তাদের জোর সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। কারণ ইইউ চুক্তি অনুযায়ী বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশের সাথে বাণিজ্য আলোচনা বা চুক্তি করা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো সদস্য দেশ একা করতে পারে না। কেন্দ্রীয়ভাবে এই কাজটি করে থাকে ইইউ নিজে। এজন্যে রিমেইন গ্রুপ বলছে,
৬.ব্রেক্সিট সফল হলে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর ব্রিটেনের রপ্তানি আরো বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে।
.,
তবে এখন পর্যন্ত রিমেইন গ্রুপের সব যুক্তি খণ্ডন করতে সক্ষম হয়েছে বেক্সিট বা লিভ গ্রুপ। তারা বলছেন,
১,বাণিজ্য ঘাটতি নয়, বরং ইইউয়ের আইনগত বাধ্যবাধকতার বেড়াজাল ছিন্ন করে বাণিজ্য স্বাধীনতা অর্জন করবে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো।
তবে
২ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বাণিজ্য সম্পর্কও কোনোভাবেই ছিন্ন হবে না। কারণ ব্রিটেনের আমদানির পরিমাণ ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানির চেয়ে অনেক বেশি।
৩ তাছাড়া সব দেশের সাথে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো স্বাধীনভাবে তাদের ব্যবসায়িক লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন।
.,
২৩ জুন গণভোটে ব্রেক্সিট নাকি রিমেইন গ্রুপ জয়ী হবে, তা নিয়ে চলছে আগাম আলোচনা, বিশ্লেষণ। চলছে একের পর এক জনমত জরিপ। তাতে দেখা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকতে চায় না যুক্তরাজ্যের তরুণ প্রজন্ম। তাই অনেকেই বলছেন, গণভোট দিয়ে নিজের পায়েই কুড়াল মারলেন প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন। সবশেষ গত ৯ জুন জনমত জরিপ প্রকাশ করে ওআরবি নামক একটি প্রতিষ্ঠান। এতে দেখা যায়, রিমেইন গ্রুপের চেয়ে দশ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছে ব্রেক্সিট গ্রুপ।
=
তথ্যসুত্র > ইত্তেফাক