
এসএসসি পরীক্ষায় বাতিল হচ্ছে ভেন্যু কেন্দ্র।
- প্রশ্নফাঁস ও নকল সরবরাহ ঠেকাতে এসএসসিসহ সব পাবলিক পরীক্ষায় মূল পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে ভেন্যু কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়ার প্রথা বাতিল হচ্ছে। কোনো পরীক্ষা কেন্দ্রের আসনের চেয়ে বেশিসংখ্যক পরীক্ষার্থী হয়ে গেলে পাশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভেন্যু কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অথবা একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাধিক শাখা ভেন্যু হিসেবে ব্যবহূত হয়। অতিরিক্ত পরীক্ষার্থীরা সেখানেই পরীক্ষা দেন প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে আই-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর পর্যবেক্ষণে জানা যায়, অপেক্ষাকৃত কম নজরে থাকা ভেন্যু কেন্দ্রগুলো খেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষার হলে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর শিক্ষার্থীদের বলে দেওয়া, নকলের সুযোগ করে দেওয়াসহ নানা অপকর্ম এসব কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এ ছাড়া মূল কেন্দ্রেই শুধু প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়। প্রশ্ন পৌঁছানোর পর প্যাকেট খুলে খোলা প্রশ্ন ভেন্যু কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঝুঁকি বেশি থাকে। এ অবস্থায় পরীক্ষায় অনিয়ম বন্ধ এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে শিক্ষা বোর্ডগুলোর অনুমোদন দেওয়া ভেন্যু কেন্দ্র বন্ধ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মূল কেন্দ্রের নামে অনুমোদন নেওয়া এসব ভেন্যু থেকে এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এ পরিপ্রেক্ষিতে এসব ভেন্যু বন্ধের সুপারিশ করা হয়। সর্বশেষ প্রশ্নফাঁস নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটিতে বৈঠকে এসব রাজনৈতিক ও ঢাকা বোর্ডের বিবেচনায় দেওয়া পরীক্ষার বিতর্কিত কেন্দ্র ও ভেন্যু বাতিল করার জন্য মতামত দেন। বৈঠকে পুলিশ, র্যাব, ঢাকা জেলা প্রশাসক ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ মত দেয়। সম্প্রতি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সভাকক্ষে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক উপকমিটির সভায় প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পরীক্ষা কেন্দ্রে ভেন্যু না রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া নির্বাচনের বছর হওয়ায় বিজি প্রেসে কাজের চাপ বেড়ে যাবে। সে কারণে আগেভাগেই এ বছর জেএসসি ও জেডিসির প্রশ্ন ছাপার কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগের মতোই ১ নভেম্বর পরীক্ষা শুরুর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
- গত ৪ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, ভেন্যু কেন্দ্রে প্রশ্ন পৌঁছাতে দেরি, প্রশ্ন ফাঁসসহ আরও বেশ কিছু অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। ভেন্যু কেন্দ্র কমানো এমনকি প্রয়োজনে বাতিল করা হবে। তিনি বলেন, এখন প্রশ্নের সেট লটারির মাধ্যমে ২৫ মিনিট আগে নির্ধারিত হয়। সে প্রশ্ন ভেন্যুতে পৌঁছাতে দেরি হয়। ভেন্যুগুলোর পরীক্ষা দেরিতে শুরু হয়। এসব কারণে ভেন্যু কেন্দ্র বাতিল হওয়ার দরকার। নাম প্রকাশে অনিচছুক ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা জানান, কাদের মোল্লা স্কুল এন্ড কলেজ, সামছুল হক খান স্কুল এন্ড কলেজ, ক্যামরিয়ান, মাইলস্টোনসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের পরীক্ষার্থীদের অবৈধ সুবিধা দিতে ভেন্যু কেন্দ্রের সুবিধা ব্যবহার করছে। অতিরিক্ত সময় পরীক্ষা দেয়া এমসিকিউ অংশের উত্তরপত্র সরবরাহ করাসহ বিভিন্ন অবৈধ সুবিধা দেয়া হয় এসব প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীদের। তবে, গত দুই বছর যাবত ক্যামরিয়ানের পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় হওয়ায় ফলাফলে চমক দেখাতে পারছেন না। চমকে ব্যর্থ হয়ে ঢাকা বোর্ডের কতিপয় সৎ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শিবিরপন্থী সাংবাদিকদের দিয়ে ফরমায়েশি প্রতিবেদন প্রকাশ করিয়ে আসার অভিযোগ রয়েছে। তবে, ঢাকা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানান, ভেন্যূ কেন্দ্র বাতিলের পেছনে ক্যমারিয়ান গংরাও তৎপর রয়েছে। তাই ঢালাওভাবে ভেন্যুকেন্দ্র বন্ধ করা ঠিক হবে না।
আরো পড়ুন: