উদ্বোধনের আড়াই বছর পার হলেও চালু হয়নি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের আবাসিক দুটি হল।
- উদ্বোধনের পর প্রায় আড়াই বছর পার হলেও চালু হয়নি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের (চবি)বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জননেত্রী শেখ হাসিনা আবাসিক হল। হল দুটোতে শিক্ষার্থীদের অ্যাটাচম্যান্ট দেওয়া হলেও দেওয়া হয়নি আসন বরাদ্দ। ফলে চরম আবাসন সংকটে ভুগছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের অবহেলার কারণে হল দুটি চালু হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেনে একাধিক শিক্ষর্থী। এছাড়াও বর্তমান আবাসিক হলগুলোতে রয়েছে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং শিক্ষকদের তদারকির অভাব। ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর ছাত্রদের জন্য ১৮৬ সিটবিশিষ্ট প্রায় ৪৫ হাজার বর্গফুটের দোতলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের উদ্বোধন করা হয়। হলটিতে দুটি লিফট, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত পাঠাগার, ৫০ কেভি পাওয়ারের জেনারেটর, ক্যান্টিন, প্রার্থনাকক্ষসহ রয়েছে সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। একই সময়ে ছাত্রীদের জন্য ৫০০ আসন বিশিষ্ট প্রায় ৯৮ হাজার ৫০০ বর্গফুটের চার তলা বিশিষ্ট জননেত্রী শেখ হাসিনা হলটিরও উদ্বোধন করা হয়। হলটিতে বিউটি পার্লার, মিনি সুইমিংপুল, দুটি লিফট, দুই হাজার বর্গফুটের পাঠাগার, কমন রুম, লন্ড্রি, ইনডোর গেমসের সুবিধাসহ রয়েছে ছাত্রীদের জন্য রান্নাঘর ও প্রার্থনা কক্ষ। এর মধ্যে ৯ কোটি ৭৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং ১৫ কোটি ৭৫ লাখ ২ হাজার টাকা ব্যয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা হল নির্মাণ করা হয়। উদ্বোধনের পর শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ না দিয়ে দেড় বছর পর ২০১৭ সালের মে থেকে দুটি হলেরই ঊর্ধ্বমুখি সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে ১৮৬ আসন বিশিষ্ট দোতলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলকে ৭৫০ আসন বিশিষ্ট ছয় তলা ভবন করা হবে। ফলে এর মোট আয়তন হবে প্রায় ১৩ হাজার ৮৪৮ বর্গমিটার। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি ১৪ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা। অপরদিকে ৫০০ আসন বিশিষ্ট চার তলা জননেত্রী শেখ হাসিনা হলকেও ৭৫০ আসন বিশিষ্ট ছয় তলা ভবন করা হবে। ফলে এর মোট আয়তন হবে প্রায় ১২ হাজার ৭০০ বর্গমিটার। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ কোটি ৫০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে হল উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়। কোনো ধরনের কার্যক্রমে অংশ না নিয়েই তিনি প্রভোস্টের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছে বলে অভিযোগ একাধিক শিক্ষকের। তবে এখনো শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়নি বলে জানা যায়। হলের দুর্ভোগের ব্যাপারে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বর্তমানে হলগুলোতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী অবস্থান করছে। আমাদের ছাত্রী হলগুলোতে ২ জনের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে ৫-৬ জন করে থাকতে হচ্ছে। এছাড়া রাজনৈতিক দখলদারিত্বের কারণে অনেককেই ক্যামপাসের বাইরের মেস বা কটেজগুলোতে চড়া ভাড়ায় থাকতে হচ্ছে। ফলে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। ৫০০ আসনের শেখ হাসিনা হল চালু হলে আমাদের আর এত কষ্ট করে থাকতে হবে না। এছাড়াও চালু হলগুলোতে আধুনিক সুযোগ সুবিধার অভাব, নিম্নমানের খাবার পরিবেশন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ রয়েছে। ফলে আমাদের পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে নানান ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। হলে সিট বরাদ্দের ব্যাপারে জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, “আমরা কবে হল চালু করবো তা এখন বলা যাচ্ছে না। হলের এখনো ডাইনিং, প্রার্থনা কক্ষসহ অনেক কাঠামোগত কাজ বাকি আছে। তাছাড়া একটা হল চালাতে গেলে কমপক্ষে ৩০-৩৫ জন কর্মচারী লাগে এগুলো এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এছাড়াও দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ এখনো চলছে। এসব কিছু শেষ হলেই আমরা সিট বরাদ্দ দেওয়া শুরু করবো।” অন্যদিকে এখনো শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় দফার কাজ কবে নাগাদ শেষ এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু সাইদ হোসেন বলেন, “বর্তমানে হল দুটির ঊর্ধ্বমুখি সম্প্রসারণের কাজ শুরু চলছে। ২০১৯ সালের জুন মাসে দুটি হলেরই সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে।” শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ কামরুল হুদা বলেন, “এখনও মূল হলের কাজ শেষ হয়নি। তবে মূল হলের কাজ শেষ হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা হল দুটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য আসন বরাদ্দ দিয়ে দেব। উল্লেখ্য, ৮ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ আবাসিক হল দুটি একযোগে উদ্বোধন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট প্রায় ২৪ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র-ছাত্রী মিলে ১২টি হলে মাত্র ৫ হাজার ৪৫টি আসন রয়েছে।
আরো পড়ুন:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘাত-সহিংসতার কারণ নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজি স্বীকার করেছেন উপাচার্য
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অপহরণ আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা
0 responses on "উদ্বোধনের আড়াই বছর পার হলেও চালু হয়নি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের আবাসিক দুটি হল"