শিক্ষার্থীদের মতামত উপেক্ষা করেই সমাবর্তনের আয়োজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের

শিক্ষার্থীদের মতামত উপেক্ষা করেই সমাবর্তনের আয়োজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীরা দশম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে সনদ নিতে চান।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের হাত থেকে সনদ নিতে আপত্তি জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা। আগামী ২৪ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মতামত উপেক্ষা করেই সমাবর্তনের আয়োজনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

গ্রাজুয়েটরা জানান, সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি না আসায় আমরা সত্যি নিজেদেরকে খুবই অসহায় মনে করছি। এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও অসম্মানজনক। আমাদের প্রশাসন কেন রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে আসতে পারলেন না সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। এবারের সমাবর্তন আমার কাছে বনভোজন ছাড়া আর কিছুই নয়।

রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ চলতি বছরের সমাবর্তনে উপস্থিত থাকতে অপারগতা প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রীকে সভাপতির দায়িত্ব দেন। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা আপত্তি জানিয়ে আসছেন। তাদের দাবি, এবারের সমাবর্তনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশকে উপেক্ষা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ এর ১০(১) ধারায় বলা আছে, রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করবেন। তার অনুপস্থিতিতে উপাচার্য সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করবেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষামন্ত্রী অতিথি হিসেবে আসতে পারেন। কিন্তু সভাপতিত্ব করতে পারেন না। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি গ্র্যাজুয়েদের একটি প্রতিনিধি দল রাবি উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিতে গেলে তিনি তা গ্রহণ করেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর থেকে দশম সমাবর্তনের নিবন্ধন শুরু হয়। চলে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। পরে নিবন্ধনের সময় বাড়িয়ে ১০ ডিসেম্বর করা হয়। ২০১১-২০১৪ সাল পর্যন্ত পিএইচডি, এমফিল, স্নাতকোত্তর, এমবিবিএস, বিডিএস ও ডিভিএম ডিগ্রি অর্জনকারীরা এ সমাবর্তনে নিবন্ধনের সুযোগ পান। নিবন্ধন শেষে সমাবর্তনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয় ২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে দিলেন অধ্যাপক মিজানউদ্দিন। কিন্তু সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতির শিডিউল ও সমাবর্তন বক্তা নিয়ে জটিলতায় পড়ে তৎকালীন প্রশাসন। ফলে ঝুলে যায় সমাবর্তন। এরপর ২০১৭ সালের ৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান দায়িত্ব পাওয়ার পর সমাবর্তন আয়োজনের কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। গত ২৩ জানুয়ারি সমাবর্তনের রেজিস্ট্রেশনে সময়সীমা আরেক দফা বাড়িয়ে ৩১ জানুয়ারি করা হয়। এতে মোট ৬ হাজার ৯ জন রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

নিবন্ধন করা এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম এই সমাবর্তনের। রাবি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও সমাবর্তন নিয়মিত নয়। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এমনকি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনেও রাষ্ট্রপতি সনদ দেন। তাই আশা করতাম, আমরাও একসময় রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সনদ নেবো। কিন্তু তিনি আসছেন না, এটা আমাদের জন্য একটা অপূর্ণতা বলা যায়। বেনামি কোনও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি যেতে পারেন, সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আসছেন না। এটা আসলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও ব্যর্থতা।’

আইন বিভাগ থেকে পাস করা এক শিক্ষার্থী এক বলেন, নানা অজুহাতে সমাবর্তনের মতো বড় পরিসরের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে না পারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চরম ব্যর্থতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি যেদিন উপস্থিত থাকতে পারেন, এমন দিনেই সমাবর্তনের তারিখ নির্ধারণ করা উচিত।

লোক প্রশাসন বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্র্যাজুয়েট বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের ১৫ মাস পরও রাষ্ট্রপতিকে ছাড়াই দায়সারাভাবে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় হয়েও আমরা সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতিকে পাই না। অথচ এই মাসেও আচার্য যবিপ্রবি’তে এবং এক মাস আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছেন। সত্যিই আমরা হতাশ।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রভাষ কুমার কর্মকার বলেন, ‘২৪ মার্চ-ই দশম সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়েছে। আর তারিখ পরিবর্তনের সুযোগ নেই। সমাবর্তনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সভাপতিত্ব করবেন। সমাবর্তন বক্তা থাকবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন।’

 

 

আরো পড়ুন:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম সমাবর্তন আগামী ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম সমাবর্তনের নিবন্ধন শুরু ২৩ জানুয়ারি

মন্তব্য করুন

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline