
শব্দতত্ত্ব
প্রশ্ন : অর্থ অনুযায়ী বাংলা ভাষার শব্দগুলোকে কয় ভাগে ভাগ করা হয়েছে? উদাহরণসহ আলোচনা করো।
উত্তর : অর্থ অনুযায়ী বাংলা ভাষার শব্দগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—
১. যৌগিক শব্দ
২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ এবং
৩. যোগরূঢ় শব্দ
১. যৌগিক শব্দ : প্রকৃতি ও প্রত্যয় নিষ্পন্ন যেসব শব্দের অর্থ প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের অর্থ অনুযায়ী হয়, তাদের যৌগিক শব্দ বলা হয়। যেমন—
কৃ + তব্য = কর্তব্য = যেটি করা উচিত,
গৈ + অক = গায়ক = যে গান করে ইত্যাদি।
২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ : প্রত্যয় বা উপসর্গযোগে গঠিত যেসব শব্দ মূল শব্দের অর্থের অনুগামী না হয়ে অন্য কোনো বিশিষ্ট অর্থ প্রকাশ করে, তাদের রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ বলা হয়। যেমন—
গো + এষণা = গবেষণা, অর্থ গরু খোঁজা না বুঝিয়ে ‘গবেষণা’ বলতে কোনো কিছু বিশ্লেষণ বা পর্যালোচনাকে বোঝায়। এবং
হস্ত + ইন = হস্তী, অর্থ হস্ত আছে যার না বুঝিয়ে ‘হস্তী’ বলতে বিশেষ শ্রেণির পশুকে বোঝায়। কাজেই, গবেষণা ও হস্তী শব্দ দুটি রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ।
৩. যোগরূঢ় শব্দ : সমাস সাধিত যেসব শব্দের অর্থ সমস্যমান পদগুলোর অর্থের অনুগামী না হয়ে অন্য কোনো অর্থ প্রকাশ করে, তবে তাদের যোগরূঢ় শব্দ বলা হয়। যেমন—
পঙ্কজ = পঙ্কে জন্মে যা; শাপলা, শালুক, পদ্মফুল ইত্যাদি জলজ উদ্ভিদকে না বুঝিয়ে ‘পঙ্কজ’ শব্দটি শুধু পদ্মফুলকেই বোঝায়। এবং
রাজপুত = রাজার পুত্র; এখানে রাজার পুত্রকে না বুঝিয়ে ‘রাজপুত’ শব্দটি দ্বারা একটি জাতিকে বোঝায়। কাজেই, পঙ্কজ ও রাজপুত শব্দ দুটি যোগরূঢ় শব্দ।
প্রশ্ন : শব্দ কাকে বলে? উৎস বা উৎপত্তি অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দগুলোকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়? উদাহরণসহ আলোচনা করো।
উত্তর : কতগুলো বর্ণ পাশাপাশি বসে যদি নির্দিষ্ট অর্থ প্রকাশ করে, অথবা কিছু ধ্বনি উচ্চারিত হয়ে যদি কোনো অর্থ প্রকাশ করে, তবে তাকে শব্দ বলে। যেমন—নদী, পাখি,
ফুল, ফল ইত্যাদি।
উৎস অনুসারে শব্দের শ্রেণি বিভাগ : উৎস বা উৎপত্তি অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দগুলোকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—
১. তৎসম শব্দ
২. অর্ধ-তৎসম শব্দ
৩. তদ্ভব শব্দ
৪. দেশি শব্দ এবং
৫. বিদেশি শব্দ
১. তৎসম শব্দ : তৎসম শব্দের অর্থ হলো ‘তার সমান’, অর্থাৎ সংস্কৃতের সমান। যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে কোনোরূপ পরিবর্তন ছাড়াই বাংলা ভাষায় এসেছে, তাদের তৎসম শব্দ বলা হয়। যেমন—
সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র ইত্যাদি।
২. অর্ধ-তৎসম শব্দ : অর্ধ-তৎসম হলো ‘অর্ধেক তার সমান’, অর্থাৎ অর্ধেক সংস্কৃতের সমান। যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে সামান্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে, তাদের অর্ধ-তৎসম শব্দ বলা হয়।
যেমন—তৃষ্ণা >
তেষ্টা, প্রণাম > পেন্নাম ইত্যাদি।
৩. তদ্ভব শব্দ : তদ্ভব শব্দের অর্থ হলো ‘তা থেকে উৎপন্ন’। যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় স্থান করে নিয়েছে, তাদের তদ্ভব শব্দ বলা হয়। যেমন—হস্ত > হস্থ > হাত, চন্দ্র > চন্দ > চাঁদ ইত্যাদি।
৪. দেশি শব্দ : যেসব শব্দ অতি প্রাচীনকাল থেকে এ দেশে প্রচলিত হয়ে আসছে, সভ্যতার বিকাশে যেসব বিলুপ্ত বা বিকৃত হয়নি, তাদের দেশি শব্দ বলা হয়। যেমন—ঢেঁকি, কুলা, ডিঙা ইত্যাদি।
৫. বিদেশি শব্দ : রাজনৈতিক, ধর্মীয়, বাণিজ্যিক বা সংস্কৃতির কারণে বাংলাদেশে আগত বিভিন্ন বিদেশি ভাষাভাষী মানুষের বহু শব্দ বাংলা ভাষায় এসেছে, তাদের বিদেশি শব্দ বলা হয়। যেমন—চেয়ার, কলম, স্কুল, কলেজ ইত্যাদি।
প্রশ্ন : গঠন অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দগুলোকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়? উদাহরণসহ আলোচনা করো।
উত্তর : গঠন অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দগুলোকে দুই ভাগ করা হয়েছে। যথা—
১. মৌলিক শব্দ ও
২. সাধিত শব্দ
১. মৌলিক শব্দ : যেসব শব্দকে ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা যায় না কিংবা ভাঙলে যেসব শব্দের অস্তিত্ব লোপ পায়, তাদের মৌলিক শব্দ বলা হয়। এসব শব্দের সঙ্গে সাধারণত বিভক্তি যুক্ত থাকে না। যেমন—লাল, গোলাপ, হাত ইত্যাদি।
২. সাধিত শব্দ : যেসব শব্দ ভাঙলে বা বিশ্লেষণ করলে আলাদা অর্থবোধক শব্দ পাওয়া যায়, তাদের সাধিত শব্দ বলা হয়। সাধারণত সমাস, পকৃতি-প্রত্যয় ও উপসর্গযোগে সাধিত শব্দ গঠিত হয়। যেমন—দম্পতি, ঢাকাই, প্রগতি ইত্যাদি।
আরো পড়ুন: