বিভিন্ন ব্যাংক পরীক্ষা নিয়ে অল্প কিছু পরামর্শ —–
ব্যাংক এর পরীক্ষার জন্য আলাদাভাবে যে খুব বেশি কিছু স্টাডি করতে হয় বিষয়টা এমন নয় । বি সি এস পরীক্ষার জন্য কেউ যদি ভালোমতো প্রস্তুতি নেয় তাহলেই ব্যাংকের জন্য অনেকটা প্রস্তুতি নেয়া হয়ে যায় । বেশিরভাগ স্টুডেন্টরা ভারী প্রস্তুতি নিতে গিয়ে পরীক্ষায় ভালো নম্বর অর্জনটাও ভারী করে ফেলেন । খেয়াল রাখবেন আপনি যাই স্টাডি করেননা কেন তা যেন পরীক্ষার হলে প্রয়োগ করে আসতে পারেন । বিভিন্ন পরীক্ষায় সাধারনত যেসব বা যে টাইপ প্রশ্ন আসে আপনাদের উচিত শুধু সেগুলো স্টাডি করা । খুব কমন নয় বা সাধারনত ব্যাতিক্রম প্রশ্ন সেগুলো পারার চেষ্টা করাটা বোকামি, তেমনি পরীক্ষায় সকল প্রশ্ন পারতেই হবে এমন মানসিকতাটাও আপনার পরীক্ষা খারাপ হবার দিকে নিয়ে যাবে । প্রশ্নের ক্যাটাগরি অনুযায়ী আপনি পরীক্ষা দিয়ে আসবেন , চেষ্টা থাকবে যেসব প্রশ্ন না পারলেই নয় সেসব যেন মিস না হয় । যেসব প্রশ্ন ঝামেলাপূর্ণ, বাদ দিন সেগুলো । আগে প্রশ্নের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একবারে যেসব প্রশ্নের উত্তর করতে পারবেন সেগুলো শেষ করে ফেলুন । MCQ পরীক্ষায় এবং লিখিত পরীক্ষায় ভালোমতো প্রশ্ন select করতে পারাটা ভালো একজন পরীক্ষার্থীর যোগ্যতা । কোন প্রশ্নগুলো আগে উত্তর করতে হয় এটা বুঝতে না পারলে পরীক্ষা খারাপ হবার সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যায় । কারন যেকোনো পরীক্ষায় এমন কিছু প্রশ্ন থাকবেই যেটি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে আপনার মাথা গরম হয়ে যাবে আর সময়ও নষ্ট হবে । কিভাবে একটা ভালো পরীক্ষা দেয়া যায় সেদিকে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে । অনেকেই জানে যে পারার মত প্রশ্ন গুলো আগে উত্তর করতে হয় কিন্তু পরীক্ষার হলে তা মানতে পারেনা । যাইহোক এবার কাজের কথায় আসা যাক । ব্যাংকের পরীক্ষার জন্য আপনি যেটি যা করতে পারেন —–
১– কোন বিষয়েই খুব বেশি সময় না দিয়ে সব বিষয়ে সমান সময় দেয়ার চেষ্টা কর । যেন গড়ে একটা ভালো পরীক্ষা দিতে পারেন । বাংলা দিয়েই শুরু করি । বাংলার জন্য এস এস সি এর বোর্ডের বাংলা গ্রামার বইটি আসলেই ভালো একটি বই । সেটা থেকে মোটামুটি আয়ত্ত করার চেষ্টা কর । তাছাড়া সউমিত্র শেখর স্যারের বই থেকেও টুকটাক দেখে নিতে পারেন । এখন প্রশ্ন হল কি দেখবেন ? এজন্য বিগত বছরের বিভিন্ন ব্যাংক পরীক্ষার প্রশ্নগুলো দেখুন । বুঝতে পারবেন কি কি আপনাকে স্টাডি করতে হবে । বিগত বছরের প্রশ্নগুলো আপনার জন্য বেস্ট একটা গাইডলাইন । সন্ধি ,সমাস , বিপরীত শব্দ , বাগধারা , দেশি বিদেশী শব্দ , বাক্যের প্রকারভেদ , পরিভাষা , উপসর্গ , যতিচিহ্ন সমার্থক শব্দ ইত্যাদি দেখে ফেলুন । সউমিত্র শেখর স্যারের বই এর শুরুর দিকের গ্রামার অংশের এক কথায় প্রশ্নগুলো দেখে নিতে পারেন ।
২– বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্য প্রতি মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এর প্রযুক্তি নিয়ে তথ্য এবং MCQ গুলো দেখতে পারেন । যেকোনো গাইড বই থেকেও রিডিং দিতে পারেন । আজকের বিশ্ব , নতুন বিশ্ব এমন যেকোনো গাইড বইগুলোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অংশ থেকেও দেখতে পারেন । মনে রাখবেন– বই কিন্তু এক ই তারপরও অনেকেই কিন্তু এলোমেলো স্টাডি করে গুলিয়ে ফেলেন । তাই অল্প পড়ুন কিন্তু গোছানো ।
৩– ইংরেজীতে আপনার ভালো দক্ষতা থাকা খুব জরুরী । নিয়মিত চর্চা করতে থাকুন । vocabulary, appropriate preposition , idioms phrase , group verb , translation এসবের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিন । বিশেষ করে অনুবাদের দিকে নজর দিন , আপনার গ্রামার এর জ্ঞান এবং vocabulary যদি strong থাকে তাহলে আপনার জন্য অনুবাদ করাটা সহজ হবে । তাছাড়া analogy , antonym , synonym এগুলোতেও ভালো করতে হলে আপনার vocabulary উন্নত কর । দৈনিক কিছু নতুন শব্দ শিখুন , dictionary থেকে দৈনিক vocabulary উন্নত করার জন্য কিছু শব্দ শিখুন । ইংরেজী নিয়ে এর আগে যেভাবে বলেছিলাম সেটা follow করতে পারেন । ইংরেজী চর্চার মাধ্যমে আপনার দক্ষতা বাড়বে । যেকোনো ভালো গ্রামার বই থেকে অনুবাদের অভ্যাস কর । খাতায় অনুবাদ লিখুন । হুবুহু না পারলে ভাবানুবাদ কর , প্রথম প্রথম ভুল হলেও চর্চা করতে থাকলে ধীরে ধীরে আপনার জড়তা কেটে যাবে । অনুবাদের জন্য idioms and phrase , appropriate preposition জানা খুব দরকার , এগুলো যেকোনো বই থেকে দৈনিক ১ পৃষ্ঠা হলেও মুখস্থ করে ফেলুন ।
৪– গনিতের জন্য পাটিগণিত এবং বীজগণিতের সুত্র গুলো আয়ত্তে রাখুন, এস এস সির বই থেকে জ্যামিতির থিওরি গুলো একটু দেখুন । গনিতের সুত্র জানা থাকলে এবং কি টাইপের ম্যাথ কিভাবে সল্ভ করতে হয় সেটা জানা থাকলে আপনার জন্য গনিতে ভালো করাটা অনেক সহজ হবে । আগেও বলেছি যে গনিত শুধু দেখবেন না, যে প্রশ্নই দেখবেন সেটা খাতায় করে ফেলার চেষ্টা করবেন । নাহলে পরীক্ষার হলে মারাত্মক সমস্যায় পড়বেন সল্ভ করতে গিয়ে । বিভিন্ন বছরের বিভিন্ন ব্যাংক এর পরীক্ষায় যেসব ম্যাথ এসেছে সেগুলোও আগে সল্ভ করে ফেলতে পারেন । তাতেও আপনার দক্ষতা বাড়বে । আপনি বিভিন্ন ব্যাংকের বিগত ৩ বছরের পরীক্ষার প্রশ্নগুলো সংগ্রহ করে সেগুলো সল্ভ করে ফেলুন । দেখবেন আপনার অনেক উন্নতি হয়েছে । কোথাও সমস্যা হলে আপনার বন্ধুদের মাঝে যারা গনিত ভালো পারে তাদের সাহায্য নিন । এজন্য যেকোনো পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় ৩-৪ জন মিলে একসাথে স্টাডি করলে অনেক সুবিধা হয় , তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে গ্রুপ স্টাডি যেন গ্রুপ আড্ডায় পরিণত না হয় ।
৫– সাধারন জ্ঞান সবসময়ই সবার শেষে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করা উচিত যেহেতু এর কোন শেষ নেই । আপনি ৭ দিন সময় নিয়ে ৭ দিনের মাঝে যেটি পারবেন স্টাডি করে ফেলবেন । এজন্য আবার বিগত বছরের প্রশ্ন দেখবেন , কিছুটা ধারনা হবে যে কি স্টাডি করতে হয় । যেকোনো গাইড বই থেকেও রিডিং দিতে পারেন , আবার কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বা কারেন্ট ওয়ার্ল্ড এর MCQ গুলোও দেখে নিতে পারেন । সব বিষয়ে সমান দক্ষ হবার চেষ্টা করবেন অবশ্যই ।
ব্যাংকের জন্য যে সেভাবে আলাদা প্রস্তুতি নিতে হয় বিষয়টা কিন্তু এমন নয়, আপনি যদি বি সি এস পরীক্ষার জন্য ভালো করে প্রস্তুতি নিন তবে ব্যাংক পরীক্ষার প্রস্তুতিটাও হয়ে যায় । গনিতের সকল সূত্রগুলো যেন আপনার আয়ত্তে থাকে । পরিমিতি, জ্যামিতি, বীজগণিত , লাভ ক্ষতি , অনুপাত , ফাংশন , সূচকের ম্যাথ ইত্যাদি । প্রতিটা বিষয় ৫ দিন করে সময় নিয়ে এই ৫ দিনের মধ্যে যতটুকু পারবেন প্রস্তুতি নিয়ে ফেলুন । আর চেষ্টা করবেন যাই স্টাডি করেন না কেন পরীক্ষার হলে আপনার পারার মত একটা প্রশ্নউ যেন আপনার মিস না যায় । বিভিন্ন ব্যাংক পরীক্ষার প্রশ্নগুলো আপনার জন্য সল্ভ করাটা খুবই দরকার । কম স্টাডি করবেন , যে টাইপ প্রশ্ন সাধারনত আসে সেই টাইপ স্টাডি করার চেষ্টা করবেন আর যাই স্টাডি কর না কেন সেটার পুরোটা apply করার চেষ্টা করবেন । কে কি স্টাডি করছে কিভাবে কি পরীক্ষা দিচ্ছে সেদিকে নজর না দিয়ে নিজের মত করে স্টাডি করে যান । আপনার competitor আপনি নিজেই । নিজের best টাকে বের করে আনুন । সফল আপনি হবেনই । আমি জাস্ট একটু গাইড দেয়ার চেষ্টা করছি মাত্র । লেখায় কোন ভুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী । ভালো থাকবেন সবাই । good luck guys .
আরো পড়ুন: