মোহাম্মদ আলী কে নিয়ে কিছু কথা

মোহাম্মদ আলী | ৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি

আন্তর্জাতিকের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় মাঝে মাঝে একজন ব্যক্তির সম্পর্কে

টীকা লিখতে বলে । এবার মোহাম্মদ আলী সম্পর্কে আসতে পারে।

নিচের লেখা গুলো থেকে তথ্য সাজাতে হবে।
.
মোহাম্মদ আলী আর নেই। বক্সিং রিংয়ে প্রজাপতিনৃত্য, মৌমাছির হুল ফোটানো ক্ষিপ্রতা, যুদ্ধ ও আগ্রাসনবিরোধী মানবতাবাদ, প্রতিপক্ষকে কথার তিরে বিদ্ধ করা বাকপটুতা, বক্সিংয়ের বুনো আদিমতাকে শিল্পে রূপ দেওয়ার ক্ষমতাকে অ্যারিজোনার ফিনিক্স এরিয়া হাসপাতালে চিরতরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেলেন পরশু (যুক্তরাষ্ট্রের সময় ৩ জুন রাতে)। জন্মস্থান কেন্টাকির লুইসভিলে আগামী শুক্রবার তিনি সমাহিত হবেন, তবে পেছনে রেখে যাবেন ১৯৭১ সালের ‘শতাব্দীসেরা লড়াই’, ১৯৭৪ সালের ‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ ১৯৭৫-এর ‘থ্রিলা ইন ম্যানিলা’র মতো দুনিয়া কাঁপানো অজস্র গল্প।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেশ কয়েকবারই হাসপাতালে যেতে হয়েছে এই মহান মার্কিন বক্সারকে। গত বছর অক্টোবরে নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ধরা পড়ল মূত্রনালির সংক্রমণ। সে-যাত্রায় মৃত্যুর মুখে ছাই দিয়ে ফিরলেন বটে, কিন্তু চলাফেরা হয়ে পড়ল সীমিত। সর্বশেষ জনসমক্ষে আসেন এই এপ্রিলে। পার্কিনসন্স রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তহবিল গঠনকল্পে বার্ষিক ‘ফাইট নাইট সেলিব্রিটি’ ডিনারে। কালো চশমায় চোখ ঢাকা। কিন্তু ধ্বস্ত শরীর। রুদ্ধবাক। সর্বকালের সেরা মুষ্টিযোদ্ধা আর চিরবিজয়ী এক মানুষের এক ছায়ামূর্তি যেন। তখন থেকেই সারা বিশ্বে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। কখন কী হয়ে যায়! বৃহস্পতিবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর দ্বিতীয় দিনে এল সেই মর্মান্তিক খবরটি। ১৯৬৪ সালে ক্যাসিয়াস ক্লে ছেড়ে মোহাম্মদ আলী এক্স নাম নিয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত আর ১৯৭৫ সালে সুন্নি পন্থার অনুসারী হওয়া বক্সার লোকান্তরিত। বয়স হয়েছিল ৭৪। পরিণত বয়সেই বিদায়।
কিন্তু মোহাম্মদ আলীকে কি বয়সের সীমায় বাঁধা যাবে? এখনকার সংঘাতময় পৃথিবীটা চেয়েছিল তিনি হাজার বছর বাঁচুন। সারা বিশ্বের অধিকারহারা, বর্ণবাদবিরোধী আর স্বাধীনতাকামী মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল তিনি অমর থাকবেন। আর বক্সিং চেয়েছিল খেলাটি যত দিন আলোকিত থাকে, থাকবেন তত দিন। বাস্তবতা হলো, নশ্বর শরীরটা অত দীর্ঘায়ু পেল না। জীবনের স্মৃতিগুলোকে আলোর বিভায় রাঙিয়ে দিয়ে ১৯৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লুইসভিলে ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে নামে পৃথিবীর প্রথম আলো দেখা মানুষটি চলে গেলেন।
একটা সময় মনে হতো, আলী নিজেই বক্সিং বা বক্সিং নামের খেলাটার সমার্থক। ইতিহাসের উন্মাতাল সেই সময়কাল—সত্তর থেকে আশির দশক। যখন ভিয়েতনামে রক্ত ঝরছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর সোভিয়েত ইউনিয়ন—দুই বড় শক্তির স্নায়ুযুদ্ধ ঘোর কালো ছায়া ফেলেছে পৃথিবীর প্রতিটি কোণে। তখন এ-ও মনে হতো, মোহাম্মদ আলী মানে মোহাম্মদ আলী ক্লে, ওরফে ক্যাসিয়াস ক্লে না থাকলে বক্সিং খেলাটাই ধরণি থেকে বেমালুম লোপাট হয়ে যাবে। তা অবশ্য হয়নি। মোহাম্মদ আলী ৩২ বছর ধরে পারকিনসন্স রোগের কাছে ন্যুব্জ থাকার পরও বক্সিং টিকে আছে। টিকেই আছে আসলে। এ বাক্যটির সমর্থনে একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। তিনটি বিশ্ব বক্সিং সংগঠনের বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন এখন যুক্তরাজ্যের অ্যান্টনি জোসুয়া, যুক্তরাষ্ট্রের ডিওন্টে ওয়াইল্ডার ও যুক্তরাজ্যের টাইসন ফিউরি। প্রথমজন আন্তর্জাতিক বক্সিং ফেডারেশনের, দ্বিতীয়জন ওয়ার্ল্ড বক্সিং কাউন্সিলের, তৃতীয়জন ওয়ার্ল্ড বক্সিং অ্যাসোসিয়েশনের। কজন এঁদের নাম জানেন? আর আলী যখন ১৯৬৪ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে সনি লিস্টনকে হারিয়ে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হলেন, আলোড়িত হলো গোটা বিশ্ব। ১৯৭৪ সালে সেই সময়কার জায়ারে আর অধুনা কঙ্গো রিপাবলিকে ‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’খ্যাত লড়াইয়ে জর্জ ফোরম্যানকে নকআউট করে যখন চ্যাম্পিয়ন হলেন, রীতিমতো সুনামি বয়েছিল এই গ্রহে। ১৯৭৩ সালে কেন নর্টনের কাছে শিরোপা খুইয়ে ওই বছরই সেটি পুনরুদ্ধার করেন। তখন থেকেই আলী বক্সিংয়ের অলংকার। আর ১৯৭৫ সালে যখন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী জো ফ্রেজিয়ারকে ম্যানিলায় ‘থ্রিলা ইন ম্যানিলা’য় নকআউট করে শোধ নিলেন ১৯৭১ সালের হারের, তিনি ‘ব্ল্যাক সুপারম্যান’—যাঁকে হারানো যায় না। সেই প্রমাণ তিনি তিন বছর পরও দিয়েছেন, ১৯৭৮ সালে লিওন স্পিংকসের কাছে খেতাব হারানোর ছয় মাসের মধ্যেই সেটি পুনরুদ্ধার করে। তিনি সর্বোচ্চ তিনবারের হেভিওয়েট বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তিনবার খেতাব খুইয়েও তা পুনরুদ্ধার করেছেন। বক্সিংকে রাঙিয়ে দিতেই যেন তাঁর আবির্ভাব ঘটেছিল খেলাটির ‘আলোর ঈশ্বর’ হয়ে। হেভিওয়েট বক্সিং কতটা আলী প্রভাবিত, তা পরিষ্কার ছোট্ট এই পরিসংখ্যানেই—৬১টি বাউটে হেরেছেন মাত্র পাঁচবার। ৩৭টি বাউটেই ভূপাতিত করেছেন প্রতিপক্ষকে।
১৯৭৯ সালে বক্সিং থেকে অবসর নিয়ে দ্রুতই সেটি ভেঙে আবার রিংয়ে ফেরেন ১৯৮০ সালে। তখন তাঁর বয়স ৩৮, আর চ্যালেঞ্জার ল্যারি হোমসের ৩১। তত দিনে ক্ষিপ্রতা হারিয়ে ফেলেছেন, সেই ভয়ংকর লেফট হুক হারিয়ে গেছে, রাইট জ্যাবেরও ধার নেই। প্রজাপতিনৃত্য তো অতীতের স্মৃতি। তবু মানুষ মনে করেছিল, আলীই জিতবেন, তিনি যে অজেয়! কিন্তু এক হেমন্তের বিকেলে হোমস নির্মমভাবে হারিয়ে দিলেন আলীকে। জয়ের পর হোমস লকাররুমে গিয়ে নীরবে কেঁদেছিলেন। চিরবিজয়ী আলীকে যে এভাবে হারতে দেখতে চাননি তিনি! ১৯৮১ সালে জীবনের শেষ বাউটটিতেও হেরেছেন, জ্যামাইকার ট্রেভর বারবিকের কাছে। ওই বছরই চিরবিদায় জানিয়েছেন বক্সিং রিংকে। মস্তিষ্কের বৈকল্যজনিত রোগ পারকিনসন্স তাঁকে রিংয়ে আর নামতে দেয়নি। সারা জীবন প্রতিপক্ষের যত আঘাত সয়েছেন, সেটির মূল্য না চুকিয়ে পারেননি। এই শুক্রবার জীবনকেই জানিয়ে দিলেন চিরবিদায়।
.
বিদায়? না, মোহাম্মদ আলীর বিদায় হতে পারে না। যিনি মার্কিন সেনাবাহিনীর হয়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধে যোগ দেননি ফেডারেল সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, যে জন্য দণ্ডিত হয়েছেন, বক্সিং থেকে নির্বাসিত থেকেছেন তিন বছর, শিরোপা খুইয়েছেন, আর আইনি লড়াই করে জীবনযুদ্ধে জিতেছেন, তাঁর শারীরিক মৃত্যু হতে পারে—অনন্ত স্মৃতির মৃত্যু হতে পারে না।
.
ভিয়েতনাম নিশ্চয়ই চোখের জল ফেলছে। গোটা পৃথিবীরই আজ মন খারাপ। বাংলাদেশও শোকাতুর। ১৯৭৮ সালে যে তিনি এসেছিলেন এই দেশে, পেয়েছিলেন সবুজ পাসপোর্ট আর নাগরিকত্ব! ঢাকার পল্টন ময়দানে তাঁরই হাতে উদ্বোধন হওয়া মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়াম আলীর স্মৃতি বয়ে বেড়াবে যুগ-যুগান্তর। ইস্কাটনে সরকারি অতিথিনিবাস পদ্মার পাশ দিয়ে যেতে যেতে অনেকের মনে পড়ে যাবে আলীকে। বাংলাদেশ সফরে এটিই ছিল তাঁর মূল ঠিকানা। মোহাম্মদ আলী স্টেডিয়াম ও পদ্মা বাংলাদেশের কানে গুঞ্জরিত হবে সেই ছড়া, যেটি তিনি আওড়াতেন বক্সিং রিংয়ে, ‘ফ্লোট লাইক আ বাটারফ্লাই, স্টিং লাইক আ বি। দ্য হ্যান্ডস কান্ট হিট হোয়াট দ্য আইজ কান্ট সি।’
‘শতাব্দীর সেরা’ ক্রীড়াবিদ, যুদ্ধ ও আগ্রাসনবিরোধী মহান বীর, কবি, গায়ক, অভিনেতা—আপনাকে এই পৃথিবী কখনো ভুলবে না। আপনি অমর। অবিনশ্বর আপনার স্মৃতি!

=
রাজা তিনি ছিলেন না, ছিলেন না রাষ্ট্রনায়কও। কিন্তু মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশে পা রেখেছিলেন একজন রাজার মতোই, একজন নায়কের মতোই। আজ থেকে ৩৮ বছর আগে বাংলাদেশের মানুষ বিশ শতকের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রীড়া নায়ককে বরণ করে নিয়েছিল হৃদয়ের সব ভালোবাসা উজাড় করে দিয়ে, আন্তরিক সম্মাননা দিয়ে।
১৯৭৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে এসেছিলেন মোহাম্মদ আলী। ছিলেন ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল পর্যন্ত। ঢাকায় পেয়েছিলেন অনন্য নাগরিক সংবর্ধনা। তাঁকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল সম্মানসূচক নাগরিকত্ব। কক্সবাজারে দেওয়া হয়েছিল এক টুকরো জমি। বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট হাতে নিয়ে উদ্বেলিত আলী বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের কাছে যে আমি এত আদরের, তা আমার জানা ছিল না। এ দেশের মানুষ আমাকে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে বরণ করে নিয়েছে। এত বিপুল সম্মান পেয়ে আমি আনন্দিত।’ ঢাকার সে সময়কার তেজগাঁও বিমানবন্দরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁর ভবিষ্যৎ প্রতিদ্বন্দ্বীদের ‘সাবধান’ করে দিয়ে বলেন, ‘তোমরা ভবিষ্যতে যার সঙ্গে লড়বে, সে আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। সে একসঙ্গে দুই দেশের নাগরিক। তাঁর দুটো দেশ—যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ।’
.
১৯৭৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, সকাল ১০টা ২০ মিনিট। ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি অবতরণ করে। আরোহী হিসেবে আছেন বিশ্বনন্দিত মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী। সঙ্গে আছেন স্ত্রী ভেরোনিকা আলী, বাবা কেসিয়াস ক্লে, মা ওডেসা আলী, ভাই রহমান আলী, সচিব জন আলী, সহকারী জারমিয়া শাহবাজ ও আবদুল রহমান এবং পারিবারিক বন্ধু মিসেস মার্গারেট উইলিয়াম। বিমানের দরজা খুলে এক এক করে বেরিয়ে এলেন অতিথিরা। আলীকে অভ্যর্থনা জানালেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শামসুল হুদা চৌধুরী। বাঁধভাঙা স্রোতের মতো আলী-ভক্তরা ছুটে এলেন বিমানের কাছাকাছি—আলীকে কাছ থেকে দেখার জন্য, আলীর ছবি তোলার জন্য, আলীর অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য, আলীকে ছুঁয়ে দেখার জন্য।
বাংলাদেশে আলীর সফরটি শুধুই রাষ্ট্রীয় ভ্রমণ ছিল না, সফরের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল এ দেশ নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করা। আলী প্রায় ১০০ ঘণ্টা বাংলাদেশে অবস্থান করেন।
.
সফরের বিস্তারিত
.
১৮ ফেব্রুয়ারি আলী বাংলাদেশ পৌঁছানোর পর কিছুক্ষণের জন্য বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তারপর মোটর শোভাযাত্রাসহ তাঁকে নেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়। সেখান থেকে তিনি যান পাগলা ঘাটে। দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত তিনি বিআইডব্লিউটিএর স্টিমার গাজীতে নৌবিহার করেন। নৌবিহার শেষে আলী রপ্তানি মেলা পরিদর্শন করেন।
সন্ধ্যায় আলী জাতীয় ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল এইচ এম এরশাদের সঙ্গে বোর্ডের কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। প্রথমে তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর তাঁকে দরবার হলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বাংলাদেশের সম্মানিত নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মোহাম্মদ আলীকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট হস্তান্তর করেন।
১৯ ফেব্রুয়ারি খুব সকালে আলী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিশেষ ফ্লাইটে করে সিলেটে যান। তিনি সেখানে চা-শ্রমিকদের গাছ থেকে চা-পাতা সংগ্রহ করার দৃশ্য দেখেন। চা-বাগান থেকে আলী যান খাদিমনগর গলফ ক্লাবে। সেখানে আলীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে আলীকে সিলেট পৌরসভার পক্ষ থেকে সিলেট শহরের একটি সোনার চাবি ও রুপার গড়া চা-পাতার প্রতিকৃতি এবং ভেরোনিকাকে একটি মণিপুরি শাল উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।
১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ঢাকা স্টেডিয়ামে আলীকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পত্রিকা থেকে জানা যায়, সেদিন দর্শক ছিল প্রায় ৭৫ হাজার। মোহাম্মদ আলী ও তাঁর স্ত্রীকে মঞ্চে অভ্যর্থনা জানান ঢাকা পৌরসভার চেয়ারম্যান আইনজীবী আবুল হাসনাত ও বেগম হাসনাত। হাসনাত আলীর উদ্দেশে মানপত্র পাঠ করেন। আলীর হাতে তুলে দেন ঢাকা নগরের চাবি। চাবিটি ছিল ছয় তোলা সোনা দিয়ে মোড়ানো। তার দৈর্ঘ্য ছিল সাড়ে সাত ইঞ্চি। বেগম হাসনাত ভেরোনিকা আলীকে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বেগুনি রঙের একটি মসলিন শাড়ি উপহার দেন। মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। সংবর্ধনা শেষে শিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন একটি সংগীত দল নিয়ে আলীর জন্য বিশেষভাবে রচিত গান গেয়ে শোনান। নাগরিক সংবর্ধনা শেষে আলী তৈরি হন প্রদর্শনী মুষ্টিযুদ্ধের জন্য। এখানে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ১২ বছরের কিশোর মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। খেলা হয় তিন রাউন্ড। প্রতি রাউন্ড তিন মিনিট করে। সব মিলিয়ে মোট ১১ মিনিট। পুরো খেলাটাই ছিল কৌতুকপূর্ণ ক্রীড়াশৈলীতে আনন্দময়। অসংখ্য দর্শকের উপস্থিতিতে আলী অনেক মজা করেন।
২০ ফেব্রুয়ারি সকালে আলী বিশেষ বিমানে করে ঢাকা থেকে কক্সবাজার এসে পৌঁছান। আলীর আগমনে বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার চাঞ্চল্যে মুখর হয়ে ওঠে। আলী কক্সবাজার থেকে ১২ মাইল দূরে হিমছড়ি সমুদ্রসৈকতে যান।
আলী বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছান। ৫টা ২০ মিনিটে তিনি চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। আলী তাঁর বক্তৃতায় বাংলাদেশকে শান্তিকামী মানুষের দেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বলে উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠান শেষে চট্টগ্রামের নাগরিকদের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম পৌরসভার চেয়ারম্যান ফজল করিম মোহাম্মদ আলীকে একটি রুপার নৌকা ও ভেরোনিকাকে জামদানি শাড়ি উপহার দেন।
২১ ফেব্রুয়ারি সকালে মোহাম্মদ আলী জামিয়াতুল ফালাহর উদ্যোগে নির্মাণাধীন ইসলামিক সেন্টার পরিদর্শন করেন। জামিয়াতুল ফালাহ আলীকে তাদের সম্মানিত সদস্যপদ দেয়। এরপর যান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ছোট শহর কাপ্তাইয়ে। আলী কাপ্তাই রেস্টহাউসে পৌঁছালে ২৫টি সুসজ্জিত হাতি শুঁড় উঁচিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানায়। একদল উপজাতি নারী আলী ও ভেরোনিকাকে ফুলের তোড়া উপহার দেয়। কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট আবদুর শুক্কুর মোহাম্মদ আলীকে একটি হরিণ উপহার দেন। আলী কাপ্তাই থেকে ঢাকায় ফেরেন সন্ধ্যায়। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে ভাষাশহীদদের সম্মান জানিয়ে তিনি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। রাতে বঙ্গভবনে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে।
২২ ফেব্রুয়ারি সকাল সোয়া আটটায় মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশ মুষ্টিযুদ্ধ ফেডারেশনে আসেন। আলীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশের নবীন ও প্রবীণ মুষ্টিযোদ্ধাদের সঙ্গে। আলী এখানে বাংলাদেশে নবনির্মিত মুষ্টিযুদ্ধ স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেন। এটিই বাংলাদেশে নির্মিত প্রথম ও একমাত্র মুষ্টিযুদ্ধ স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটি সরকারিভাবে আলীর নামে ‘মোহাম্মদ আলী মুষ্টিযুদ্ধ স্টেডিয়াম’ রাখা হয়। আলী এরপর রওনা দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেখানে রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল হক যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল জেনারেল নিযুক্তির কথা জানান এবং নিয়োগপত্র হস্তান্তর করেন।
মোহাম্মদ আলী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তেজগাঁও বিমানবন্দরের পথে রওনা দেন। বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে আলী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এরপর শামসুল হুদা চৌধুরী, লায়লা আর্জুমান্দ বানু আলী ও অন্যান্য অতিথিকে বিদায় জানান। আলী সিঁড়ি বেয়ে বিমানের দরজায় পৌঁছে চারদিক দাঁড়িয়ে থাকা জনতার উদ্দেশে হাত নাড়িয়ে বলেন, ‘আই লাভ ইউ বাংলাদেশ, আই লাভ ইউ বাংলাদেশ, আই লাভ অল অফ ইউ টু’।

===
মোহাম্মদ আলী গোজ ইস্ট
.
বাংলাদেশ আই লাভ ইউ
.
স্বাধীনতার পরে নানা কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি খুব একটা উজ্জ্বল হতে পারেনি। বিভিন্ন নেতিবাচক প্রচারণার জন্য বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে মানুষের ধারণা খুব একটা উন্নত ছিল না। এটি দেশবাসীকে যেমন পীড়া দিত, বাংলাদেশকে ভালোবাসেন এমন বিদেশিরাও এতে বিব্রত হতেন। ১৯৭৭ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপনের জন্য ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রেগিল্যান্ড মেসি একটি রঙিন তথ্যচিত্র তৈরির পরিকল্পনা করেন।
রেগিল্যান্ড দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস নিয়ে কাজ করতেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তথ্যচিত্র নির্মাণের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তিনি লন্ডনের সেভেন স্টারস ফিল্মস নামের সিনেমা কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন। এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ও অর্থনৈতিক পরিচালক ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ওমর আহমেদ। তিনিও বাংলাদেশ নিয়ে রেগিল্যান্ডের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেন। ওমর আহমেদ তথ্যচিত্রটি নির্মাণের বিষয়ে তাঁর বাংলাদেশি বন্ধু গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। লন্ডনে রেগিল্যান্ড, ওমর ও গিয়াস উদ্দিনের মধ্যে আলোচনা হয়। গিয়াস উদ্দিন বাংলাদেশ নিয়ে তথ্যচিত্রের ধারণাটিকে সমর্থন করেন। তিনি মনে করেন যে এই তথ্যচিত্রটি পশ্চিমা বিশ্বে সত্যিকার বাংলাদেশকে তুলে ধরতে এবং বীর শহীদদের মর্যাদাকে সমুন্নত রাখতে সহায়তা করবে। সেভেন স্টারস ফিল্মসের পক্ষ থেকে তাঁকে বাংলাদেশি অংশীদার হিসেবে প্রস্তাব করলে গিয়াস উদ্দিন তা গ্রহণ করেন। গিয়াস উদ্দিন কক্সবাজারের অধিবাসী ছিলেন। তিনি ঢাকায় ব্যবসা করতেন এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল সেতু করপোরেশন। উভয় পক্ষের আলোচনা শেষে তথ্যচিত্রটি লন্ডনের সেভেন স্টারস ফিল্মস এবং বাংলাদেশের সেতু করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর তাঁরা কয়েক দফা বাংলাদেশ সফর করেন। তথ্যচিত্রের শিরোনাম নির্ধারিত হয় ‘বাংলাদেশ, আমি তোমায় ভালোবাসি’। তথ্যচিত্রটি ১৯৭৮ সালের শেষের দিকে প্রদর্শনের জন্য সারা বিশ্বে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
রেগিল্যান্ড ও অন্যরা সিদ্ধান্ত নেন যে ছবির উপস্থাপক হিসেবে এমন একজন ব্যক্তিকে নির্বাচন করতে হবে, যিনি সারা বিশ্ব, বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য। মোহাম্মদ আলী ছিলেন এ সময়ের শ্রেষ্ঠ মুষ্টিযোদ্ধা। শুধু বক্সিং রিংয়ে নয়, এর বাইরেও তাঁর মানবিক গুণাবলির জন্য তিনি ছিলেন আলোচনার শীর্ষে। তিনি বহু গুণে গুণান্বিত ছিলেন। তখন তাঁকে বৈশ্বিক আইকন বলা হতো। তিনি ছিলেন সে সময়ের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং সুপরিচিত মুখ। বিশেষ করে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিপক্ষে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে তিনি তুমুল আলোড়ন তোলেন। জায়ার, ফিলিপাইনসহ সে সময়ে বিভিন্ন অনুন্নত দেশে তিনি কয়েকটি বাউটে অংশ নিয়ে তৃতীয় বিশ্বের সঙ্গে মুষ্টিযুদ্ধকে সম্পৃক্ত করেছিলেন। এরপর কী হলো তা শুনুন রেগিল্যান্ডের ভাষায়, ‘অনেক আলোচনার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে বাংলাদেশকে সফলভাবে তুলে ধরার জন্য যোগ্যতম ব্যক্তি হচ্ছেন কালো মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী (দ্য গ্রেটেস্ট), যিনি বিশ্বজুড়ে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার পাত্র। সত্যি বলতে কি আলীর প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও তাঁর মায়েরও খুব মমত্ব ছিল। সমস্যা ছিল আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করব কীভাবে। লস অ্যাঞ্জেলেসে কয়েকবার আলীর সঙ্গে দেখা করলাম এবং শেষে আলী বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে উপস্থাপনে রাজি হলেন।’
১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৮ সকাল ১০টা ২০ মিনিট মোহাম্মদ আলী বিমান থেকে নামছেন। তেজগাঁও বিমানবন্দরএরপর আলীর বাংলাদেশ সফরের প্রস্তুতি শুরু হয়। আলী তথ্যচিত্রে উপস্থাপকের ভূমিকা পালন করেন। তিনি এই তথ্যচিত্রটি প্রধান প্রধান মার্কিন নেটওয়ার্কে প্রদর্শনের জন্য তাঁর প্রভাব খাটাতেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
মোহাম্মদ আলীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে এই তথ্যচিত্রটির চিত্রনাট্য তৈরি করা হয়। অর্থাৎ, আলী সফরে যেখানে যেখানে যাবেন এবং যেটি যা করবেন, তার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও তার জনগণকে তুলে ধরা হবে। চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে বাংলাদেশে আলীর সফর ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান সরাসরি চিত্রিত করা হয়। চিত্রনাট্য অনুযায়ী আলী সব জায়গায় বা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেননি। যেমন তিনি সুন্দরবন যাননি বা তথ্যচিত্রে প্রদর্শিত বিয়ের অনুষ্ঠানেও অংশ নেননি। এ বিষয়গুলোকে আলাদাভাবে চিত্রিত করে তথ্যচিত্রে যুক্ত করা হয়। তথ্যচিত্রটি আলীর সফরের আগে-পিছে তিন মাস ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে শুটিং করা হয়।
চিত্রনাট্যে রেগিল্যান্ড মুসলিম বিয়ের পুরো অনুষ্ঠান ধারণ করেন। বিদায়ের দৃশ্য চিত্রায়নের সময় বাবার বুক খালি করে মেয়ের চলে যাওয়ার কথা মনে হলে রেগিল্যান্ডের চোখ এখনো সজল হয়ে ওঠে বলে সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন।
১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৮। বিমানবন্দর থেকে অতিথি ভবন পদ্মার দিকে যাচ্ছেন।আলী তাঁর বাংলাদেশ সফরকালে অনেকবারই এই তথ্যচিত্রটির কথা উল্লেখ করেছিলেন। ঢাকার নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি তাঁর বাংলাদেশ সফরের পটভূমির কথা ব্যাখ্যা করেন এবং ওমর আহমেদকে মঞ্চে এনে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। আলী তথ্যচিত্রে অভিনয় ও ধারাভাষ্যের জন্য নিজে থেকে কোনো পারিশ্রমিক দাবি করেননি, তবে রেগিল্যান্ডের ভাষ্য অনুযায়ী আলীকে অল্প কিছু সম্মানী দেওয়া হয়েছিল, যেটি আলীর মানদণ্ডে খুবই নগণ্য ছিল। আলীর অভিনয় প্রতিভা সম্পর্কে রেগিল্যান্ড বলেন, ‘আমি আমার চলচ্চিত্র কর্মীদের নিয়ে আলীর চিত্র ধারণ করি আর দেশের সৌন্দর্য উপভোগ করি। তিনি ছিলেন প্রতিভাবান, বিশেষ করে যখন তিনি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে সরাসরি কথা বলতেন। আলী ছিলেন একজন স্বভাবজাত উপস্থাপক।’
ছবিটি সম্পাদনা করতে তিন মাস সময় লেগেছিল। সম্পাদনের সময় রেগিল্যান্ড আলীর সফরকে ব্যবহার করে সদ্য স্বাধীন সত্তরের দশকের বাংলাদেশকে তুলে ধরেন। রেগিল্যান্ড তথ্যচিত্রে বাংলা লোকসংগীত ও যন্ত্রসংগীত ব্যবহার করেন।
২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৮। বিদায়লগ্নে মোহাম্মদ আলীতথ্যচিত্রটি নির্মাণে বাংলাদেশি ছাড়াও ব্রিটিশ, স্কটিশ, আমেরিকান ও নিউজিল্যান্ডের চলচ্চিত্রকর্মীরাও সম্পৃক্ত হন। রেগিল্যান্ডকে যাঁরা কারিগরি ও অন্যান্য সহযোগিতা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ধারা বর্ণনায় নিউজিল্যান্ডের লেখক ও সাংবাদিক মার্ক আলেক্সান্ডার, চিত্রগ্রহণে স্কটল্যান্ডের লুইস রোরি ম্যাকলয়েড, চিত্রগ্রহণে সহকারী ছিলেন এম এ মবিন ও সাইফুল হক, শব্দগ্রহণে এরিক চোহান, শব্দগ্রহণে সহকারী ছিলেন ফজলুর রহমান আর সম্পাদনায় জেফ।
তথ্যচিত্রটি মুক্তি দেওয়ার আগে এটির নাম পরিবর্তন করা হয়। নতুন নামকরণ করা হয় ‘মোহাম্মদ আলী গোজ ইস্ট: বাংলাদেশ, আই লাভ ইউ’। তথ্যচিত্রটি লন্ডনের আইটিসি নামের একটি কোম্পানি পরিবেশনার দায়িত্ব নেয় এবং এটি চ্যানেল ফোর-এ প্রদর্শিত হয়। রেগিল্যান্ডের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, আলী তথ্যচিত্রটি জিমি কার্টারকে তাঁর ওভাল অফিসে দেখিয়েছিন, প্রেসিডেন্ট এটির প্রশংসাও করেছিলেন। রেগিল্যান্ড লেখককে জানিয়েছেন যে তথ্যচিত্রটি দেখার পর কার্টার বাংলাদেশকে ১০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছিলেন।
প্রদর্শনের পর তথ্যচিত্রটি সবার মনোযোগের বাইরে চলে যায়। কিছুদিন পর রেগিল্যান্ডও তথ্যচিত্রটি সম্পর্কে বিস্মৃত হন। ২০১০ সালে মাসুদ আহমেদ নামের একজন লন্ডনপ্রবাসী বাংলাদেশি তথ্যচিত্রটির সন্ধান পান। মাসুদ আহমেদ একজন স্বাধীন তথ্যচিত্র নির্মাতা ছিলেন। তিনি আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন। আহমেদুল্লাহ নামে মাসুদের এক বন্ধুর সংগ্রহে এই তথ্যচিত্রটি ছিল। আহমেদুল্লাহ একজন শৌখিন ফিল্ম সংগ্রাহক ছিলেন। তাঁর কাছে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধরনের ফিল্মের একটা বড় সংগ্রহ ছিল। আহমেদুল্লাহর কাছে থাকা তথ্যচিত্রের টেপটি ভিএইচএস ফরম্যাটে রেকর্ড করা হয়েছিল। মাসুদ আহমেদুল্লাহর কাছ থেকে নিয়ে এটিকে ডিভিডি ফরম্যাটে রূপান্তর করেন। এরপর লন্ডনস্থ বাংলাদেশিদের সংগঠন ‘ব্রুকলেন সার্কেল’ এটি ২০১২ সালের ৬ অক্টোবর লন্ডনের দ্য রিচ মিক্স সেন্টারে প্রদর্শন করে। ছবির পরিচালক রেগিল্যান্ডও সেই প্রদর্শনীতে ছিলেন এবং তথ্যচিত্র নির্মাণ বিষয়ে তিনি সেদিন বিস্তারিত বলেছিলেন।

 

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline