৩৭ তম লিখিত প্রস্তুতিঃ যুক্তরাষ্ট্র–কিউবা সম্পর্ক।

যুক্তরাষ্ট্র–কিউবা সম্পর্ক:

::রাজনীতিতে যেমন শেষ কথা বলে কোনো কথা নেই, ঠিক তেমনি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কথাটি ধ্রুব সত্য। আবারও স্মরণ করতে হয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড পামারস্টোন এর সেই বিখ্যাত উক্তি—স্থায়ী শত্রু বা স্থায়ী মিত্র বলে কিছু নেই, আছে স্থায়ী স্বার্থ। অর্ধ শতাব্দী অতিক্রান্ত করে মার্কিন-কিউবা সম্পর্ক প্রবেশ করেছে নতুন অধ্যায়ে। ১৯৬২ সালে দুনিয়া কাঁপানো ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় যে স্নায়ু যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সংকটের ঘনঘটা, তার অবসান হলেও অবসান হয়নি বৈরিতার। মতাদর্শগত বৈরিতা, নেতৃত্বের একগুঁয়েমিতা এবং শুভ সূচনার জটিলতার কারণে নিকট প্রতিবেশী হওয়া সত্ত্বেও বিগত দুই যুগেও কাছাকাছি হতে পারে নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিউবা সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র।

 

::অতীতের ইতিহাস:

পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের বৃহত্তম ও সবচেয়ে পশ্চিমে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্র কিউবা। আশপাশের বেশ কিছু ছোট দ্বীপ নিয়ে কিউবা প্রজাতন্ত্র। ১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি বাতিস্তা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে একদলীয় কমিউনিস্ট শাসন প্রবর্তন করে। তখন থেকেই দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান কাস্ত্রো এবং নীতিবিষয়ক সব রকম সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত ব্যক্তি।মার্কিন-কিউবা চরম বৈরিতার উত্স স্নায়ু যুদ্ধ।কাস্ট্রোর বিপ্লবী চরিত্র সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঐ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু কাস্ট্রো তার মার্কিন বিরোধী ভূমিকা অব্যাহত রাখেন। ১৯৬০-এর দশকে কাস্ত্রো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিশ্বের প্রধান সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কাস্ট্রো মার্কিন মালিকানাধীন সমস্ত সম্পত্তি রাষ্ট্রায়ত্ত করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেকোন আমদানি-রপ্তানির ওপর কাস্ট্রো প্রশাসন অধিকতর কর বসান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ আরোপের মাধ্যমে প্রতিশোধ নেয়। তারা কিউবা থেকে চিনি আমদানি বন্ধ করে দেয়। চিনি হচ্ছে কিউবার প্রধান রপ্তানি পণ্য। প্রসঙ্গত স্মরণ করা যেতে পারে যে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ কিউবা থেকে কিছু চিনি আমদানি করে ও কিউবায় বাংলাদেশের পাট রপ্তানি করে।সে অপরাধে বাংলাদেশে মার্কিন খাদ্য সাহায্য বিলম্বিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু চিনি আমদানি বন্ধ করেই ক্ষান্ত হয় নি বরং কিউবার সাথে প্রায় সকল ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। প্রেসিডেন্ট কেনেডি কিউবার বিরুদ্ধে পূর্ণ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।১৯৬১ সালে কাস্ত্রোর নেতৃত্বাধীন কিউবা সরকারিভাবে মার্কসবাদ গ্রহণ করে। স্নায়ুযুদ্ধের এক চরম উত্তেজনাকর মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের একেবারে নাকের ডগায় কমিউনিস্টরা যখন কিউবায় ক্ষমতায় এলো, তারপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে চরম বৈরী সম্পর্ক। কিউবায় ভাড়াটে সৈন্য পাঠিয়ে একাধিকবার সামরিক অভিযানের চেষ্টা করে যুক্তরাষ্ট্র। ফিদেল কাস্ত্রোকে হত্যার চেষ্টাও হয় একাধিকবার। মার্কিন সিনেটের এক তদন্তে স্বীকার করা হয়, ১৯৬০ থেকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে ফিদেল কাস্ত্রোকে কমপক্ষে আটবার হত্যার চেষ্টা করা হয়। সিনেটর ফ্রাঙ্ক চার্চের নেতৃত্বে পরিচালিত সেই তদন্তে জানানো হয়, কাস্ত্রোকে হত্যার জন্য তাকে ভয়াবহ বটুলিনাম টক্সিন ভরা সিগার পাঠানো হয়। এমনকি বলপয়েন্ট কলমে হাইপোডারমিক সিরিঞ্জ লুকিয়ে রেখেও তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, কিউবার অর্থনীতি দুর্বল করার লক্ষ্যে ১৯৬০ সাল থেকে অন্তর্ঘাতী তৎপরতা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এসব গোপন চেষ্টার পাশাপাশি একপর্যায়ে প্রকাশ্যে কিউবার বিরুদ্ধে সব ধরনের অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে আমেরিকা। অন্য দেশ যেন কিউবার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় না রাখে, সে চেষ্টাও করে তারা। হাভানা সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে সম্পর্ক জোরদার করে।
::ক্ষেপণাস্ত্র সংকটঃ ১৯৬১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। কাস্ট্রোকে ক্ষমতাচ্যুত করার গোপন ও প্রকাশ্য তত্পরতা চালায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৬১ সালের মাঝামাঝি সময় ‘পিগস উপসাগর অভিযান’ নামে কথিত CIA পরিচালিত তত্পরতা কিউবান সরকার ও জনগণকে আরও ক্ষিপ্ত করে তোলে। কিউবার নেতা ফিডেল কাস্ট্রো নিজের ক্ষমতা সুসংহত করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে গোপন যোগসাজশে লিপ্ত হন। ১৯৬২ সালের অক্টোবর মাসে সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবার ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র বা মিসাইল স্থাপন করে। মূল মার্কিন ভূখণ্ড থেকে মাত্র ১০০ মাইল দূরে স্থাপিত ঐ ক্ষেপণাস্ত্র মার্কিন সরকার ও জনগণকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে। তারা অনতিবিলম্বে ক্ষেপণাস্ত্র প্রত্যাহারে আহ্বান জানায়। এতে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষঅনমনীয় মনোভাব দেখায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডি নৌবাহিনীকে কিউবা ঘিরে ফেলার নির্দেশ দেন। কিউবা যাতে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং নৌ অবরোধের ফলে মার্কিন দাবি মেনে নেয় সেই উদ্দেশ্যে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। দুই পরাশক্তির জেদাজিদির কারণে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দেয়। উত্তেজনার সাথে সাথে অবশ্য কূটনৈতিক তত্পরতাও বৃদ্ধি পায়। সোভিয়েত নেতা ক্রুশ্চেভ অবশেষে নতি স্বীকার করেন। কিউবা থেকে সোভিয়েত রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রত্যাহার করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবা আক্রমণ না করার প্রতিশ্রুতি দেয়। উপনীত গোপন চুক্তি অনুযায়ী সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বারপ্রান্তে তুরস্কে অবস্থিত ক্ষেপণাস্ত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশেষে প্রত্যাহার করে নেয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময়কালে এটিই ছিল সবচেয়ে উত্তেজনাকর ঘটনা। দুসপ্তাহ বা ১৪ দিন টানা উত্তেজনায় ভোগে গোটা পৃথিবী। ইতিহাসে এটি ক্ষেপণাস্ত্র সংকট বা মিসাইল ক্রাইসিস নামে অভিহিত।
::কিউবা — সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্রের বদনামঃ দুটো রাষ্ট্রের মধ্যে আর একটি বিব্রতকর বিষয়, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক কিউবাকে সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র বলে অভিহিত করা। ১৯৮২ সালে মধ্য আমেরিকার কিছু বিপ্লবীকে কিউবায় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। অবশ্য ল্যাটিন আমেরিকায় বাম ধারার রাজনীতির উন্নয়ন এবং সহায়তার জন্য সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা কিউবাকে দায়ী করে আসছে। এ বদনাম থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ১৯৯২ সালে ফিডেল কাস্ট্রো ঘোষণা করেন যে, তার দেশ মতাদর্শিক প্রসারের জন্য জনপ্রশিক্ষণ বা সমরাস্ত্র সরবরাহ—কোনটাই আর করবে না।২০১৫ সালের মে মাসে কতিপয় মানবাধিকার অনুকূল ব্যবস্থা নিলে সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্রের তালিকা থেকে কিউবাকে বাদ দেয়া হয়।
::পরবর্তী মার্কিন কার্যক্রমঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি মোতাবেক আক্রমণ না করলেও কিউবার প্রতি অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক বৈরিতা অব্যাহত রাখে। ক্ষমতাদর্পী ফিডেল কাস্ট্রোর তরফ থেকেও কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। ফলে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা তথা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরও পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতা অব্যাহত থাকে। ১৯৯২ সালে ‘তৃতীয় গণতান্ত্রিক তরঙ্গ’ এর পর কিউবায় কোনো পরিবর্তন না দেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবরোধ আরও জোরদার করার লক্ষ্যে ১৯৯২ এবং ১৯৯৬ সালে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করে। ঘোষিত আইনে বলা হয় যতদিন পর্যন্ত কিউবায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হবে ততদিন পর্যন্ত সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না। যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই কাস্ট্রো পরিবারের একক ক্ষমতায়নের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। স্মরণ করা যেতে পারে যে ১৯৫৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে কোনরকম গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যতিরেকে ফিডেল কাস্ট্রো কিউবায় ক্ষমতাসীন রয়েছেন। এই সেদিন বার্ধক্যজনিত রোগের কারণে স্বীয় ভ্রাতা রাহুল কাস্ট্রোকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব অর্পণ করেন। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেন যে, মতাদর্শগত বিরোধ থাকলেও পুঁজিবাদী বিশ্বে অথবা সমাজতান্ত্রিক বিশ্বে ক্ষমতা কুক্ষিগত করণের প্রতিযোগিতা একই রকম। উত্তর কোরিয়া সমাজতন্ত্রের জয়গান গাইলেও সেখানে বংশানুক্রমিক শাসনব্যবস্থা কায়েম রয়েছে। কিউবায় একই ধারার সরকার প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। গণতান্ত্রিক বিশ্বের অব্যাহত সমালোচনার কারণে রাহুল কাস্ট্রো সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে ২০১৮ সালের পর তিনি আর ক্ষমতায় থাকবেন না। এতদিনে কিউবা সরকারের হয়তো বোধোদয় হয়েছে। তবে গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া সুদূরপরাহত। ইতোমধ্যে কিউবা হিসাব করে বলেছে বিগত ৫০ বছরে তাদের ক্ষতি হয়েছে ১,১২৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

::শুভ সূচনার শুরুঃ

সম্পর্কের শুভসূচনা উপলক্ষে দুই দেশের বিবৃতি অম্লমধুর। সম্ভবত দীর্ঘ বৈরিতাকে ভুলা কঠিন হয়ে পড়ছে দুই দেশের নেতাদের। কিউবার বিপ্লবী নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিডেল কাস্ট্রো জাতির উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। এতে দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ করে তিরস্কার ও সমালোচনা রয়েছে। কাস্ট্রোর ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেন। খোলা চিঠিতে অবশ্য কিউবায় আবার মার্কিন দূতাবাস চালু করার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য ছিল না। এদিকে জন কেরি দূতাবাস উদ্বোধন উপলক্ষে প্রদত্ত বক্তৃতায় কিউবায় ‘প্রকৃত গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। জন কেরি বলেন, কিউবার বিষয়ে মার্কিন নীতি পরিবর্তনের মানে এই নয় যে কিউবার রাজনৈতিক পরিবর্তনের বিষয়ে ওয়াশিংটন চুপ মেরে যাবে। তিনি বলেন, ‘হাভানার নেতাদের এবং কিউবার জনগণের আরও জানা উচিত, গণতান্ত্রিক নীতি ও সংস্কারের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই চ্যাম্পিয়ন থাকবে।’ এদিকে দীর্ঘকাল পরে শুরু করা সম্পর্ক নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সমালোচনা করে আসছেন ওবামা প্রশাসনের রক্ষণশীল বিরোধীরা। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কো রুবিও এবং জেব বুশসহ নেতৃস্থানীয় রিপাবলিকানেরা কেরির ঐ সফরের বিষয়ে তির্যক মন্তব্য করেছেন। কিউবার ভিন্ন মতাবলম্বীদের অনুপস্থিতিতে দেশটিতে পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় কেরি তীব্র সমালোচনা করেছেন কিউবান—আমেরিকান সেনেটের রুবিও। তবে জন কেরি যুক্তি প্রদর্শন করেন, ‘সম্পর্কছেদ এবং বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা কিউবাকে সংস্কারের পথে আনতে ব্যর্থ হয়েছে এবং অবশ্যই নতুন পথ খুঁজতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় অনেক বিপত্তি রয়েছে। তবে এটা শুরু।’ গত ডিসেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং কিউবার নেতা রাউল কাস্ট্রো শেষ পর্যন্ত এই ঐতিহাসিক বৈরিতার অবসান ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেন।
::বারাক ওবামার উদ্যোগঃ ১৯৫৯ সালে কিউবার বিপ্লবের বিজয়ের পর আইজেনহাওয়ার থেকে শুরু করে ক্লিনটন ও বুশ পর্যন্ত আমেরিকার প্রতিটি সরকার সে দেশের প্রতি বৈরী নীতি অব্যাহত রাখে। বারাক ওবামাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি ২০০৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর পরই কিউবার ব্যাপারে ভিন্ন নীতি অনুসরণের ইঙ্গিত দেন। বারাক ওবামা ওই সময় বলেছিলেন, ৫০ বছর ধরে অর্থনৈতিক অবরোধের মাধ্যমে আমরা কিউবাকে বিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা করেছি, কোনো কাজ হয়নি। এখন সময় এসেছে নতুন নীতি অনুসরণের।এরপর বারাক ওবামা-রাউল কাস্ত্রো ১৮ মাস ধরে অতি গোপনীয়তার মধ্যে এসব বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চালান।ওবামা প্রশাসন প্রথমবারের মতো স্বীকার করে, কিউবায় বড় ধরনের পরিবর্তন সূচিত হয়েছে।নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তুলে ধরা হলোঃ
১।১০ ডিসেম্বর, ২০১৩: দক্ষিণ আফ্রিকায় নেলসন ম্যান্ডেলার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে এসে বারাক ওবামা ও রাউল কাস্ত্রো পরস্পরের সঙ্গে করমর্দন করেন। এরপর আলোচনা চলতে থাকে কিউবায় মার্কিন দূতাবাস খোলার বিষয়ে। তখন বারাক ওবামা বলেছিলেন, দুই দেশের মধ্যে মুদ্রা বিনিময় চালু করা হবে এবং মার্কিন ব্যবসায়ীদের জন্য কিউবায় পণ্য রপ্তানির সুযোগ সহজ করাসহ মার্কিনিদের জন্য কিউবায় ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞাও শিথিল করা হবে।
২।ডিসেম্বর, ২০১৪; এক চুক্তির আওতায় ফ্লোরিডায় গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আটক তিন কিউবান নাগরিকের মুক্তির বিনিময়ে পাঁচ বছর ধরে কিউবায় আটক মার্কিন ত্রাণকর্মী অ্যালেন গ্রসকে মুক্ত করা হয়। এই বন্দিবিনিময় একে অপরের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথ সুগম করে।
৩।১৪ এপ্রিল, ২০১৫; পানামায় রাউল কাস্ত্রো ও বারাক ওবামার মধ্যে বৈঠকে সন্ত্রাসবাদে মদদদাতা দেশগুলোর তালিকা থেকে কিউবাকে বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
৪।২০ জুলাই, ২০১৫: ওয়াশিংটনে কিউবার পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন দূতাবাস খোলে কিউবা। ফলে যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা সম্পর্কের এক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করলো। ১৯৬১ সালের পর থেকে গত ৫৪ বছর ধরে প্রতিবেশী দুই দেশ কিউবা ও যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের কোন দূতাবাস ছিল না। ১৯৭৭ সাল থেকে তারা একটি ইন্টারেস্ট সেকশন নামের কূটনৈতিক দপ্তর চালিয়ে আসছিল।
৫।১৪ আগস্ট, ২০১৫: কিউবায় আবার উড়লো মার্কিন পতাকা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি আনুষ্ঠানিকভাবে ঐ দূতাবাস চালু করেন। ১৯৬১ সালে যারা এই দূতাবাসে মার্কিন পতাকা নামিয়েছিলেন শেষবার তারাই আবার সেই পতাকা উত্তোলন করেন।জন কেরি গত ৭০ বছরে কমিউনিস্ট কিউবার মাটিতে পা রাখা প্রথম মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

 

————-সম্পর্কের নতুন ধারা———-

::কূটনৈতিক সম্পর্কের এ ধারায় ইতোমধ্যে বন্দী বিনিময় ঘটেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যাংক লেনদেন, পর্যটন, প্রবাসীদের অর্থ প্রেরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বড় ধরনের ছাড় দিয়েছে।জানুয়ারি, ২০১৬ থেকে উভয় দেশের নাগরিকেরা পাসপোর্ট ভিসা ব্যতীত সীমিত ভ্রমণ সুবিধা পাচ্ছেন। পর্যটকরা মার্কিন ক্রেডিটকার্ডের সুবিধা পাবেন। মার্কিন কোম্পানিগুলো কিউবান নাগরিকদের স্বাস্থ্য, জীবন এবং পর্যটন বীমা আদানপ্রদান করতে পারবেন। মার্কিন নাগরিকগণ কিউবায় সীমিত বিনিয়োগ সুবিধা পাবেন। কিউবান বেসরকারি জাহাজ নির্মাণ কোম্পানিগুলোকে নির্মাণসামগ্রী প্রদান করতে পারবেন মার্কিন ব্যবসায়ীবৃন্দ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষ কিউবার সাথে তাদের পুনঃসম্পর্ক স্থাপনকে স্বাগত জানিয়েছে। একটি গবেষণা সংগঠন পরিচালিত সমীক্ষায় জানা যায় যে ৬৩ ভাগ মার্কিন নাগরিক সম্পর্ক উন্নয়নকে সমর্থন করছে। ৬৬ ভাগ মার্কিন নাগরিক কিউবার বিরুদ্ধে আরোপিত বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার পক্ষে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অধিকাংশ লাতিন আমেরিকান রাষ্ট্রসমূহ দুদেশের নতুন সম্পর্ককে স্বাগত জানিয়েছে। বিশ্ব জনমত এই নতুন কূটনৈতিক উদ্যোগের পক্ষে। ইতোপূর্বে ২০১৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত এক প্রস্তাবে কিউবার বিরুদ্ধে অব্যাহত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার নিন্দা করা হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ১৮৮ সদস্য বিশিষ্ট সাধারণ পরিষদে কিউবা ১৮৬টি রাষ্ট্রের সমর্থন লাভ করে। অপরদিকে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। কিউবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ভবিষ্যত্ আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহ ইতোমধ্যে আশা প্রকাশ করেছে যে, সম্পর্কের নতুন অধ্যায় দ্বারা দুটো রাষ্ট্রই উপকৃত হবে। তাদের পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস ঐ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনে সহায়ক হবে। আমেরিকান রাষ্ট্রসংঘ (OAS) এর মহাসচিব জসি মিগুয়েল ইনসুলজা মনে করেন নতুন অধ্যায়ের মাধ্যমে কিউবায় অর্থনৈতিক সংস্কারের ধারা সূচিত হয়েছে। এ ধারা রাজনৈতিক সংস্কারকে ত্বরান্বিত করবে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞগণ বিশ্বাস করেন ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে পানামা শীর্ষ বৈঠকের মধ্য দিয়ে কিউবা-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে শুভ সূচনা হয়েছে তা গোটা পশ্চিম গোলার্ধে নতুন যুগের সূচনা করবে।
উৎসঃদৈনিক ইত্তেফাক।২০ আগষ্ট, ২০১৫।
::দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের লক্ষে সম্প্রতি একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবা। ভূমি ও পানি গবেষণা বিষয়ক এ চুক্তি অনুসারে প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় একযোগে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে দেশ দুটি। চুক্তি স্বাক্ষরের এ ঘটনাটিকে দুই দেশের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রাথমিক ধাপ হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কিউবা সফর ঘোষণার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় হাভানাতে এই সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করল দুই দেশের প্রতিনিধিরা। পারস্পরিক সহায়তার এ চুক্তিটিকে দুই দেশের জন্যই লাভজনক বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে, এ চুক্তি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে পুন:প্রতিষ্ঠিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেছে কিউবা। চুক্তি অনুযায়ী মার্চ, ২০১৬ মাস থেকেই কিউবায় মার্কিন নাগরিকদের যাতায়াত সহজতর করছে দেশটির সরকার। তাছাড়া ইউএস ডলারের লেনদেনও সহজতর করবে দেশটি।
উৎসঃ somoynews.tv. ১৯ মার্চ, ২০১৬।
::দীর্ঘ ৫০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রমোদতরী কিউবায় গেছে।২মে, ২০১৬ অ্যাদোনিয়া নামক প্রমোদতরীটির হাভানায় পৌঁছায়। আর এই ভ্রমণের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো জোরালো হবে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা। বিবিসি জানায়, কিউবা নিজ দেশের জনগণের ওপর থেকে সমুদ্রপথে দেশে যাওয়া ও ছাড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পরই এই প্রমোদতরী ভ্রমণের আয়োজন করা হয়। আগে কিউবার নাগরিকরা শুধু বিমানপথে দেশে প্রবেশ বা ছাড়ার অনুমতি পেতেন। তবে গত সপ্তাহে কিউবার নাগরিকদের ওপর থেকে সমুদ্রযাত্রার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। জানা গেছে, মায়ামি থেকে রওনা দেয়া অ্যাদোনিয়া প্রমোদতরীতে প্রায় ৭০০ যাত্রী আছেন। প্রমোদতরী ভ্রমণের আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান কার্নিভাল, যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবা দুই দেশ থেকে জাহাজ চলাচলের অনুমতি নিয়েছে। তবে কিছুদিন আগেও কিউবার নাগরিকদের ওপর সমুদ্র ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবি জানায় প্রতিষ্ঠানটি। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হলেও এখনো ভ্রমণ ও বাণিজ্যের ওপর স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার কিছু নিষেধাজ্ঞা আছে। বিবিসি জানায়, ১৯৫৯ সালের কিউবা বিপ্লবের আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ও কিউবার মধ্যে যোগাযোগের মূল মাধ্যম ছিল ফেরি ও প্রমোদতরী।তবে বিপ্লবের মাধ্যমে ফিদেল কাস্ত্রো ক্ষমতায় আসার পরপরই সব সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা হয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে সম্মত হন।এরপর থেকেই কিউবায় পর্যটকের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। আর বর্তমানে শুরু হওয়া প্রমোদতরী ভ্রমণে হাজারো পর্যটক কিউবা যেতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। জানা গেছে, অ্যাদোনিয়া প্রমোদতরী প্রতি সপ্তাহে মায়ামি থেকে কিউবা যাবে।
উৎসঃশীর্ষ নিউজ.কম।২ মে, ২০১৬।
::নতুন এক ইতিহাস রচনা করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। প্রায় ১০০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার মধ্যে যে তিক্ততা বিরাজমান ছিল তিনি তা দূর করে দিলেন। আশা দেখালেন নতুন এক যুগের, যেখানে কিউবা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গড়ে উঠবে এক নতুন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। কিউবার মানুষ পাবে আরও বেশি স্বাধীনতা। আমেরিকানরা পাবে অর্থনীতির নতুন পথ। এমনই এক স্বপ্ন নিয়ে ৮৮ বছরের মধ্যে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামা গত ২২ মার্চ কিউবা পৌঁছেন।বিমানবন্দরে তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। পরে তিনি ইমাকুলেট কনসেপশনে ভার্জিন মেরি ক্যাথেড্রাল সফর করেন। সেখানে তাকে অভিবাদন জানান কার্ডিনাল জেমি ওরতেগা। সন্ধ্যার দিকে তিনি নৈশভোজ সারেন। তিনি রাজধানী হাভানায় হোসে মারতি এয়ারপোর্টে পৌঁছালে কূটনীতিকরা তাকে স্বাগত জানান, যেটা এখন থেকে প্রায় ৫ বছর আগে কল্পনাও করা যেত না। এ সফরের আগে সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ওবামা বলেন, এ সফরের মধ্য দিয়ে সূচনা হতে যাচ্ছে সম্পর্কের, ইতি নয়। এর মধ্য দিয়ে আমরা কিউবার মানুষের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে পারবো। কিউবার সরকারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে পারবো। আমরা যে মূল্যবোধে বিশ্বাস করি সেগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলবো। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হাভানায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস উদ্বোধন করে এ সফরকে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করেছেন।এদিকে, ওবামাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে যাননি বলে রাউল ক্যাস্ট্রোর সমালোচনা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অসম্মান করা হয়েছে। আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের এই শীর্ষ মনোনয়নপ্রত্যাশী এক টুইটে লিখেছেন, ‘রাউল ক্যাস্ত্রো প্রেসিডেন্ট ওবামাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি পোপ ও অন্যদের ঠিকই স্বাগত জানিয়েছিলেন। সম্মানের বালাই নেই।’ তবে, বিশ্লেষকরা এ সফরকে দেখছেন দুদেশের মধ্যকার সম্পর্কের বরফ গলার অনুঘটক হিসেবে। সাংবাদিকরা বলছেন, ওবামার এ সফর যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার সম্পর্কে বড় ধরনের একটি মোড় পরিবর্তন। এখন থেকে আঠারো মাস বা দেড় বছর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্ট কিউবার মাটিতে পা রাখবেন এটা ছিল অচিন্তনীয়। এমনটা বলেছেন বিবিসির উত্তর আমেরিকাবিষয়ক সম্পাদক জন সোপেল। বলা হচ্ছে, ওবামার এ সফরের মধ্য দিয়ে দুদেশের মধ্যে নতুন এক যুগের সূচনা হবে।

উৎসঃ দৈনিক মানবজমিন। ২২ মার্চ, ২০১৬।

 

::সবচেয়ে নিরাশার কথা হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো পরিপূর্ণভাবে কিউবার বিরুদ্ধে আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নি। বরফ গলা শুরু ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনুসৃত কিউবা নীতিতে পরিবর্তন লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। এ সময় তিনি প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ আরোপিত কতিপয় নীতি শিথিল করেন। এর মধ্যে রয়েছে প্রবাসীদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা, পর্যটন, আইটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা। ২০০৯ সালে কিউবা একজন মার্কিন উন্নয়ন কর্মীকে কারাদণ্ড দিলে সম্পর্কের অগ্রগতি থমকে দেয়। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দী কয়েকজন কিউবান গোয়েন্দা কর্মকর্তার বিনিময়ে এলানগ্রসকে ছেড়ে দেয় এবং সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া পুনঃস্থাপিত হয়। ২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর বারাক ওবামা এবং রাহুল কাস্ট্রো উভয়ই ঘোষণা করেন যে, দুটো রাষ্ট্রই পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে যাচ্ছে। জটিল এবং কুটিল এই কূটনৈতিক সফলতার পিছনে খ্রিস্টান জগতের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বলে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়।
::আমেরিকার ৬০ শতাংশ মানুষ কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পক্ষে ছিল। তবে এই নীতির সমালোচনা শুরু থেকেই করে আসছিলেন ওবামা প্রশাসনের রক্ষণশীল বিরোধীরা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সাম্প্রতিক সফরের বিষয়ে তির্যক মন্তব্য করেছেন ২০১৬ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কো রুবিয়ো ও জেব বুশসহ নেতৃস্থানীয় রিপাবলিকানরা। কিউবার ভিন্নমতাবলম্বীদের অনুপস্থিতিতে দেশটিতে পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করারও তীব্র সমালোচনা করেছেন সিনেটর মার্কো রুবিয়ো। অপরদিকে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হলেও কিউবা-মার্কিন সম্পর্কে এখনো অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। দূতাবাস চালুর অনুষ্ঠানে জন কেরি একে ঐতিহাসিক এক মুহূর্ত দাবি করলেও বলেন, কিউবার রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র চাপ অব্যাহত রাখবে। এদিকে ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে লেখা খোলা চিঠিতে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো হাভানায় আবার যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস খোলা নিয়ে কোনো কিছুই বলেননি; বরং তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মার্কিন পররাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক নীতির সমালোচনা করেন এবং কিউবার কয়েক শ মিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেন। অপরদিকে কিউবার ওপর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করলেও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এখনো তুলে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। তবে সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র-কিউবার সম্পর্কের স্থায়ীত্বের এটি কেমন দাঁড়াবে তা অনেকটাই নির্ভর করবে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত সরকারের ওপর।

উৎসঃদৈনিক কালের কন্ঠ।১৯ আগষ্ট, ২০১৫।

আরো পড়ুন:

বিসিএস ক্র্যাশ – রাজনীতি – 1

Composition লিখার জন্য কিছু শব্দ পার্ট -২

বাংলাদেশের প্রথম,বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ,বাংলাদেশের মহিলা প্রথম

 

 

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline