
কলারোয়া ধানদিয়া ইউনিয়ন ইন্সটিটিউশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩০ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে আব্দুল আজিজকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে স্কুলে বোর্ড গঠনের মাধ্যমে এ নিয়োগ দেয়া হয় বলে জানা যায়।
প্রধান শিক্ষক পদের জন্য আবেদনকারী কয়েকজন প্রার্থী জানান, বিদ্যালয়ের সভাপতি জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আল মাসুদ কয়েকজন প্রার্থীর কাছ থেকে নিয়োগের জন্য ২০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করায় উপজেলার খোর্দ্দ-বাটরা গ্রামের (প্রধান শিক্ষক পদে প্রার্থী) হাবিবুর রহমান গত ১৫ মার্চ কলারোয়ার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলার পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য আছে আগামী ৭ মে।
প্রার্থী মো: হাবিবুর রহমান জানান, প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য বিদ্যালয়ের সভাপতি তার কাছে ২০ লাখ টাকা দাবি করলে তিনি আদালতে মামলা করেন। হাবিবুর রহমান বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ১০/১২ জন ব্যক্তি প্রধান শিক্ষক পদে দরখাস্ত করেন।
মামলার বিবরণে দেখা গেছে, হাবিবুর রহমান কলারোয়ার ধানদিয়া ইউনিয়ন ইন্সটিটিউশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য হওয়ায় গত ৫ নভেম্বর সামসুদ্দিন আল মাসুদ ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শ্রী বিকাশ চন্দ্র বৈদ্য তাকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে ২০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। একই সময় আবুল কাশেম নামে অন্য এক প্রার্থীকে (আবেদনকারী) নিয়োগ দেয়ার কথা বলে তার কাছে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এই ঘুষের টাকা দিয়ে তাদেরকে নিয়োগ দেয়া হবে বলে পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাদেরকে জানান।কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুকৌশলে আব্দুল আজিজ নামে আরেক আবেদনকারীর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে তাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নিশ্চিত করেন। গত ২৪ মার্চ শনিবার নিয়োগ বোর্ডের দিন ধার্য করেন। এ বিষয়টি জানার পর সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন হাবিবুর রহমান। তিনি বিদ্যালয়ে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নিয়োগ দাবি করেন। কিন্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বিষয়টি নিয়ে তালবাহনা করায় হাবিবুর রহমান কলারোয়ার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ধানদিয়া ইউনিয়ন ইন্সটিটিউশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সামসুদ্দিন আল মাসুদ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শ্রী বিকাশ চন্দ্র বৈদ্যসহ ১৮জনকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করেন। হাবিবুর রহমান আরও জানান, মামলায় আদালত বিদ্যালয়ে নিয়োগ স্থগিতের আদেশ প্রদান করে পরবর্তী ৭ মে শুনানীর দিন ধার্য করেন।
খোঁজ নিয়ে জানানগেছে, নিয়োগ পাওয়া আব্দুল আজিজসহ মাত্র ৪জন প্রার্থী অংশ নেন শনিবার (২৮ এপ্রিল) নিয়োগ পরীক্ষায়। এছাড়া আবেদন করা অন্য আরও ৭/৮ জন প্রার্থীকে প্রবেশ পত্র দেয়া হয়নি বলে জানাগেছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিকাশ চন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সভাপতির সঙ্গে কথা বলেন।
উপজেলার ধানদিয়া ইউনিয়ন ইন্সটিটিউশন মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান সামছুদ্দীন আল মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, নিয়োগে কোন অনিয়ম হয়নি। নিয়োগ বোর্ডে তিনিসহ উপস্থিত ছিলেন, ডিজির প্রতিনিধি সাতক্ষীরা সরকারি বালক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো: আলাউদ্দীন,কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রতাপ কুমার ঘোষ। নিয়োগে তিনি কোন অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেন। তবে ২৫ তারিখে প্রবেশ পত্র দিয়ে ২৮ তারিখে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কলারোয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে জানার জন্য বিদ্যালয়ের সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমি কিছুই জানিনা।
এ বিষয়ে কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন জানান, নিয়োগ বোর্ডে আমি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কিনা সেটা আমি দেখার জন্য আমি উপস্থিত ছিলাম। এখানে ডিসি স্যারের কোন প্রতিনিধি ছিলো না। এছাড়া আমি কমিটির কোন সদস্য না, কোন কাগজে আমার স্বাক্ষর নেই।
আরো পড়ুন: