ভাড়া ও অস্থায়ী ক্যাম্পাস বন্ধ করে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরেক দফা সময় দিতে যাচ্ছে সরকার। ৬/৭ দফা সময় দেয়ার পরও যেসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি তারা আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত সময় পাচ্ছে।
এই সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না গেলে ব্যর্থ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ ও শিক্ষার্থী ভর্তির বন্ধ করে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইজিসি। নিজস্ব ক্যাম্পাসে না যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) সম্প্রতি দায়িত্ব দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এই মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়-১) বেগম জিন্নাত রেহেনা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী সাময়িক সনদের মেয়াদোত্তীর্ণ ৪৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি পরিবীক্ষণ ও তদারকি করার জন্য ইউজিসিকে অনুরোধ করা হলো।’
ইউজিসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আইন অমান্যকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি গঠিত কমিটির সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা ইউজিসি পেয়েছে। এজন্য ১ পহেলা জানুয়ারি থেকেই আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি বাতিলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে চায় সংস্থাটি।’
এ ব্যাপারে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, দফায় দফায় সময় দেয়ার পরও যারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি, তাদের ব্যাপারে জোরালো মনিটরিং করতে মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছে। সর্বশেষ দেয়া সময়ের মধ্যে যারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারবেন না তাদের ব্যাপারে ইউজিসি যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
যারা অবকাঠামো নির্মাণের পর বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়েছে তাদের এটি বিবেচনায় নেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যাদের কাজের দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই তাদের কোন ছাড় নয়।’এর আগে বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে সর্বশেষ গত ৭ মার্চ শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক আখতার হোসেনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য গত জুন পর্যন্ত সময় দেয়া হয়।
এ কমিটি গত ২ এপ্রিল প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেয়। এর পরও দুই দফায় সময় বৃদ্ধির পর চারটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে ওই কমিটি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬/৭ দফা সময় পেয়েও ৩১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তরে গড়িমসি করছে। তারা আগামী জানুয়ারির মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে একাডেমিক ও প্রশাসনিক সব কার্যক্রম স্থানান্তর করতে না পারলে ব্যর্থ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি বন্ধ করে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে মন্ত্রণালয়।
৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে ই্উজিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব বিশ্বদ্যিালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ হলেও নানা অজুহাতে একাডেমিক কার্যক্রম স্থানান্তর করছে না। এর মধ্যে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি তেজগাঁও এলাকায়, গ্রীন ইউনিভাসিটি পূর্বাচলে, আশা ইউনির্ভাটির তুরাগের ধউর এলাকায়, ইউনাইটডে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাড্ডার সাঁতারকূলে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় সাভারের বিরুলিয়া, পিপল্স ইউনিভার্সিটি নরসিংদীর শিবপুরে, ইউনিভার্সিটি অফ ডেভেলেপমেন্ট অল্টারনেটিভ গাজীপুরের কুমারখাদার কাউলতিয়া, রয়েল ইউনিভার্সিটি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি টাঙ্গাইলে সাগরদিঘীর ধলাপাড়ায় জমি কিনে ভবন নির্মাণ করেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না- এমন অজুহাতে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারছে না বলে তারা ইউজিসিকে জানিয়েছে।
ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে, স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করেও সেখানে পুরোপুরি শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর না করায় শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, লিডিং ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্দান ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
এ ছাড়া সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি সরকারি নির্ধারিত পরিমাণ জমির চেয়ে কম জমিতে রাজধানীর হাটখোলায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। রাজধানীর রাজারবাগের মোমিনবাগে অবস্থিত দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ। রংপুরের পু-্র ইউনিভার্সিটিকে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে হবে।
নতুন ও পুরনো মিলে দেশে বর্তমানে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৯৭টি। এর মধ্যে পুরনো ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৯টি এখনও নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে নিজস্ব ক্যাম্পাসে, কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয় জমি কিনেছে। নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে মাত্র ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বশেষ অনুমোদন পাওয়া ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেনি।
আরো পড়ুন:
0 responses on "স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরেক দফা সময় দিতে যাচ্ছে সরকার"