চট্টগ্রামভিত্তিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনার ভিত্তিতে এ নিয়ে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রারকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে ইউজিসি।
জানা গেছে, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের দ্বন্দ্ব, অননুমোদিত ক্যাম্পাস খোলার অভিযোগ ও আদালতে কয়েকটি মামলা বিচারাধীন থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ওপর ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির সব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করতে গত ৩০ নভেম্বর ইউজিসির কাছে এক চিঠি পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চিঠিতে সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে উদ্ভূত বিষয়াবলি নিয়ে তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য মঞ্জুরী কমিশনকে নির্দেশনা দেয়া হয়। একই সঙ্গে তদন্ত কার্যক্রম ও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টিকে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার নির্দেশনা দানেরও অনুরোধ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করে ইউজিসি।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় অনুবিভাগের উপসচিব (বেসরকারি বিদ্যালয়) জিন্নাত রেহানা বলেন, সাদার্ন ইউনিভার্সিটির বোর্ড ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্বের ফলে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে দুটি গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। তাই ইউজিসিকে এসব বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। তাই তদন্ত সম্পন্ন ও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির সব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধের জন্য নির্দেশ দিতে বলা হয়েছে।
বুধবার জারি করা ভর্তি কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনাটি বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত সাদার্ন ইউনিভার্সিটিতে পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ‘ভর্তি কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনাবিষয়ক কোনো চিঠি আমরা পাইনি।’ তবে বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে উদ্ভূত দ্বন্দ্বমুখর পরিস্থিতির এটি স্বীকার করেন তিনি।
এ নিয়ে সাদার্ন ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা সরওয়ার জাহান বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তির মালিকানা ও আউটার ক্যাম্পাসসহ বেশকিছু বিষয়ে মামলা রয়েছে। ষড়যন্ত্রকারী একটি চক্র নানাভাবে মামলা-মোকদ্দমা করে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। একটি দুষ্টচক্র আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে অবৈধভাবে বিভিন্ন আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনা করে আসছিল। সেসব অবৈধ ক্যাম্পাস বন্ধে আমরা একটি মামলা দায়ের করি। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসগুলো বন্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি কিছু অসাধু লোককে শাস্তির আওতায়ও আনা হয়েছে। বর্তমানে শুধু মেহেদীবাগের মূল ক্যাম্পাসটিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এখন কোন মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সব ক্যাম্পাসে ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে আমরা অবগত নই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ইউজিসির পক্ষ থেকে আমরা এ ধরনের কোনো চিঠি পাইনি।
এদিকে সাদার্ন ইউনিভার্সিটি নিয়ে তদন্ত করতে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক আকতার হোসেনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এটি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী চিঠি দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশনা আসবে।
উল্লেখ্য, ইউজিসি প্রকাশিত সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে তিনটি অনুষদের অধীনে ১৯টি বিভাগ চালু রয়েছে। এসব বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী রয়েছেন ৪ হাজার ৮ জন। এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৯৯৪। তাছাড়া শিক্ষক রয়েছেন ১৮৪ জন।
আরো পড়ুন:
0 responses on "সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ভর্তি কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে (ইউজিসি)"