
শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ ও শিশুবান্ধব পাঠাগার একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এর মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম আরও বেশি আলোকিত হবে। এ পাঠাগার শিশুদের চিন্তা-চেতনা এবং মনুষ্যত্ববোধের তৈরি করবে। শিক্ষিত জাতি এবং আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
মঙ্গলবার (২০ই ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং উন্নয়ন সংস্থা রুম টু রিড’র যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর মিলনায়তনে বাংলাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের ‘পাঠ দক্ষতা ও পাঠাভ্যাস উন্নয়নে শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ ও শিশুবান্ধব পাঠাগার’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো: আবু হেনা মোস্তফা কামাল। রুম টু রিড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রাখী সরকারে সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোঃ রমজান আলী, পরিচালক বিজয় ভূষণ পাল, পরিচালক (সেকেন্ড চান্স এডুকেশন) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, পরিচালক (স্কুল ফিডিং) রামচন্দ্র দাস। কথাসাহিত্যিক ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, পাঠদক্ষতা এবং পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রুম টু রিড’র সাক্ষরতা কর্মসূচি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, শিশুকাল থেকেই শিশুদের মধ্যে চিন্তা-চেতনা এবং মনুষ্যত্ববোধের জাগরণের উপর জোর দেয়া দরকার। শিক্ষিত জাতি এবং আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এর বিকল্প নেই।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন,মাতৃভাষা চর্চা যে কোন জাতির সাফল্য অর্জনের মূল ভিত্তি। তিনি সাক্ষরতা অর্জনের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা তুলে ধরেন এবং সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতার কথা বলেন।
মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন,সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগকে বরাবরই স্বাগত জানায়। সরকার ও শিশুদের মধ্যে পাঠদক্ষতা এবং পাঠাভ্যাস গড়ে তোলা এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর। রুম টু রিডসহ যেসব এনজিও এ লক্ষ্যে কাজ করছে তাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাই।
রামচন্দ্র দাস বলেন, যে পাঠের মধ্যে কোনো আনন্দ থাকে না তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। রুম টু রিড তার কার্যক্রমের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করছে। পাশাপাশি শিশুদের পাঠদক্ষতা এবং পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। যার মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম আরও বেশি আলোকিত হবে।
রুম টু রিড’র কান্ট্রি ডিরেক্টর রাখী সরকার স্বাগত বক্তব্যে,মানসম্মত শিক্ষার উন্নয়ন এবং শিক্ষালাভের জন্য শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ ও শিশুবান্ধব পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত রুম টু রিড বাংলাদেশ সাক্ষরতা কর্মসূচি আওতায় প্রায় ৩ লাখ শিশু এবং ১ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরাসরি কাজ করেছে। প্রায় ৬০০০ পাঠাগার স্থাপন করেছে।
বাংলা ভাষা তথা মানসম্মত সাক্ষরতা নিয়ে রুম টু রিড’র পাঠাগার কার্যক্রমের ভূমিকা তুলে ধরেন সংস্থাটির লিটারেসি ডিরেক্টর মো: জিল্লুর রহমান সিদ্দিকি। তিনি বাংলাদেশে রুম টু রিডের সার্বিক কার্যক্রম এবং রুম টু রিডের সাক্ষরতা কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়াও তিনি পাঠ দক্ষতা ও পাঠ্যাভাস গঠনে শ্রেণিকক্ষ পাঠাগারের ভূমিকা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরামের আহবায়ক ও দৈনিকশিক্ষা ডটকমের সম্পাদকীয় উপদেষ্টা মো: সিদ্দিকুর রহমান বলেন,সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়ার আহবান জানান। এর মাধ্যমে যেমন শিশুদের পাঠাভ্যাস গড়ে উঠবে তেমনি আগামী প্রজন্ম সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।
আলোচনা সভা শেষে অতিথিরা ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে শিশুদের জন্য প্রকাশ হওয়া ৯ টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং লেখক ও আঁকিয়েদের শিশুবান্ধব সৃজনশীল গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা লেখার জন্য উৎসাহ প্রদান করেন। প্রকাশিত বইগুলোর হল- কালো চক, কাগজ চাই, কা কা ঘু ঘু ঘেউ ঘেউ, একা কাক, কুমির এলো, পাখির বাসা, হরিণের সাইকেল, পাখিদের রাজা এবং রং।
আরো পড়ুন: