মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন : প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিলারি আর ট্রাম্পের মাঝেই

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন : প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিলারি আর ট্রাম্পের মাঝেই
অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান
.

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি আছে প্রায় ৬ মাস। ৮ নভেম্বর সেখানে নির্বাচন। এরই মধ্যে দুইটি দল, অর্থাৎ ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী প্রায় নিশ্চিত। হিলারি ক্লিনটন আর ডোনাল্ড ট্রাম্পই পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নিতে যাচ্ছেন। এটি অনেকটাই এখন নিশ্চিত। এক্ষেত্রে হিলারি যে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন, তা প্রথম থেকেই অনেকটা নিশ্চিত ছিল। কিন্তু নিশ্চিত ছিল না ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন। তবে একের পর এক অঙ্গরাজ্যগুলোর পার্টি প্রাইমারিতে বিজয়ী হয়ে ট্রাম্প তার মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেছেন। এ নিয়ে দলের মাঝে বড় ধরনের বিতর্কেরও সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশ ও তার ছোট ভাই জেব বুশ, যিনি সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন, তারা প্রকাশ্যেই বলেছেন, তারা ট্রাম্পকে সমর্থন করবেন না। এমনকি সাবেক স্পিকারও এ কাতারে শরিক হয়েছেন। যদিও ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, এতে তার কিছু যায় আসে না। এরই মধ্যে দুইজন প্রার্থীই প্রাইমারিতে বিজয়ী হয়ে তাদের প্রার্থিতার সপক্ষে ডেলিগেটদের ভোট নিশ্চিত করেছেন। হিলারির পক্ষে ডেলিগেটদের সমর্থনের পাল্লা যথেষ্ট ভারি। ট্রাম্প একটু পিছিয়ে আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন নির্বাচকম-লীর ভোটে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা ৫০টি, আর নির্বাচকম-লীর সংখ্যা ৫৩৮। সাধারণত সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের সদস্য সংখ্যার ভিত্তিতে এ নির্বাচকম-লী গঠিত হয়। যেমন ক্যালিফোর্নিয়ার নির্বাচকম-লীর ভোটের সংখ্যা ৫৪টি অথবা নিউইয়র্কের ৩৩টি। ছোট ছোট রাজ্য, যেমনÑ মেইন (চারটি), সাউথ ডাকোটা (চারটি) কিংবা ওয়াওসিভে (তিনটি) নির্বাচকম-লীর সংখ্যা কম। কোনো প্রার্থী কোনো রাজ্যে বিজয়ী হলে, সে রাজ্যে যে ক’টি নির্বাচকম-লীর ভোট রয়েছে, তার পুরোটা তিনি পেয়েছেন বলে গণ্য করা হয়। এক্ষেত্রে যে প্রার্থী হেরে যান, তিনি নির্বাচকম-লীর কোনো ভোট পান না। অর্থাৎ জনসাধারণের ভোটে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সরাসরি নির্বাচিত হন না, নির্বাচিত হন নির্বাচকম-লীর ভোটে। তবে জনসাধারণ ভোট দেন। এটাই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য। এখানে আরও একটা কথা বলা প্রয়োজন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তৃতীয় পার্টির তেমন কোনো অস্তিত্ব নেই। নামকাওয়াস্তে দুই-একটি প্রার্থী (গ্রিন, কনস্টিটিউশন পার্টি) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী দিলেও তারা প্রচারণার দৌড়ে এগোতে পারেন না। প্রচারণায় একজন প্রার্থীকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়, যেটি ছোট ছোট দলের পক্ষে সম্ভব নয় সংগ্রহ করা। নির্বাচন দুইটি বড় দল, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এ দুই দলের প্রার্থীরা জনসাধারণ তথা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন। এটা বৈধ। প্রার্থীদের বিজ্ঞাপন ও প্রচুর ভ্রমণ করতে হয়। প্রয়োজন হয় প্রচুর অর্থের। আগে প্রেসিডেন্টের বাছাই পদ্ধতি ছিল জটিল। প্রতিনিধি পরিষদে স্থানীয় অঙ্গরাজ্যগুলোর প্রার্থীদের মধ্য থেকেই প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন সম্পন্ন করার ব্যবস্থা ছিল। এরপর পার্টি ‘ককাসে’ প্রার্থী নির্বাচনের ব্যবস্থা হয়। আর ‘ককাস’ বা বাছাই ব্যবস্থায় চূড়ান্ত পর্যায়ে মনোনীত হয়ে প্রার্থীরা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৮৯-১৭৯৭)। তার কোনো দল ছিল না। তিনি ফেডারেলিস্টদের ব্যানারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্মরণ করিয়ে দিই, প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি কোনো বেতন গ্রহণ করেননি। বলা হয়ে থাকে, যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন (১৮০১-১৮০৯) ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রতিষ্ঠাতা। আর সেই দলটি থেকেই গেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন বারাক ওবামা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমদিকে দলটির নাম ছিল ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকান। ১৮২৫ সাল পর্যন্ত এ দলটি থেকেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। কুইন্সি এডামস (৬ষ্ঠ প্রেসিডেন্ট) ক্ষমতায় ছিলেন ১৮২৯ সাল পর্যন্ত। তারপর শুধু ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নাম ধারণ করে এন্ড্রু জনসন ও মার্টিন ভ্যান বুরেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন (১৮৪১)। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে উইগ পার্টির আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৮৫৩ সাল পর্যন্ত উইগ পার্টির প্রার্থীরা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এরপর দলটির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। আব্রাহাম লিঙ্কন (১৮৬১-১৮৬৫) ছিলেন রিপাবলিকান পার্টির প্রথম প্রেসিডেন্ট। এরপর থেকেই এ দুই পার্টি রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। সাধারণত একজন প্রেসিডেন্ট ৪ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। তিনি মাত্র দুই টার্ম ক্ষমতায় থাকতে পারেন। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট ১২ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত। ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্র্র্রের এ ৩২তম প্রেসিডেন্টের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্ষমতাসীন থেকেও দ্বিতীয় টার্মের জন্য সেই প্রেসিডেন্ট বিজয়ী হতে পারেননি। সমসাময়িককালে জেরাল্ড ফোর্ড (৩৮তম প্রেসিডেন্ট, রিপাবলিকান, ১৯৭৪-১৯৭৭), জিমি কার্টার (৩৯তম, ডেমোক্র্যাট, ১৯৭৭-১৯৮১), কিংবা সিনিয়র জর্জ বুশ (৪১তম, রিপাবলিকান, ১৯৮৯-১৯৯৩) এর নাম উল্লেখ করা যায়। এখন দেখা যাক, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে হিলারি ক্লিনটন হোয়াইট হাউসে তার টার্ম শুরু করতে পারেন কিনা। নয়া প্রেসিডেন্টের টার্ম শুরু হবে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে।
প্রতিটি প্রাক-নির্বাচনেই দেখা গেছে, কতগুলো ইস্যু প্রাধান্য পায়। আর ওইসব ইস্যুর ব্যাপারে প্রার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাব দেখে পার্টি ককাসে ডেলিগেটরা ভোট দেন ও কোনো বিশেষ ব্যক্তিকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেন। প্রার্থীদের একাধিক রাজ্যের ককাসে দলীয় অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়। বিভিন্ন বক্তব্য এখানে প্রাধান্য পায় বেশি। যেমনÑ এবার প্রাধান্য পেয়েছে সিরিয়া, ইরান ইস্যু। চীনের প্রশ্নটিও এসেছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট ওবামার সময়কার অর্থনৈতিক ইস্যুও রিপাবলিকান শিবিরে আলোচিত হচ্ছে। এমনকি রিপাবলিকান ‘ককাসে’ ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের পররাষ্ট্র সচিব থাকার সময় ব্যবহার করা ব্যক্তিগত ই-মেইল নিয়েও নানা কথা উঠেছে। রিপাবলিকানরা ওবামার অর্থনৈতিক নীতির সমালোচনা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তিনজনের মাঝে একজন গরিব। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সেখানে ৪৯ দশমিক ১ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে, সেই সঙ্গে আরও ৫১ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্যসীমার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে ধনী-গরিবের একটা বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনগোষ্ঠীর মাত্র ১ শতাংশ মানুষ রাষ্ট্রের সম্পদের ২৫ ভাগ নিয়ে যায়। এরা আবার সম্পদের ৪০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে। এ এক ভাগ মানুষের বার্ষিক আর্ন ২ কোটি ৭৩ লাখ ৪২ হাজার ২১২ ডলারের উপরে। কিন্তু বেকার মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে দেখা যায়, একটি কাজের জন্য ন্যূনতম চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। আরও খারাপ খবর হচ্ছে, ৪৭ দশমিক ৮ ভাগ পরিবার সরকারি খাদ্য সাহায্য বা ফুড স্টাম্পের ওপর নির্ভরশীল। এসব পরিবার কর্মজীবী। কিন্তু এদের আর্ন যথেষ্ট নয়। প্রেসিডেন্ট ওবামা যেখানে প্রতিটি নাগরিকের চাকরি নিশ্চিত করতে পারেননি, যেখানে স্বাস্থ্যসেবায় কাটছাঁট করেছেন, স্কুলে মাধ্যমিক পর্যায়ে যথেষ্ট শিক্ষক দিতে পারেননি, সেখানে কোটি কোটি ডলার খরচ করেছেন ‘তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ এর পেছনে। ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের খরচ হয়েছিল সব মিলিয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের ওপরে (যুদ্ধ খরচ ৮০৬ মিলিয়ন, সৈনিকদের চিকিৎসা ও অন্যান্য খরচ ৪২২ থেকে ৭১৭ মিলিয়ন)। আর আফগান যুদ্ধের খরচ ৩ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের অঙ্ককেও ছাড়িয়ে গেছে। শুধু সেনা প্রশিক্ষণের জন্য সেখানে ব্যয় হয়েছিল ৬ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে জনসংখ্যার ৯ দশমিক ১ ভাগ মানুষ বেকার, সেখানে যুদ্ধের পেছনে এত বিপুল ব্যয় নিয়ে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে। পররাষ্ট্রনীতিতে ডেমোক্র্যাটরা সফল, তাও বলা যাবে না। ২০০৯ সালের কায়রো ভাষণে ওবামা মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে ‘নতুন এক সম্পর্ক’ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু দেখা গেল, জঙ্গিবাদ উৎখাত করতে গিয়ে সেখানে জঙ্গিবাদেরই জন্ম হয়েছে। ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেনে আত্মঘাতী বোমাবাজির জন্ম হয়েছে। সাদ্দাম উৎখাতের পর সেখানে ইসলামী কট্টরপন্থিরা শক্তিশালী হয়েছে। সিরিয়ায় আসাদকে উৎখাত করতে গিয়ে দেখা গেল অস্ত্র চলে গেছে জঙ্গিদের হাতে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ‘আরব বসন্ত’ তিউনিশিয়া, ইয়েমেন ও মিসরে পরিবর্তন ডেকে আনলেও সেখানে কী ধরনের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। মিসরে আবার স্বৈরতন্ত্র ফিরে এসেছে। সেনা কর্তৃত্বে আবার ফিরে গেছে দেশটি। লিবিয়া কার্যত এখন নিয়ন্ত্রণ করে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী। সেখানে তথাকথিত একটি ‘সরকার’ থাকলেও সরকারের কোনো কর্তৃত্ব নেই। উপরন্তু বেনগাজির কাছাকাছি শহর দারনা চলে গেছে ইসলামী স্টেট জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে। তারা এ শহরকে ইসলামিক স্টেটের সম্প্রসারিত অংশ বলে ঘোষণা করেছে। ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনের পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে এবং এসব অঞ্চলে সন্ত্রাসী কর্মকা- বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে ওবামা প্রশাসনের ব্যর্থতার দায়ভার বহন করতে হবে হিলারি ক্লিনটনকে, যদি তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হন। ডেমোক্র্যাটরা যে বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব নিশ্চিত করতে পারেনি, এ অভিযোগ হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে উঠেছে। একসময় হিলারি নিজে ওবামা প্রশাসনের পররাষ্ট্র সচিব (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ছিলেন। তিনি তার সময়ে লিবিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি। এটা তার একটা মাইনাস পয়েন্ট। উপরন্তু ক্লিনটন ফাউন্ডেশন নিয়েও নানা কথা আছে। হিলারি ক্লিনটন তার স্বামী সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের সঙ্গে জড়িত। এ প্রতিষ্ঠানটি বিদেশি অনেক রাষ্ট্র থেকে ফান্ড পেয়েছে এবং তাদের স্বার্থে কাজ করেছে এমন অভিযোগ এরই মধ্যে উচ্চারিত হয়েছে। প্রাক-নির্বাচনী প্রচারণায় রিপাবলিকানরা ব্যবহার করছেন, এটাই স্বাভাবিক। যদিও বিখ্যাত সংবাদ মাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল কিংবা সিএনএন একাধিক জনমত সমীক্ষা প্রকাশ করেছে। সেখানে হিলারি ক্লিনটনকে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে আভাস দেয়া হয়েছে। সেটা যদি সত্যি হয়, তাহলে তা হবে এক ইতিহাস
মার্কিন নির্বাচন প্রচারণা এখন তুঙ্গে। যদিও প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। তারপরও এক ধরনের প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে দুই শিবিরেই, অর্থাৎ রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট শিবিরে। এসব প্রচারণায় ব্যক্তিগত বিষয়াদিও আলোচিত হচ্ছে। জুলাইয়ে যখন চূড়ান্তভাবে প্রার্থী মনোনীত হবেন, তখন দুই দলের দুইজন প্রার্থী খুব কম সময় পাবেন। মাত্র ৪ মাস সময় পাবেন। এ কারণেই দুইটি বড় দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন রাজ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া ‘ককাসে’ অংশ নিয়ে প্রচারণার কাজটি সেরে নিচ্ছেন। তবে বলতেই হবে, একজন ব্যক্তি কখনও কখনও ফ্যাক্টর হয়ে যান। যেমন ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি নভেম্বরে নির্বাচকম-লীর ভোটে ‘বিজয়ী’ হন, তাহলে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। আর হিলারি ‘বিজয়ী’ হলে, পরিবর্তন আসবে কম। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা বক্তব্য খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ‘মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেয়া হবে না’Ñ এ বক্তব্যে খোদ পোপ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, ট্রাম্প আদৌ খ্রিস্টীয় ধর্মে বিশ্বাসী কিনা সে ব্যাপারে তার সন্দেহ রয়েছে! ‘মেক্সিকান অবৈধ অভিবাসীদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে টেক্সাসে তিনি উঁচু বেড়া নির্মাণ করবেন’Ñ এ বক্তব্যও কনজারভেটিভরা অনেকে গ্রহণ করেননি। এজন্য দেখা যায়, টেক্সাসে ট্রাম্প বিজয়ী হতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যেখানে ট্রাম্পের বিনিয়োগ রয়েছে (কানাডা, পানামা, তুরস্ক) প্রতিটি জায়গাতেই তিনি একজন বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। মজার কথা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা যখন শুরু হয়, তখন রিপাবলিকান শিবিরে ট্রাম্পকে সিরিয়াস প্রার্থী হিসেবে ভাবা হয়নি। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি তার অবস্থান শক্তিশালী করেছেন। বহুল আলোচিত সুপার টুইসডেতে হিলারি ও ট্রাম্প আলাদা আলাদাভাবে বিজয়ী হলেও এখনও বাকি আছে আরও ক’টি রাজ্যের বাছাই পর্ব। এক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাট শিবিরে হিলারি ক্লিনটনের প্রার্থী পদ প্রায় ‘নিশ্চিত’ হলেও ট্রাম্পের উত্থান রিপাবলিকান শিবিরের ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও ধরে নেয়া হয়, তিনিই রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পাবেন। তবে নানা বিষয়ে ট্রাম্প যে ‘বিতর্ক’ সৃষ্টি করেছেন, তাতে করে নির্বাচকম-লী চূড়ান্ত বিচারে, অর্থাৎ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার ওপর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারে। আর এটাই হবে হিলারির জন্য প্লাস পয়েন্ট। এখনও কিছু প্রাইমারি বাকি আছে। প্রার্থীদের সবাইকে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারিতেই অংশ নিতে হয় এবং তার পক্ষে সমর্থন আদায় করতে হয়। ফলে দলীয় প্রাইমারিগুলো নিয়ে হিলারি এবং ট্রাম্প উভয়েই ব্যস্ত। তবে যেহেতু ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান শিবিরে অনেকেই তাদের প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন, ফলে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় হিলারি আর ট্রাম্প থাকবেন বলেই মনে হয়।
Daily Alokoto Bangladesh
15.05.16

আরো পড়ুন:

৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি আন্তর্জাতিকে, পার্ট – ১০

৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি আন্তর্জাতিকে, পার্ট – ১১

৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি আন্তর্জাতিকে, পার্ট – ১২

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline