মানবদেহ-সংবেদী অঙ্গ
প্রারম্ভিক আলোচনা: অধ্যায়টা গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যায় সারবস্তু:
১. মানুষের সংবেদী অঙ্গ পাঁচটি, যথা: চোখ, কান, নাক, জিহ্বা ও ত্বক ।
চোখ:
২. চোখের ১/৬ অংশ বাইরে উন্মোচিত, বাকি ৫/৬ অংশ কোটরের ভেতরে অবস্থান করে।
৩. অক্ষিগোলকের আবরণ তিন স্তর বিশিষ্ট। যথা:
- তন্তুময় স্তর (সবচেয়ে বাইরের স্তর)
- রক্তবাহিকাময় স্তর
- স্নায়ুময় স্তর (সবচেয়ে ভেতরের স্তর)
৪. তন্তুময় স্তর দু’টি অংশে বিভক্ত। যথা:
- কর্ণিয়া (চোখের লেন্সের সামনের স্বচ্ছ স্তর)
- স্ক্লেরা (কর্ণিয়া বাদে অক্ষিগোলকের অস্বচ্ছ আবরণ)
৫. রক্তবাহিকাময় স্তর তিনটি অংশে বিভক্ত। যথা:
- আইরিশ (সাধারণ কালো, অনেকের বাদামী, নীল এমনকি সবুজও হয়)
- কোরয়েড
- সিলীয় অঙ্গ
৬. স্নায়ুময় স্তর রেটিনা-য় গঠিত, যাতে দু’ধরণের আলো-সংবেদী কোষ রয়েছে, রড ও কোণ কোষ।
৭. কর্ণিয়া ও আইরিশের মধ্যবর্তী গহবর অ্যাকুয়াস হিউমার নামক ক্ষারীয় তরলে পূর্ণ থাকে। লেন্স ও রেটিনার মধ্যবর্তী ভিট্রিয়াস হিউমার নামক জেলী সদৃশ পদার্থে পূর্ণ থাকে। (আগে অ্যাকুয়াস, পরে ভিট্রিয়াস)
৮. স্তিমিত আলোয় বেশি আলো গ্রহণ করার জন্য পিউপিল বড় হয়, আর উজ্জ্বল আলোয় কম আলো গ্রহণ করার জন্য পিউপিল সংকুচিত হয়।
৯. বৃত্তাকার পেশীর প্রসারণ হলে অরীয় (লম্বালম্বি) পেশীর সংকোচন হয়, ফলে পিউপিল স্ফীত হয়, আবার বৃত্তাকার পেশীর সংকোচন হলে এবং অরীয় পেশী শিথিল অবস্থায় আসলে পিউপিল ছোট হয়। (বৃত্তাকার পেশীর প্রসারণ, পিউপিল বড় এবং বৃত্তাকার পেশীর সংকোচন, পিউপিল ছোট)
১০. রেটিনার কেন্দ্রের কাছে পীত(হলুদ) বিন্দু বা ফোবিয়া সেন্ট্রালিস নামে একটি ক্ষুদ্র অঞ্চল রয়েছে যেটি অতিরিক্ত আলো-সংবেদী।
১১. পীতবিন্দু বা ফোবিয়া সেন্ট্রালিসের কাছে যে অংশে অপটিক স্নায়ু ও রক্তবাহিকা প্রবেশ করে, সে অংশে কোন আলো-সংবেদী কোষ নেই, একে অন্ধ বিন্দু বলে।
১২. তিনজোড়া বিপরীত ধর্মী অক্ষিপেশী দিয়ে প্রতিটি অক্ষিগোলক অক্ষিকোটরের সাথে সংযুক্ত (তিনটি করোটিক স্নায়ু অক্ষিগোলকের সঞ্চালন ঘটায়):
- সুপিরিয়র ও ইনফিরিয়র রেক্টাস
- ইন্টার্নাল ও এক্সটার্নাল রেক্টাস
- ইন্টার্নাল ও এক্সটার্নাল অবলিক
(সুপিরিয়র ও ইনফিরিয়র অবলিক বলে কিছু নেই, খেয়াল রাখা প্রয়োজন)
১৩. প্রত্যেক চোখের উপরে ও নিচে দু’টি পর্দা থাকে, উর্ধ্ব নেত্রপল্লব ও নিম্ন নেত্রপল্লব।
১৪. প্রত্যেক চোখে তিন ধরনের গ্রন্থি থাকে, যথা:
- অশ্রুগ্রন্থি
- হার্ডেরিয়ান গ্রন্থি (জ্যাকব হার্ডার-এর নামানুসারে)
- মেবোমিয়ান গ্রন্থি ( হেনরিখ মেবোম-এর নামানুসারে)
কান:
১৫. কান শুধুমাত্র শ্রবণের কাজ করে, তাই নয়, এটি দেহের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে।
১৬. কান তিনটি অংশে বিভক্ত। যথা:
- বহিঃকরুণ
- মধ্যকরুণ
- অন্তঃকরুণ
১৭. বহিঃকরুণ তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা:
- পিনা: বাইরে কানের যে অংশটি আমরা দেখতে পাই
- বহিঃঅডিটরি মিটাস বা কর্ণকুহর: পিনা থেকে শুরু করে কানের টিমপানিক পর্দা পর্যন্ত এটি অবস্থিত
- টিমপেনিক পর্দা বা কর্ণপটহ (পটহ=ঢোলের পর্দা): শব্দতরঙ্গে কেঁপে ওঠে ও তা মধ্যকর্ণে পরিবাহিত করে
১৮. মধ্যকরুণ ইউস্টেশিয়ান নালী বিদ্যমান যে মধ্যকর্ণ-এর নিচের দিক হতে গলবিল পর্যন্ত বিস্তৃত
১৯. মধ্যকরুণের গহ্বরে পরস্পর পেশী দিয়ে যু্ক্ত তিনটি অস্থি সুনির্দিষ্টভাবে সাজানো। যথা:
- ম্যালিয়াস
- ইনকাস
- স্টেপিস
(মনে রাখার জন্য এভাবে ভাবা যেতে পারে, MIS)
২০. মধ্যকরুণের প্রাচীরে দু’টি ছোট ছিদ্রপথ থাকে, যথা:
- উপরেরটি ফেনেস্ট্রা ওভালিস যেটি ওভাল বা ডিম্বাকৃতির (ফেনেস্ট্রা বলতে বোঝায় ছোট জানালার মত ছিদ্র)
- নিচেরটি ফেনেস্ট্রা রোটান্ডা যেটি গোলাকৃতির
২১. স্টেপিস ফেনেস্ট্রা ওভালিসের সাথে যুক্ত থাকে, যার মাধ্যমে শব্দ টিমপেনিক পর্দা থেকে তিনটি অস্থি পেরিয়ে অন্তঃকর্ণে প্রবেশ করে। শব্দতরঙ্গ কক্লিয়ায় প্রবেশের পর অবশেষে ফেনেস্ট্রা রোটান্ডার মাধ্যমে বাইরে চলে আসে।
২২. অন্তঃকরুণ দু’টি প্রকোষ্ঠ নিয়ে গঠিত। যথা:
- ইউট্রিকুলাস
- স্যাকুলাস
২৩. ইউট্রিকুলাস ভারসাম্য অঙ্গ। এর সাথে দু’টি উলম্ব ও একটি আনুভূমিক ভাবে অবস্থিত মোট তিনটি অর্ধবৃত্তাকার নালী রয়েছে যারা পরস্পর সমকোণে অবস্থিত।
২৪. প্রত্যেক নালীর এক প্রান্ত স্ফীত হয়ে অ্যাম্পুলা তৈরি করে যাতে সংবেদী রোম থাকে। রোমগুলো চুনময় দানা সম্বলিত জেলির মতো ওটোলিথে আবৃত।
২৫. দেহের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে ইউট্রিকুলাস মস্তিষ্কের সেরেবেলামকে সাহায্য করে ও দেহ-অবস্থানের অনুভূতির উদ্রেগ করে।
২৬. স্যাকুলাস শ্রবণ অঙ্গ। এতে শামুকের খোলকের মতো প্যাঁচানো একটি নালিকা থাকে যাকে ককলিয়া বলে (ল্যাটিন ভাষায় ককলিয়া মানে শামুকের খোলক)।
২৭. ককলিয়া তিনটি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত। যথা:
- স্ক্যালা ভেস্টিবুলি (উপরে)
- স্ক্যালা মিডিয়া (মাঝে)
- স্ক্যালা টিমপেনি (নিচে)
২৮. স্ক্যালা মিডিয়ার উপরে রেসনার-এর ঝিল্লী ও নিচে বেসিলার ঝিল্লী থাকে।
২৯. বেসিলার ঝিল্লীর কিছু কোষ রূপান্তরিত হয়ে অর্গান অব কর্টি গঠন করে যাতে সংবেদী রোম অবস্থিত।
৩০. শ্রবণ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ:
- বাইরে থেকে আসা শব্দতরঙ্গ কানের টিমপেনিক পর্দায় আঘাত করলে তা কেঁপে ওঠে।
- কম্পন ধারাবাহিক ভাবে (MIS) ম্যালিয়াস, ইনকাস, স্টেপিস-এ পরিবাহিত হয়ে ওভালিসের পর্দা ও পরে ককলিয়ার পেরিলিম্ফে যায়।
- পেরিলিম্ফে কাঁপন হলে অর্গান অব কর্টির সংবেদী রোম থাকা কোষগুলো উদ্দীপিত হয়ে শ্রবণের স্নায়ু আবেগ তৈরি করে যেটি স্নায়ুকোষের মাধ্যমে মস্তিষ্কের শ্রবণকেন্দ্রে পরিবাহিত হলে শ্রবণ অনুভূতির সৃষ্টি করে।
৩১. ভারসাম্য রক্ষার বিভিন্ন ধাপ:
- ইউট্রিকুলাস ও স্যাকুলাসের বিভিন্ন জায়গায় সংবেদী কোষ ওটোলিথ নামক চুনময় পদার্থ সম্বলিত জেলীর মতো কণা দ্বারা আবৃত থাকে।
- মাথা কোন এক তলে হেলে গেলে পাশের ওটোলিথগুলো সংবেদী রোমের সংস্পর্শে আসে, ফলে সংবেদী কোষগুলো উদ্দীপ্ত হয়।
- তখন মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয় নির্দেশের মাধ্যমে মাথা আবার স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনার জন্য সচেষ্ট হয়। এভাবে দেহের ভারসাম্য বজায় থাকে।
প্রাণিবিজ্ঞান সকল অধ্যায় দেখতে এখানে যান
1 responses on "উচ্চ মাধ্যমিক এইচএসসি প্রাণিবিজ্ঞান : মানবদেহ- সংবেদী অঙ্গ"