উচ্চ মাধ্যমিক এইচএসসি প্রাণিবিজ্ঞান : মানবদেহ- শ্বসন তন্ত্র

মানবদেহ – শ্বসন তন্ত্র

প্রারম্ভিক আলোচনা: অধ্যায়টা গুরুত্বপূর্ণ।

অধ্যায় সারবস্তু:

১. শ্বসন বলতে কেবল শ্বাস গ্রহণ বোঝায় না। জীববিজ্ঞানের ভাষায় শ্বসন বলতে বোঝায় যে বিশেষ জৈবনিক প্রক্রিয়ায় কোষে থাকা খাদ্যের রাসায়নিক শক্তি তাপ ও গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ও জলীয় বাষ্প নির্গত হয়।

 

২. শ্বসনতন্ত্রকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

  • পরিবহনকারী অংশ
  • শ্বসনকারী অংশ

 

৩. নাসিকার কাজ:

  • প্রশ্বাস বায়ুতে ধূলিকণা ও রোগজীবাণু থাকে, যেটি লোম ও শ্লেষ্মাঝিল্লী আটকে ছাঁকনীর মত কাজ করে।
  • নাসাপথ অতিক্রমকারী বাতাস কিছুটা গরম ও আর্দ্র (জলীয় বাষ্প সমৃদ্ধ) হয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করে।

৪. Pharynx হল গলবিল। এবং Larynx হল স্বরযন্ত্র। স্বরযন্ত্রে এপিগ্লটিস নামক ঢাকনা থাকে, যেটি খাদ্যগ্রহণের সময় যাতে খাদ্য ল্যারিংক্সে প্রবেশ করতে না পারে, এ জন্য ল্যারিংক্সকে ঢেকে রাখে।

৫. ট্রাকিয়া তরুণাস্থি নির্মিত ১২ সেমি লম্বা ও ২ সেমি ব্যাসবিশিষ্ট ফাঁপা নল।

৬. ট্রাকিয়া বক্ষ গহবরে প্রবেশ করে ৪র্থ বা ৫ম থোরাসিক বা বক্ষদেশীয় কশেরুকার লেভেলে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যে দু’টি শাখার সৃষ্টি করে, তাদের ব্রঙ্কাই বলা হয়। প্রথম ডান ও বাম শাখাকে বলা হয় মুখ্য ব্রঙ্কাই, পরে এটি অসংখ্য ক্ষুদ্রতর শাখা-প্রশাখায় বিস্তার লাভ করে, যাদের ব্রঙ্কিওল বলে।

৭. ব্রঙ্কাইর ডান শাখাটি অপেক্ষাকৃত চওড়া বাম শাখাটির চেয়ে, কিন্তু বাম শাখাটি অপেক্ষাকৃত লম্বা।

৮. ব্রঙ্কিওলের ক্ষুদ্রতম প্রান্তে ফুসফুসের শ্বসন অঞ্চল অবস্থিত। এটি অসংখ্য বায়ুপূর্ণ থলি বা অ্যালভিওলার থলি এবং অ্যালভিওলি নিয়ে গঠিত।

৯. ডান ফুসফুস তিন খণ্ডবিশিষ্ট এবং বাম ফুসফুস দুই খণ্ডবিশিষ্ট। (যেমন হৃদপিণ্ডের ডানে ট্রাইকাসপিড ও বামে বাইকাসপিড)

১০. ফুসফুস অনেকগুলো কার্যকরী ফুসফুসীয় এককে বিভক্ত যাদের লোবিউল বলা হয়। ডান ফুসফুসে ১০ টি এবং বাম ফুসফুসে ৮টি লোবিউল থাকে।

১১. ফুসফুসের বাইরের তল দ্বিস্তরী ভিসেরাল প্লুরা নামক পাতলা ঝিল্লী দ্বারা আবৃত। (হৃদপিণ্ড যেমন পেরিকার্ডিয়াম দ্বারা আবৃত)

১২. অ্যালভিওলার থলি ও অ্যালভিওলার নালীর মধ্যবর্তী অংশকে অ্যাট্রিয়াম বলে। অ্যালভিওলার থলিতে ২-৪ বা তারও বেশি অ্যালভিওলি থাকে।

১৩. প্রত্যেক অ্যালভিওলাস (বহুবচনে অ্যালভিওলি)-এর ব্যাস ০.২-০.৩ মিমি যারা পালমোনারী ধমনী থেকে উৎপন্ন কৈশিক জালিকার সাথে নিবিড় সান্নিধ্যে থেকে গ্যাসীয় বিনিময়ে অংশ নেয়।

১৪. পূর্ণবয়ষ্কে মানুষে ৩০০-৪০০ মিলিয়ন অ্যালভিওলি পাওয়া যায়।

 

১৫. শ্বসন প্রক্রিয়াকে দু’টি ভাগে ভাগ করা যায়:

  • বহিঃশ্বসন
  • অন্তঃশ্বসন

১৬. বহিঃশ্বসন: ফুসফুসে যে প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন ফুসফুস হতে রক্তে প্রবেশ করে এবং রক্ত থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড ফুসফুসে প্রবেশ করে, তাকে বহিঃশ্বসন বলে।

১৭. বহিঃশ্বসন প্রক্রিয়া: প্রশ্বাসের ফলে অ্যালভিওলিতে অক্সিজেন সমৃদ্ধ বাতাস প্রবেশ করে। অ্যালভিওলির প্রাচীর খুব পাতলা এবং কৈশিক জালিকা সমৃদ্ধ। পালমোনারী ধমনী থেকে সৃষ্ট কৈশিক জালিকায় অক্সিজেন কম থাকার রক্ত থাকে, ফলে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন অ্যালভিওলি থেকে কৈশিক জালিকার রক্তে প্রবেশ করে এবং রক্ত অক্সিজেন সমৃদ্ধ হয়ে পালমোনারী শিরা দিয়ে বের হয়।

 

১৮. বহিঃশ্বসনে দু’পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। যথা :

  • প্রশ্বাস বা শ্বাসগ্রহণ
  • নিঃশ্বাস বা শ্বাসত্যাগ

১৯. প্রশ্বাস একটি সক্রিয় প্রক্রিয়া যেখানে বিভিন্ন পেশী সঞ্চালিত হয়। এবং নিঃশ্বাস একটি নিষ্ক্রিয় প্রক্রিয়া যেখানে প্রশ্বাসে অংশগ্রহণকারী পেশীর শিথিলতার জন্য এটি ঘটে।

২০. পূর্ণ-বয়ষ্ক সুস্থ মানুষ বিশ্রামকালে প্রতি মিনিটি ১৪-১৮ বার শ্বসন ঘটে। (৭০-৮০ বার হৃদস্পন্দন হয়)। নবজাত শিশুতে ৪০ বার সংগঠিত হয়।

২১. অন্তঃশ্বসন: শ্বসনের যে ধাপে রক্ত থেকে অক্সিজেন কোষে প্রবেশ করে এবং কোষের মধ্যে থাকা খাদ্য জারিত করে শক্তি উৎপন্ন করে এবং এর ফলে সৃষ্ট কার্বন ডাইঅক্সাইড আবার রক্তে ত্যাগ করে, এই ধাপকে অন্তঃশ্বসন বলে।

 

২২. অন্তঃশ্বসনে তিনটি পর্যায় রয়েছে। যথা:

  • অক্সিজেন পরিবহন
  • খাদ্যবস্তুর জারণ
  • কার্বন ডাই অক্সাইড পরিবহন

২৩. অক্সিজেন লোহিত কণিকার হিমোগ্লোবিনের সাথে অস্থায়ীভাবে যু্ক্ত হয়ে অক্সিহিমোগ্লোবিন রূপে রক্তে বাহিত হয়।

 

২৪. বিভিন্ন শ্বসন জটিলতা সৃষ্টিকারী উপাদানঃ

শ্বসন জটিলতারাসায়নিক উপাদানঅক্সিজেনহীনতার জন্য শ্বাসকষ্টকার্বন মনো অক্সাইড (CO), হাইড্রোজেন সায়ানাইড (HCN), ক্যাডমিয়াম (Cd)শ্বাসনালীর প্রদাহনাইট্রোজেন অক্সাইড (NO2), ফসফরাস যৌগ, আর্সেনিক (As), ক্যাডমিয়াম অক্সাইড (CdO), বেরিলিয়াম অক্সাইড (BeO)প্রচন্ড কাশিভ্যানাডিয়াম, অক্সিজেন ও সালফার যৌগ (O3, SO2, H2S), ক্লোরিন (Cl)ব্রঙ্কাইটিসসেলেনিয়াম অক্সাইড (SeO2), অসমিয়াম টেট্রাঅক্সাইড (OsO4)ফ্যারিঞ্জাইটিসম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড (MnO2)নিউমোনিয়াম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড (MnO2), নিকেল (Ni)হাঁপানির যন্ত্রণা বৃদ্ধিঅসমিয়াম টেট্রাঅক্সাইড (OsO4), ছত্রাকের স্পোর, পরাগরেণু, তুলার আঁশঅ্যাসবেসটোসিস
সিলিকোসিস
বাইসিনোসিসঅ্যাসবেসটস কণা
সিলিকা কণা
পাটের আঁশের কণাক্যান্সারসিলিকা (SiO2), নিকেল [Ni(CO)4]

প্রাণিবিজ্ঞান সকল অধ্যায় দেখতে এখানে যান

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline