রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শাখার দ্বিতীয় শ্রেণির মর্নিং শিফটের শিক্ষার্থী আবিদের বাসা আগারগাঁওয়ে। মিরপুরে অবস্থিত ওই বিদ্যালয়ে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টায় ক্লাস শুরু হয় আবিদের। ফলে বাসা থেকে পৌনে ৭টার মধ্যেই বেরোতে হয় তাকে। কিন্তু ওই সময় প্রচণ্ড ঠাণ্ডার পাশাপাশি এত ঘন কুয়াশা থাকে যে আশপাশের কিছু ঠিকমতো দেখা যায় না। এর মধ্য দিয়েই বছরের প্রথম দিন থেকে স্কুলে যেতে হচ্ছে ওকে।
আবিদের মা আয়শা আক্তার বলেন, ‘বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যেতে খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এই শীতে আমরাই ঘর থেকে বের হতে পারি না। অথচ সাত বছরের শিশুকে স্কুলে যেতে হচ্ছে। পৌনে ৭টায় বের হতে হলে সকাল ৬টায় বাচ্চাকে ঘুম থেকে তুলতে হয়। কিন্তু কিছুতেই ওর ঘুম ভাঙতে চায় না। কোনোরকমে ড্রেস পরিয়ে ঘুমের অবস্থায়ই নিয়ে যাই। গত কয়েক দিন প্রচণ্ড শীতে স্কুলে যাওয়ার ফলে ওর ঠাণ্ডাও লেগে গেছে। এই সময়ে কয়েক দিন স্কুল বন্ধ রাখা হলে খুবই ভালো হয়।’
শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের মর্নিং শিফটের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী আনিশার বাবা আকবর হোসেন বলেন, ‘শীতের জন্য কয়েক দিন ধরে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাচ্ছি না। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস তো সবার আগে ছুটি হয়। যদি ওদের ক্লাসটা এক ঘণ্টা পরেও শুরু করা যায়, তাহলেও সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হতো।’
বছরের প্রথম দিন ছিল বই উৎসব। এরপর ২ জানুয়ারিই খুলেছে অনেক স্কুল। আর বেশির ভাগ স্কুল খুলেছে ৭ জানুয়ারি। যেসব স্কুল বাকি ছিল সেগুলোও গত ১৪ জানুয়ারি খুলেছে। ফলে এখন সব স্কুলই খোলা। তীব্র শীতের মধ্যে শিশুদের স্কুলে যেতে হচ্ছে। এতে অনেক শিশুই নিউমোনিয়াসহ ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু এই শীতকষ্টের মধ্যেই শিশুদের স্কুল চালিয়ে যেতে হচ্ছে। আর যেসব শিশু এবারই প্রথম স্কুলে ভর্তি হয়েছে, তাদের কষ্টটা আরো অসহনীয়। অনেক শিশুর মনেই স্কুল সম্পর্কে ভীতি ঢুকে গেছে।
জানা যায়, রাজধানীর নামিদামি স্কুলগুলো সাধারণত দুই শিফটের। মর্নিং শিফট শুরু হয় সকাল সাড়ে ৭টায়, চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এরপর ডে শিফট দুপুর ১২টায় শুরু হয়ে চলে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। তাই কোনোভাবেই মর্নিং শিফট দেরিতে শুরু করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন অনেক শিক্ষক।
তবে মনিং শিফটের স্কুলগুলো সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হলেও এর ২০ মিনিট আগে অ্যাসেম্বলি শুরু হয়। তবে তীব্র শীতের কারণে বেশির ভাগ স্কুলেই অ্যাসেম্বলি হচ্ছে না বলে জানা যায়। আবার ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। তখন যেসব স্কুলে কেন্দ্র পড়বে সেগুলো বন্ধ থাকবে। তাই সব স্কুল কর্তৃপক্ষই জানুয়ারি মাসে ক্লাস চালিয়ে যেতে চাইছে।
মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ বলেন, ‘শীত বাড়ায় বাচ্চাদের উপস্থিতি কিছুটা কমেছে। তবে আমরা বাচ্চাদের অ্যাসেম্বলি করাচ্ছি না। আর প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস এত দিন সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হলেও এখন সাড়ে ৮টায় শুরু করছি। সবচেয়ে বেশি সমস্যা তাদেরই। তাই তাদের ক্লাস এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিয়েছি।’
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়ার বাবা হুমায়ন কবির বলেন, ‘চার-পাঁচটা জামাকাপড় পরিয়ে বাচ্চাকে স্কুলে নিচ্ছি। তাও সকালবেলায় শীতে কাঁপতে থাকে। প্রতিদিন যেভাবে শীত বাড়ছে এতে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিন্তু কী করব, বাচ্চা স্কুলে না গেলেই তো ফাইন করা হবে।’
এসব বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমাদের কাছে এখনো কোনো প্রতিষ্ঠানপ্রধান বা অভিভাবক শীতে সমস্যার কথা জানাননি। যদি অভিভাবকরা সমস্যায় পড়তেন তাহলে তাঁরা স্কুলে জানাতেন অথবা আমাদের জানাতেন। যেহেতু কেউ তাঁদের সমস্যার কথা জানাননি, তাই আমরা এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।’
0 responses on "ভীষণ শীতকষ্টে শিশুদের স্কুলে যাতায়াত"