মূতি ও ভাস্কর্য এর পার্থক্য

ভাস্কর্য আর মূর্তির পার্থক্য

হাইকোর্ট চত্ত্বরে স্থাপিত গ্রিক দেবীর মূর্তি থেমিসের অপসারণ দাবি করে আসছিল হেফাজত ইসলাম। তারই প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার (২৫ মে ২০১৭) রাত ১২টা থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত লোক চক্ষুর আড়ালে এই মুর্তি অপসারণ করেন। একদিকে হাইকোর্টের প্রধান ফটকের সামনে চলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিক্ষোভ মিছিল, মানবন্ধন অন্যদিকে ভাস্কর্য অপসারণের কাজ।

ভাস্কর্য আর মুর্তির মধ্যে পার্থক্য থাকলেও অনেকেই দুটিকে একই ভাবছেন। ইশিখন.কম ফ্যানপেইজে ভাস্কর্য আর মুর্তির পার্থক্য জানতে চাওয়া হলে অনেকেই বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

জুয়েল অর্ক নামে একজন লিখেছেন, “মূর্তি যেটি মন্দিরে থাকে হিন্দুরা পূজা করে। অন্যদিকে ভাস্কর্য হল যেটি ইতিহাস ও সংস্কৃতি লালন করে ।”

অন্যদিকে হাসান সাকি নামে একজন লিখেছেন, “কোন পার্থক্য নাই। হিন্দুরা আগে বলুক তাদের পূজা করার নির্দিষ্ট বস্তুটি কি? বা দেখতে কেমন? এখন নানা রকম বর্ণনা আসছে অনেকের কাছ থেকে যেটি খোড়া যুক্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। পূজা আর ভাস্কর্যের পার্থক্য হল আব্বা আর বাবার মত। একই জিনিস শুধু ডাকনামটা আলাদা। আর এটা যদি মূর্তিই না হবে তো হিন্দুদের ব্যাথা লাগে কেন? ব্যাথা লাগার কথা তো নাস্তিকদের। ভারতীয় পত্রিকাগুলো এতো ফোলাও করে প্রচার করচে কেন? সবই ঠিক আছে তবে মূর্তিবাদী আর ভাষ্কর্যবাদীরা আলাদা পরিচয় দেওয়ার জন্য শুরু করছে মিথ্যাচার।”

রিজভী হাসান নামে একজন বলেন, “মূর্তি হিন্দু ধর্মাবলীরা পূজা করে আর ভাস্কর্য নাস্তিকরা পূজা করে।”

ভাস্কর্য ও মুর্তি মধ্যে পার্থক্য

মূর্তি

মূর্তি শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল “অবয়ব”।সাধারণত পাথর, কাঠ, ধাতু অথবা মাটি দিয়ে মূর্তি নির্মাণ করা হয়। হিন্দুরা মূর্তির মাধ্যমে দেবতার পূজা করে থাকেন।মূর্তিতে দেবতার আবাহন ও প্রাণপ্রতিষ্ঠা করার পরই হিন্দুরা সেই মূর্তিকে পূজার যোগ্য মনে করেন।ধর্মীয় সংস্কার বা শাস্ত্রের নির্দেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট দেবতার মূর্তি নির্মিত হয়ে থাকে।

ভারতীয় উপমহাদেশে মূর্তি:

হিন্দুধর্মে মূর্তি বলতে দেবতার প্রতিমাকে বোঝায়। হিন্দু দেবদেবীদের মূর্তি প্রধানত মানুষের আদলে নির্মিত। পশুর আদলে বা আংশিক পশুর আদলেও (যেমন, হনুমান, নৃসিংহ, গণেশ) দেবতার মূর্তি নির্মিত হয়ে থাকে।

আরো দেখে নিন সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য কেন বসানো হয়েছিল, এই ভাস্কর্য কি অর্থ বহন করে?

দক্ষিণ ভারতে কালো গ্র্যানাইট পাথরের মূর্তি নির্মিত হয়। উত্তর ভারতে শ্বেতপাথরের মূর্তি নির্মিত হয়ে থাকে। বঙ্গদেশে মাটি, ধাতু, কাঠ ও পাথর দিয়ে মূর্তি নির্মাণের প্রথা রয়েছে।

ভাস্কর্য

ভাস্কর্য (ইংরেজী ভাষায়: Sculpture) ত্রি-মাত্রিক শিল্পকর্মকে ভাস্কর্য বলে।অর্থাৎ, জ্যামিতিশাস্ত্রের ঘণকের ন্যায় ভাস্কর্য কে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং গভীরতা সহ ত্রি-মাত্রিক হতে হবে। ভারত, বাংলাদেশ এবং চীনের ন্যায় বিশ্বের সর্বত্র বিভিন্ন ধরনের, বহুমূখী আকৃতির ভাস্কর্য দেখতে পাওয়া যায়। রেনেসাঁ এবং আধুনিককালে এটি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে। পুতুল, মুখোশ, মাটির জিনিসপত্র ভাস্কর্য ের উদাহরণ। কিন্তু প্রায় চারশত বছর পূর্বে তুরস্কে ইসলামপন্থী দলের বিধি-নিষেধের কবলে পড়ে সেখানে ভাস্কর্য শিল্পকলার তেমন উন্মেষ ঘটেনি।

যিনি প্রস্তরাদি, কাঠ ইত্যাদি দিয়ে মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ করেন, তিনি ভাস্কররূপে জনসমক্ষে পরিচিতি লাভ করেন।

ভারতীয় উপমহাদেশে ভাস্কর্য :

খ্রীষ্ট-পূর্ব ৩৩০০-১৭০০ সালে প্রতিষ্ঠিত সিন্ধু সভ্যতায় প্রথম ভাস্কর্য ের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বর্তমান পাকিস্তানের মহেঞ্জোদাড়ো এবং হরপ্পায় দেখা গিয়েছিল। পরবর্তীতে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের উত্তরণে ভারতে ব্রোঞ্জ ধাতু ও পাথরে খোদাই করে সৃষ্টি করা হয় ভাস্কর্য গুলো। সমধিক পরিচিত দেব-দেবীদের মূর্তি ভাস্কর্য আকারে তৈরী করে মন্দির কিংবা উপাসনালয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। তন্মধ্যে ইলোরা এবং অজন্তা’য় পাথরের ভাস্কর্য গুলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ ভাস্কর্য শিল্পকলা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে।

মূর্তি ও ভাস্কর্যের পার্থক্য:

মূর্তি ও ভাস্কর্য ের মধ্যে বিশাল বড় কোন পার্থক্য লক্ষণীয় নয়। মূর্তি শব্দটা একটা প্রাচীন ব্রাক্ষী লিপি (দেবনাগরী) থেকে আসছে। শব্দের অর্থ “আকার” হলেও এটা দিয়ে মূলত দেবতার প্রতিনিধি হিসাবে ধরে।

অন্যদিকে  ভাস্কর্য হচ্ছে খোদাই করা একটা শিল্প মাধ্যম। যেমন নিচের ছবিও একটা ভাস্কর্য । ভাস্কর্য সবসময় মূর্ত না হয়ে বিমূর্ত (Abstract) হতে পারে। কিন্তু মূর্তি সাধারণত Abstract হয়না। এটাই মূল পার্থক্য

মূর্তি বানানো হয় ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে উপাসনা করার জন্য। অন্যদিকে ভাস্কর্য  সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য, অথবা কোন কিছুর স্মৃতি / প্রতীক স্বরূপ। যেমন: আমাদের শহীদ মিনার আর স্মৃতিসৌধ ভাস্কর্য । মতিঝিলের শাপলা চত্বরের শাপলাটাও ভাস্কর্য ।

সহজ কথায়:

  • যেগুলোকে worship (অর্ঘ প্রদান) করা হয়, ওগুলো মূর্তি।
  •  যেগুলো সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজে ও স্থাপত্য শিল্পে, অট্টালিকা, রাস্তার পাশে সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ ব্যবহৃত হয়; কিন্তু, পূজার জন্য ব্যবহৃত হবে না, সেগুলোকে স্থাপত্য বলা যেতে পারে।

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline