১৪. যেসব স্বরসন্ধি নিয়ম মানে না, নিয়ম ভেঙে সন্ধি হয় তাদের নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলে। যেমন, ‘কুল+অটা’ সন্ধি করে হওয়ার কথা ‘কুলাটা’ (অ+অ = আ)। কিন্তু সন্ধি হওয়ার পর তা হয়ে গেছে ‘কুলটা’। তাই এটা নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি। যেমন-
নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি
কুল+অটা = কুলটা (কুলাটা নয়)
গো+অক্ষ = গবাক্ষ (গবক্ষ নয়)
প্র+ঊঢ় = প্রৌঢ় (প্রোঢ় নয়)
অন্য+অন্য = অন্যান্য (অন্যোন্য নয়)
মার্ত+অন্ড = মার্তন্ড (মার্তান্ড নয়)
শুদ্ধ+ওদন = শুদ্ধোদন (শুদ্ধৌদন নয়)
ব্যঞ্জনসন্ধি
যে দুইটি ধ্বনির মিলনে সন্ধি হবে, তাদের একটিও যদি ব্যঞ্জনধ্বনি হয়, তাহলেই সেই সন্ধিকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলা হয়। ব্যঞ্জনসন্ধি ৩ ভাবে হতে পারে-
১. স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি
২. ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি
৩. ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি
স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি
১. স্বরধ্বনির পর ‘ছ’ থাকলে তা দ্বিত্ব হয়, অর্থাৎ ‘ছ’-র বদলে ‘চ্ছ’ হয়। যেমন-
অ+ছ = চ্ছ
এক+ছত্র = একচ্ছত্র
মুখ+ছবি = মুখচ্ছবি
অঙ্গ+ছেদ = অঙ্গচ্ছেদ
আলোক+ছটা= আলোকচ্ছটা
প্র+ছদ = প্রচ্ছদ
বৃক্ষ+ছায়া = বৃক্ষছায়া
স্ব+ছন্দ = স্বচ্ছন্দ
আ+ছ = চ্ছ
কথা+ছলে = কথাচ্ছলে
আচ্ছা+দন = আচ্ছাদন
ই+ছ = চ্ছ
পরি+ছদ = পরিচ্ছদ
বি+ছেদ= বিচ্ছেদ
পরি+ছদ = পরিচ্ছদ
বি+ছিন্ন = বিচ্ছিন্ন
প্রতি+ছবি = প্রতিচ্ছবি
উ+ছ = চ্ছ
অনু+ছেদ = অনুচ্ছেদ
ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি
১.ক, চ, ট, ত, প থাকলে এবং তাদের পরে স্বরধ্বনি থাকলে সেগুলো যথাক্রমে গ, জ, ড (ড়), দ, ব হয়।
অর্থাৎ অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনির (ক, চ, ট, ত, প) পরে স্বরধ্বনি থাকলে সেগুলো ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি (গ, জ, ড (ড়), দ, ব) হয়ে যায়।
অর্থাৎ কোনো বর্গের প্রথম ধ্বনির (ক, চ, ট, ত, প) পরে স্বরধ্বনি থাকলে সেগুলো সেই বর্গের তৃতীয় ধ্বনি (গ, জ, ড (ড়), দ, ব) হয়ে যায়। যেমন-
ক্+অ = গ+অ
দিক্+অন্ত = দিগন্ত
ক্+আ = গ+আ
বাক্+আড়ম্বর = বাগাড়ম্বর
ক্+ঈ = গ+ঈ
বাক্+ঈশ = বাগীশ
চ্+অ = জ+অ
ণিচ্+অন্ত = ণিজন্ত
ট্+আ = ড+আ
ষট্+আনন = ষড়ানন
ত্+অ = দ+অ
তৎ+অবধি = তদবধি
কৃৎ+অন্ত = কৃদন্ত
ত্+আ = দ+আ
সৎ+আনন্দ = সদানন্দ
ত্+ই = দ+ই
জগৎ+ইন্দ্র = জগদিন্দ্র
ত্+উ = দ+উ
সৎ+উপায় = সদুপায়
সৎ+উপদেশ = সদুপদেশ
প্+অ = ব+অ
সুপ্+অন্ত = সুবন্ত
ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি/
১. ক) ‘ত/দ’ এরপরে ‘চ/ছ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘চ্চ/চ্ছ’ হয়। যেমন-
ত্+চ = চ্চ
সৎ+চিন্তা = সচ্চিন্তা
উৎ+চারণ = উচ্চারণ
শরৎ+চন্দ্র = শরচ্চন্দ্র
সৎ+চরিত্র = সচ্চরিত্র
সৎ+চিদানন্দ(চিৎ+আনন্দ) = সচ্চিদানন্দ
ত্+ছ = চ্ছ
উৎ+ছেদ = উচ্ছেদ
তৎ+ছবি = তচ্ছবি
দ্+চ = চ্চ
বিপদ+চয় = বিপচ্চয়
দ্+ছ = চ্ছ
বিপদ+ছায়া = বিপচ্ছায়া
খ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘জ/ঝ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘জ্জ/জ্ঝ’ হয়। যেমন-
ত+জ = জ্জ
সৎ+জন = সজ্জন
উৎ+জ্বল = উজ্জ্বল
তৎ+জন্য = তজ্জন্য
যাবৎ+জীবন = যাবজ্জীবন
জগৎ+জীবন = জগজ্জীবন
দ+জ = জ্জ
বিপদ+জাল = বিপজ্জাল
ত+ঝ = জ্ঝ
কুৎ+ঝটিকা = কুজ্ঝটিকা
গ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘শ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘চ্ছ’ হয়। যেমন-
ত+শ = চ+ছ = চ্ছ
উৎ+শ্বাস = উচ্ছাস
চলৎ+শক্তি = চলচ্ছক্তি
উৎ+শৃঙ্খল = উচ্ছৃঙ্খল
ঘ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘ড/ঢ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘ড্ড/ড্ঢ’ হয়। যেমন-
ত+ড = ড্ড
উৎ+ডীন = উড্ডীন
ত+ঢ = ড্ঢ
বৃহৎ+ঢক্কা = বৃহড্ডক্কা
ঙ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘হ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘দ্ধ’ হয়। যেমন-
ত+হ = দ্ধ
উৎ+হার = উদ্ধার
উৎ+হৃত = উদ্ধৃত
উৎ+হত = উদ্ধত
দ+হ = দ্ধ
পদ+হতি = পদ্ধতি
তদ্+হিত = তদ্ধিত
চ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘ল’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘ল্ল’ হয়। যেমন-
ত+ল = ল্ল
উৎ+লাস = উল্লাস
উৎ+লেখ = উল্লেখ
উৎ+লিখিত = উল্লিখিত
উৎ+লেখ্য = উল্লেখ্য
উৎ+লঙ্ঘন = উল্লঙ্ঘন
এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।