বেশিরভাগ পরীক্ষক অন্যদের দিয়ে খাতা দেখান

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধিকাংশ শিক্ষক পরীক্ষক হিসেবে খাতা উত্তোলন করলেও তারা নিজেরা খাতা মূল্যায়ন করেন না। ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভাগ্যের বিপর্যয় ঘটছে। এনিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ থাকলেও শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষবরাবরই নির্বিকার।

জানা গেছে, পরীক্ষার পর রাজশাহী বোর্ড থেকে বিভিন্ন পরীক্ষকের কাছে উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়। এসব পরীক্ষকদের মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ শিক্ষক এসএসসি (ssc) বা মাধ্যমিকি ও এইচএসসি(HSC) বা উচ্চ মাধ্যমিকর উত্তরপত্র যথাযথভাবে মূল্যায়ন করেন না। তারা ঠিকমতো ক্লাস না নেয়াসহ একাডেমিক কর্মকাণ্ডে চরম উদাসীন থাকেন। কিন্তু তারা নামে-বেনামে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার খুলে বসে আছেন। শিক্ষার্থীদের বাসায় গিয়ে টিউশনি করাসহ বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেন। এভাবে বিভিন্ন বাণিজ্যিক কাজে ব্যস্ত থাকায় তারা খাতা দেখার সময় পান না। তারা অনভিজ্ঞ শিক্ষার্থী এবং কোচিং সেন্টারের শিক্ষকদের দিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করান। কোচিং সেন্টারের ওইসব শিক্ষকও আবার শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। উত্তরপত্রে এমন অবমূল্যায়নের কারণে ভাগ্য বিড়ম্বনায় পড়ছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তারা বে-আইনিভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়নের এ এটি অবগত থাকলেও ব্যক্তিগত সম্পর্কের খাতিরে তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। তবে সর্বশেষ গত সোমবার রাবির মুন্নুজান হলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ইসলামের ইতিহাস (কোড-২৬৮) বিষয়ের ১০০টি উত্তরপত্র পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। খবর পেয়ে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তরুণ কুমার সরকার এসে খাতাগুলো উদ্ধার করে নিয়ে যান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাবির ছাত্রী হল থেকে উদ্ধার হওয়া ওই উত্তরপত্রগুলো রাজশাহী নিউ গভর্মেন্ট ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাসের শিক্ষক আবুল কালামকে দেয়া হয়। কিন্তু তিনি ওই উত্তরপত্রগুলো মূল্যায়নের জন্য শাহ্ মখদুম কলেজের প্রভাষক ও ‘এমপি থ্রি’ কোচিং-এর রাবি শাখার পরিচালক মাসুদ রানাকে দেন। মাসুদ আবার উত্তরপত্রগুলো তার কোচিং-এ কর্মরত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে দেন। ব্যস্ততা থাকায় তিনি তার কাছের বান্ধবীকে ব্যাগভর্তি খাতাগুলো দেন। ওই ছাত্রীও রাবির বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়ন করছেন। এভাবে চার হাত পরিবর্তন হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ উত্তরপত্রগুলো। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক আবুল কালাম, কোচিং পরিচালক মাসুদ রানা ও রাবির দুই শিক্ষার্থীর সাথে একাধিকাবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মোবাইলে তাদের পাওয়া যায়নি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলামের মেয়ে এবার রাজশাহী বোর্ড থেকে এইচএসসি(HSC) বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। তিনিসহ বেশ কয়েকজন অভিভাবক বলেন, শিক্ষকরা তাদের কাজ যথাযথভাবে পালন না করে বিভিন্ন বাণিজ্যিক কাজে ব্যস্ত থাকেন। উত্তরপত্র নিয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ড জঘন্য অপরাধ। সরকারি কলেজের শিক্ষকরা প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা হয়ে কিভাবে এমন জঘন্য কাজ করতে পারেন? খাতা যদি নিজে নাই দেখবেন, তাহলে খাতা নিবেন কেনো? এদেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু সব ক্ষেত্রে এমন দুর্নীতি চলছে। এতে শিক্ষার্থীসহ আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। আমার মেয়েতো ধরেই নিয়েছে লেখাপড়া করে লাভ নেই। রেজাল্ট হতেও পারে, নাও পারে।

তিনি আরো বলেন, খাতা পুনর্মূল্যায়নের নামে আইওয়াশ ছাড়া কিছুই হয় না। খাতা পুনর্মূল্যায়ন বলতে কোনো প্রশ্নের মূল্যায় হয়েছে কিনা, নাম্বার কম-বেশি হলো কিনা ইত্যাদি যাচাই করা। এগুলো না করে শুধু যোগ করে ছেড়ে দেয়া হয়। পুনর্মূল্যায়নের নামে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়ার একটা বড় কৌশল। শিক্ষা ক্ষেত্রে এসব অপরাধের জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি করেন তিনি।

 

আরো পড়ুন:

ভিকারুননিসার ইংলিশ ভার্সনে ৪৭০ শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছে

ফাযিল পরীক্ষায় নকল ৪ শিক্ষককে বহিষ্কার

বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশন্স ইনষ্টিটিউটে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের বৈধতা প্রশ্নে অনুষ্ঠিত সভা শেষ হয়েছে

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি কমানোর দাবিতে শিক্ষার্থীদের ধর্মঘট

মন্তব্য করুন

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline