বি সি এস সাধারন জ্ঞান লিখিত পরীক্ষা নিয়ে কিছু কথা—
আপনাদের অনেকেই এখনও শুধু স্টাডির দিকেই বেশি জোর দিচ্ছেন , অনেকে আমাকে ইনবক্স করেছেন কত বেশি কোথা থেকে পড়বেন, কিভাবে পড়বেন এসব বিষয় জানার জন্য । আসলে আমি আবারও বলছি স্টাডির চেয়ে লিখিত পরীক্ষার খাতায় একটা ভাল presentation এর দিকে বেশি গুরুত্ব দিন । আপনি কম বা বেশি যাই জানুন না কেন আপনার খাতায় ভালোভাবে উপস্থাপন করতে হবে । আপনার খাতা যিনি দেখবেন তিনি যেন খাতা দেখে পছন্দ করেন । মানে খাতাটা যেন দেখেই exceptional কিছু মনে হয়। বেশিরভাগ স্টুডেন্টরা গতানুগতিকভাবে চলে , আর যারা চতুর তারা টেকনিকগুলোর দিকে বেশি নজর দেয় । যেকোনো যুদ্ধে ভারী অস্ত্র বেশি জরুরী নাকি ভাল একটা রণকৌশল ?? আপনারা নিজেরাই ভেবে দেখবেন ।
যেকোনো ধরনের পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় সাধারনত ৪ ধরনের পরীক্ষার্থী পাওয়া যায় —
১- স্টাডি প্রচুর করবে , পরিশ্রমও অনেক হবে কিন্তু output নাই ( কারন প্ল্যানমাপিক স্টাডি না করা আর অগোছালোভাবে সব পড়াশোনা করার চেষ্টা করা )
২- স্টাডি কম করবে কিন্তু output খুব ভাল ( কারন এরা চতুর এবং টেকনিক্যালি কম স্টাডি করে থাকে, শুধু যেটি দরকার সেটা স্টাডি করে )
৩- স্টাডিও বেশি করবে এবং output ও ভাল ( এরা টেকনিক ও বোঝে , প্ল্যান করে স্টাডি করে )
৪- যারা অন্যদের দেখাতে চায় যে তারা খুব স্টাডি করছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নয় ( এরা ফাঁকিবাজ )
বি সি এস এ লিখিত পরীক্ষাটাই আসল , ভাল একটা লিখিত পরীক্ষা দিলে সফল হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে । লিখিত পরীক্ষা ভাল হলে ভাইভা নিয়ে অনেক চাপ কমে যায় । আর লিখিত পরীক্ষার খাতাটিতে সুন্দর করে গুছিয়ে লিখে আসার চেষ্টা করতে হবে । সাধারন জ্ঞানের কোন সীমা নেই , তাই এর সীমাবদ্ধতা নিজের ই তৈরি করতে হবে প্ল্যানিং এর মাধ্যমে । যেহেতু লিখিত পরীক্ষাতে প্রতিটা বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ তাই খেয়াল রাখতে হবে কোন বিশেষ বিষয়ের প্রতি নজর দিতে গিয়ে যেন আরেকটা বিষয় খারাপ না হয়ে যায় । গড়ে সবগুলো বিষয়ে ভালো পরীক্ষা দেয়ার চেষ্টা করতে হবে । অনেকে সাধারন জ্ঞান নিয়ে এতই ব্যস্ত থাকে যে অন্য বিষয় নিয়ে ভালো প্রস্তুতি নেয়ার সময়ই পায়না । এমন যেন না হয়, সাধারন জ্ঞান প্রস্তুতি নেয়া শুরু করবেন সব বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া শেষ করার পর । সময় নির্দিষ্ট করে নেবেন নিজে প্ল্যান করে , যেমন ৭ দিনের মধ্যে যেটি পারবেন পড়ে নেবেন । সাধারন জ্ঞান স্টাডি করার জন্য যেটি করতে পারেন ——
১– লিখিত পরীক্ষায় সাধারন জ্ঞানে ভালো করতে হলে প্রিলির জ্ঞানটা আপনার খুব কাজে আসবে যদি সেটাকে আপনি কাজে লাগাতে পারেন । প্রিলির প্রস্তুতি দিয়েই লিখিত পরীক্ষার অনেকটা cover হয়ে যায় । শুরুতে বিগত বছরের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো ভালোমতো দেখুন , আপনার ধারণা হবে যে কেমন প্রশ্ন আসে, কি টাইপ variation থাকে প্রশ্নে, কোন কোন টপিকের ওপর প্রশ্ন হয় সাধারনত ইত্যাদি । নিজে একটি খাতায় নোট করে ফেলুন কমন কিছু টপিক যেমন — যুদ্ধ , নারী জাগরন অধিকার মুক্তি , দুর্নীতি, পরিবেশ, সামাজিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ , সংবিধান, বিপ্লব, প্রশাসন ও সচ্ছতা , সংস্কৃতি ,মুক্তিযুদ্ধ, কৃষি, স্বাস্থ্য , বিশ্ব অস্থিরতা, অর্থনীতি , প্রযুক্তি, ভূগোল ও ভূপ্রকৃতি ইত্যাদি । এরপর এই টপিক গুলোর ওপর ইন্টারনেট থেকে প্রতিটা টপিকের ওপর ২-১ টা সংজ্ঞা, ডাটা , এই সম্পর্কিত বিখ্যাত মনীষীর উক্তি, বিখ্যাত বই, ওয়েবসাইটের ঠিকানা , বাংলা ও ইংরেজী কবিতার লাইন ইত্যাদি নোট করে ফেলুন । আপনার প্ল্যানটা এমন থাকবে যে কি টাইপ প্রশ্ন কিভাবে কি দিয়ে উত্তর করা শুরু করবেন টা আগেই ঠিক করে রাখবেন । যেমন পরিবেশ নিয়ে যেকোনো প্রশ্ন উত্তর করা শুরু করার আগে আপনি বিখ্যাত উক্তি, নাকি কবিতার লাইন, নাকি সংজ্ঞা নাকি কোন বিখ্যাত ঘটনা উল্লেখ করে শুরু করবেন টা আগেই প্ল্যান করে রাখবেন ।
২– বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে নীল কালিতে কবিতার লাইন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ , পেন্সিলে ছক এঁকে এতে ডাটা দেয়া, ম্যাপ আঁকা , ওয়েবসাইটের ঠিকানার reference দেয়া , বিখ্যাত উক্তি , বই এর নাম, related ঘটনার reference ইত্যাদি উপস্থাপন কর ।
৩– মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে একটা মানচিত্র এঁকে দিয়ে আসুন, পারলে ২ টি আঁকুন , একটি normal চিত্র আরেকটি একই এলাকার zoom pattern এর চিত্র । পরিবেশ নিয়ে কিছু লিখছেন তাতে আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদের reference দিন ,ভূগোল নিয়ে কিছু লিখছেন তাতে কিছু ডাটা আর percentage reference হিসেবে দিয়ে আসুন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোন প্রশ্ন উত্তর করছেন তাতে বিশ্বের অন্যান্য এমন স্বাধীনতা যুদ্ধের reference দিন , বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি সংবিধান থেকে হুবুহু লিখে আসুন ইত্যাদি । আমি জাস্ট একটু ধরন বললাম । লিখিত পরীক্ষা একটি art, লিখিত পরীক্ষাতে লেখার মাধ্যমে যেকোনো টাইপের প্রশ্নে যেকোনো টপিক আনা যায় । আপনি যদি প্ল্যান করে রাখেন কি টাইপের প্রশ্নের উত্তরে কি লিখবেন তাহলে আপনার জন্য স্টাইলিশ একটা পরীক্ষা দেয়াটা সহজ হবে । আপনার মুল উদ্দেশ্য থাকবে আপনার খাতার উত্তর গুলোকে সুন্দর করা, আপনার খাতা দেখে যেন মনে হয় আপনি অনেক জানেন । লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে মাথার চেয়ে খাতা কথা বলে বেশি ,মানে আমি কি জানলাম সেটা বিষয় না, বিষয় হল আমি পরীক্ষার খাতায় কি লিখে এলাম ।
৪– ডাটা বা ছক মুখস্থ করতে যাবেন না, নিজেই বই দেখে বা ইন্টারনেট থেকে ৪-৫ টা ছক বানিয়ে রাখুন যেটি প্রসঙ্গ অনুযায়ী প্রশ্নের উত্তরে লিখে আসবেন, এক টাইপের প্রশ্ন যদি বাংলাদেশ বিষয়াবলী তে আসে আবার আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীতেও আসে তাহলে এক ই ভাবে উত্তর লিখে আসুন, একই কথা লিখুন ,একই reference দিন, ২ খাতা তো আর এক টিচারের কাছে যাবেনা তাইনা ? স্টাডি করবেন কম , কিন্তু প্রয়োগ তার চেয়ে অনেক বেশি করার চেষ্টা কর । অর্থনীতি নিয়ে কোন প্রশ্নের উত্তরে অমর্ত্য সেনের poverty and famines থেকে ২-১ টা লাইন লিখে আসুন নীল কালিতে, বিপ্লব , শিক্ষা বিষয়ক লেখায় নেলসন ম্যান্ডেলার a long walk to freedom বই থেকে ২-১ লাইন লিখুন, একই ভাবে history of second world war, julius caesar এসব নানান বই থেকে বিখ্যাত উক্তি reference দিন পারলে পৃষ্ঠা নম্বর সহ , সব ইন্টারনেটে পাবেন, টপিক ভিত্তিক বিখ্যাত উক্তি লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন । মূলকথা আপনার প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর মানসম্মত করার চেষ্টা কর । গতানুগতিক পাতার পর পাতাভরা লিখলে ভালো নম্বর আসার সম্ভাবনা কম ই বৈকি । কিন্তু অল্প লেখা খুব মানসম্মত হলে তাতে ভালো নম্বর আসার সম্ভাবনা বেড়ে যায় । সাধারন জ্ঞান প্রশ্নের উত্তরে যতটা পারবেন reference দেয়ার চেষ্টা করবেন । গোছানো লিখবেন, প্যারা করে লিখবেন, লেখার ধরনটা যেন সুন্দর থাকে , আর অবশ্যই দ্রুত লেখার অভ্যাস কর । পারলে বাসায় দৈনিক আধা ঘণ্টা হলেও খাতায় জোরে লেখার অভ্যাস কর । দৈনিক লেখার চর্চা করলে আপনার লেখার গতি বাড়বে । ৯-১০ টি কলম লিখে লিখে অর্ধেক কালি খরচ করে রেখে দিন লিখিত পরীক্ষার জন্য ।
৫– প্রশ্নের উত্তরে প্রাসঙ্গিক চুক্তি , সাল , বিখ্যাত গল্প ও উপন্যাসের চরিত্রের reference আনতে পারেন , যেটি যা নোট করবেন এখন থেকে সেটাই পরীক্ষাতে দিয়ে আসার চেষ্টা করবেন । বাজারের যেকোনো লিখিত পরীক্ষার গাইড বই থেকে লেখার স্টাইলটা দেখতে পারেন , কিন্তু লিখবেন নিজের মত । নিজের জ্ঞানের ভাণ্ডারটা যতটা পারুন মোটামুটি বাড়ানোর চেষ্টা কর । অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছেন কোন গাইড পড়বেন , কোন গাইড ভালো , কোন গাইড স্টাডি করলে ভালো নম্বর পাওয়া যাবে ইত্যাদি ? তারা আসলে এখনও বুঝতে পারেননি আমি কি বোঝাতে চাচ্ছি । লিখবেন নিজের মত করে , যেকোনো গাইড থেকে আপনি জাস্ট লেখার ধরনটা দেখে নিতে পারেন এই যেটি । আপনার যেদিন সাধারন জ্ঞান লিখিত পরীক্ষা থাকবে সেদিন পত্রিকার নামসহ তারিখসহ প্রাসঙ্গিক কোন ঘটনার reference দিয়ে আসুন, সম্পাদকীয় থেকে ২-১ টা লাইন প্ল্যান করে তুলে দিয়ে আসুন । অর্থাৎ যেটি প্ল্যান করে যাবেন তাই লিখে আসবেন এমন চেষ্টা কর । এখন থেকেই এমন স্টাইলে লেখার চর্চা কর , think different and be different.
আরো পড়ুন: