তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থ [Electrolytes]:-
• সংজ্ঞা:- যেসব পদার্থ জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় আয়নে বিশ্লিষ্ট হয়ে তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ পরিবহনের ফলে নিজেরা রাসায়নিকভাবে বিশ্লিষ্ট হয়ে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উত্পন্ন হয়, সেই সব পদার্থকে তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থ বলে ।
[i] অ্যাসিড:- সালফিউরিক, নাইট্রিক, হাইড্রোক্লোরিক প্রভৃতি ।
[ii] ক্ষার:- কস্টিক সোডা, কস্টিক পটাশ ইত্যাদি ।
[iii] লবণ:- সোডিয়াম ক্লোরাইড, জিঙ্ক সালফেট, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড ইত্যাদি ।
এই জাতীয় পদার্থগুলি গলিত অবস্থায় বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ পরিবহন করার সঙ্গে সঙ্গে পদার্থগুলির রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে নতুন পদার্থ উত্পন্ন হয় । এইগুলি সব তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থ ।
তড়িৎ-বিশ্লেষণ [Electrolysis]:- যে পদ্ধতিতে উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় কিংবা বিগলিত অবস্থায় তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে ওই পদার্থের রাসায়নিক বিয়োজন ঘটে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উত্পন্ন হয়, সেই পদ্ধতিকে তড়িৎবিশ্লেষণবলে । তড়িৎবিশ্লেষণে তড়িৎ শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।
আয়ন [Ions]:- জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের অণুগুলি বেশ কিছু সংখ্যক বিয়োজিত হয়ে ধনাত্মক[positive] এবং ঋণাত্মক [negetive] তড়িৎগ্রস্থ কণায় পরিণত হয় । এই তড়িৎগ্রস্থ কণাগুলিকে আয়ন বলে ।
• ক্যাটায়ন [Cations]:- ধনাত্মক তড়িৎগ্রস্থ আয়নগুলিকে ক্যাটায়ান বলে ।যেমন— H+, Ca2+, Al3+, NH4+ ইত্যাদি ।
• অ্যানায়ন [Anions]: ঋণাত্মক তড়িৎগ্রস্থ আয়নগুলিকে অ্যানায়ন বলে ।যেমন— Cl- , NO3- , SO42-, PO43- ইত্যাদি ।
একটি উদাহরণ—
• ভোল্টামিটার [Voltameter]:- কোনো তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থের ভিতর দিয়ে তড়িৎ চালনা করার সময় পদার্থটিকে জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় একটি পাত্রের মধ্য রেখে তড়িৎ-বিশ্লেষণ করা হয় । এই পাত্রটিকে ভোল্টামিটার বলে ।
তড়িৎদ্বার [Electrodes]:- ভোল্টামিটারে রাখা গলিত বা জলে দ্রবীভূত তড়িৎ-বিশ্লেষ্যের মধ্যে দুটি সুপরিবাহী ধাতব পাতকে আংশিক ডুবিয়ে রাখা হয় এবং এদের সাহায্যে তড়িৎ-বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালানো হয় । এই পাত দুটিকে তড়িদ্দ্বার বলে । প্ল্যাটিনাম, নিকেল, কপার, আয়রন, গ্যাস কার্বন, গ্রাফাইট প্রভৃতি তড়িদ্দ্বাররূপে ব্যবহৃত হয় ।
• অ্যানোড:- যে তড়িদ্দ্বারের সঙ্গে ব্যাটারির ধনাত্মক মেরু যুক্ত থাকে, সেই তড়িদ্দ্বারটিকে অ্যানোড বলে ।
• ক্যাথোড:- যে তড়িদ্দ্বারের সঙ্গে ব্যাটারির ঋণাত্মক মেরু যুক্ত থাকে, সেই তড়িদ্দ্বারটিকে ক্যাথোড বলে । ব্যাটারির সঙ্গে তড়িৎ পরিবহনে সক্ষম পদার্থটিকে যোগ করলে তড়িৎপ্রবাহ অ্যানোডের মধ্য দিয়ে তড়িৎ-বিশ্লেষ্যে প্রবেশ করে ক্যাথোডের মধ্য দিয়ে ব্যাটারিতে ফিরে যায় । তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চলার সঙ্গে সঙ্গে ওর রাসায়নিক বিয়োজন ঘটে; যেমন— প্ল্যাটিনাম তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে গলিত NaCl -এর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ করা হলে, ক্যাথোডে সোডিয়াম ও অ্যানোডে ক্লোরিন উত্পন্ন হয় ।
তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ [Non-Electrolytes]:- যে সমস্ত পদার্থগুলি গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নে বিশ্লিষ্ট হয় না এবং তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না, তাদের তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে । যেমন— চিনির দ্রবণ, গ্লিসারিন, পেট্রোল, কেরোসিন, ইথার, বেঞ্জিন, অ্যালকোহল তড়িৎ পরিবহন করে না । এরা সব তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ । তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নিত হয় না, তাই তড়িৎ পরিবহন করতে পারে
প্রতিটি লেকচারে নতুন নতুন লিখা যুক্ত হচ্ছে, তাই কাঙ্খিত কোন লিখা না পেলে দয়া করে কিছুদিন পর আবার ভিজিট করে দেখবেন।
লিখাতে কিংবা লেকচারে কোন ভুলত্রুটি থাকলে অথবা আপনার কাঙ্খিত লিখা খুঁজে না পেলেইশিখন.কম এর ফ্যানপেইজ অথবা নিচে কমেন্ট কর
0 responses on "বিসিএস - প্রিলিমিনারি - সাধারণ বিজ্ঞান - অধাতব রসায়ন"