📣চলছে প্রো-অফার!!! ইশিখন.কম দিচ্ছে সকল অনলাইন-অফলাইন কোর্সে সর্বোচ্চ ৬০% পর্যন্ত ছাড়! বিস্তারিত

Pay with:

বিসিএস পরামর্শ -৩

লিখিত প্রস্তুতি :: আন্তর্জার্তিক বিষয়াবলি

:: সম্ভাব্য প্রশ্ন:
১। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র্রনীতির রূপরেখা আলোচনা কর
২। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র্রনীতি উল্লেখ কর
৩। দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র্রনীতি আলোচনা কর
.:: লিখিত সিলেবাসে উল্লেখকৃত (আন্তর্জার্তিক বিষয়াবলি):
Section A: Conceptual Issues = Foreign policy and Diplomacy:
Section B: Empirical Issue = Foreign Relations of Major Powers: USA
.
.
* * * মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র্রনীতি * * *
.
১.
বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে ও নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র্র নীতিতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন এসেছে। ১৮২৩ সাল হতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র বিচ্ছিন্নতাবাদী নীতি অনুসরণ করে পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্ত হতে নিজেকে আলাদা করে রাখে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জার্মানির হামলা হতে ব্রিটেনকে রক্ষা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র আবার বিচ্ছিন্নতাবাদী নীতিতে ফিরে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জাপান কর্তৃক মার্কিন নৌ ঘাঁটি পার্ল হারবার ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হবার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র বিশ্ব রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে সংশ্লিষ্ট করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধ (পড়ষফ ধিৎ) চলতে থাকে। ৯০’র দশকের শুরুতে স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয় এবং বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এক মেরুকরণ ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।
.
২.
স্নায়ুযুদ্ধের পর ফ্রান্সিস ফুকোয়ামা নামের একজন পণ্ডিত ব্যক্তি ‘ঊহফ ড়ভ ঐরংঃড়ৎু’ নামে একটি তত্ত্ব পেশ করেন। এ তত্ত্বে তিনি উল্লেখ করেন, স্নায়ুযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদর্শকে মোকাবিলা করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল। কিন্তু এখন কেউ নেই। তাই বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদর্শই প্রতিফলিত হবে। এর ফলে গণতন্ত্র, পুঁজিবাদ ও মুক্তবাজার অর্থনীতি ইত্যাদি অবাদে চলবে। অন্যদিকে স্যামুয়েল পি হান্টিংটন নামে আরেক পণ্ডিত ব্যক্তি ‘সভ্যতার সংঘাত’ (ঞযব ঈষধংয ড়ভ ঈরারষরুধঃরড়হ) নামে আরেকটি তত্ত্ব পেশ করেন। এতে তিনি দেখান যে, নতুন করে যেসব সংঘাত হবে তা হবে সভ্যতার মধ্যকার সংঘাত।
.
স্নায়ুযুদ্ধত্তোরকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র মনে করতে থাকে বিশ্বে সামরিক, অর্থনীতি, কূটনৈতিক দিক দিয়ে কোন রাষ্ট্র্রই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমতূল্য নয়। দেশটি আরও মনে করে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার দীর্ঘায়িত হবে। এর কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র তার সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি দ্বারা প্রতিপক্ষদের সহজেই মোকাবিলা করতে পারে। তাছাড়া বিশ্বব্যাপী মার্কিন কর্তৃত্বকে সুদৃঢ় করার জন্য বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও সামরিক স্থানগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন আছে।
.
৩.
৯/১১ এর ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন মহা পরিকল্পনা (এৎধহফ ঝঃৎধঃবমরপ চষধহ) ছিল না। ৯/১১ পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র একটি মহা পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। ৯/১১ এর পর দেশটি যে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলে তার আদর্শিক ভিত্তি হলো নব্য-রক্ষণশীলতাবাদ (ঘবড় ঈড়হংবৎাধঃরংস)। বর্তমান জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের নীতি নির্ধারকদের অধিকাংশই নব্য রক্ষণশীল। নব্য-রক্ষণশীল শাসকবর্গ মনে করে, বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একক কর্তৃত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য কূটনৈতিক ব্যবস্থাপনার চেয়ে সামরিক ব্যবস্থাপনাই অধিক ফলপ্রসূ।
৯/১১ পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র মনে করে, বিশ্বব্যাপী ইসলামী জঙ্গিবাদই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র ও তার মিত্রদের নিরাপত্তাহীনতার কারণ। কেননা ইসলামী জঙ্গিবাদীদের একটি সাধারণ লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী মার্কিন স্বার্থে আঘাত হানা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র ‘দুর্বত্ত রাষ্ট্র্র’ (জড়ঁমব ঝঃধঃব) নামে যেসব রাষ্ট্রের নাম তালিকাভুক্ত করেছে তাতে দেখা যায় একমাত্র উত্তর কোরিয়া ছাড়া বাকি সবগুলোই মুসলিম রাষ্ট্র্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতে, দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র্র ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে পারলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র ও তার মিত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বর্তমান বুশ প্রশাসন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেন হাওযার কর্তৃক প্রণীত ‘ডোমিনো থিওরি’ (উড়সরহড় ঞযবড়ৎু) গ্রহণ করে। এ তত্ত্বে বলা হয়েছিলো, কমিউনিস্ট আন্দোলনকে দমানোর জন্য এসব রাষ্ট্রগুলোকে আগেই আক্রমণ করতে হবে। বুশ প্রশাসন এ তত্ত্ব অনুযায়ী দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র্রগুলোকে আগেই আক্রমণ করার নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।
.
৪.
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র মধ্যপ্রাচ্যে একটা বড় ধরনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনতে চায়। দেশটি মনে করে, বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের উৎস হলো মধ্যপ্রাচ্য। এর কারণ হলো সেখানে গণতন্ত্র না থাকায় সন্ত্রাসবাদের জন্ম হচ্ছে। তাদের মতে, গণতন্ত্র থাকলে দেশের উন্নতি হবে বেশি এবং দারিদ্র্য দূর হবে। আর দারিদ্র্য দূর হলে সন্ত্রাসী তৈরি হবে না। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করতে চায়। অথচ মধ্যপ্রাচ্য মুক্তবাজার অর্থনীতির জন্য এখনো প্রস্তুত নয়, সেখানে প্রয়োজন অবাধ (সুষ্ঠু) বাজার অর্থনীতি।
.
একইভাবে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্বার্থ অর্জনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো অবাধ বাণিজ্যের প্রসার করা। কারণ অবাধ বাণিজ্যের মাধ্যমে মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্রসহ উন্নত দেশগুলোর অধিক অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা হয়। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র মনে করে, বিভিন্ন রাষ্ট্র্রের পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য অবাধ বাণিজ্যের প্রচলন করা দরকার। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে বর্তমান নব্য রক্ষণশীল বুশ প্রশাসন চেয়েছিল বাজার ব্যবস্থার ওপর থেকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণরুপে তুলে নিতে এবং গণহারে বিরাষ্ট্রীয়করণ করতে। যার নেতিবাচক প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রে দেখা দিয়েছে মারাত্বক অর্থনৈতিক বিপর্যয়।
বর্তমান মার্কিন প্রশাসন মনে করে, বিশ্বের অধিকাংশ সন্ত্রাসী হামলার কারণ হলো মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিনীদের রাষ্ট্র্রহীনতা। সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ মাহমুদ আব্বাসের মাধ্যমে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র্র প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যেখানে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন উভয়কে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে। কিন্তু ইসরাইলীরা ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেকে স্বীকৃতি না দেয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র্র প্রতিষ্ঠিত হতে বিলম্বিত হচ্ছে। অন্যদিকে মুসলিম বিশ্ব মনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র মধ্যপ্রাচ্যে তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ফিলিস্তিন সমস্যাটি সমাধান করতে চাচ্ছে না। গত পঞ্চাশ বছর যাবত মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েও যুক্তরাষ্ট্র্র সেখানে গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা কোনটাই অর্জন করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরাইল ও সৌদি আরব কর্তৃক মানবাধিকার লংঘিত হলেও সে ব্যাপারে তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অন্যদিকে হামাস ফিলিস্তিনে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলেও তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে এবং সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করছে।
.
২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র ইরাকে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের মজুদ ও ইরাকি নেতা সাদ্দামের সঙ্গে আল-কায়েদাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে এ বলে সেখানে আক্রমণ করে। কিন্তু এ দুটি বিষয় প্রমাণিত না হবার কারণে এটা বলা যায় যে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ ইরাকের তেল সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাই ছিলো এ যুদ্ধের মূল কারণ। দীর্ঘ ছয় বছর যুদ্ধ করেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র ইরাকে গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা কোনটাই পুরোপুরি অর্জন করতে পারেনি। ইরাকে এ পর্যন্ত ছয় শ’ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। ইরাকে প্রতিদিন মার্কিন সরকারকে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এ বিপুল ব্যয় বহন করতে গিয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপর।
.
ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে নিবৃত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতে, পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরান যদি আনবিক শক্তির অধিকারী হয়, তাহলে তা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরাইল ও সোদি আরবের নিরাপত্তার জন্য হুমকির কারণ হতে পারে। তাই যুক্তরাষ্ট্র্র ইরানের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু তারপরও ইরান তার আনবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ইরান দাবি করছে যে, তাদের আনবিক পরীক্ষা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং শুধুুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ইরানের ওপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। কেননা ইরান খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে অনেকটাই স্বয়ংস¤পূর্ণ। তাছাড়া আন্তঃআরব বাণিজ্যের মাধ্যমে ইরান তার অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা মিটিয়ে থাকে।
.
৫.
১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল কম্যুনিজমের সম্প্রসারণ ঠেকানোর জন্য এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক জোট ওয়ারশ প্যাক্টকে (ডধৎংড়ি চধপঃ) মোকাবিলা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র ন্যাটো সামরিক জোট গড়ে তোলে। ঠাণ্ডাযুদ্ধের অবসানের ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ওয়ারশ প্যাক্টের পতন হওয়ার পর অনেকে মনে করেন যে, ন্যাটোকে টিকিয়ে রাখার আর প্রয়োজন নেই। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র মনে করে, ঠাণ্ডা যুদ্ধোত্তরকালে বিশ্বব্যাপী ইসলামী জঙ্গিবাদ ও বিভিন্ন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও জাতিগত বিবাদ নিরসনের জন্য ন্যাটোর প্রয়োজনীয়তা এখনো বিদ্যমান। দেশটি মনে করে, বসনিয়া ও আফগানিস্তানে বিদ্যমান বিবাদ নিরসনে ন্যাটো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নতুন বিশ্ব ব্যবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র তার পররাষ্ট্র্রনীতির উদ্দেশ্যাবলী বাস্তবায়নে ন্যাটোকে আরও বিস্তৃত করতে চায়। বুশ প্রশাসনের পররাষ্ট্র্রমন্ত্রী কন্ডোলিসা রাইস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র্রনীতির যে মূলনীতি ঘোষণা করেছেন সেখানে তিনি বলেছেন, বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনয়নের জন্য ন্যাটোর ভূমিকা অত্যাবশ্যক। এছাড়াও সমাজতন্ত্রের পতন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়া সত্ত্বেও রাশিয়া এখনো বেশ শক্তিশালী। বিপুল পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্রসহ অন্যান্য মারণাস্ত্র এখনো রাশিয়ার কাছে মজুদ রয়েছে। তাছাড়া পূর্ব ইউরোপে এখনো রাশিয়ার আধিপত্য রয়েছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে যে কোন সময়ে রাশিয়া পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। আর ন্যাটো এ ভবিষ্যত হুমকির মোকাবিলায় একটি নিবারক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
.
৬.
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র বিশ্বব্যাপী উদারবাদের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য এগিয়ে আসে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র মনে করে, বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা গেলে বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখা সম্ভব হবে। দেশটির মতে, কম্যুনিজম, সামরিক শাসন ও রাজতন্ত্র মানবাধিকার রক্ষার অনুকূলে নয়। তাই অর্ধ-শতাব্দীরও অধিককালব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র কম্যুনিজম, স্বৈরশাসন ও রাজতন্ত্রকে প্রতিহত করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ঠাণ্ডাযুদ্ধ চলাকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র তার স্বার্থরক্ষার জন্য স্বৈর-শাসকদেরও সহযোগিতা করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র সৌদি আরবে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এ দুটির বাস্তবিক প্রয়োগ নেই। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র দেখায় যে, সৌদি আরবের মতো একটি রাজতান্ত্রিক দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আনয়ন করতে গেলে বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে। আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের এটি তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
.
৭.
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আদর্শগত ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও চীন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার। চীন তাইওয়ানে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র্র তাতে বাধা প্রদান করে। চীনের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও যুক্তরাষ্ট্র্র করে আসছে। চীনকে যুক্তরাষ্ট্র্র বাণিজ্যিকভাবে বৃহৎ অংশীদার করার কারণ হলো চীনের যেসব আচরণ যুক্তরাষ্ট্র্র পছন্দ করে না সেসব আচরণ চীন তার অর্থনৈতিক স্বার্থের কথা বিবেচনা করে সংশোধন করবে। ১৯৮৯ সালে চীনের তিয়েন আনমেন স্কোয়ারে গণতন্ত্রকামী ছাত্রদের হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে চীনের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর কিছুদিন পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়। তবে সাম্প্রতিককালে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানকে মিসাইল হামলা থেকে রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বুশ প্রশাসন একটি ক্ষেপনাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা গড়ে তোলার কারণে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
.
৮.
ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র। দু’পক্ষেই গণতন্ত্র এবং বাজার অর্থনীতি বুনিয়াদি ভিত্তি লাভ করেছে। সঙ্গত কারণেই এরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরস্পর পরস্পরের সহযোগী হতে চায়। তবে এ কথা সত্য যে, বর্তমান সময়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধিকাংশ রাষ্ট্রই ইরাক যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। ন্যাটোকে পাশ কাটিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠনের প্রচেষ্টা চালায়। এ কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক বর্তমানে কিছুটা শিথিল অবস্থায় রয়েছে।
.
৯.
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র মনে করে, উগ্র জাতীয়তাবাদী রাশিয়া পুনরায় শক্তিশালী হয়ে সম্প্রসারণবাদী ভূমিকা অবলম্বন করতে পারে। পূর্ব ইউরোপের যেসব রাষ্ট্র্র রাশিয়ার শাসনাধীনে ছিল সে সকল রাষ্ট্র এখনো রাশিয়ার প্রভাব থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়নি। সাম্প্রতিককালে রাশিয়াকে প্রতিপক্ষ বিবেচনা করে রাশিয়ার নিকট প্রতিবেশী রাষ্ট্র্র চেক প্রজাতন্ত্র ও পোলান্ডে আধুনিক ক্ষেপনাস্ত্র মোতায়েন করার কারণে রাশিয়াও কিউবাতে আনবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র নিজেকে একক পরাশক্তি বিবেচনা করলেও রাশিয়া মনে করে এখনো দ্বি-মেরু বিশ্ব ব্যবস্থার অবসান ঘটেনি। এমতাবস্থায় বিশ্বেও একমাত্র পরাশক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র তার পররাষ্ট্র্র নীতি দ্বারা যদি রাশিয়ার উগ্র জাতীয়তাবাদী চেতনাকে নিবৃত করতে না পারে তাহলে বিশ্বব্যাপী তার জন্য ক্ষতিকর কারণ হতে পারে।
.
১০
ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র্র নীতির ধরন কেমন হবে সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাবার জন্য আমাদের হয়তো আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যদি রিপাবলিকান মনোনিত প্রার্থী জন ম্যাককেইন নির্বাচিত হন তবে তিনি বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের পররাষ্ট্র্র নীতিই অনুসরণ করবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে, যার ফলে বিশ্ব ব্যবস্থায় তেমন কোন পরিবর্তন নাও আসতে পারে। অপরদিকে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী বারাক ওবামা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে পররাষ্ট্রনীতিতে বিভিন্ন পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছেন, যে পরিবর্তিত মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি তৃতীয় বিশ্বের জন্য কল্যাণকর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

   
   

0 responses on "বিসিএস পরামর্শ -৩"

Leave a Message

Address

151/7, level-4, Goodluck Center, (Opposite SIBL Foundation Hospital), Panthapath Signal, Green Road, Dhanmondi, Dhaka-1205.

Phone: 09639399399 / 01948858258


DMCA.com Protection Status

Certificate Code

সবশেষ ৫টি রিভিউ

eShikhon Community
top
© eShikhon.com 2015-2024. All Right Reserved